শীতের পিঠে-পুলি
সুপর্ণা দত্ত
✒️✒️✒️✒️✒️
শীতের সকাল মানেই হল
ভারী মজা মেলে খাওয়ার,
খেঁজুরের সুস্বাদু গুড় আর
মায়ের তৈরি নানান স্বাদের পিঠার।
শীতে বাঙালীর প্রতি ঘরে ঘরে
পাওয়া যায় পিঠে-পুলির মধুরতা,
দখিণা হিমেল বাতাসের সাথে
যেন বয়ে আনে শীতের বারতা।
আমলকির ওই ডালে ডালে
শীতের হাওয়া নাচন তোলে,
বাংলায় পৌষ সংক্রান্তির দিনে
বাঙালী পিঠে-সংক্রান্তি বলে মানে।
পিঠে খেতে বসে এখন
মনে পড়ে সেই সব দিন,
মা-দিদিমার সাথে গড়ে ওঠা
শীতের পিঠের স্মৃতি জড়ানো দিন।
পরিবারের সাথে কাটত মধুর মুহূর্ত
শীতের সকালে পিঠার গন্ধ,
তখনকার সময়টা শুধু পিঠার জন্য
মিলত মিষ্টি সুখ আর পিঠার আনন্দ।
চালের গুঁড়ো,ময়দা,আটা
শস্যজাত গুঁড়োর পুলি পিঠা,
আদিম ঐতিহ্যের খাদ্য দ্রব্যটা
অঞ্চল ভেদে আনে বৈচিত্র্যতা।
বাঙালীর পিঠা মানেই মিষ্টি হয় জানি
নোনতা-ঝাল-টক পিঠা সুস্বাদুও মানি,
নারকেল আর খেঁজুর গুড়ের সহযোগে
পিঠাপুলি তৈরি করে বহু মনোযোগে।
ভারতের প্রায় সব রাজ্যেই সংক্রান্তিতে
পিঠে-পুলি,পায়েস তৈরিতে মাতে,
বাংলা,বিহার, উড়িষ্যা,আসাম রাজ্যের
ভরে ওঠে ঘর নানান পিঠের সাজে।
জলে ভাপানো পিঠা,সেদ্ধ পিঠা
বাংলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পিঠা,
চিতই পিঠা,মুঠি পিঠা,পাটিসাপটা
ক্ষীর কুলি,গোকুল পিঠায় পাই মজাটা।
গোলাপ ফুল পিঠা,লবঙ্গ লতিকা
রসফুল,জামদানি,দুধরাজ,ছিটকা,
সূর্যমুখী,খোলাজালি,চুটকি,চাপড়ি পিঠা
সরভাজা,মালপোয়া,কুলশি,নকশি পিঠা।
বিবিয়ানা পিঠার আর এক নাম হয়
জামাই ভুলানো পিঠা বলে অভিহিত হয়,
ঘরের বিবিদের পারদর্শিতার পরিচয় দিতে
পিঠার এরূপ নাম কারুকার্য খচিতে।
পিঠাপুলি বাঙালীর লোক ইতিহাস ঐতিহ্যে
লোকজ ও নান্দনিক সংস্কৃতি বাঙালী সমাজে,
শীতকালীন খাবার হিসেবে রসনা জাতীয়
মুখরোচক খাদ্য হিসেবে বাঙালী সমাজে আদরনীয়।
অতিথি আপ্যায়নে পিঠার ভূমিকার
দুই বাংলায় জুড়ি মেলা ভার,
মানুষে-মানুষের পারস্পরিক বন্ধন
দৃঢ় করে পিঠার আয়োজন।
শহরের বর্তমান কর্মব্যাস্ত জীবনে
কষ্টসাধ্য হয়েছে পিঠার রন্ধনে,
খাদ্য রসিক বাঙালীর রসনা তৃপ্তি
উৎসাহ বাড়িয়েছে পিঠাঘরে পিঠা বিক্রি।
শীতকালের অন্যতম পিঠা হল
উৎকল ব্রাহ্মণদের গড়গড়ে পিঠা,
বাঁকুড়া,পুরুলিয়া,মেদিনীপুরে
সীমাবদ্ধ পরিবেশে যার বিস্তার ঘটা।
স্বাদ,গন্ধ,পুষ্টিতে খাদ্য ভরপুর
নারকেল,ছানা,কড়াই,ক্ষীরের পুর,
খেঁজুরের গুড় মিশ্রিত সুস্বাদু পিঠা
জগদ্বিখ্যাত খাদ্য বাঙালীর পুলিপিঠা।
—oooXXooo—