দুগ্গা এল
বাসুদেব চন্দ
এই সময়টায় চাটুজ্যে’বাড়িতে সাজ সাজ রব পড়ে যায়, সকলের ভাবগতিক যায় পাল্টে। চেহারায় কেমন যেন একটা চকচকে ভাব চলে আসে!
রথীন চাটুজ্যে বরাবরই খিটখিটে স্বভাবের লোক, মধুরতা’র বড়ই অভাব! তাঁরও দুগ্গা’র আগমনে মন একেবারে চনমনে!
অবশ্য ভগবতী’গিন্নির কত্তার মেজাজ নিয়ে অত মাথাব্যথা নেই; তাঁর যত চিন্তা, দুগ্গার আগমন নিয়ে-
“হ্যাঁ রে বড়ো’খোকা, বলি দুগ্গা আসছে কীসে?”
“প্রতিবারই তোমার এএকই প্রশ্ন! আচ্ছা; হাতি-ঘোড়া যাতেই আসুক, তা জেনে তুমি করবেটা কী শুনি? তুমি কি তাঁকে আনতে যাচ্ছ? যাঁরা তাঁর সঙ্গে অসছে, তাঁরা ঠিক তাঁকে যত্ন করে নিয়ে আসবে। তাই ওসব চিন্তা ছেড়ে বাবাকে গিয়ে বলো দাশরথি’কে খবর দিতে।”
গিন্নি’মা তাঁর বড়ো খোকার মুখের ওপর বড়ো একটা কথা বলেন না, তাই ‘খোকার কথায় যুক্তি আছে’- ভেবে নিয়ে তিনি এগোলেন কত্তার খোঁজে।
***
বাড়ির সদস্যরা অন্যসময় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকলেও এই সময় সকলেই ঘরমুখো হয়! দেখুন না, ‘কাকলি’ পি.জি. ছেড়ে দিয়ে আজ কেমন বাড়ি ফিরে এসেছে! ‘কাকলি’ হচ্ছে চাটুজ্যে’বাড়ির একমাত্র মেয়ে, সকলের খুবই আদরের। সেও কিনা একটা ভালো কাপড় সঙ্গে এনেছে দুগ্গাকে দেবে বলে!
***
সপ্তমী অষ্টমী কাটিয়ে আজ নবমীর দুপুর। কাকলি’কে মধ্যমণি করে সকলে খেতে বসেছে। কাকলি বলল-
এ-জন্যই পুজোর কটাদিন পি.জি.তে মন টেকে না!
বদ্দা কাকলির পিঠে হাত রেখে বলল- কীকরে টিকবে বল, এ-সময় বাড়িতে একেকদিন একেকরকম মেনু হয়! শুধু কি আর রকমফের, মাসির রান্নার স্বাদই আলাদা!
কত্তা’মশাই হাত চাটতে চাটতে রান্না’মাসির উদ্দেশে বললেন- “বুঝলি রে মেয়ে, তুই বাড়ি চলে গেলে আমাদের খাওয়ার বারোটা বেজে যায়!”
দুগ্গা একমাথা ঘোমটা টেনে বলল-
“সে-কতা ভেবেই তো চলে এনু দা’বাবু, তা নালে আর কটাদিন থাকতি পাল্লে নাত’বউয়ের বাচ্চাটার মুখ দেখি আস্তি পাত্তুম!”
—oooXXooo—