সে এক সময় ছিল যখন মাইলের পর মাইল দেখা যেত শুধু ফাঁকা মাঠ চারিদিকে ধূ-ধূ করত পথঘাট। পায়ে হাঁটা রাস্তা ছিল , গাড়ি-ঘোড়া বিশেষ ছিল না বললেই চলে। বড় জোর গুরুর গাড়ি অথবা ঘোড়ায় চড়া ফিটন গাড়ি। মন চাইলেই খোঁজ নেওয়া যেত না আত্মীয়-পরিজন,বন্ধু-বান্ধব কারুর, তবুও যেন একটা হৃদ্যতা ছিল সবার মাঝে। ছিল একটা মধুর সম্পর্ক যা তস্মিনকালে কোনোভাবে যোগাযোগ ঘটলে বোঝা যেত তাদের কথায়-ব্যবহারে। দু-একজন ছাড়া সকলেই প্রায় আনন্দে ব্যাকুল হয়ে উঠত পরস্পরের সুখ-দুঃখের গল্প-গুজবে, খোঁজ নিত অনুপস্থিত আত্মীয় পরিজনদের। খেলা-ধূলা,হৈ-চৈ আর খাওয়া-দাওয়ায় ভরপুর আনন্দের ঝর্ণাধারা বয়ে যেত।
বর্তমানে এক সময় এসেছে– হাত বাড়ালেই বন্ধু,পা বাড়ালেই গাড়ি, তবুও যেন সবার মধ্যেই একটা গ-ছাড়া ভাব, খোঁজ নেওয়া হয় না তেমন ভাবে ব্যস্ততার জীবনে। মানুষ আজ ব্যস্ত হয়ে পড়েছে ভীষণ ভাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে কম্পিটিশনের যুগে।।, সামাজিক ভাবে নিজেকে জাহির করতে। ছোট থেকে বড়ো সকলেই আজ প্রমাণ করতে চায় নিজেদের একজন দক্ষ কারিগর রূপে– সে যাই হোক— একজন ভাল ইঞ্জিনিয়ার বা ডাক্তার অথবা কোনো দক্ষ কারিগর বা অভিনেতা কিংবা দক্ষ শ্রমিক বা সমাজসেবী।
আগেকার দিনের যে দু-একজন ছিল কূট বা চাটুকার তারা এখন কোটির পৃথিবীতে রূপ নিয়েছে শত-সহস্র-লক্ষ-কোটিতে, মানুষ মারার প্ল্যান কষছে অনবরত মাথা খাটিয়ে বের করছে নানারকম ধ্বংসের পরিকল্পনা। কেউ আনন্দ পায় গড়ে তুলে নতুন পৃথিবী নতুন করে সাজিয়ে সুখ-স্বাচ্ছন্দের সুন্দর ভাবে, আবার কেউ ব্যস্ত হয় পরে তাকে ছিন্ন-ভিন্ন করতে।
সময় নেই, কারুর হাতে সময় নেই অন্যের খোঁজ নেওয়ার বা হৃদ্যতা গড়ে তোলার, পৃথিবী আজ যতই মুঠোফোনে বন্দী হয়ে পড়ুক তবুও যেন হাতে কারুর সময় নেই সকলেই ছুটছে শুধুই উজ্জ্বল এক ভবিষ্যতের খোঁজে। দেশ ছেড়ে আজ যাচ্ছে বিদেশ স্বপ্নকে ছেড়ে, মন দিচ্ছে পারি ঘরের থেকে বাইরে– ঘরের পরিসর কমেছে আজ বেড়েছে মনের পরিসর, কমেছে স্পেস হৃদ্যতা আর যত সম্পর্কের। না জানি অদূর ভবিষ্যত দেবে কোনদিকে পারি যন্ত্র মানব গড়ছে যতই নিজেও মানুষ যন্ত্র স্বরূপ, সম্পর্কের নেই তো জোর,দুস্সম্পর্ক রইবে দূর।
তাই তো সকল কাজের মাঝেও ভুলতে চাই না নতুন বছরে নতুন সূর্য নতুন প্রভাত এনেছে, মনে যত গ্লানি-বিদ্বেষ দূর করে সবকিছু সাদরে জানাই সবাইকে আজ নতুন বছরের শুভেচ্ছা আনন্দে ভরুক সবার জীবন নতুন বছরে।