“বাড়িতে কেউ আছেন? আমি রজতাভ। মাসিমা। দরজা খুলুন।” রজতাভ অনেক ক্ষণ এই দরজার কাছে দাঁড়িয়ে। রজতাভ মৈত্র। চুঁচুড়ার ছেলে। হাওড়াতে ফ্ল্যাট আছে।সম্প্রতি চাকুরি সূত্রে থাকে হায়দরাবাদ। এখন তার অনেক নাম আর প্রতিপত্তি।
কিন্তু একদিন এই বাড়িতে তার কত সময় কেটেছে। নতুন জীবনের হাতছানি তাকে এই সব দিন গুলো ভুলিয়ে দিয়েছিল। ভুলে গিয়েছিল তার ভালোবাসার মানুষ কে। তখন কত আর বয়স। পিয়ালী ছিল তার ভালোবাসা। বলাই মিস্ত্রি লেনেই ছিল পিয়ালীর বাড়ি। শিবপুর বি ই কলেজ এর উজ্জ্বল ছাত্র রজতাভ তখন পিয়ালীর বাড়িতে ভাড়া ছিল।
পিয়ালীর সাথে থাকত ওর মা। রজতাভ মাসিমা বলেই ডাকতো। মাসিমা কখনও ভাড়াটে হিসাবে দেখে নি রজতাভকে। কেবল বলতো “আমার মেয়েটার লেখাপড়ায় মন নেই বাবা। একটু অঙ্ক টা দেখিয়ে দাও।” এই অঙ্ক শেখানোর সুযোগেই দুটি প্রাণ কাছাকাছি এসেছিল। পিয়ালী তেমন ভালো ছিল না লেখাপড়ায়। গিন্নিপনাটাই তার চরিত্রে প্রবল ছিল।
রজতাভের ঘরে ঢুকেই পাকা বুড়ির মতো বলতো “ইসসস! কী করে রেখেছো ঘরখানা। এখানে কী মানুষ থাকে”! বলেই বই এর তাক গুছিয়ে দিত। ঝাড়ু এনে গোটা ঘর ঝাঁট দিয়ে মুছতো। রজতাভ মানা করত মুখে কিন্তু পরিচ্ছন্নতা কে না চায়?
এমনি করেই কখন যে পিয়ালীর মনে রজতাভ জায়গা করে নিয়েছিল ওরা বুঝতেই পারে নি। রজতাভ নিজের কেরিয়ার নিয়ে ব্যস্ত। আর পিয়ালীর মনে বসন্তের কোকিল। এমনি করেই পিয়ালী রজতাভের অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল। রজতাভ দরজার কাছে দাঁড়িয়ে অনেক ক্ষণ । বেশ কিছুক্ষণ পর এক বৃদ্ধা এলেন। দরজা খুললেন। কম্পিত কন্ঠে অনেক কষ্টে যেন বললেন “কে বাবা তুমি”। বৃদ্ধার এই কন্ঠস্বর রজতাভের ভীষণ চেনা। কতদিন এই শীর্ণ হাতগুলো মাতৃস্নেহের অভাব মিটিয়েছে। রজতাভ মনে মনে ভাবলে “বড় ভুল হয়ে গেছে। রঙীন জীবনের হাতছানিতে সে অসাধারণ নকল বুঝতে পারে নি। ব্যাকুল হয়ে রজতাভ বললে “মাসিমা। আমাকে চিনতে পারছেন না। আমি রজত। আপনার সেই রজত”। চিকচিক করে উঠল বৃদ্ধার চোখ। হারাধন ফিরে পেয়েছে যেন বৃদ্ধা। হাতদুটো বাড়িয়ে দিয়েছেন রজতাভের দিকে। সারা শরীর তাঁর কাঁপছে। শুধুই কী যেন বলতে গিয়ে বলতে পারছেন না। রজতাভ চিৎকার করল “মাসিমা। কথা বলতে পারছেন না কেন? কী হয়েছে !”
রজতাভ ভিতরে ঢুকল। পকেট থেকে রুমাল বার করে মুখটা মুছলো। হঠাৎই তার পিয়ালীর জন্য মনখারাপ হয়েছে। তাই ছুটে এসেছে। কিন্তু এতদিন তার কেন মনে হয় নি। দানের শেখ লেনে ঝাঁ চকচকে ফ্ল্যাট তার। এই তো ঢিল ছোঁড়া দূরত্ব। তবুও কেন তার মনে হয় নি পিয়ালীর খোঁজ নেওয়ার প্রয়োজন।
পিয়ালীর মা আর ভালো করে কথা বলতেই পারে না। কোনও এক দুর্ঘটনার কারণে স্বতঃস্ফূর্ত কথা বলার শক্তি নেই। তবুও তার চোখ দেখে বোঝা যায় কত কী যেন বলতে চাইছে। এই বাড়ির প্রতিটি অলিঘুঁজি চেনে রজতাভ। কিন্তু পিয়ালীর দেখা নেই কেন। সে কোথায় গেছে। তবে কী কোনও কাজ করে ও! ভীষণ ঘাম হচ্ছিল রজতাভের। আসলে এই ঘর গুলো ভীষণ গরম বলে হয়ত। হঠাৎই চমকে উঠল রজতাভ। ঘরের মধ্যে একটি মেয়ে। আশ্চর্য। মেয়েটি প্লেটে দুটো নাড়ু নিয়ে এসেছে। একদৃষ্টে দেখল রজতাভ। এটা কী পিয়ালী নাকি! কিন্তু সেটা কী করে হবে। তবে কী ওর কোনও যমজ বোন। পিয়ালী হলে সে তো এতক্ষণ রজতাভের মুখোমুখি হোতো। কিন্তু এ মেয়েটার আবভাব দেখে তো মনে হচ্ছে রজতাভকে সে কখনও দেখে নি।
মেয়েটি প্রথম কথা বলল। “আশ্চর্য হচ্ছেন মিস্টার মৈত্র? আপনার কথা আমার মিস্টু দিদির মুখে শুনেছি। আপনি তাকে ভালোবাসতেন। তারপর আপনাদের ব্রেক আপ হয়ে যায়। আসলে আপনার মতো একটা ব্রিলিয়ান্ট ছাত্র একটা সাধারণ মেয়ের সাথে ঘর বাঁধতে যাবেই কেন? তা হঠাৎ আপনার আগমন কী মনে করে?”
একসাথে এতগুলো বাক্যবাণ শুনে থতমত খেয়ে গেল রজতাভ। আমতা আমতা করে বলল “আপনাকে আমি তো কখনও দেখিনি। আর আমাকে দেখেই আপনি কী করে চিনলেন”? মেয়েটি বলল “আমার নাম মানালী। আপনি যখন এই বাড়ির আশ্রিত ছিলেন তখন আমি দেরাদুনে ছিলাম। আমার বাবা ব্লক অফিসের কেরাণী ছিলেন। হঠাৎই হার্ট অ্যাটাকে তার মৃত্যু হয়। তখন সেই চাকরি আমি পাই। গ্রামের দিকে বদলি হই আমি।
রজতাভের সন্দেহ যেন আর যায় না। এই বাড়ির মানুষ গুলোর একটা সময়ে তাকে আশ্রয় দিয়েছিল। চুঁচুড়ার বঙ্কিমকাননে ওর পৈতৃক ভিটে। কিন্তু জয়েন্টে ভালো র্যাঙ্ক করে শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি হয়েছিল রজতাভ। কী সুন্দর ছিল সেই দিন গুলো। আর আজ। পিয়ালীকে সে পাচ্ছে না কেন?
ওই তো সেই জানালা। ওখানেই একদিন পিয়ালী ওকে আবীর মাখিয়েছিল। কখন ছুটে এসে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরেছিল পিয়ালী। রজতাভ সেদিন নিজেকে ঠিক রাখতে পারে নি। আলতো করে পিয়ালীর ঠোঁটে চুম্বন করেছিল। কী সুন্দর চোখ দুটো ছিল পিয়ালীর। ওই চোখ দুটো দেখে মনে মনে সংকল্প করেছিল রজতাভ। এই সহজ সরল মেয়েটার ভালোবাসা উপেক্ষা করবে না সে। আর আজ কে এই মানালী। চোখ দুটো হুবহ পিয়ালীর মতোই। পিয়ালী তো কখনও বলে নি তার বোন আছে।
মানালী বলল “দানেশ শেখ লেনে এখন কদিন থাকবেন তো? “ বস্তুত এরকম প্রশ্ন আসতে পারে রজতাভ ভাবতেই পারেনি। মানালী মেয়েটাকে ঠিক সহজ সরল মনে হল না রজতাভের। তবে ও যে পিয়ালী নয় এটা তো নিশ্চিত রজতাভ। আর কারণ টা খুব ভাল করেই জানে সে। প্রশ্ন টার উত্তর দিতে এত দেরী করছে রজতাভ। আর এটাই যেন মানালীর মুখে বিদ্রুপ এর হাসি এনে দিল। রজতাভের সেটা চোখ এড়ায় নি। রজতাভ বলল “হ্যাঁ। কিছুদিন এখানেই থাকব।তারপর হায়দ্রাবাদ চলে যাবো। তবে চুঁচুড়ার বাড়িতেও একবার যাবো। “
মানালী আর কথা বাড়ালো না। বলল “আচ্ছা। আমার একটু কাজ আছে। মায়ের জন্য ওষুধ আনতে যাবো। আপনি এখন আসতে পারেন। আর একটা কথা। পিয়ালী কোথায় আছে জানতে চাইলেন না তো”! একটা রক্তিম আভা রজতাভের মুখে ছড়িয়ে গেল যেন। রজতাভ বলল “সেটাই তো ভাবছি। তবে এটাও মনে হয়েছে যে সে হয়ত পরস্ত্রী এখন। তাই তেমন কৌতুহল দেখাই নি। আচ্ছা এখন আসছি। পরে হয়ত দেখা হবে।”
রাতে ফ্ল্যাট বাড়িতে একা রজত। মনে পড়তে লাগল অনেক কথা। সেই প্রথম যেদিন পিয়ালী বলেছিল “রজতদা। আমি তোমার শুধুই। তোমার জন্য এই জীবন দিয়ে দিতে পারি। লাভিউ রজতদা”। রজতাভ মৈত্র সেদিন সাড়া না দিয়ে পারে নি। কতদিন পড়াতে গিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা গল্প করেছে শুধুই। রজতাভ বলেছিল “আমার বউ হতে গেলে লেখাপড়া করতেই হবে। “ কথা শুনেছিল পিয়ালী।
সিগারেট ধারালো রজতাভ। মানালী কী যেন বলছিল।মিস্টুদিদি। পিয়ালীর নাম মিস্টু সেটা কেন জানতে পারে নি সে। আর এতদিন পর ওর পিয়ালীর বাড়িতে যাওয়াটা কি ঠিক হল?” শরীর টা ঘামতে শুরু করেছে রজতাভের। মাথাটা টলছে যেন। বেসিনের কাছে গিয়ে বমি করার চেষ্টা করলো। এ সি টা অন করে একটু শুয়ে পড়ল। কিছুতেই ঘুম আসছে না।
রাত যত গভীর হয় ততই যেন মনে হয় পিয়ালী রজতাভের কাছে এসেছে। খিলখিল করে হাসছে। বলছে “আমাকে ভুলতে পেরেছো কোথায়? কেন এসেছ আবার ? তোমার নতুন ভালোবাসার মানুষ আছে। আমাকে ভুলতে পারছো না কেন “?
সকাল হলেই রজতাভ চুঁচুড়ার বাড়িতে রওনা হল। একটা ব্যাপার তার কিছুতেই মিলছে না। ওই মানালী আর পিয়ালীর এত মিল। কী করে এমন হল। আর মাসিমা তাকে চিনতে পেরেছেন। তার ব্যবহার দেখে তো মনে হল রজতাভ কে সে এখনও ভালোবাসে। মানালী তবে কী অন্য কোনও ধান্দায় আছে। নজর রাখতে হবে। জানতে হবে ওর উদ্দেশ্য কী? আর ওর বিদ্রুপ পূর্ণ কথাগুলো কীসের ইঙ্গিত।
চুঁচুড়ার বাড়িতে দেখা করে এসে একবার মনে হল বলাই মিস্ত্রি লেনে যাই। রজতাভের কী হল! সে বিবাহিত। হায়দ্রাবাদে তার স্ত্রী প্রিয়াঙ্কা আর ছেলে রাহুল আছে। তবে হঠাৎই পুরানো প্রেমিকাকে নিয়ে তার এত আগ্রহ কীসের।
পিয়ালীর বাড়িতে এসে এ কী দেখছে রজতাভ। এই বাড়িতে একটা শিশুর আওয়াজ। কী করে হল। শিশু কোথা থেকে এল। বাড়ির ভিতরে ঢুকল না রজতাভ। বাইরে থেকে বুঝতে পারল শিশুটি মানালীকে মা বলছে। সব এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে রজতাভের। আজ আর ভিতরে যাবে না সে। কিন্তু একজোড়া চোখ তাকে দেখছে মনে হল। ভিতরে একটা গান বাজছে । “কালি কালি আঁখে/গোরে গোরে গাল। টিখি টিখি নজরে/ এ হিরনি জায়সি চাল।।”
রজতাভ দেখল মাসিমা বসে আছেন। সিঁদুর পরলে যেমন প্রতিটি মা দেবী হয়ে যান ঠিক তেমন ই লাগছে মাসিমাকে। কত কী তখন খাইয়েছেন । নিজের হাতেই রান্না করতেন। পিয়ালী কখনও রান্নাঘরে যেত না। আর আজ। মাসিমার শরীরে কত সমস্যা। এদের কিছু সাহায্য করতে পারলে বেশ হোতো ।মেসোমশাই বেঁচে নেই । কিন্তু বিদ্যুত খেলে গেল রজতাভের মাথায়। মানালী যে বলল বাবার মৃত্যুর পর সে চাকরি পেয়েছে। তাহলে মাসিমার মাথায় সিঁদুর কোথা থেকে এল!
কে এই মানালি? তবে কি পিয়ালীর সবকিছুই ও হাতিয়ে নিতে এসেছে। আর মাসিমার কী হয়েছে? কীসের ওষুধ খায় মাসিমা। মাসিমা তো ভালো করে কথা বলতেই পারছে না। মাসিমার থেকে কৌশলে কিছু জেনে নেবে তার উপায় নেই। সবসময়ই প্রহরা দিয়ে রেখেছে শয়তানীটা।মাসিমা কী জানে এটা পিয়ালী নয়। ভীষণ চিন্তার মধ্যেই হাবুডুবু খেতে লাগল রজতাভ। তার এসব নিয়েই বা চিন্তার কারণ কী? সে তো বিয়ে করেছে। পিয়ালীর ভালোবাসাকে দু পায়ে দলে চলে গেছে প্রিয়াঙ্কার মোহে। তবে আজ কীসের এত টান রজতাভের। সেই সহজ সরল পিয়ালীর জন্য তার অন্তরে এখন কুম্ভীরাশ্রু কেন?
ইঞ্জিনিয়ার হবার পর থেকেই আসতে আসতে বদলে গেল রজতাভ। একশ বিঘের মাঠে বন্ধু শঙ্কর এর সাথে দেখা হয়েছিল। সঙ্গে ছিল ওর মামাতো বোন প্রিয়াঙ্কা। অত্যন্ত আধুনিকা। চালচলনে কেতাদুরস্ত ভাব।চোখের চাহনি তো নয় যেন মদিরা। এতদিন নারীশরীর বলতে সে পিয়ালীকে পেয়েছে। কথায় আছে ঘিয়ের পাশে আগুন।বেশিদিন দূরে থাকতে পারে নি ওরা। কিন্তু এই প্রিয়াঙ্কার সাথে দেখা হবার পর থেকেই পিয়ালীর প্রতি টান কমতে লাগল রজতের। মনে হল এই হীরে ফেলে আমি কেন কাচ নিয়ে খেলছি।
“পিয়ালী !পিয়ালী! সত্যিই কী তুমি আর আমার নেই!কোথায় আছো তুমি? কেন আমার এই অন্তর আজ তোমার জন্য ব্যাকুল। তুমি কখনও আমাকে ক্ষমা করতে পারবে কি? আমি তোমাকে ঠকিয়েছি। তোমার ভালোবাসাকে উপেক্ষা করে প্রিয়াঙ্কার সাথেই ঘর বেঁধেছি।” প্রিয়াঙ্কার সাথে সেই আলাপ হল। আজন্ম দরিদ্র রজতাভ তখন ধনী হবার স্বপ্নে বিভোর। প্রিয়াঙ্কা শুধুই সুন্দরী নয়।ওর বাবার কোল্ডস্টোর,রাইসমিল কি না নেই? অন্তর থেকেই কে যেন বলল “রজতাভ। ওই পিয়ালীর মধ্যে কী আছে? ওকে ভুলে যা। প্রিয়াঙ্কা তোর সৌভাগ্য লক্ষ্মী। এমন হাতের লক্ষ্মী পায়ে ঠেলিস না।
মানালী চরম মিথ্যাচার করছে। রজতাভ বুঝতেই পারছে সেটা। কিন্তু রজতাভ তো এসব সহ্য করবে না। এই মানালীর সত্যতা তাকে জানতেই হবে।
মানালী বলেছিল ওর বাবা ব্লক অফিসের কেরাণী। মাসিমা যদি সিঁদুর পরে থাকে তবে তো ওর বাবার বেঁচে থাকার কথা। আজই পৌরসভায় যাবে রজতাভ। বলাই মিস্ত্রি লেনে ওই বাড়ির নম্বর টা যেন কত। হ্যাঁ। মনে পড়েছে। 19/2, বলাই মিস্ত্রি লেন। জানতে হবে ওই বাড়ির মালিক কে? এই জটিল আবর্ত থেকে না বের হতে পারলে রজতাভের স্বস্তি নেই। আজকাল প্রেসার বাড়ছে। আর ছেলেটা কার? বছর তিন বয়স হবে মনে হচ্ছে। চারবছর হল রজতাভ হায়দ্রাবাদ গেছে। এর মধ্যেই এখানে এত কান্ড। আর প্রিয়াঙ্কা। ওকে বিয়ে করে একদিন ও সুখী হয়নি রজতাভ। ও রজতাভের সমস্ত আত্মীয়কে পর করে দিয়েছে। দিনরাত পার্টি।মদ।বিলাসিতা। তাচ্ছিল্য করে রজতাভ কে গরীব বলে।
মানালি আজ ছেলেটাকে খাইয়ে নিয়েছে। বাড়ির রান্না করে সবিতাদি। এই সবিতাদি স্বামী পরাত্যক্তা। দশটার মধ্যেই সবিতাদির কাজ হয়ে গেছে। মানালীর অন্তরের সঙ্গী বলতে এখন এই সবিতাদি। মানালী বলল “ছেলেটাকে নিয়ে তোমার বাড়ি যাও। আমার কিছু কাজ আছে। সেই কাজ মিটিয়ে আমি চলে আসবো।”
মানালীর সাথে সাথেই সবিতা বের হল। সবিতার কোলে ছেলে ঋক। মায়ের যা শারীরিক অবস্থা তাতে সবিতাদি একমাত্র ভরসা। তাছাড়া বাড়িতে কোনও দামী জিনিস রাখে না মানালী।
দানেশ শেখ লেন থেকে রজতাভ রওনা দিল পুরসভার দিকে। সেখানে একজন কে হাত করে বলল “একটা কাজের জন্য এসেছি। খুব ই সাধারণ কাজ। একটা বাড়ির মালিক কে সেটা জানতে চাই “। লোকটি বলল “প্রোমোটার নাকি?” রজতাভ মৃদু হাসল। বলল প্লিজ হেল্প মি।বলেই চা আনতে বলল একজন কে। যাইহোক। জানা গেল বাড়ির মালিক শিবরাম হালদার। তারমানে এই শিবরাম ই পিয়ালীর বাবা হবে নিশ্চিত।
রজতাভ ফেরার পথে বলাই মিস্ত্রি লেনে ঢুকল। একবার দেখতে হবে মানালীর গতিবিধি। উড়ে এসে জুড়ে বসেছে মেয়েটা। আর মাসিমাকে ঠকাচ্ছে। রজতাভ এর শেখ দেখে ছাড়বে। সরাসরি জিজ্ঞেস করবে মানালীকে “কেন তাকে মিথ্যার আশ্রয় নিতে হচ্ছে। আর মানালীর মাথায় সিঁদুর নেই। এই ছেলেটা কে?” বাড়ির মধ্যে স্বতঃস্ফূর্ত ঢোকা গেল আজ। ওরা কেউ নেই। শুধুই মাসিমা। মাসিমার কাছে এত কথা বলাই সার হবে। তার থেকে আশেপাশের কারো থেকেই একটা খবরাখবর পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু কাকে জিজ্ঞেস করা যায়! মাসিমার ঘরে একটা ফটো নজরে এল। স্বামী স্ত্রীর সাথে একটি ছোট্ট মেয়ে। নিশ্চয়ই এই মেয়েটা পিয়ালী। যদি দুই বোন হোতো তবে নিশ্চয়ই আর একটা বোন থাকতো। একটা বুদ্ধি খেলে গেল মাথায়। মোবাইল বের করে দেয়ালে টাঙানো ফটোর একটা ছবি তুলে নিল রজতাভ। ইঞ্জিনিয়ার এর বুদ্ধি। তুমি শিশু মানালী। আজ তোমার একদিন কী আমার একদিন।
ছবিটা বেশ উঠেছে। এই বাড়িটা আজকের নয়। অনেক দিন আগের তৈরী। নিশ্চয়ই এলাকার অনেকেই এই শিবরাম ভদ্রলোক কে চিনবেন। বলাই মিস্ত্রি লেন থেকে ব্যাতাই তলায় হাজির হল রজতাভ। এখানে একটা চায়ের দোকান দেখে এগিয়ে গেল। এক বৃদ্ধ বসে আছেন।
রজতাভ জানে কী করে বৃদ্ধ টিকে কব্জা করতে হবে। রজতাভ বলল “চা দিন তো”। বৃদ্ধ কালো কালো দাঁত বার করে বললে “নিশ্চয়ই । তা এখানে কোথায় থাকা হয়”? রজতাভ বললে “আচ্ছা দাদু। এই জায়গাটার নাম কী ব্যাতাইতলা?” বৃদ্ধ আবার হাসলো। বলল “হ্যাঁ। এখানেই তো দেবী বেত্রচন্ডিকার মন্দির। সেই নবাব আলিবর্দি র আমলের। মনসামঙ্গল এর কাহিনী জানো তো?”
রজতাভ আমতা আমতা করতে লাগল। বলল “সেই ছোট্ট বেলায় মায়ের মুখে শুনেছিলাম বটে”। বৃদ্ধ টি ঘাড় নাড়লে। বলল “চাঁদ সদাগর গো। যখন বাণিজ্য যেত তখন এই বেত্রচন্ডিকার পুজো করতো। এই দেবীর মাহাত্ম্য আছে। আর হালদার বংশ হল এই দেবীর সেবাইত।
চকিতে তাকাল রজতাভ। বলল “আমি তো শিবরাম হালদার এর খোঁজ করছি। তিনি কি বেঁচে আছেন “? বৃদ্ধ টি শিবরাম নাম শুনে চমকে উঠল। বললে “শিবরাম বেঁচে থাকবে না কেন? ওর বাড়ি তো বলাই মিস্ত্রি লেনেই। তবে এখন এখানে থাকে না। সেই রামরাজাতলায় আবার দ্বিতীয় সংসার পেতেছে। রজতাভ অত্যন্ত আগ্রহী হয়ে উঠল। এবার আসল সত্য উন্মোচন হবে।
ফ্ল্যাটের দিকে রওনা দিল রজতাভ। শান্ত সৌম্য রজতাভ এখন যেন একটা দুশ্চিন্তার মধ্যেই আছে। মাঝে মাঝেই মনে হচ্ছে কী দরকার এসবের। পিয়ালী তার অতীত। চারবছরের ব্যবধান । এখন মানালী বা পিয়ালী এসবে তার এত মাথাব্যথাটাই কীসের। প্রিয়াঙ্কার মন ভোলাতে তার চাকরী গেছে। তাতেই কী বা এসে গেল। খেতে সে পাবেই। তার থেকে এসবের তোয়াক্কা না করে ছেলে রাহুল এর কাছেই ফিরে যাবে সে। তবুও কী যেন একটা দ্বন্দ্ব কাজ করছে রজতাভের মনে। কী যেন একটা গোপনীয়তা চলছে। এতদিন সবাই কে ও প্রতারিত করেছে। আর আজ মনে হচ্ছিল সে নিজেও রাম ঠকা ঠকেছে। ফ্ল্যাট বাড়ির কেয়ারটেকার শম্ভু রজতাভকে দেখে এগিয়ে এল। বললে “বাবু। একটা মহিলা এসেছিলেন। আপনাকে একটা চিঠি দিয়ে গেছেন “। রজতাভ অবাক হল। এখানে উপস্থিত হয়ে মহিলা চিঠি দিয়েছেন। যাইহোক। কাগজটা হাতে নিয়ে ঘরে ঢুকলো রজতাভ। এটা কী চিঠি। না চিরকুট। খুলতেই চমকে উঠল রজতাভ। মাত্র একটা কথা, না কথাও না একটা শব্দ লেখা আছে মাত্র ।”ম্যানহোল”।
মানালী আজ তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে এসেছে। বাড়ির সামনে টাটাসুমো দাঁড়িয়ে। এখান থেকে আজ ছেলে ও মাকে নিয়ে রওনা দেবে। বাড়ির চাবি সবিতাদির হাতে দিয়ে মানালী বলল “কয়েক দিন পুরী যাচ্ছি। ততদিন তোমার হেফাজতে রইল সব”।
রামরাজাতলা জায়গাটা বেশ পুরানো। এখানে একটা মন্দির। রামনবমীর পুজো চলছে। এখানে রাম ঠাকুর এর পুজোর আগে দেবী সরস্বতীর পুজো করতে হয়। এটা আজকের নিয়ম নয়। আর সবথেকে বড়ো ব্যাপার রাম ঠাকুর যেন বাঙালির গুঁফো ছেলে। শিবরাম হালদার এই মন্দিরেই বসে ছিল। তার বয়স হয়েছে। শেষ বয়সে এসে এমন একটা পরিস্থিতির শিকার হতে হবে কে জানতো। এখন তার মনে হয় পৈতৃক সেবাইত হয়ে বেত্রচন্ডিকার অবহেলা করেছে সে। প্রথম স্ত্রীর অমর্যাদা করেছে। তাই বুঝি পাপের শাস্তি পাচ্ছে সে।
দ্বিতীয় স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে আজ চারবছর হল। সেই যে মেয়েটা বলাই মিস্ত্রি লেনে গেল আর ফিরল না। মা ভাবলে গর্ভের সন্তান সতীনের ঘরে গিয়ে আর ফিরল না। আর সেই আঘাত থেকেই হার্ট অ্যারেস্ট হল। শিবরাম গিয়ে বললে “চল মা। বাড়ি চল। কিছুতেই মেয়েটা এল না। আর আগের স্ত্রী মনোরমা আবার ভুল বুঝলে। শিবরাম কে দেখে সেও কেমন হয়ে গেল আর ঠিক হল না। শুধুই বলতে লাগল ও তো আমার মেয়ে ।শিবরাম মনোরমার মেয়ে শুনে ধমক দেবার ফল। মনোরমা এখন স্থবির হতে বসেছে।
রজতাভ চিরকুট পেয়ে স্থির থাকতে পারছে না। এই একটা শব্দ ওকে পাগল করে তুলেছে। খুব ভুল হয়ে গেছে চালে। তবে কি তার সব পরিকল্পনা ব্যর্থ হতে বসেছে? সমস্ত সন্দেহ এখন মানালীর দিকে। রজতাভ এক মুহূর্ত এখানে থাকা নিরাপদ মনে করল না। তার মানে মানালী ওকে শেষ করতে চায়। যেমন করে পিয়ালীর হদিশ নেই। এখনই আসল কথাটা জানা দরকার। উদ্ভ্রান্ত হয়ে গেছে রজতাভ। বাইরে বেরিয়ে একটা ট্যাক্সি ধরে নিয়েছে। বলল “ড্রাইভার। এখনই চলো রামরাজাতলা”। রামরাজাতলায় আজ ভীষণ ভিড়। চায়ের দোকান এর বৃদ্ধ শিবরাম এর ঠিকানা দিয়েই রেখেছে। রজতাভ শিবরাম হালদার এর বাড়ির সামনে পৌঁছালো। কিন্তু। এ আবার কী! এখানে ওই মেয়েটা কে? এই কী তবে পিয়ালী নাকি? ওই তো পিয়ালী। হ্যাঁ। এখন ও মনে আছে ওর ঘাড়ের কাছে তিল। কতদিন পর পিয়ালীকে দেখছে রজতাভ। তবে কী করে সম্ভব। তাহলে বলাই মিস্ত্রি লেনে ওটা কে। ঘামতে শুরু করল রজতাভ। আর শিবরাম হালদার এগিয়ে এসে বলল “তুমি কে বাবা? কাকে চাও”? রজতাভ বলল “আমি এদিকে এসেছি আর কি। আপনি কি একাই থাকেন? “ শিবরাম হালদার বলল “আমার মেয়ে আমার সাথে আছে এখন “। রজতাভ আগ্রহী হয়ে বলল “কী নাম তার”? বৃদ্ধ শিবরাম হালদার হেসে বলল “মানালী। আমার মেয়েটার নাম মানালী”।
পিয়ালী।মানালী।ম্যানহোল। সব তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। এই কয়েক দিন রজতাভ যেন ভূত হয়ে গেছে। ফ্ল্যাটে এসে পর্যন্ত ভালো করে দেখাই হয় নি ঘরটাতে আসবাবপত্র ঠিকঠাক আছে কি না। এই যে অগণিত মানুষ এর ভিড়। কত আনন্দ করছে মানুষ। শুধুই রজতাভের শান্তি নেই। কোথা থেকে এই মানালী এসে সব ওলটপালট হয়ে গেছে। গরম টাও পড়েছে। রামনবমীর পুজোতে গান বাজছে। এই গানটা একটা সময় খুব পছন্দের ছিল বটে।
“ওওওও। মেরা দেখা একেলা/তুঝে খেল এয়সা খেলা/তেরে ইয়াদ মে জাগু রাতভর”।
নাকে দড়ি দিয়ে কে যেন রজতাভ কে ঘোরাচ্ছে। এখন সে বলাই মিস্ত্রি লেনে রওনা হবে। এই তো এখানে মানালী। তবে ওখানে মানালীর নামে কে আছে? মুখোমুখি হবে রজতাভ। কিন্তু অন্তরাত্মা বলছে “কেন? কী জন্য তোমার এত কৌতুহল? তুমি তো স্বার্থপর। পিয়ালীর জন্য এখন কেন তোমার এত দরদ।কেন রজতাভ?
ফ্ল্যাটে ফিরল রজতাভ। এবার নজরে পড়ল তার অবর্তমানে কারা ঢুকেছিল এই ফ্লাটে। দুটো টয়লেটের একটা তো বন্ধ থাকে। দুটোই খোলা কেন? একটা পুরানো ফ্রিজ ছিল। সেটাই দেখতে পাচ্ছে না রজতাভ। বন্ধ টয়লেটের মধ্যেই পুরোনো ফ্রিজ ভরে রেখেছিল। আশ্চর্য। ওটা কে নিল। হাঁক দিল “কেয়ারটেকার। কেয়ারটেকার “! কেয়ারটেকার ছেলেটি এল।রজতাভ প্রশ্ন করল “আমার অবর্তমানে কে আমার ফ্ল্যাটে ঢুকেছিল?” কেয়ারটেকার ছেলেটি বলল “এসবের সে বিন্দুবিসর্গ জানে না”। কী ভৌতিক কান্ড চলছে রজতাভের সাথে। নাকি রজতাভ কে শান্তিতে থাকতে দেবে না কেউ।
আর এই ফ্ল্যাট রজতাভের জন্য নয়। আজ ই এখান থেকে পালাবে রজতাভ। চলে যাবে গোপন আস্তানাতে। এখানকার কেউ ই রজতাভের ঠিকানা জানে না। সব সম্পর্ক শেষ। এখানে আর এক মুহূর্ত নয়। তবে মানালীকে উচিত শাস্তি দিয়ে যাবে। এই সব ভাবতে ভাবতেই রজতাভ দেখল সেই চিরকুট টা। বড়ো বড়ো করে লেখা “ম্যানহোল”।
শিবরাম হালদার এর বাড়ির ছাদে ছিল মানালী। ও জানতো রজতাভ আসবেই। এতদিনের খেলা আজ সমাপ্ত হয়ে যাবে। তাই মন্দিরে যাবার নাম করে বেরিয়ে পড়ল উদ্ভ্রান্তের মতো। এখনই সবিতাদিকে ব্যাপার টা বুঝিয়ে দিতে হবে। তারপর যা হবার তাই হবে। সবিতাদি একমাত্র সব জানে।
রজতাভ বেশ কিছুটা মদ্যপান করল। মদ খেলেই সে ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাঁদে। শুধুই পিয়ালীর জন্য কাঁদে। কত বসন্ত রাতে পিয়ালী গান শুনিয়েছিল। ফালা ফালা সরল দৃষ্টিতে রজতাভের দিকে তাকিয়ে স্বপ্ন দেখেছিল পিয়ালী। কত মধুযামিনী আনন্দ উচ্ছ্বাসে ভেসেছিল । আর আজ। সব অতীত। বড়ো শূন্য এখন রজতাভের জীবন। বেশ কিছুক্ষণ এই ভাবে কাটল। নেশার ঘোরে। তারপর বেরিয়ে পড়ল রজতাভ মৈত্র। একবার শুধুই একটা বোঝাপড়া। তারপর সব চিন্তার অবসান। হায়দ্রাবাদে রাহুল এর কাছেই চলে যাবে। বলাই মিস্ত্রি লেনে প্রবেশ করল। ওই তো। পিয়ালীর বাড়ির দরজা হাট করে খোলা। একবার শুধুই ঢুকবে আর বেরোবে। মানালীর ছদ্মবেশটা খুলে দেবে শুধুই। পাশের ফ্ল্যাট থেকে গান ভেসে আসছে “গুমনাম হ্যায় কোঈ বদনাম হ্যায় কোঈ কিসকো খবর কন হ্যা উও আনজান হ্যা কোঈ”
ঘরের মধ্যে প্রবেশ করল রজতাভ। আশ্চর্য । মাসিমার দেখা নেই। সামনের ঘরটাতেই তো থাকে। আর বাচ্চাটা ও নেই। শুধুই চেয়ারে বসে আছে মানালী। রজতাভ ঘরে প্রবেশ করেছে এটা তার বুঝতে পারার কথা নয়। প্যান্ট এর মধ্যেই ছোড়াটা ছিল। বার করে মানালীর দিকে অগ্রসর হতে যাবে। ঠিক সেই সময়ই পুলিশ অফিসার প্রসেনজিৎ মান্না তার রিভলবার টা রজতাভের কানের কাছে ধরল। চিৎকার করে বলে উঠলেন “ইউ আর আন্ডার অ্যারেস্ট মিস্টার রজতাভ মৈত্র। অনেক খেল দেখিয়েছেন। আপনার স্থান এখন জেলের চোরাকুঠুরীতে। অনেক দিন ধরে বেঙ্গল পুলিশ আপনাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। আজ আপনি নিজেই ধরা দিয়ে দিলেন। যদিও পিয়ালী দেবীর সাহায্য ছাড়া এটা আমাদের পক্ষে একটু কঠিন কাজ হোতো।
রজতাভ মৈত্র হতচকিত। তবুও গলা উঁচিয়ে বললে “আপনারা ভুল জানেন।এ পিয়ালী নয়। এ হল মানালী।” এতক্ষণে সবাই ব্যাপার টা জেনে গেছে। আশেপাশের বাড়ি থেকেও অনেক মানুষ হাজির। পুলিশ অফিসার বলে চলেন “আজ থেকে চার বছর আগে আপনি পিয়ালী মনে করে যাকে হত্যা করেছিলেন তিনি আপনার শ্যালিকা মানালি। পিয়ালী তখন অন্তসত্ত্বা। আপনি প্রিয়াঙ্কাকে পাবার লোভে সন্তান সহ বাগদত্তাকে খুন করতে চেয়েছিলেন। আর সেই দিন এই বলাই মিস্ত্রি লেনে মানালী এসেছিল। সন্ধ্যার অন্ধকারে মদ্যপ আপনি মানালীকে পিয়ালী ভেবেছিলেন। আর সেই নৃশংস মৃত্যুর একমাত্র সাক্ষী পিয়ালী। আপনার সন্তানের মাতা।
রজতাভ মৈত্রের কোনও অনুশোচনা নেই। চিৎকার করে বলতে থাকে “সব মিথ্যা। এসবের কী প্রমাণ আছে?”
এবার পিয়ালী বেরিয়ে এল। যেন রণরঙ্গিনী। বলল “শুনুন মিস্টার মৈত্র। আপনি আমার বোন মানালীকে খুন করেছেন। নৃশংস খুন করেছেন আর সেটা আমার সামনে ঘটেছে। আমি আড়াল থেকে সব দেখেও কিছুই করতে পারিনি আমার গর্ভের সন্তান এর কথা ভেবে। আপনি সেদিন আপনি,,,, “ পুলিশ অফিসার বললেন “পিয়ালী দেবী। সবাই কে আমি বলছি। আপনি অসুস্থ হয়ে পড়ছেন । শুনুন সবাই। এই রজতাভ মানালীর শরীর টাকে টুকরো টুকরো করে তার ফ্ল্যাটে ফ্রিজের মধ্যেই কয়েক দিন রেখেছিল। তারপর শহরের বিভিন্ন ম্যানহোলে রাতের অন্ধকারে টুকরো গুলো ফেলে দেয়। আর পিয়ালী দেবী সেই সময় এত ভয় খেয়েছিলেন যে আসল সত্য উদ্ঘাটন করতে আমাদের সময় লাগে। ততদিনে চিড়িয়া উড়ে গিয়েছিল। কিন্তু খুনের কিনারা কি হল জানতে এসে মাকড়সা নিজের জালে ফেঁসেছে”। রজতাভ মৈত্র চুপ করে শোনে। ভাবলেশহীন মুখ। পরের দিন খবরের কাগজে ফলাও করে ছাপানো হল। কে জানে। হয়ত ফাঁসি হবে। তবুও যাবার আগে একবার রজতাভ ডেকেছিল “পিয়ালী। আমার ছেলেটাকে তোমার মতো করে মানুষ কোরো। মানুষ কে ভালোবাসতে শিখিও। ওটাই তো পরম আশ্রয়। আমি শুধুই টাকা ভালোবেসেছিলাম”।