অনির্বাণ অবাক হয়ে তাকালো বৃদ্ধের মুখের দিকে। সঙ্গীতা আর ওয়াসিমেরও একই অবস্থা। বৃদ্ধ কার্ল উইভার মৃদু হাসলেন।
“তোমরা হিন্দু পুরাণে আগ্রহী হয়েও ধনুর্বেদ পড়োনি? “
হরিয়ানার এ প্রত্যন্ত অঞ্চলে গাছপালা প্রচুর থাকলেও শ্যামলিমার অত্যন্ত অভাব। গাছে মরচে রঙের পাতা, লাল ঘাস, ক্ষয়াখর্বুটে ভূমিরূপ দেখে মনে হয় কোনো অজানা কারণে এখানকার মাটি কখনো উর্বর হয়ে উঠতে পারেনি। ব্রহ্ম সরোবরের জলে সূর্যের শেষ আলো পড়েছে। সিঁদুর রঙের জলের অন্য পাড়ে দ্রুত কালো হয়ে আসছে গাছপালার প্রাচীর। কার্ল উইভার সাদা চুলে একবার হাত বুলিয়ে নিয়ে বললেন, ” এক্সকাভেশনে আসার জন্য তোমাদেরই কেন বেছে নিলাম জানো? “
ওয়াসিম মুখ খুললো।
“হ্যাঁ কার্ল, তুমি জানিয়েছিলে। মহাভারত আর হিন্দু পুরাণ নিয়ে আমাদের যে আর্টিকেল বেরিয়েছিল তোমাদের ‘স্পেকত্রাম দর ওয়াইজেনশেফ ‘সায়েন্স জার্নালে, তাতে তুমি খুব আকৃষ্ট হয়েছিলে। “
“এগজ্যাক্টলি। আমি তোমাদের কাছে জানতেও চেয়েছিলাম হরিয়ানার কর্ণটিলা সম্বন্ধে তোমাদের আগ্রহ কতটা? “
“কর্ণটিলা সম্বন্ধে ভারতীয় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ একেবারেই উৎসুক নয়। এ নিয়ে জিওলজিক্যাল সার্ভেও এতটাই উদাসীন যে সে অঞ্চলের ভূ -প্রকৃতি সম্বন্ধে বিশেষ কিছুই ইন্টারনেট ঘেঁটেও পাওয়া যায় না। বইপত্রে নয়ই। শুধুমাত্র জানা যায় রাজা কর্ণের একটি কেল্লা সেখানে ছিল। এখন, বই বা ইন্টারনেটের বাইরে তো আমাদের জানা সম্ভব নয়, তাই না? “
কার্ল হাসলেন। সূর্য প্রায় ডুবে গেছে। ব্রহ্ম সরোবরের তীরে সন্ধ্যারতির আলো জ্বলে উঠছে একে একে। নরম গম্ভীর স্বরে কার্ল বললেন, “সব জ্ঞানই যদি একটি নির্দিষ্ট স্থানে খোঁজো তা তো আর পাওয়া সম্ভব নয়। গাছের বীজ, সার, কৃষক, শস্যক্ষেত্র কি একই জায়গায় থাকে? তাদের একত্রিত করতে হয়, তবেই অভীষ্ট ফসল লাভ করা পায়। “
অনির্বাণের দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো।
“তুমিই বলো তবে। “
“বলছি “বলে কার্ল ব্রহ্ম সরোবর ঘেরা লোহার বেড়ায় ঠেস দিয়ে দাঁড়ালেন। “আচ্ছা, তোমাদের মতে মহাভারতের প্রধান চরিত্রগুলির মধ্যে সবচেয়ে নিঃসঙ্গ চরিত্র কোনটি? “
“অবশ্যই কর্ণ “অনির্বাণ বললো।
“ঠিক। এর অর্থ হলো, কর্ণের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি ছিল ক্ষোভের বশে মারণাত্মক অস্ত্র প্রয়োগের। “
সঙ্গীতা বলে উঠলো, “হ্যাঁ, তা তো তিনি করেওছিলেন ঘটোৎকচকে হত্যা করার সময়। “
কার্ল সজোরে বলে উঠলেন, “ইন্দ্র প্রদত্ত ‘একপুরুষঘাতিনী ‘মহাভারতের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর অস্ত্র নয়। কর্ণ ভার্গবাস্ত্র,ব্রহ্মাস্ত্র প্রয়োগের বিদ্যা জানতেন।ভীষ্ম, দ্রোণ, কৃপাচার্য, অশ্বত্থামা, অর্জুন, যুধিষ্ঠির ও বিকর্ণও জানতেন ব্রহ্মাস্ত্রের প্রয়োগবিদ্যা। ভীষ্ম, দ্রোণ, কৃপ, যুধিষ্ঠিরের মত নীতিবান মানুষের পক্ষে ব্রহ্মাস্ত্র প্রয়োগ করা ছিল কল্পনারও অতীত। সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মার কঠোর নির্দেশ ছিল যে যুদ্ধক্ষেত্রে এর ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ, কারণ এতে শত্রু ছাড়াও উভয় পক্ষেরই প্রচুর সংখ্যায় নিরীহ সৈন্য বিনষ্ট মৃত্যুবরণ করার সম্ভাবনা থেকে যেত। কিন্তু অর্জুন, কর্ণ ও অশ্বত্থামার পরিস্থিতির কথা চিন্তা করলে দেখা যায় তাঁদের পক্ষ এ অস্ত্র প্রয়োগ করার যথেষ্ট কারণ ছিল। অর্জুন নিজেকে শ্রেষ্ঠ প্রমাণ করতে চেয়েছেন সর্বত্র। অশ্বত্থামা ছিলেন চির হতাশ, ক্ষুব্ধ। কর্ণের কথা আর কি বলি? তাঁর যোগ্য সম্মান কোনোদিনই তাঁকে দেওয়া হয়নি। ব্রহ্মাস্ত্র প্রয়োগের সবচেয়ে বড় কারণ তাঁর কাছেই ছিল। কিন্তু কি দেখা গেল? অর্জুন ও অশ্বত্থামা এ অস্ত্র প্রয়োগ করলেন। কিন্তু কর্ণ কি করলেন? না। তাহলে সে ব্রহ্মাস্ত্র গেল কোথায়?”
অনির্বাণ হেসে উঠলো।
“কার্ল, তুমিও শেষ পর্যন্ত মীদ বিশ্বাস করে এতদূর ছুটে এলে? “
“মীদ! “কার্ল জোর গলায় বলে উঠলেন। “তোমাদের একবারও মনে হয়নি, কুরুক্ষেত্র অঞ্চলের সবকটি ট্যুরিস্ট স্পট যেখানে সুগম, সবকটির সম্বন্ধে সর্বত্র অশেষ তথ্য মজুত –শুধুমাত্র কর্ণটিলা এত ব্রাত্য কেন? কেন তাকে লোকচক্ষুর আড়ালে রাখার চেষ্টা চলছে? “
ওরা তিনজনই থমকে যায়। বড় বড় নিঃশ্বাস বেরিয়ে আসতে থাকে। চোখগুলি বিস্ফারিত হয়ে ওঠে।
“অর্থাৎ! “
“অর্থাৎ, আমরা এগোবো সে দিকে। আজই। “
।। দুই।।
পাঁচ কিলোমিটার পথ ব্রহ্ম সরোবর থেকে কল্পিত কর্ণটিলা। ড্রাইভার জানালো কর্ণটিলা নামে কোনো জায়গা সে চেনে না। তবে স্থানীয় মানুষ একটা প্রাচীন খন্ডহরের মত জায়গাকে ‘করণে কা কিলা’ নামে চেনে এবং সেখানেই সে অনির্বাণদের নামিয়ে দেবে। তারপর যেতে চাইলে হেঁটে যেতে হবে। গাড়ি চলার মত রাস্তাও বিশেষ নেই সেখানে, শুধু উঁচুনিচু বৃক্ষহীন ভূমি। তা ছাড়া ওদিকটায় গেলে পুলিশও ঝামেলা করে। গরু ছাগলও ভগ্নাবশেষের সীমা পার হয় না।
অনির্বাণ দীর্ঘশ্বাস ফেলে কার্লের দিকে তাকালো। কার্লের চোখ ঝলমল করছে। বাকিটা পথ সবাই চুপ করেই রইলো। ছড়িয়ে থাকা প্রায় জনবিরল লোকালয় শেষ হলে একটা ধ্বংসস্তূপের সীমা দেখা গেল পথের পশ্চিমে। পথ ও ধ্বংসস্তূপের মধ্যবর্তী ভূ -ভাগ নিষ্ফলা। সামান্য ঘাসও জন্মায়নি কোথাও। কালচে লাল মাটি ফুটিফাটা আর জায়গায় জায়গায় ছাই রঙের ছোপ। দু একটা বাবলাকাঁটার গাছ হয়তো ভুল করে কোনো কালে জন্মেছিল। তাদের আকৃতি অদ্ভুত। আঁকাবাঁকা ডালপালা, বিরলপত্র –হঠাৎ দেখলে মনে হয় গাছগুলো ডালপালার হাত দেখিয়ে দূরে থাকতে বলছে অনধিকার প্রবেশকারীদের। চাঁদের আলোয় তাদের ভয়ঙ্কর লাগছে দেখতে।
ড্রাইভারকে ঘন্টাদুয়েক পর আবার ফিরে আসতে বলা হলো।সে হুঁশিয়ারির সুরে জানান দিয়ে গেল যে দশ মিনিটের বেশি অপেক্ষা করতে পারবে না। শূন্য প্রান্তরে থৈ থৈ করছে জ্যোৎস্না। ওরা খন্ডহরটির দিকে এগোতে লাগলো। সঙ্গীতা মুখ খুললো সর্বপ্রথম, “বুনো হাঁসের পিছনে যদি ছুটতেই হতো ব্রহ্ম সরোবরে থাকতে হতো। এই জলহীন জমিতে তারা আসবে? “
কার্ল মৃদু হাসলেন।
“বুনো হাঁস নয় গো। চতুর্দিকের নিষ্ফলা জমি লক্ষ্য করো, লক্ষ্য করো অদ্ভুত গড়নের গাছগুলো। তেজস্ক্রিয়তার সমস্ত লক্ষণ এখানে মজুত রয়েছে। “
শূন্যে দু হাত তুলে ওয়াসিম হেসে উঠলো।
“সেই মহাভারতীয় পারমাণবিক অস্ত্র থিয়োরি! কোনোপ্রকার প্রমাণ ছাড়া …যা খুশি করো। আমরা নেক্সট প্রজেক্টের স্পনসরশিপ পেলেই খুশি। “
কার্ল মাথা নেড়ে একটা চুক চুক শব্দ করলো। ভাঙা গলায় বললো “তোমরা ভারতীয়রা নিজেদের সম্পদ কোনোদিনই চিনলে না যতক্ষণ না পর্যন্ত বাইরের কেউ চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। রবার্ট ওপেনহেইমারকে মনে পড়ে? ম্যানহাটন প্রজেক্টের প্রথম পরীক্ষামূলক সাফল্যের পর রচেস্টার ইউনিভার্সিটি বক্তৃতা দেওয়ার সময় কি বলেছিলেন তিনি? বলেছিলেন যে, এটিই প্রথম পারমাণবিক বিস্ফোরণ নয়। আগেও হয়েছে। কোথায় হয়েছে সে তথ্য দিতে গিয়ে তিনি কোথা থেকে উদ্ধৃতি দিলেন? না, ভগবত গীতা থেকে। ‘শতসহস্র সূর্যের বিকীর্ণ তেজস্ক্রিয়তা যদি একই সঙ্গে মহাকাশে ফেটে পরে তবেই এ অস্ত্রের প্রকৃত শক্তির পরিচয় দেওয়া হয়।’ “
সঙ্গীতা অনেকক্ষণ থেকে চুপ করে ছিল। হঠাৎই সে বলে উঠলো, “আমার সারা দেহ কেমন জ্বালা করছে আর গলা শুকিয়ে আসছে! “
ওসমান তাড়াতাড়ি সঙ্গীতার দিকে ঘুরে দাঁড়ালো। সরাসরি চাঁদের আলো তার মুখে পড়েছে। চামড়ায় ক্রমশ ফুটে উঠছে ফোলা ফোলা দাগ। চিৎকার করে উঠলো সঙ্গীতা,”পালিয়ে চলো সবাই।এখনই। এ জায়গা অভিশপ্ত, তাই প্রাণের লেশমাত্র নেই এখানে। “
ইতিমধ্যে ওয়াসিম আর অনির্বাণ ছটফট করে উঠলো। বড় বড় শ্বাস পড়তে লাগলো তাদের। মুখ থেকে গড়িয়ে পড়লো লালা। আর্তনাদ করে উঠলো অনির্বাণ।
“আমার চামড়ায় অগুনতি ছুঁচ ফোটার মত যন্ত্রণা। কার্ল, আমরা ফিরে চললাম। আর নয়। “
“নাইন! একদম না”,কার্ল গর্জন করে উঠেছেন। তাঁর হাতের আগ্নেয়াস্ত্রটি ঝকঝক করে উঠেছে। তুষার শীতল সুরে তিনি বলে উঠলেন, “ওই অস্ত্র তোমরাই বয়ে নিয়ে যাবে যখন তাকে আমি তুলে নিয়ে আসবো ভূ -গর্ভ থেকে। দেখবে? দেখবে কেমন করে? “
হাতের আগ্নেয়াস্ত্র ফেলে দিয়ে খন্ডহরের ঠিক মাঝামাঝি বসে পড়লেন কার্ল।পাগলের মত বলে উঠলেন,”এগারো বছর বয়স থেকে রোজ দশ হাজার বার করে উচ্চারণ করে আসছি এ মন্ত্র। আর মাত্র পাঁচ বার বললেই করলে চব্বিশ কোটি উচ্চারণ সম্পূর্ণ হয়ে যাবে। মূর্খ ভারতীয়, দ্যাখো তোমাদের মন্ত্রের ক্ষমতা।” উদাত্ত সুস্পষ্ট স্তোত্র বেরিয়ে এলো কার্লের গলা থেকে।
সঙ্গীতা অনির্বাণ আর ওয়াসিমের জামার কলার টেনে ধরে আর্তনাদ করে উঠলো, ”ওই দ্যাখ,ও কি! “
।। তিন।।
দুটি ভাঙা প্রাচীরের উপর চাঁদের আলো পড়েছে সরাসরি।প্রাচীরের মধ্যবর্তী শূন্যস্থানে একটি নীচু জায়গা। মনে হয় সেখানে এক সময় কোনো গর্ভগৃহেরর দরজার অস্তিত্ব ছিল। এখন লতাপাতায় ঢেকে আছে। কার্ল পঞ্চম বার মন্ত্রটি উচ্চারণ করতেই লতাগুল্মের নীচ থেকে এক গুরুগম্ভীর শব্দ উঠে আসতে লাগলো।বার বার কেঁপে উঠতে লাগলো মাটি। মনে হলো ভূ -গর্ভের অভ্যন্তরে ঘুমন্ত কোনো দানবের ঘুম ভেঙে যাওয়ায় প্রচণ্ড রাগে সে গর্জন করছে। ছিঁড়ে ফেলতে চাইছে মাটির বাঁধন। যে কোনো মুহুর্তে পৃথিবীর উপরিতল ছিঁড়ে সে বেরিয়ে আসতে পারে, ধ্বংস করে দিতে পারে চরাচর। কার্ল হাসছেন, বদ্ধ উন্মাদের মত তিনি হাসছেন।
“তোমরা অতিবিজ্ঞানী, তাই না? মন্ত্রশক্তি অবিশ্বাস করো?ভয়েস পাসওয়ার্ড বিশ্বাস করতে কিন্তু তোমাদের বাধা নেই। এবার দ্যাখো, মন্ত্র আসলে কি। “
অনির্বাণ চিৎকার করে উঠলো, “কিন্তু কার্ল, আমরা সবাই তো মরে যাবো। এ দেশ, নিরীহ মানুষ …এমন কি তুমিও। “
চাঁদের দিকে দু হাত তুলে অট্টহাসি হেসে উঠলেন কার্ল, “কি হবে শুধুমাত্র বাতাসের অক্সিজেন পোড়ানোর জন্য বেঁচে থেকে? জ্ঞান নেই, বিদ্যা নেই, উৎসর্গীকরণ নেই বিজ্ঞানের প্রতি, সমর্পণ নেই নতুন আবিষ্কারের প্রতি, –শেষ হয়ে যাও তোমরা। কার্ল উইভার পথ দেখিয়ে যাক আজ। ভূ কন্দর থেকে উঠে আসুক ব্রহ্মশির, ব্রহ্মাণ্ড আয়ুধ। পর্বত ছিঁড়ে ছুটে আসুক পাশুপত। সমুদ্রের গভীর থেকে উঠে আসুক সমগ্র দানবিক শক্তি। বিশ্ব আবার মহা দেব দানবের বাসভূমি হোক। এ নগণ্য ক্ষুদ্রতা আর সহ্য করা যায় না। “
ওয়াসিম পিস্তলটি মাটি থেকে তুলে নিয়ে কার্লের মাথায় ঠেকালো।হিস হিস করে বললো “উন্মাদ, তোমার মাথাটা গুঁড়িয়ে দেবো আমি। “
ওয়াসিমের কথা শুনে কার্ল নেচে উঠলো। শূন্য প্রান্তরে নেচে বেড়াতে লাগলো উন্মাদের মত। সঙ্গীতা অনির্বাণের জামা খামচে ধরে চেঁচিয়ে উঠলো, “গায়ত্রী মন্ত্র যদি ব্রহ্মাস্ত্র অ্যাক্টিভেট করার ভয়েস পাসওয়ার্ড হয়, তবে এর বিপরীত পাসওয়ার্ডও থাকতেই হবে। ভাব অনির্বাণ, তাড়াতাড়ি ভাব। “
অনির্বাণ নিজের চুল মুঠো করে ধরে এলোমেলো পায়ে হেঁটে বেড়াতে লাগলো। কার্ল আবার হেসে উঠেছে।
“এ বার, তোমাদের সুকুমার রায়ের গল্পের মত পা ছড়িয়ে কাঁদতে বসে পড়ো,’ও মা, ও পিসি, ও শিবুদা’বলে …হা হা হা, কোনো উপায় নেই। ধ্বংস, শুধু ধ্বংস। “
অনির্বাণ থমকে দাঁড়ালো।
“কি বললো, কি বললো ও? শিবুদা? শিব, হ্যাঁ পুরাণ অনুসারে শিবই একমাত্র পুরুষ যিনি ব্রহ্মাস্ত্র রোধ করতে পারেন। সঙ্গীতা, ওয়াসিম …শিবমন্ত্র, মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্রই ব্রহ্মাস্ত্রের ডিঅ্যাক্টিভেশন ভয়েস পাসওয়ার্ড। চিৎকার করে বল তোরা আমার সঙ্গে …ওঁ ত্র্যম্বকম যজামহে সুগন্ধিম পুষ্টিবর্ধনম্ /উর্বারুকমিব বন্ধনান্ মৃত্যৌর্মুক্ষীয় মামৃতাত্।।”
কর্ণটিলার শূন্য প্রান্তরে ছড়িয়ে পড়লো সমবেত কন্ঠে উচ্চারিত মহামন্ত্র। মনে হলো চাঁদের আলোয় ভর করে সে উচ্চারণ দূর দূরান্তরে ছড়িয়ে যাচ্ছে। ভূ -গর্ভের ভয়ঙ্কর শব্দটি কমে আসতে লাগলো ধীরে ধীরে। থেমে গেল মাটির কম্পন। কার্ল পাগলের মত ছুটে এলো, মুখ দিয়ে লালা গড়িয়ে পড়ছে রাক্ষসের মত। ওয়াসিমের হাত থেকে আগ্নেয়াস্ত্রটি কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করতেই, অনির্বাণের প্রবল একটি ঘুষি কার্লের চোয়ালে এসে পড়লো। এক পাশে ঢলে পড়লো তার অচেতন দেহ।
ফেরার পথে গাড়িতে জ্ঞান ফিরলো কার্লের। ড্রাইভার বললো যে সে ভূমিকম্পের ভয়ে প্রথমে আসতে চাইছিল না, তার উপর ভয়ংকর সে শব্দও কানে গেছে তার।