মেহ্ফিল
শ্যামাপ্রসাদ সরকার
সেদিন খুব বৃষ্টি নেমেছিল পনঘটপে
ক্রমে ভেসে যাচ্ছিল মধ্যবিত্তের তাথৈ সম্বল
তাও সিঁড়ির ওপর অফিস ফেরতা বাবা
দেখি কখন যেন এক গা’ বৃষ্টি নিয়ে এসেছে,
খুশখুশে কাশি বলে গরম আদা- চা
সেই বর্ষায় অর্ডার হয়েছিল রান্নাঘরে,
সেদিন মা পাঁপড় ভেজেও দিয়েছিল সাথে করে,
হ্যাঁ, তখন মারু-বেহাগই বাজছিল!
….
একদিন সবাই মুখ নীচু করে, চাপাস্বরে
শুয়ে থাকা মায়ের সামনে কথা বলছিল।
রোগের অভিঘাত যা ছিল অলঙ্ঘনীয়
তাই সামনে তখন একগোছা রজনীগন্ধা যেন;
শেষ বেলায় উপুড় করে দেওয়া হল সিঁদুর
একটি আসঙ্গবোধ, যোজন দূরে চলে যেতে যেতে
কে ছড় টেনে বাজিয়েছিল কি মেহফিলের ডাক?
নাহ্ ! সেদিন আর বৃষ্টি পড়েনি কোনওখানে।
….
ঘর ছেড়ে চলে যাওয়াটা নেহাৎ সহজ ছিল,
অথচ জমান কিছু স্মৃতি অথবা দূর্নিবার সব
অধিকারবোধ ও অভ্যেসের টানাপোড়েন
চাএর ভাঁড়ের মত নিতান্ত অদরকারী মন সহ,
হাত ধরার অভ্যাস ও সন্তানের কুসুম স্পর্শ
সব ছেড়ে তুমি সেদিন চলে আসতে পেরেছিলে !
উত্তেজনা লুকিয়ে রাখার পরকীয়া স্বাদ
অজান্তেই নটমল্লারে মুক্তি খুঁজেছিল কি?
নাহ্ ! সেদিনের পর থেকে আর বৃষ্টিতে ভিজি না!
….
অবাধে মৃত্যু ঘোরে ঈর্ষান্বিত জীবনের কাছে
দু’একটা চুম্বনদাগ, গহন ত্রিবলীরেখায়
কেউ যদি ভীমপলশ্রী বাজাতে পারত,
অথবা দরবারী কানাড়া, ইমন, ভূপালী
তখন হাতের মুঠিতে যতবার করুণ শঙ্খের মত
স্পর্শ করেছি অন্য কারো স্তনাগ্র, ছুঁয়েছি নিম্ন নাভী,
তবুও আর বাগেশ্রী শুনতে পেতাম না
আর কখনও তারপর থেকে।
—oooXXooo—