নাট্যোৎসবে উদ্বোধনী সঙ্গীত গাইল মালবিকা। আর তারপর নাটক দেখা হল না তার। কলকাতার অনির্বাণ নাট্যগোষ্ঠীর একজন সদস্য মালবিকার কাছে এসে বলল “কী নাম তোমার “? মালবিকা নিজের নাম বলল। লোকটা বলল “তোমার বাড়িতেই খাবার আয়োজন যখন তখন আবার দেখা হবে। সেখানেই তোমার সাথে জরুরি কথা বলব”। মালবিকা আশ্চর্য হয়ে গেল। কী আবার জরুরি কথা। ও কে এমন। ওরা কী মালবিকাকে নাট্যদলে যোগ করতে চায়! মালবিকার পক্ষে সেসব সম্ভব নয়। ও অনেক অনেক লেখাপড়া করবে। তারপর ও শিক্ষিকা হবে। যেমন করে স্যার রা বলেন একটা প্রদীপ থেকেই হাজার হাজার প্রদীপ জ্বলে ওঠে। ঠিক তেমনই ।
মালবিকার বাবা রাগ করে। এতো লোকের রান্না আমার মেয়েটাকে দিয়ে করিয়ে নিচ্ছে। মালবিকা বাবাকে চুপ করতে বলে। একটা দিনের ব্যাপার। একটু সাহায্য চেয়েছে।
দুপুরে সবাই তৃপ্তি করে খায়। সকলেই মালবিকার প্রশংসাতে পঞ্চমুখ। এরমধ্যেই সেই লোকটা তার জরুরি কথা বলে। মালবিকার কন্ঠস্বর খুব সুন্দর। তাই অ্যানাউসমেন্ট এর কাজের প্রস্তাব আসে। লোকটি এইসব কাজ করে। রেকর্ড করে দেওয়ার কাজ। অনেক কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান ফিমেল ভয়েস চায়। একঘন্টার ব্যাপার। মালবিকার আনন্দ আর ধরে না। এই কাজগুলো রবিবার করবে সে।এক একটা রেকর্ডিং এ পাবে পাঁচশ টাকা। বাবা বলল “রবিবার হলে আমিও সঙ্গে থাকব।” আরও উপার্জন বাড়ল মালবিকার। এখন রেকর্ড করার স্ক্রিপ্ট লিখে দিচ্ছে ও। তার জন্য আরও দুশো। সংসারের হাল ধরল মালবিকা। মা মামার বাড়ি গেলে মাকে টাকা দেয়। বড়ো মাছ কেনে। বাবাকে একটা ধুতি কেচে পড়তে হয় না।
মাধ্যমিক পরীক্ষায় স্কুলের নাম উজ্জ্বল করল মালবিকা। জেলায় প্রথম হল সে। বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হল মালবিকা। তারপর একের পর এক পরীক্ষার বৈতরণী পার হয়ে এখন সে স্কুলের দিদিমণি। লড়াই করে নিজের জায়গা প্রতিষ্ঠা করেছে মালবিকা। এখন যেন সেই মালবিকা। যে রাণী ধারিণীর পরিচারিকা ছিল। তারপর হয়ে গেল অগ্নিমিত্র র স্ত্রী। বাবা আর নেই। তবু বাবার সেই গান আজ ও গায় মালবিকা “চিরদিন। কাহারও সমান নাহি যায়”। সবাই বলেছিল মালবিকার বিয়ে হবে না। কে বিয়ে করবে অমন কালো মেয়েকে। কিন্তু সেটাও মিলল না। মালবিকার জীবনে প্রেম এল। এক সাহিত্য সভায় এক কবির সাথে আলাপ হল মালবিকার। লম্বা,উস্কো খুস্কো চুল কবি একটা কবিতা লিখে মালবিকাকে বলল “তোমাকে নিয়ে কবিতা লিখেছি। সব কবির একটা মানসী থাকে। তুমি আমার মানসী মালবিকা। “
কোনও পুরুষ কখনও এমন করে মালবিকার কাছে আসে নি। বারবার কবিতাটা পড়তে লাগল মালবিকা। আমাকে নিয়ে কবিতা। অদ্ভুত এক অনুভূতি গ্রাস করল ওকে। রাতে বিছানাতে শুয়েও পড়ছে মালবিকা “আকাশ আঁচলে বাঁধা তোমার শরীরী শিহরণ গতিময় চাহনিতে তুমি জ্যোতির্ময়ী। কত বৃষ্টি জমা আছে বুকের গভীরে তুমি তা জানো না আজো। নীল উচ্ছ্বাসে ভাসে সাতরঙা স্বপ্নতরীখানি। উড়ে যায় ইচ্ছে পাখি আকাশ উঠোনে”।
মালবিকার হাসি পায়। ভারী পাগল ছেলে। কবি বলেছে :বৃষ্টি মানে ভালোবাসা। প্রেম এসেছে মালবিকার।