হালখাতা
সুমান কুণ্ডু
সংবাদে প্রকাশ প্রযুক্তির চাপে, হালখাতা নাকি গুরুত্ব হারাইতেছে। মুর্শিদ কুলি খান বাংলার নূতন নবাব হিসাবে দায়িত্ব লইবার পর বঙ্গবাসীদের মধ্যে এই হালখাতার উৎসব শুরু হইয়াছিল। বর্তমানে বড়বাজার এবং শিয়ালদহের বৈঠকখানা বাজারে বাঙালীর অন্যতম উৎসব পয়লা বৈশাখের পূর্বে হালখাতা বা লালখাতার বিক্রয় অত্যন্ত নিম্নমুখী। ব্যবসায়ীরা এর কারণ হিসাবে প্রযুক্তি অর্থাৎ কম্পিউটারের উপর দোষ চাপাইতেছেন। দোষ কাহার ইহা মুখ্য বিষয় নহে। কিছু বঙ্গবাসী ইহার উপর ভিত্তি করিয়া, খাওয়া পরা জুটাইতো তাহাই প্রধান সমস্যা। কোন রাজনৈতিক দল ইহার বহুপূর্বে রাজ্যে কম্পিউটার নামক যন্ত্রটি ঢুকাইতে দিতে বাধার সৃষ্টি করিয়াছিল যাহাতে একশ্রেণীর মানুষ উক্ত যন্ত্রটির প্রভাবে যাহাতে কর্মহীন হইয়া না পড়েন। বর্তমানে উক্ত কম্পিউটার আমাদের যারপরনাই সুবিধা করিয়া দিয়াছে নিশ্চিত কিন্তু উহার প্রভাব কি জনমানসে কিছু ভারী পরে নাই। অধিকাংশ প্রযুক্তির সহিত পরিবর্তনকামী ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ অত্যন্ত উৎফুল্ল এবং আনন্দিত এই কম্পিউটার নামক যন্ত্রটির বাড়বাড়ন্তে। তাহাদের মতে কম্পিউটার বিজ্ঞানের আশীর্বাদ অতএব উহাকে অস্বীকার করিয়া থাকা প্রকারন্তে বিজ্ঞানকে অবহেলা করিবার সমান। প্রশ্ন হইতেছে সত্যই কি কম্পিউটারের নিরপেক্ষ বা প্রযুক্তিগত ব্যবহার আমাদের উপকৃত করিয়াছে? তাহা হইলে হালখাতার মত বহু পুরাতন জিনিস বা প্রথা যাদুঘরে স্থান লইতেছে কেন? আমি মানিতেছি যে জীবন সংগ্রামে একটি মুখ বন্ধ হইয়া যাইলে অন্য দিক বা মুখ উন্মোচিত হয়। দিনে দিনে বিভিন্নভাবে এই কর্মহীন হইয়া পড়া মানুষগুলো হয়ত কোন অন্য উপায়ে জীবনধারণ করিয়া লইবে। কিন্তু বিজ্ঞানের আশীর্বাদকে প্রশস্ত পথ করিয়া দিবার নিমিত্ত এইরূপ বলপূর্বক কোন প্রযুক্তিকে সর্পিলভাবে জায়গা করিয়া দিবার নামই বোধহয় উন্নয়ন বা বিশ্বায়ন।
আমার কথা কে শুনিবে হয়ত দুএকজন এই লেখাটি পড়িবে এবং কতিপয় ব্যক্তি পছন্দ স্বরূপ লাইকস প্রদান করিবে। কিন্তু ইহা কি আমাদিগকে ভাবিয়া দেখিবার সময় আসে নাই যে বিজ্ঞানের আশীর্বাদও মাঝেমধ্যে অভিশাপের স্বরূপ মূর্তি ধারন করে। তৎকালীন সময়ে যাহারা বা যে ব্যক্তিবর্গ এই কম্পিউটার নামক প্রযুক্তিটিকে কিঞ্চিৎ জায়গা ছাড়িতে প্রস্তুত ছিলেন না তাঁহারা কি বর্তমান জীবনযাত্রায় ভয়ানক রকম অপ্রসাঙ্গিক হইয়া পড়িতেছেন? কি জানি?
আমি ভাবিতেছি।
আপনারা?
জয় ১লা বৈশাখের জয়।
—oooXXooo—