চল ঋতু নরকে চলে যাই-
বাসুদেব চন্দ
আজ আবারও শিশির ও আমি বসেছি মুখোমুখি-
মাঝখানে দুটো গ্লাস তাকিয়ে আছে যেন আমাদের চেয়েও দুঃখী!
বেশি খেলে আমি থম মেরে থাকি
দু’পেগে ভুলভাল বকি-
“হ্যাঁরে শিশির, এ-নেশাতুর’রাতে ঘরে শুতে গেলে
তোর বউদি আমায় ঢুকতে দেবে না রে!
ঋতু হলে আলাদা কথা, নরম সুরে বলত-“কী যে তুমি করো!
এসো,আমায় শক্ত করে ধরো!”
আমি তখন আঁতুরঘরের শিশুর মতো হামাগুড়ি দিয়ে
বাঁ-হাতে ভূমিকে ছুঁয়ে ডানহাত আকাশে মেলি!
বল না রে শিশির, ঋতুকে এনে দিবি?
বল না শ্লা কত টাকা নিবি!”
টাকার কথা শুনেই শিশির ফিক করে ফ্যালে পিক!
ফেলবেই তো, ও তো জানে- আমি হত দরিদ্র!
সেকেলে একখানা ছাতা, তাতেও শত ছিদ্র!
আরে উজবুক, এ ‘টাকা’ সে ‘টাকা’ নয়- এটা নেশার আসরে মুড!
এখানে সবই সত্যি, নেই কোনও ঝুট!
চলো তো ঋতু,
এই ভীতুদের ফেলে
তুমি আর আমি নরকে যাই চলে!
শিশির থু থু মুছে থিতু হয়ে বলে-
“আরে হাঁদারাম, সবাই তো স্বর্গে যেতে চায়!
ঋতুকেই যদি পাস
নরকে কেন যাস!”
“উরিব্বাস! স্বর্গতে ঠেলাঠেলি আর জম্মের ভিড়,
মাঘের শীতে পুণ্যস্নান নিতে গিজগিজ করে সাগরের তীর!
ওখানে যেতে কঠিন অঙ্ক কষতে হয়,
কত দিলে কত নিতে হয়-
কত নিলে কত দিতে হয়-
এসব শিখতে হয়।
কত ট্রিক্স কত পলিটিক্স দুই-চারে হয় না ভাই, চাই শুধু সিক্স!
আমি তো হাঁদারাম, ওসব নেই প্র্যাকটিস!
জানিসই তো, অঙ্কে বড় কাঁচা, শুধু চাই ভালোবাসা-জারিত
একটুখানি বাঁচা!”
আরও বলি শোন-
“নরকের সবাইই পাপী, নেই ভেদাভেদ, নেই মাপামাপি!এখানে সবাই বোকা
চালাকির ধার ধারে না,
দেয় নাকো ধোঁকা!
এবার বল দেখি শিশির,
স্বর্গের সুখ কি নরকের থেকেও বেশি!”
এ-ভাবে ভরপুর বকে
টলমল পায়ে
কাঁপা বুকে এসে
দাঁড়ানু শেষে
নিজ ঘরে
পরবাস বেশে!
তখন গভীর রাত-
ক্লান্ত পৃথিবী কুপোকাত!
আমি শুধু ভিক্ষা মাগি-
“খোলো হে দ্বার, কৃপা করে খোলো!”
“কেন এলে ঘরে?
বাকি রাতটা কাটিয়ে
আসতে নাহয় পরে!”
আমি নতমস্তকে বলার চেষ্টা করি-
“আর হবে না গো, বাইরে বড় শীত! খোলো গো দ্বার খোলো!”
“কে রে, খোকা এলি না কি”? এক্ষুণি ঢোক ঘরে!”
মাতাল পায়ে ভুল তাল ও লয়ে
বেতালা হয়ে ঢুকি অপরাধ ও ভয়ে!
কী লাভ কথা বলে!
কথায় কথা বাড়ে!
মা নিশ্চিত হতে আবারও বলে-
খোকা, গেলি কি ঘরে?”
—oooXXooo—