অবশ্য শেষ পর্যন্ত এত ঝামেলা কিছু করতে হল না। সেদিনই ঘরে গিয়ে ভালো খবর টা পেয়ে গেল সুখেন। কসবার ওই কারখানাতে ওর চাকরি টা পাকা হয়ে গেছে। ওরা কাল থেকেই যেতে বলছে। ওদের নাকি এক্ষুনি লোকের দরকার। বিরাজ দা বলে এসেছে পরশু থেকে কাজে যোগ দেবে ও। এখন কার হপ্তার টাকা তো পেয়েই গেছে। দুটো দিনের টাকা মার যাবে। কী আর করে যাবে ? উপায় নেই। ও যদি গিয়ে এখন বলে — ও অন্য জায়গায় কাজ পেয়েছে ওরা ছাড়বে ওকে ? তাছাড়া শিখার ব্যাপারটাও আছে। আর বললেই হাজার প্রশ্ন। কোথায় কাজ ? কী কাজ ? কত টাকা দেবে ? ধ্যাত। দরকার নেই। ও দুদিনের রোজ মার যায় যাবে। নিমাই দা অবশ্য বলেছে চেষ্টা করবে টাকাটা উদ্ধার করার। পারলে পারবে। না হলে যাক। শিখাকে নিয়ে ওখানেই ঘর বাঁধবে ও। কারখানায় কাজ আর শিখাকে করতে দেবে না ও। ওখানে মেয়ে মানুষের সম্মান থাকে না। সে রাতে আর ভালো করে ঘুমই হল না ওর। কী অদ্ভুত যোগাযোগ ! পরশুই ওরা লুকিয়ে তারকেশ্বর চলে যাবে ভাবছিল। আর যেতে হবে না। সব কথা ও খুলে বলেছে নিমাই দা, বিরাজ দা কে। নিকুঞ্জ ঘোষ কে চেনে বিরাজ দা। বলছিল ওর মত হারামী মানুষ আর হয় না। টাকার কুমির লোকটা। আর নজর যত নোংরার দিকে। ওর অসাধ্য কোন কাজ নেই। শিখা যেটা ভয় পাচ্ছে সেটা খুব একটা অসম্ভব কিছু না। লোক দিয়ে ওকে তুলে নিতে যেতেই পারে নিকুঞ্জ ঘোষ।
সবাই মিলে বসে প্ল্যান করেছে সে রাত্রেই। পরশু ভোর বেলা সুখেন বাস স্ট্যান্ডে চলে যাবে। শিখাকে ও বলা থাকবে। নিমাই দা সাইকেল নিয়ে শিখার সামনে থাকবে। রাস্তা টা ও ঠিক মত চেনে কিনা জানা নেই তো।তাই। বিরাজ দা শিখদের বাড়ির কাছাকাছি। যদি কোন গোলমাল হয় কোনক্রমে সামাল দেবে। আর কালকে বিকেলের দিকে বেরিয়ে বিরাজ দা থাকার ঘরটা দেখে নেবে। কারখানার কাছেই নাকি ঘর আছে থাকার। কিন্তু তাতে মেয়েছেলে নিয়ে থাকা যাবে কিনা সেটাও তো জানতে হবে? নিমাই দা অবশ্য বলছে একটু অসুবিধে হলেও কটা দিন থেকে নতুন ঘর দেখে নিবি। সেটা বুঝতে পারছে সুখেন। কিন্তু শিখা ! ও যে একটু সৌখিন মেয়ে সেটা ওকে দেখলেই বোঝা যায়। দশ জনের মধ্যে গাদাগাদি করে ওকে রাখতে সুখেনের মন চায় না। তবু তখনকার মত নিমাই দার কথাতেই সায় দিয়েছিল ও। পরশু দিন ভোর বেলা বেরিয়ে আগে কালীঘাট চলে যাবে ওরা। ওখানে বিয়ে করে তারপর কসবায় যাবে। এদিককার কিছু ঝুট ঝামেলা না থাকলে বিরাজ দাও চলে যাবে। একেবারে ওদের থিতু করে দিয়ে আসবে। জিনিসপত্রও তো কিনতে হবে। তোষক, বালিশ, চাদর। স্টোভ । কিছু বাসন পত্র। চাল ডাল । অন্তত দু দিন চলার মত আনাজ পত্র। নিমাই দা আর ও রাজ দা যেন ক্ষেপে উঠেছিল সে রাতে। খালি প্ল্যান করছে, হিসেব করছে। সুখেনের তো রীতিমত লজ্জা করছিল। তার মধ্যে একটা কথাই কেবল মনে হচ্ছিল পিসি কিছু জানতে পারল না। মনে ভীষন দুঃখ পাবে হয়ত।
নিমাই দা অবশ্য বলেছে যে সব বুঝিয়ে বলবে। কিন্তু তবু পিসির ভাঙ্গা চোরা মুখ, শিরা বার করা হাত আর করুন চোখ দুটো বারবার সুখেনের চোখের সামনে ভেসে উঠছিল। ছোটবেলা থেকে বাপ মা হারিয়ে ওই পিসি ই তো মানুষ করেছে ওকে। আর আজ ওর জীবনের এমন একটা দিনে পোসি থাকবে না ওর পাশে ? এটা খুব খারাপ হচ্ছে। কিন্তু উপায়ই বা কী?
অন্ধকার ঘরে একা বিছানায় শুয়ে সেদিনের কথা ভেবে আবার উত্তেজিত হয় সুখেন। পরের দিন সব কথা শিখাকে জানানোর জন্য আবার শেতলা মন্দিরে গিয়েছিল ও। শুনে শিখা যে খুব খুশি সে তো বলার অপেক্ষা রাখে না। শুধু একটাই কথা বলেছিল।
“ কারখানায় কাজ করতে দিতে না চাইলে করব না। কিন্তু রান্নার কাজ যদি করি ?” সুখেনের সেরকম ইচ্ছে নয়। কেন ওর রোজগারে কি দুজনের চলবে না ? নয় একটু কষ্টই হবে। তাতে কী? আর দেশে সুখেনের জায়গা জমি আছে। পিসির কাছে গিয়েও থাকতে পারবে শিখা। তখনকার মত চুপ করে গেছিল শিখা। কথা বাড়ায় নি।
পরের দিন সব প্ল্যান মতই হয়েছিল ওদের। কোন ঝামেলা ঝঞ্ঝাট হয় নি।
অসাধারণ প্লট
অসাধারণ লেখা