পৌষের সকালের রোদ যেন খামে ভরা প্রথম প্রেমপত্র। হৃদয়ে হৃদয়ে মন্থনের উষ্ণতা। চোখের অঞ্জনে লেখা সে চিঠি। পত্রের ছত্রে ছত্রে প্রিয়র উপস্থিতি। পত্রই প্রিয়কে এনে দেয় কাছাকাছি। সেই পত্রই কখন হয়ে যায় হৃদয়। সেদিক দিয়ে পত্রই তো হৃদয়ের অভিব্যক্তি বা প্রতিচ্ছবি। সকালের রোদের মধ্যে নিজেকে এক করে দিয়ে , মিশিয়ে দিয়ে উষ্ণতার বার্তা নিয়ে আসে সে। সে যে আমার বড্ড ভালোলাগা, বড্ড মনকেমন করা। আমার শরীরের প্রতিটি জানালা দরজায় তৃষাতুর দৃষ্টিতে অপেক্ষা করে থাকে তাকে প্রত্যক্ষ করার জন্য। তারা বোঝে তার প্রতিটি পলের গভীরতা। তারপর কখন এক সময় সেই শরীরের গোপনে গভীরে ঘুপটি মেরে বসে থাকে সে। এখন খানিকটা যেন বুঝতে পারি শরীরকে কেন মন্দির বলা হয়। সেই রোদ যখন জানালা দরজা দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে অতিথি হয়, আর তখন তাদের মধ্যে যে পারস্পরিক সংলাপ সেগুলো যেন এক একটা গল্প। ছাদে , বারান্দায়, প্যারাপিটে, কাপড় শুকোতে দেওয়া দড়িতে , নারকেল গাছের পাতায় পাতায়, নিমগাছের নীরবতা আর কলাপাতার সিক্ততার ওপর ফুলকির মতো চলাফেরা। কতকগুলো আবার কাব্য হয়ে দুলতে থাকে কেবলের তারে, বারান্দার রিলিং এ। সে আসলে প্রেম, শাশ্বত, চির নবীন, চির সুন্দর। কত তার রূপ – যা কোন দিন প্রকাশ করে শেষ করা যাবে না। কত তার কথা – যা বলে কোনোদিন ফোরাবে না। আর রোদ ই তো সেই প্রেম। তাই শীত থেকে রোদকে বিচ্ছিন্ন করা অসম্ভব। সেই রোদ যখন চিঠি হয়, তখন তা থেকে সৃষ্টি হয় এক অভিনব স্পন্দন। সেই স্পন্দনের ঠোঁটে ঠোঁট রাখে কম্পন। আর কম্পন শরীরের ইন্দ্রিয়ের প্রতিটি বীণার তারে উত্তেজনার স্মৃতি মেদুরতাকে সক্রিয় করে তোলে একটু একটু করে। রোদের মধ্যে দিয়ে ভালোবাসা হয়ে সে সমস্ত ইন্দ্রিয়ের সঙ্গে একটা সম্পর্ক গড়ে তোলে। তারপর সেই সম্পর্ক ক্রমশঃ আত্মীয়তায় রূপান্তরিত হয়ে যায়। তারপর এমন একটা গভীর সম্পর্ক গড়ে ওঠে – গভীর গোপন বলে আর কিছু থাকে না। উভয়ে উভয়ের কাছে সম্পূর্ণ প্রকাশিত ও বিকশিত। কারোর কাছে কেউ অজানা থাকে না। স্পর্শ পেতে ইচ্ছে করে। চিঠি লিখতে ইচ্ছে করে। ছোট হয়ে যেতে ইচ্ছে করে, খুনশুটি করতে ইচ্ছে করে, জিতিয়ে দিতে ইচ্ছে করে, জাগিয়ে দিতে ইচ্ছে করে, কি যে ছাই ইচ্ছে করে…। একেই বুঝি প্রেম বলে। আর সেই পৌষের রোদের ভাষার মধ্যে বারে বারে খুঁজে পাওয়া যায় একজনকে যে জীবনকে সম্পৃক্ত করে দেয় উপত্যকার বেলাভূমিতে।