” বিজলি গ্রিল বিজলি গ্রিল, নেই দরজা কপাট খিল – এই বিজ্ঞাপনটা ছোটবেলা দেখতাম আনন্দমেলায় I তখন বোধহয় বিজলি গ্রিল আলিপুর চিড়িয়াখানার সামনেই শুধু ছিল I আলিপুরের রোগা রোগা বাঘ সিংহকে অনেকদিন দেখতে যাই নি, সুতরাং ওখানকার বিজলি গ্রিল ওপেন এয়ার রেস্তোঁরা কিনা মনে নেই আমার I তবে গৌহাটি থেকে কাজিরাঙ্গা যাবার পথে পর পর কতগুলো চা-জলখাবারের দোকান দেখেছিলাম, বোধহয় ২০১১ কী ২০১২ নাগাদ I দোকানগুলোর বৈশিষ্ট্য ছিল , এগুলো আক্ষরিক অর্থে 24 x 7 – এগুলো বন্ধ হয় না , সে অর্থে তাদের দরজাও নেই I কথায় কথায় জেনেছিলাম ,চুরি চামারির কোনো গল্প নেই সেখানে – এখনো ওভাবে দোকানগুলো চলে কিনা জানি না – ‘সভ্যতার’ অগ্রগতি হচ্ছে কিনা ! তবে একেবারে নেই দরজা কপাট খিল , মায় দেয়ালবিহীন বাড়ির গল্প আমি প্রথমে শুনি অ্যানির মুখে I আমি যেই সময়ে বতসোয়ানা ডিপার্টমেন্ট অফ ট্যাক্সে চাকরিতে গিয়েছিলাম, সেই একই সময়ে , জিম্বাবুয়ে রেভিনিউ সার্ভিস থেকে ছুটি নিয়ে চলে আসে Iওখানে যাওয়ার ঠিক আগে আগে, কোনো একটি কমনওয়েলথের প্রোগ্রামে ,প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে, অ্যানিকে যেতে হয় সামোয়া দ্বীপে I নিউ জিল্যান্ডের পূর্বতন কলোনি এই দেশটির অনেক মজার কাহিনীর সঙ্গে এই বাড়ির গল্পটিও তার কাছে শোনা I এই ধরণের বাড়ির পোশাকি নাম ‘Fale ‘I অ্যানির জবানিতে, বড় উঠোনের মধ্যে ‘ডোমাকৃতি’ বাড়িগুলোতে সামোয়ার লোকজন থাকত I সেই ডোম গুলোতে থামের জোর তা থাকলেও থাকলেও, কোনো দেয়াল থাকত না , ছিল না দরজা জানালার বালাই I ঝড় বৃষ্টির সময় উপর থেকে চাটাইয়ের মতন আবরণ ফেলে দেয়া হত I এই ধরণের বাড়ি নির্মাণের কার্য কারণ সম্বন্ধে অ্যানি বলেছিল, সামোয়াবাসীদের বিশ্বাস , ঝড় বা কোনো ভূমিকম্প হলে ইঁটের দেয়াল গাঁথা বাড়িগুলিতে ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয় দেয়াল চাপা পড়ে I অবশ্য সরকারি অফিস কাছারি বা হোটেল সবই ইঁটের দেয়ালেই তৈরি I তবে ট্যুরিস্ট দের আকর্ষণ করার জন্য সমুদ্রের বেলাভূমিতে , Fale -র চাহিদা আছে বেশ I এছাড়া , প্রচলিত যুক্তি হচ্ছে , প্রায় ৮৮ ডিগ্রি ফারেনহাইটের দেশে , উঁচু ছাদ আর খোলা দেয়ালের বাড়িগুলোতে হাওয়া বাতাস বেশ খেলে I আর পৃথিবীর সর্বত্র, আদিবাসী সমাজ একে অপরের ব্যক্তিগত পরিসরকে সম্মান দিতে জানে,সুতরাং, সেদিক থেকে কোনো কোনো সমস্যা নেইIতার মানে , কোনো একটি পরিবারের ঘরোয়া আড্ডা , বিবাদ বা প্রেমঘন মুহূর্ত যাই সংঘটিত হোক না কেন , অন্য কেউ সে দিকে ফিরেও তাকাবে না। আমরা ‘সভ্য ‘ জগতের লোকেদের মত ‘পিপিং টমগিরি’ এই আদিবাসী সম্প্রদায় করে না।
উইকি অবশ্য দেয়ালবিহীন এই গোলবাড়ির উদ্ভব কিভাবে হল , তার পৌরাণিক গল্পটিও শোনাচ্ছে I কথিত আছে,সামওয়ানদের দেবতা তাগালাওলাগির নির্দেশে নাকি এরকম বাড়ি তৈরী হয় I বহু যুগ আগে নাকি ওদের বাড়ি বিভিন্ন রকম আকৃতির হত , কিন্তু একজন কাঠমিস্ত্রি বা ঘরামী কেবল একই রকম বাড়ি বানাতে পারত I চাহিদা ও যোগান নিয়ে বিশাল সমস্যা দেখা দেওয়াতে ওখানকার অধিবাসীরা সকল ঘরামীদের নিয়ে এক মিটিঙে বসে, কিন্তু তাতে কোনো সমাধানসূত্র বেরোয় না I তখন সকলে মিলে তাওলাগালাগি বা তাগালোয়ার শরণাপন্ন হয় I দেবতার নির্দেশে , তখন থেকে সব বাড়ি গোল আকৃতির হবে , এই স্থির হয় – ব্যস , তাতেই সমাধান – দরজা জানলার তো ব্যাপার আর নেই ! সুতরাং , আমরা যারা দুয়ার এঁটে থাকি, তাদের কাছে এটি একটি অন্যধরণের গল্প বটে !
পাদটিকা : বিপুলা পৃথিবীর কতটুকু জানি ! কপিরাইট ভঙ্গের ভয়ে কোনো ছবি দিলাম না , আগ্রহী বন্ধুরা গুগলে দেখে নিন I