“গাহি সাম্যের গান মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহিয়ান। “— গেয়েছিলেন হেথা কাজী নজরুল ইসলাম, মানুষে মানুষে সাম্যের আর জীবনের জয়গান। দুই বাংলার সাহিত্যাকাশে প্রকাশিত হয়েছিলেন ধূমকেতুর সমান, জাতির অথবা জাতের প্রশ্নে তুলেছিলেন স্লোগান। “হিন্দু না ওরা মুসলিম”– প্রশ্ন কোরো না আর, সমাজের বুকে এমন প্রশ্নে আঘাত হেনেছে বারবার। কুসংস্কার কিংবা বৈষম্যের প্রতিবাদ করেছিলেন কবি, তাঁর রচনায় তিনি এঁকেছিলেন সাম্যবাদের ছবি।
চুরুলিয়া গ্রামে মাটির বুকেতে জন্মেছিলেন দুখু মিঞা, শত কষ্টেও মাথাখানি তাঁর রাখেননি কখনও নোয়াইয়া। কৈশোরে তিনি পিতা-মাতাকে হারিয়ে বহু কষ্ট ও ক্লেশে, নানাবিধ কাজে দিন যাপনের পরে ভাসেন কবিতার আবেশে। ধুমকেতু নামে পত্রিকা এলো নজরুলের সম্পাদনায় ইংরেজ শাসক “বিদ্রোহী কবি” নামে তকমা লাগালো গায়ে। পরাধীনতার শৃঙ্খল ভাঙ্গার গান গেয়েছিলেন কারাগারে, কারার লৌহ কপাট তাকে পারেনি আটকাতে গান লিখিবারে।
অগ্নিবীণার ঝঙ্কারে তিনি তুলেছিলেন দেশমাতৃকার গান, বাঁশের বাঁশরীর সুরে মেতে উঠেছিল বিপ্লবীদের প্রাণ। কবি নজরুল তার কবিতা গানে ভরিয়েছিলেন সাহিত্যাকাশ, তাঁর অবদানে বাঙালীর মন তাঁকে স্মরণ করে বারোমাস। তাঁর সৃষ্টিতে তিনি সকল বিভেদ করতে চেয়েছিলেন দূর, ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে তুলেছিলেন একসূত্রে বাঁধার সুর। তাঁর কালজয়ী সৃষ্টিতে তিনি দিয়েছিলেন প্রেমের পরশ, মানবতার কবি গজলের দোলায় পেয়েছিলেন দুই বাংলার যশ।
তিনি বেদুইন,টর্পেডো,মাইন হয়ে যুবশক্তিকে দিয়েছিলেন প্রেরণা, অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ চূর্ণ করে জাগিয়েছিলেন স্বাধীন চেতনা। তিনি মহাপ্রলয় সম রণ দুন্দুবী বাজিয়ে দিয়েছিলেন মহা হুঙ্কার, তাঁর প্রচন্ড নাদে ভীত ইংরেজ মেনেছিল তাঁকে ঈশান-বিষাণের ওঙ্কার। বাংলা সাহিত্যের সমাবেশে সদর্পে বিরাজমান মহীরুহ সম, প্রেম বিরহে সংগ্রামী চেতনায় তিনি রবেন অম্লান অনন্য। সীমার মাঝে অসীম তিনি চির ভাস্বর প্রাণ চিত্তে সবার বিরাজিছেন তিনি পেয়ে সকলের সম্মান।