সংযুক্তা বণিক বাবা মায়ের এক মাত্র মেয়ে l খুব ছোট বেলা থেকেই ভীষণ আদর যত্নের মধ্যে দিয়ে বড় হয়েছেl বাবা ব্যাঙ্ক এ চাকরি করতেন আর মা স্কুলের টিচার l বাবা মা দুজনেই যেহেতু চাকরি করতেন তাই সংযুক্তাকে ছোট বেলা থেকে কাজের লোকের কাছে থাকে মানুষ হতে হয়েছে l স্নান খাওয়া দাওয়া স্কুলে যাওয়া আসা সবই করতে হয়েছে কাজের লোকের কাছে l কাজের লোকের কাছে মানুষ হলেও নিয়ম শৃঙ্খলার কোন ত্রুটি হত না l সংযুক্তা ক্লাস ওয়ান থেকেই পড়াশুনায় ভাল ছিল l বাবা মা পড়াশুনার কোন ফাঁক থাকতে দেন নি l ভাল ভাল বই কিনে দিয়েছেন l সব সাবজেক্টের প্রাইভেট টিউটর দিয়েছেন l পুরোপুরি ছকে বাঁধা জীবন l ফিজিক্স এ অনার্স নিয়ে B. Sc. পাশ করে শেঠ আনন্দ রাম জয় পুরিয়া কলেজ থেকে l স্কুলে একটা শিক্ষকতার চাকরি পেয়েছিল l ছ মাস পর লাইফ ইন্সুরেন্স কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়াতে ডেভেলপমেন্ট অফিসার ( PDO -Probationary development officer ) Sales পদে আর একটা চাকরি পায় l স্কুলের চাকরিটা ছেড়ে দিয়ে লাইফ ইন্সুরেন্স কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়াতে জয়েন করে l এই চাকরিটা অনেকটা মনের মত হয়েছে l স্যালারিও আকর্ষণীয় l সংযুক্তার তুষার শুভ্র কোমল বাহু বল্লবি ও সুঠাম সুশ্রী অনাবৃত বাহুর সৌন্দর্য আর কলসির মত কোমর বহু তরুনের কোমল মনকে আন্দোলিত করে তুলতো এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই l উনমুক্ত কোটিদেশ ও নাভির নয়নাভিরাম সৌন্দর্য যে কোনো পুরুষের শরীরের উষ্ণতা বাড়িয়ে দেবার পক্ষে যথেষ্ট l হাল্কা সিনথেটিক শাড়িতে দেহের সৌন্দর্যের সীমারেখা ছাপিয়ে গিয়ে তরুণী অভিসারিকার সন্মোহিত রূপ বহু পুরুষের শরীরের রক্ত প্রবাহের গতি বাড়িয়ে দিত বহু গুন l কাজল কালো পটল চেরা চোখ সমুদ্রের মত গভীর কিন্তু সরোবরের মত স্নিগ্ধ l অনেকে বলতো মৃগ নয়না l পাতলা শুকনো ঠোঁট দুটো কোনো দক্ষ শিল্পীর নিপুন হাতের আঁকা নিখুঁত ছবির মত l টোল পড়া গাল দুটো রসে পরিপূর্ণ l উন্নত নাসিকা তীক্ষ্ণ বুদ্ধির পরিচয় বহন করে l সরস গ্রিবা শরীরের আকর্ষণ বাড়িয়েছে বহু গুন l সোফার স্প্রিংয়ের মত গোল গোল করে পাকানো গলা পর্যন্ত চুল রাম ধনুর মত নানা রঙে অপূর্ব শোভা বর্ধন করে l দোহারা গড়ণ l গায়ের রং দুধে আলতা, উচ্চতা পাঁচ ফুট তিন ইঞ্চি l উন্নত বক্ষ যুগল l রূপ যৌবন যেন মুক্তোর মতো ঝরে ঝরে পড়তো l সিনথেটিক শাড়ি পড়ে রাস্তায় হাঁটলে যৌবনের ঢেউ একটার পর একটা আছড়ে পড়তো যুবক থেকে মধ্য বয়স্কদের মনের সমুদ্র তটে l মুখের মধ্যে সব সময় একটা উজ্জ্বল ও সপ্রতিভ ভাব জেগে থাকে l সাজলে ঠিক রাজইন্দ্রানীর মতো দেখায় l লক্ষ্মী সরস্বতী দুই বোনেরই সম্মেলিত রূপ প্রকাশ পায় সংযুক্তার মধ্যে l পাড়ার অনেক ছেলেরই দৃষ্টি ছিল সংযুক্তার উপর কিন্তু ওর গাম্ভীর্যের কারণে কেউ কাছে ঘেঁষতে সাহস পেত না l
সুস্মিত কুন্ডু মধ্য বিত্ত পরিবারের ছেলে l বাবা পোস্ট অফিসে চাকরি করতেন l পোস্টাল অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে l মা গৃহ বধূ l বাবা মা খুব যত্ন করে মানুষ করার চেষ্টা করছেন ছেলেকে l মায়ের কথা হলো ছেলেকে যেন বাবার মতো কেরানির চাকরি করতে না হয় l যদিও বাবার যা রোজগার তাতে মোটামুটি খেয়ে পড়ে জীবন কাটিয়ে যাওয়া যায় l কারো কাছে হাত পাতার দরকার হয় না l তবে হাত খুলে খরচা করার উপায় নেই l অদম্য সাধ পূর্ণ করার প্রবল বাসনা মায়ের মনের মধ্যে সব সময় ঘোর-ফেরা করে তারই তাড়নায় মা চান ছেলে যদি একটা ভালো মাইনের চাকরি পায় তবে এই অপূর্ণ সাধ গুলোর কিছুটা পূর্ণ করে নিতে পারে l সুস্মিত ভালো ছেলে l সে মন দিয়ে পড়াশুনা করে l পড়ার জন্য ওর পিছনে লেগে থাকতে হত না l ও নিজে নিজেই পড়া তৈরি করে নিত l যেটা আটকাতো স্যারদের কাছে দেখিয়ে নিত l প্রাইভেট টিউটর রাখার দরকার হয় নি l মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক দুটো পরীক্ষাতেই সুস্মিত ৮৮ % এর বেশি মার্কস পেয়েছে l আশুতোষ কলেজ থেকে ফিজিক্স এ অনার্স নিয়ে B. Sc. পাশ করেছে ফার্স্ট ক্লাস পেয়ে l কোলকাতা ইউনিভার্সিটি থেকে M. Sc. পাশ করেছে l দু নম্বরের জন্য ফার্স্ট ক্লাস হয় নি l সুস্মিত নম্র ভদ্র ছেলে l মার্জিত কথা বার্তা l চোখে মুখে ইন্টিলেজেন্সির একটা ছাপ আছে l পাড়ায় ভালো ছেলে হিসাবে ওর খুব সুনাম আছে l কর্মক্ষেত্র দেখে লাইফ ইন্সুরেন্স কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়াতে ডেভেলপমেন্ট অফিসারের ( PDO ) Sales র চাকরির জন্য একটা পরীক্ষা দিয়েছিল l তারপর অন্যান্য চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো l হঠাৎ লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানির চাকরিটার সিলেকশন লেটার এসে পরে l মা বললেন…. বাবু তু্ই LIC তেই জয়েন কর l মাইনে ভালো, উন্নতির সুযোগ আছে l তোর আর চাকরির চেষ্টা করে কাজ নেই l মায়ের মন রাখার জন্য সুস্মিত লাইফ ইন্সুরেন্স কর্পোরেশন অফ ইন্ডায়াতেই জয়েন করলো l শ্যামবাজার ব্রাঞ্চে,হাতিবাগান,বিধান সরণি কলকাতা চার l কেষ্টপুরের সমর পল্লীর বাড়ী থেকে 12 C/2 বাসে উঠলে খান্না ছাড়িয়ে অফিসের পাশে নামতে হয় l সুস্মিত বাংলা ইংরেজি ও হিন্দি তিনটি ভাষাতেই অনর্গল কথা বলতে পারে l কম্পিউটারের নলেজ ও ভালো l খুব অল্প দিনের মধ্যেই কাজ কর্ম শিখে নিতে পেরেছে l মার্জিত কথা বার্তা আর ভালো আচরণের জন্য সবার সাথে বন্ধুত্ব তৈরি হতে বেশি সময় লাগেনি l সংযুক্তা জয়েন করেছে দম দম ব্রাঞ্চে l কলকাতা আঠাশ l সংযুক্তার বাড়ী বিরাটির মহাজাতি নগরে l বাড়ী থেকে 237 No.বাসে উঠে কলকাতা এয়ারপোর্ট এক নম্বর গেটে নেমে অটোতে করে একদম অফিসের সামনে নামতে পারে l সংযুক্তা কম্পিউটার ভালো জানে l নতুন জয়েন করলেও ওর মিষ্টি ব্যবহারের জন্য অল্প দিনের মধ্যেই অফিসের সবার সাথে সংযুক্তার বেশ ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠেছে l চাকরি পাবার বছর চারেকের মধ্যে সংযুক্তার বিয়ে ঠিক হয়ে যায় ইন্ডিয়ান ফরেস্ট সার্ভিস ডিপার্টমেন্টের এক অফিসারের সঙ্গে l পাত্র Forest Ranger Officer. Designated Group -B gazetted government officer of a state forest service.শ্বশুর বাড়ী হাতি বাগানের মোহন বাগান লেন, দর্পনা সিনেমার পিছন দিকে , সেন মহাশয়ের মিষ্টির দোকানের কাছাকাছি l শ্বশুর বাড়ী ভালো হয়েছে l স্বামী ভদ্রলোক তো খুবই ভালো l নম্র ভদ্র বিনয়ী l বেশ সুখে শান্তিতে দিন কেটে যাচ্ছিল সংযুক্তার l সংযুক্তার ছেলে প্রাপ্তির যখন চার বছর বয়স তখন সংযুক্তার স্বামীর একটা বড় এক্সিডেন্ট হয় l তিনি জিপ গাড়ি চালিয়ে অফিস থেকে কোয়ার্টারে ফিরছিলেন l নর্থবেঙ্গলে পোস্টিং ছিল l ওনার একটু মদ্যপানের অভ্যাস ছিল l নিয়ম করে বিলাতি মদ পান করতেন l গাড়ি চালাবার সময় ওনি সম্ভবত মদ্যপান করেছিলেন l তাই হয়তো টাল সামলাতে পারেন নি l সামনের দিক থেকে আসা একটি লরির সঙ্গে সামনা সামনি ধাক্কা লেগে যায় l হাসপাতালে ভর্তি করে অনেক চেষ্টা করা হয়েছিল l অনেক টাকা খরচ করা হলো কিন্তু বাঁচানো গেলো না l সকলের মায়া কাটিয়ে এই ধরাধাম থেকে তিনি বিদায় নিলেন l তার সুখস্মৃতি বুকে নিয়ে সংযুক্তা পুত্রকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে রইল ভারাক্রান্ত মনে l প্রত্যেক দিন ঘুম থেকে ওঠার পর সংযুক্তার বুকটা ভারী হয়ে থাকে l ঘুমটা ভালো হয় না l চোখের সামনে সব সময়ই একটা ছায়া ছায়া ভাব l স্মৃতি মায়া জাল বুনে সংযুক্তার চার পাশে ঘুরে বেড়ায় l এই ভাবেই অফিস করতে হচ্ছে, ছেলেকে নিয়ে সংসার করতে হচ্ছে l
সুস্মিত দম দম ব্রাঞ্চে অ্যাসিস্ট্যান্ট ব্রাঞ্চ ম্যানেজারের পদে ট্রান্সফার হয়ে আসে l তখন তার মেয়ে সমাপ্তির বয়স তিন বছরের একটু বেশি হবে l তখন প্রায় ছ মাস হয়েছে স্ত্রী সমিপার ইউটেরাস ক্যান্সার ধরা পড়েছে l সরকারি বেসরকারি অনেক হাসপাতালে ডাক্তার দেখানো হয়েছে কিন্তু ভালো কিছুই হয় নি l বোম্বের টাটা হসপিটাল থেকে ফিরিয়ে দিয়েছে ট্রিটমেন্টে কাজ হবে না বলে l এখন ট্রিটমেন্ট চলছে চিত্তরঞ্জন ক্যান্সার হাসপাতালে l তবে ভয়ের বিষয় হোল অনেক দেরিতে ধরা পড়েছে l অনেকটা ছড়িয়ে পড়েছে l অপারেশন হবে সামনের মাসের পাঁচ তারিখ l অপারেশন ছাড়া কোন পথ নেই l টিউমারটা এতো বড় হয়ে গেছে যে তার শিকড় অনেক দুর ছড়িয়ে পড়েছে l এখন কেমোতে আর কাজ হবে না l চিত্তরঞ্জন ক্যান্সার হাসপাতালে অপারেশন হোল কিন্তু ডাক্তার বাবু কোন আশা দিতে পারলেন না l আস্তে আস্তে খারাপের দিকে চলে যেতে থাকায় ডাক্তার বাবু আশা ছেড়ে দিলেন l বললেন এখন শুধু ঈশ্বরকে ডাকুন l বাড়ী নিয়ে যান, আর মাস খানেক হয়তো আয়ু আছে l তাই হল বাড়ীতে নিয়ে আসার মাস খানেক পর সমিপা এক রত্তি মেয়ে ও স্বামীকে ছেড়ে পৃথিবী থেকে হারিয়ে যায় চির দিনের মতো l সর্বভূতে বিলীন হয়ে যায় সমিপার নশ্বর দেহ l আগুনের লেলিহান শিখা তাকে গ্রাস করে নেয় l একটা মানুষ যখন এই ভাবে চলে যায় তারপর থেকে তার চিহ্ন মাত্রও খুঁজে পাওয়া যায় না l শুধু রয়ে যায় তার কিছু স্মৃতি মনের মন্দিরে বিগ্রহের মতো l এটাকে সম্বল করে বহু মানুষ বেঁচে থাকে বহু দিন ধরে নির্জীবের মতো প্রাণহীন দেহ নিয়ে l শোকে পাথরের মতো হয়ে গেল সুস্মিত আর মেয়ে তো কিছু বুঝতেই পারলো না l তবুও জীবনের টানে মানুষকে উঠে দাঁড়িয়ে কাজে কর্মে ফিরে আসতে হয় l যেমন নিরস শুষ্ক পাথরের বুকে প্রাণ সঞ্চার করে উদ্ভিদ জন্ম নিয়ে একটু একটু করে বিরাট মহুরুহের আকার ধারণ করে পৃথিবীকে জানিয়ে দেয় যে সে আছে l শোক কাটিয়ে বেঁচে উঠে সোজা হয়ে দাঁড়ানোটাই প্রকৃতির নিয়ম l শোকে মুহ্যমান হয়ে জীবন থেকে হারিয়ে যাওয়া প্রকৃতির নিয়ম না l মানুষ পৃথিবীতে আসবে যাবে কিন্তু পৃথিবী একই রকম থাকবে l সুস্মিত কিছু দিন হলো একটা বিষয় প্রতক্ষ্য করছে যে যে কোন একজন মানুষের সে যত বড় গুণী মানুষ হোন বা সামান্য মানুষই হোন তার চলে যাওয়াতে পৃথিবীর কোন হেলদোল থাকে না l জনকোলাহলের একটুকুও ভাটা পড়ে না l তারমানে যে যায় সে যায় l তার পুরো জীবনটা উপভোগ করা হয় না l কখনো সুস্মিত সংযুক্তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলে সোজা হয়ে দাঁড়াতে আবার কখনো সংযুক্তা সুস্মিতকে সান্ত্বনা দিয়ে বলে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে l এই ভাবে চলতে চলতে ওদের মধ্যে একটা সহানুভূতির জন্ম নেয় ওদের অজান্তে l কথা বলার জন্য একজন দরকার হয় এবং যদি তাকে পাওয়া যায় তবে তাকে বলার জন্য মনের মধ্যে অনেক কথা জন্ম নেয় l সেই কথাগুলো মনের মধ্যে ঘুরপাক খেতে খেতে এক সময় ভাষা হয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে l সমাজকে খুশি করতে গিয়ে মরাল হয়ে নিজেকে বঞ্চিত করার মধ্যে জীবনের কোন স্বার্থকতা নেই বরং তার থেকে সরে এসে নিজেকে মুক্ত করে বাঁচাটাই জীবনের স্বার্থকতা l জল যেমন উচ্চ ভূমি থেকে নিম্ন ভূমিতে যেতে চায় জীবনও তেমনি মুক্ত হতে চায় l কিন্তু স্মৃতি যে পূর্ণ মায়ায় মানুষকে পিছনে টানে l পুত্রের শুষ্ক পাংশু বর্ণের মুখটা তার মনটাকে ব্যাথায় ভরিয়ে দেয় l রক্ত হীম হয়ে পুর শরীরটা শিথিল হয়ে যায় l এই সব সাত পাঁচ চিন্তার ফলে সংযুক্তার মনের মধ্যে খরণ শুরু হয় l এই খরণের যন্ত্রনা অসহ্য l ঈশ্বর মানুষকে যতটা দেন তার থেকে হয়তো কেড়ে নেন অনেক বেশি l মানুষও বুঝতে চায় না যে কতটা তার প্রাপ্য l যদি কিছু বেশি নিয়ে নেওয়া হয় তবে তার জন্য মানুষকে গুনাগার দিতে হয় অনেক l ঈশ্বরের বিচারে কেউ রেহাই পায় না l সুস্মিত একজন মহিলা কাজের লোক রেখেছে মেয়েকে দেখাশোনা করার জন্য l কিন্তু সমাপ্তি যখন মাকে খোঁজে , মায়ের কথা জানতে চায় তখন সুস্মিত বাক শক্তি রোহিত হয়ে যায় l মহা শূণ্যেরে দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে অবোধের মতো l মেয়ের কথার উত্তর সুস্মিত দিতে পারে না l এটা যে কত কঠিন প্রশ্ন বাবার কাছে সেটা সমাপ্তি জানে না l তাই নিজেকে লুকিয়ে রাখে মেয়ের কাছ থেকে, বুঝতে দেয়না তার অক্ষমতার কথা l সে প্রাণ পণ চেষ্টা করে স্বাভাবিক হবার জন্য কিন্তু পারে না l এ ভাবে কত দিন চলতে হবে তাও সে জানে না l কিন্তু সে এই অসহায় অবস্থা থেকে মুক্তি চায় l স্ত্রীর অভাব বোধটা দিনের পর দিন এত বেড়ে যাচ্ছে যে সুস্মিত না নিজেকে সামলাতে পারছে না মেয়েকে বোঝাতে পারছে l এই অভাব বোধ সুস্মিতকে একটু একটু করে সংযুক্তার সান্নিধ্য পাবার আগ্রহ বাড়িয়ে দিচ্ছে l একটু বেশি সময় ধরে সংযুক্তার সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছা হয় l সুস্মিতের মনে পড়ে যায় যে সমীপা বলতো… সমস্যা মানুষকে আষ্টেপৃষ্টে বেঁধে ফেলতে চায় তাই কোন সমস্যাতেই পিছু হটতে নেই বা খুঁড়িয়ে হাটতে নেই l তার মোকাবিলা করে সামনে এগিয়ে যেতে হয় l মেয়ে ভাবছে যে বাবা সব সময় ভয়ে ভয়ে থাকে l এই পৃথিবীতে যেন ওনার জোর দিয়ে বলার মতো কিছুই নেই l সে বাবার এমন বিমর্ষ ভাব আগে কখনো দেখেনি l যেন কি একটা বিরাট অপরাধ বোধ থেকে নিজেকে আড়াল করতে মুখ লুকিয়ে রাখতে চাইছে l এই সব প্রশ্নের উত্তর পাবার জন্য তার মনের মধ্যে মায়ের অভাব বোধ দিন দিন তীব্র হচ্ছে l মা ছাড়া আর কেউ এই অভাব দূর করতে পারবে না l তাই বাবার কাছে তার প্রধান দাবি মাকে এনে দিতে হবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব l সংযুক্তা ছেলেকে স্কুল থেকে অনা নেওয়া করার জন্য একজন বয়স্ক লোককে রেখেছে l বাড়ীতে সর্বক্ষনের এক জন পরিচারিকা আছে সে রান্না বান্না ও ঘরের কাজ কর্ম সব করে l চলছে সবই কিন্তু স্বামীর অভাব বোধ দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে l তারপর ছেলের বাবাকে ঘিরে নানা প্রশ্ন তার বুকে তীরের ফলার মতো বিধছে l শরবিদ্ধ পাখি যেমন যন্ত্রনায় ছটফট করে সংযুক্তার যন্ত্রনাও তার থেকে কিছু বেশি তো কম না l ছেলের সামনে নিজেকে বড় অসহায় লাগে l ছেলের প্রশ্ন তার মুখের মধ্যে যেন একটা নিকষ কালো ছায়া খোদাই করে দেয় l শূণ্যেরে দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে চোখের দৃষ্টি ঘোলাটে হয়ে আসে l মুখের রং টা ফিকে হয়ে যায় l ছেলে ভাবে বাবার কথা জিজ্ঞেস করলেই মায়ের মধ্যে যেন কেমন একটা চোর চোর ভাব দেখা যায় কিন্তু কেন এমন হয় সে তা বুঝতে পারে না l তাই সে বিশেষ কিছু মাকে জিজ্ঞেস করতে পারে না l সংযুক্তা ভীষণ একা…হ্যাঁ… ভীষণ একা l মাঝে মাঝে মনে হয় এই একাকীত্ব তাকে বধির করে ফেলবে l মনকে তোলপাড় করে দিচ্ছে স্বামীর অভাব বোধ l এই অভাব বোধের একটু স্বস্তি মেলে সুস্মিতের সঙ্গে কথা বলে l তাই সুস্মিতকে তার ক্ষতে প্রলেপ দেবার অনুঘটক বলে মনে হয় l তার মন তার অজান্তে সুস্মিতকে খুঁজে বেড়ায় একটু স্বস্তি পাবার নেশায় l বাড়ীতে এসেও মোবাইল ফোনটা রিং করে কানে ধরে সুস্মিতের কণ্ঠস্বর শুনতে পেলে একটু তৃপ্তি আসে মনে l অফিসে টিফিনের সময় সংযুক্তার কোন কোন দিন সুস্মিতকে ডাকতে ইচ্ছা করে এক সঙ্গে বসে খাবার জন্য l এই মনে হওয়াটা ঠিক না ভুল সেটা ভাবতে ইচ্ছা করে না l এই মনে হওয়াটাকেই জীবনের অমূল্য উপাদান বলে মনে হয় l একে আঁকড়ে ধরে বাঁচাটাই জীবনের স্বার্থকতা বলে মেনে নিতে ইচ্ছা করে l জীবন যে সমুদ্রের মতো যে দিকে খুশি সে দিকে সাঁতার কাটা যায় l এই বাস্তব সত্যটাই বোঝা দরকার l জীবনটা যারই হোক তাকে ফাঁকি দিয়ে বঞ্চিত করার মধ্যে দিয়ে কোন মহত্বতা লাভ করা যাবে না এটা নিশ্চিত l যে চলে গেছে সে স্বামীই হোক আর স্ত্রীই হোক তাকে আঁকড়ে ধরে না থেকে রি-ম্যারেজ করলে তার প্রতি অবমাননা করা হবে এমন অনুশাসন কতটা জীবনের পক্ষে আর কতটা জীবনের বিপক্ষে সেটা বিচার করে দেখা উচিৎ l রি-ম্যারেজের ক্ষেত্রে একটা পারিপার্শ্বিক চাপ আসে সেটা সামলে নেওয়াও কঠিন l এক কথায় একটা জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় l কেউ কেউ এই দ্বিধা-দ্বন্দ্ব কাটিয়ে উঠে রি-ম্যারেজ করতে পারে আবার কেউ কেউ পারে না l একটা কথা আছে…. Necessity is the mother of invention. মানুষের মধ্যে যদি কোন অভাব বা সমস্যা দেখা দেয় তবে সেই অভাব বা সমস্যা সমাধান করার জন্য মানুষের মনের মধ্যে বিরামহীন একটা প্রচেষ্টা চলতে থাকে l মন আপন গতিতে তার মতো করে সমাধানের পথ খুঁজে বেড়ায় l সমাধানের পথ খুঁজে বের করে তবেই শান্ত হয় l মনের এই বিরামহীন চেষ্টা মানুষ কখনো বুঝতে পারে আবার কখনো বুঝতে পারে না l যেমন জল, তৃষ্ণা পেলে মানুষকে জল পান করতে হয়, খিদে পেলে খাবার খেতে হয় l সেই রকম ভাবে জীবনের সকল সমস্যাই সমাধান হওয়া চাই l আজকাল অফিস থেকে বাড়ী ফেরার সময় সুস্মিতের ইচ্ছা করে সংযুক্তাকে তার গাড়িতে করে বাড়ী পৌঁছে দিতে l সংযুক্তা প্রথমে আপত্তি করলেও শেষে গাড়িতে উঠে বসে l সংযুক্তা একটু বেশি করেই টিফিন আনে এবং টিফিনের সময় সুস্মিতের সঙ্গে শেয়ার করে l মনে মনে ভাবে ওর জন্য কিছু একটা করা হল l ওর জন্য কিছু একটা করতে পারলে সংযুক্তার মনে একটা প্রফুল্ল ভাব আসে l মনটা চনমনে হয়ে উঠে l মাঝে মাঝে ভাবে ওর যদি একটু শরীর খারাপ হত তাহলে ওকে দেখার নাম করে ওর বাড়ী যাওয়া হত l ওর বাচ্চাটাকে একটু আদর করা যেত l এ রকম নানা কিছু ঠিক বেঠিক সংযুক্তার মনের মধ্যে ঘুরে বেড়াতে থাকে l বিষয়টা নিয়ে অফিসের কারো কারো চোখ টাটালেও কেউ কিছু বলেনি কখনো l ব্রাঞ্চ ম্যানেজার সাত্যকি রঞ্জন দাস ওদের এই ধরণের আচরণ সমর্থন করতেন l উনি চাইতেন যে ওদের সম্পর্কটা যদি পূর্ণতা পায় তো ভালোই হয় l বাচ্চা দুটোও মা বাবাকে ফিরে পায় আর ওদেরও নিঃসঙ্গতার অবসান ঘটে l ওরা জীবন চক্রটাকে সম্পূর্ণ করার একটা সুযোগ পায় l সংযুক্তা একদিন ফোন করে ব্রাঞ্চ ম্যানেজারকে জানায় যে তার জ্বর হয়েছে তাই সে অফিসে আসতে পারবে না l খবর টা জানার পর সুস্মিত অফিস ছুটির পর বাড়ী ফেরার পথে গাড়ি নিয়ে সংযুক্তার বাড়ী যায় সংযুক্তাকে দেখতে l কাজের মাসি দরজা খুলে দিলে সুস্মিত ঘরে ঢুকে সংযুক্তার পাশে গিয়ে বসে l সংযুক্তা….. অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে l ভালো হয়েছে আপনি এসেছেন l আমি আপনার হাত দিয়ে, Casual leave এর application টা পাঠাতে পারবো l সুস্মিত….. Ok. No Problem.ডাক্তার বাবু কি বলেছেন l সংযুক্তা…. বিশেষ কিছু না l ভাইরাল ফিভার l তিন দিন পর থেকে জ্বরটা কমতে থাকবে l মোটামুটি এক সপ্তাহ লাগবে সেরে উঠতে l আপনার বাড়ী ফিরতে দেরি হয়ে যাবে l মেয়ে একা রয়েছে l সুস্মিত…. হ্যাঁ , আমি ফোন করে বাড়ীতে বলে দিয়েছি যে একটু দেরি হবে l সংযুক্তা …. চা খাবে না কফি ? l এই দ্যাখো খাবে বলে ফেললাম l সুস্মিতা…. Its ok,no problem. কফি l সংযুক্তা কাজের মেয়ে বিমলাকে ডাক দিয়ে দু কাপ কফি দিতে বলে l সংযুক্তা….. তুমি,তোমার মেয়ে ঠিক আছো তো ? সাবধানে থাকবে l চারি দিকে জ্বর জ্বারী হচ্ছে খুব l সুস্মিত…. যে দিন তোমার সাথে আমার প্রথম দেখা হোল,তোমার বিষয় জানতে পারলাম সে দিন বুঝেছিলাম যে জীবন তো শুধু পড়াশুনা করা, প্রচুর রোজগার করে বাড়ী গাড়ি করে নিজের পায়ে দাঁড়ানো , প্রতিষ্ঠিত হওয়াই না l মনের মতো একজন মানুষকে খুঁজে বের করে তার সাথে হাত ধরে হাটা, গল্প করা,আড্ডা মারা, চা খাওয়া, হাসি ঠাট্টা ,সুখ দুঃখের ভাগিদার হওয়া এই ছোট্ট ছোট্ট বিষয় গুলোই জীবন l তুমি আসার আগে আমার বাঁচা ছিল জীবনকে বয়ে নিয়ে যাওয়া l তুমি আমার অনেক কিছু বদলে দিয়েছো l গন্ডির বাইরে বেরিয়ে জীবনের অর্থ বুঝতে শিখিয়েছ l আমি ঠিক এই জীবনটাই চাই l সংযুক্তা….. আমি ঠিক এই কথাটাই তোমার মুখ থেকে শুনতে চেয়েছিলাম l কিছুক্ষন বাদে সুস্মিত সংযুক্তার বাড়ী থেকে বেরিয়ে যায় l এরপর দু জনেই তাদের অতীত জীবনের বিভিন্ন খুটনাটি বিষয় গুলো একটা একটা করে স্মরণ করতে থাকে l স্মৃতি রোমান্থণের ফলে যদি আগের জীবনের তরঙ্গ এসে ভাসিয়ে নিয়ে যায় তবে এই জীবনের মাধুর্য কিছুটা হ্রাস পেতে পারে l এক এক করে অনেক অনাকাঙ্খিত ত্রুটি চোখের সামনে ভেসে ওঠে l সেই দাম্পত্য জীবনের অনেক কিছুই অনভিপ্রেত ছিল বলে আজ মনে হচ্ছে l পছন্দ অপছন্দের অমিল , রাস্তায় হাঁটতে গিয়ে ঝগড়া, বেড়াতে গিয়ে ঝগড়া l ঝগড়া, বাত বিতন্ডা, হিসাব নিকাশ একটু একটু করে আগের জীবন কে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে l সামান্য সামান্য ভুল গুলো আজ বড় হয়ে সামনে এগিয়ে আসছে l সেই জীবনটায় স্বস্তির চেয়ে তিক্ততারই আধিক্য বেশি ছিল বলে আজ মনে হচ্ছে l প্রথম দাম্পত্য জীবন আবছা,ধোঁয়াশা, ফিকে, বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে চোখের সামনে একটু একটু করে l আসলে সত্য সব সময় নির্মমই হয় l বর্তমান ও অতীত দুটো জীবনের মধ্যে তুলনা করলে বর্তমান জীবনকেই বেশি সপ্রতিভ ও সমৃদ্ধ বলে মনে হয় l এই তুলনা মূলক বিচার বিশ্লেষণের মধ্যে দিয়েই ওরা বর্তমানের সম্পর্কটাকে পরিণতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইছে l এখন চিন্তা ওদের সন্তান এই সম্পর্কটাকে কিভাবে নেবে সেটাই l সন্তানদের সঙ্গে পরিচিত হবার জন্য ওরা এক দিন পিকনিকের আয়োজন করল l ঠিক হলো আগামী রবিবার ওরা ইক্কোপার্কে যাবে সঙ্গে খাবার দাবার রান্না করে নিয়ে l যদি ছেলে মেয়ের মধ্যে বন্ধুত্ব হয়ে যায় তবে দীঘা যাওয়া হবে নেক্সট উইক এন্ডে l সুস্মিত…… দেখো জীবনে বেঁচে থাকার জন্য, সুখী হবার জন্য বেশি অর্থের প্রয়োজন হয় না l পরিমিত আয় দ্বারাই সুখী হওয়া যায় l প্রয়োজনের তুলনায় বেশি অর্থ মানুষকে ভোগবিলাসের মধ্যে টেনে নিয়ে যায় l জীবনকে উশৃঙ্খল করে তোলে l তখন সুখ অধারাই থেকে যায় l কারণ ভোগবিলাসের মধ্যে সুখ থাকে না l মানুষের চাহিদা, লোভ এত বেশি যে তাতেই সব নষ্ট হয়ে যাচ্ছে l স্বামী স্ত্রীর মধ্যে আদর্শগত মিল থাকলে সন্তান খুব ভাল মানুষ হয় l জীবন মাধুর্য পূর্ণ হয় l আশা করি আমাদের আদর্শগত মিল আছে l সংযুক্তা….. ঠিকই বলেছো l আধুনিক বিজ্ঞান মানুষের সুখ স্বাচ্ছন্দের জন্য গবেষণা চালিয়ে প্রচুর সামগ্রী উপহার দিচ্ছে এবং তাতে মানুষের ব্যবহারের উপকরণ বাড়ছে কিন্তু মানুষের মনের অস্থিরতা কমছে না, মনের বহুরূপী ভাব দূর হচ্ছে না, চেতনা জাগ্রত হচ্ছে না l তার জন্য যে জ্ঞান ও অনুশীলন দরকার সেটা মানুষ অনুভব করতে পারছে না l যেমন পরিবর্তনশীল জগতের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য নিজেকে পরিবর্তন করতে না পারলে হারিয়ে যেতে হয় l স্রোতহীন নদী যেমন শুখিয়ে চড়া পড়ে যায় l তখন তার বুকের উপর দিয়ে প্রাণীরা পদ দলিত করে চলে যায় l মানুষের জীবনেও তেমন হয় l সর্বগ্রাসী লোভের চতুষ্কোনের মধ্যে বাস করে লোভকে সংবরণ করে বেঁচে থাকা খুব কঠিন l তার জন্য আদর্শবাদী হওয়া চাই l
সুস্মিত….. এখন মনে হয় যদি জীবনের শুরুতে ফিরে যেতে পারতাম তবে জীবনটাকে গুছিয়ে সাজাতে পারতাম l সংযুক্তা…. হ্যাঁ ঠিকই বলেছো কিন্তু প্রকৃতি মানুষকে সে সুযোগ দেয় না l প্রকৃতি যেমন মানুষের জন্য অনুকূল তেমনি আবার প্রতিকূলও l প্রকৃতি প্রকৃতির নিয়মেই চলবে l সুস্মিত…… আমরা কয়েক জন দুঃস্থ মেধাবী ছেলে মেয়ের পড়াশুনার দায়িত্ব নিয়ে তাদের মুখে হাঁসি ফোটাতে চাই l মাধ্যমিক পরীক্ষায় অবশ্যই ৮০% এর বেশি মার্কস পেয়েছে এমন দুজনের দায়িত্ব আমরা নেব l তোমার মত আছে কিনা জানাও l সংযুক্তা….. আমিও এরকম একটা কিছু ভাবছিলাম l ঠিক আছে আমি রাজি l সামনের মাধ্যমিক পরীক্ষার রেজাল্ট বের হবার পর আমরা আমাদের এই কাজ শুরু করবো l সুস্মিত….. অবস্থাপন্ন মানুষেরা সহজ সরল হয়ে চলতে পারে না l তারা টাকার সঙ্গে টাকার সম্পর্ক, সম্পত্তির সঙ্গে সম্পত্তির সম্পর্ক তৈরি করে l জীবনের সঙ্গে জীবনের সম্পর্ক তৈরি করতে পারে না l সত্যকে আড়াল করে ভনিতা করে বাঁচার চেষ্টা করে l এটাকে জীবন বলে কিনা আমি জানি না l সংযুক্তা…… দেখ খিদের জ্বালায় কেউ একটা রুটি চুরি করে খেলে বাজারের সবাই তাকে মেরে জুতার মালা পড়িয়ে সারা বাজার ঘুরায় l আর এক জন হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে মেরে দিলেও তাকে কেউ কিছুই বলে না l সমাজ বিরোধী শুধু বস্তিবাসীদের মধ্যেই থাকে না সমস্ত শ্রেণীর মানুষের মধ্যেই আছে l
ইক্কোপার্কের পিকনিকে গিয়ে প্রাপ্তি আর সমাপ্তির মধ্যে ভীষণ বন্ধুত্ব হয়ে যায় l যেন ওরা সহদর ভাই বোন l সংযুক্তা আর সুস্মিতও খুব খুশি l তাহলে ওদের পরিকল্পনা কার্যকরী হবার প্রবল সম্ভাবনা আছে l সেই আনন্দে ওরা উইক এন্ডে দীঘা বেড়াতে গেল চার জন l প্রহর শেষের আলোয় দিঘার সমুদ্র সৈকত যখন রঙ্গিন হয়ে উঠেছে সেই সময় ঝাউ বনের নির্জনে ওরা নিজেদেরকে জানতে বুঝতে মগ্ন হয়ে পড়েছে একান্তে নিভৃতে l সংযুক্তা….. তুমি যেদিন প্রথম চোখ মেলে আমার চোখের দিকে তাকিয়েছিলে আমি ভীষণ বিহ্বল,আপ্লুত হয়ে পড়েছিলাম l মনে মনে ভাবছিলাম এত ভালোবাসাও আছে আমার কপালে l সুস্মিত … তুমি যেদিন প্রথম আমার হাত ধরে বলেছিলে….. তোমার সঙ্গে এক সঙ্গে হাটতে চাই জীবন পথের শেষ ধাপ পর্যন্ত l সে দিন আমার মনে হয়েছিল সারা পৃথিবীর সমস্ত শক্তি বুঝি আমার শরীরে ভর করেছে l সংযুক্তা….. তুমি যেদিন আমায় প্রথম ফোন করেছিলে সেদিন আমার মনের মধ্যে আনন্দের প্লাবন বয়ে গিয়েছিল l তরঙ্গে তরঙ্গে শিরায় শিরায় শিহরণ বয়ে বেড়াচ্ছিলো সারা শরীরে l তারপর থেক সব সময় ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকতে আমার ভীষণ ভালো লাগতো তোমার ফোনের আশায় l সুস্মিত…..তোমার ভালোবাসার শক্ত বাঁধন আমাকে আমৃত্যু বেঁধে রাখবে তোমার সঙ্গে সেটা আমি অনুভব করতে পেরেছিলাম l এতটা চাইতে আমি ভয় পাচ্ছিলাম l মনে হচ্ছিলো যে স্বপ্ন দেখছি বুঝি l সংযুক্তা….. বেঁচে থাকার সব আশা যখন শেষ হয়েগিয়েছিল সেই সময় তুমি এসেছিলে আমার জীবনে প্রবল ঢেউয়ের মত l আমাকে ভাসিয়ে নিয়ে গেলে ভালোবাসার প্লাবনে l দেখিয়ে দিলে সুখের নীড় রচনা করার ঠিকানা l সুস্মিত… তুমি আমাকে শিখিয়েছো নতুন করে স্বপ্ন দেখতে l সকলকে ভালোবেসে এক সঙ্গে কিভাবে বাঁচতে হয় কানে দিয়েছো তার মন্ত্র l আমার ক্লান্ত অবসন্ন মনকে দিলে সবুজ বনবীথির সুশীতল ছায়ার সন্ধান l সংযুক্তা…..তুমি আমাকে বুঝিয়েছ কেউ একজন হাত ছেড়ে চলে গেলেই জীবন শেষ হয়ে যায় না l অসংখ্য জন এগিয়ে আসতে পারে সেই হাতটা ধরার জন্য l অসহায় জীবনের সহায় হয়ে তুমি প্রভাতের রক্তিম সূর্যের মতো এগিয়ে এসেছিলে আমার মনের শূণ্যতাকে ভরিয়ে পূর্ণ করে দিতে l সুস্মিত…… আর একটা কথা , সন্তানরা সব থেকে বেশি খুশি হয় যখন তারা দেখে যে তাদের বাবা মা এক সঙ্গে বসে প্রফুল্ল চিত্তে গল্প করছে l তাতে তারা বুঝতে পারে যে তাদের বাবা মা একে অপরকে খুব ভালোবাসেন l আমাদেরকে সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে l সংসার মানে যোগ বিয়োগ গুণ ভাগ আনন্দ বেদনা এই সব কিছুকে ভাগ করে নেবার বিষয় l সম্পর্ক ভাঙে আবার সম্পর্ক গড়েও l এটাই সংসারের নিয়ম l