শীতের রাত মানেই দীর্ঘ একটা সময়। এক মায়াবী আচ্ছন্নতা বিরাজ করে তখন। কম্বলের ভিতরে গা ঢুকিয়ে অন্ধকার ঘরে স্মৃতির পট ভেসে ওঠে। আমার জন্ম শৈশব যেখানে কেটেছে সেখানের নাড়ির টান আমাকে হাতছানি দেয়। আমার ঠাকুরদার ছিল জমিদারি আদবকায়দা।তার সাথে জমিদার সুলভ মেজাজ। আমার মনে হয় পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষ ছিলেন তিনি। এখনও মনে হয় আমাদের তিনতলা বাড়ির সিঁড়ি দিয়ে তিনি উঠে যাচ্ছেন। ঋজু শিরদাঁড়া। কেউ কখনও তাকে তোষামোদ করে পেত না।
বিশাল বড় বড় সেগুন কাঠের আসবাব ,দেয়াল আলমারিতে থাকে থাকে সাজানো বই। কত মানুষ এর ভিড়ে জমজমাট বাড়িতে হৈ হৈ করে বাঁচা। আমার তো একটা বাড়ি করতেই থরহরি কম্প। ঠাকুরদার আটটা বাড়ি। কী বুদ্ধিমতী ছিলেন আমার ঠাকুরমা। ঠাকুরদার কানে বুদ্ধি জোগাতেন। আমার মনে হয় আমিও তো ওদের উত্তর পুরুষ। কেন আমি ওদের মতো হলাম না।
ওই সাটিদহ গ্রামে আমার কত মানুষ এর সাথেই আলাপ ছিল। এটা রটনা ছিল এই গাঁয়ে আগে সতীদাহ হোতো। সেই থেকেই লোকমুখে এমন নাম।এক একটা মানুষের জীবন তো একেকটা গল্প। শীতের দিনে মিঠে রোদে বসে পিঠে খেতাম। কত রকমের পিঠে। সিদ্ধ পিঠে,সরুচাকলি,ভাজা পিঠে ,গুড় পিঠে,আসকে”।সে যেন রূপকথার এক জগত।
সেই রূপকথার জগতে একজনের কথা আজ বড় মনে পড়ছে। আমি তাকে জয়া বলে ডাকতাম। কী সুন্দর ছিল তার চোখ দুটো। উজ্জ্বল গায়ের রঙ আর এক পিঠ চুল। চোখ দুটো তার কথা কৈতো। আমাকে এমনভাবে দেখতো মনে হোতো তার হৃদয়ের অলিতে গলিতে শুধুই আমি। হেমন্তের শিশিরের মতো ঝরে ঝরে পড়ত তার স্নেহঽআর আদর।আমার একটা দিন ও তাকে ছাড়া চলতো না।ওর ভালো নাম ছিল জয়ন্তী। ঠাকুরদার সেরেস্তাতে দলিল লিখত ওর গরীব বাবা। নুন আনতে পান্তা ফুরোনোর সংসারে ওর বাবা স্বপন মাজি যে অর্থ আনতো তা সমুদ্রের মধ্যে বুদবুদ যেন। তবুও নড়েচড়ে সংসার চলত। ওর মা ছিল না। ওর জন্মের পর ওর মা মারা গেল। আমার থেকে বছর পাঁচেকের বড় ছিল আমার জয়া। ও যখন জন্মালো তখন গাঁ সুদ্ধু সবাই বললে “মেয়েটা অপয়া। লক্ষণ খুব খারাপ। জন্মের পর মাকে খেলে”। কত অভাবের মধ্যে বছরের পর বছর নিয়ম করে বাচ্চার জন্ম দিতে গিয়ে কত মা মারা যায়। আর সবাই ছোট্ট শিশুর গায়ে লটকে দেয় অপয়া তকমা।
জয়ার উপরে আরও তিন দিদি আর এক দাদা। জন্মের কিছুকাল পরেই বোঝা গেল এ মেয়ে বোবা। কথা বলতেই পারছে না। পাড়া গাঁয়ের ডাক্তার যে রোগ নির্ণয় করতে গিয়ে হাতড়ে মরে সে নিদেন হাঁকলে”এ মেয়েটা কথা বলতে কোনও দিন পারবে না। । সবাই বললে “সত্যিই এমন মেয়ে অপয়া”।
আমাদের দোতলার জানালা দিয়ে দিগন্ত বিস্তৃত মাঠ আর প্রান্তর আমাকে আহ্বান করত। মূক প্রকৃতির অপার রহস্য। সেই অধরাকে ধরবার শক্তি কারোর নেই। একেক সময়ে এক এক রূপ। শীতকাল এলে যখন রোদ হাওয়ার খুনসুটি চলতো তখন আর একজন আমার সাথে খুনসুটি করতো। পরে ভেবেছিলাম হৃদয়ের গভীরে যে সব মানুষ একবার ঠাঁই পায় তাদের সাথেই চলে অনন্ত খুনসুটি।
বাক্য মনের বাইরে যে অধরা তা আমার জয়ার মধ্যেই ছিল। ওকে বলতাম “কী গো মেঘবালিকা। অস্তরাগের ধূসর ফ্রকে কোথায় ছিলে?” আমার কথা কওয়ার দিকে হাঁ করে তাকিয়ে থাকত জয়া।বিদ্যুতের ঝিলিক খেলত ওর চোখে। আমার হাত ধরে টানতো। কী যেন দেখাতে চায়। আমি বললাম “ঠিক আছে। ঠিক আছে!যাচ্ছি। “ গিয়ে যা দেখলাম তাতে আমার চক্ষু চড়কগাছ। বললাম “ইসস! কী নোংরা! কী করিস এসব?”
মাটি খুঁড়ে এতো কেঁচো বার করেছে জয়া। একটা নারিকেল মালায় রেখেছে। কিলবিল করছে ওগুলো। আমি ওর কান্ড দেখেই চলেছি। ছুটল বাড়ির দিকে। নিয়ে এল একটা ছিপ। নিজেই বানিয়েছে মনে হল। বাঁশ বাগান থেকে কঞ্চি কেটে তাতে বঁড়শি লাগিয়েছে। বঁড়শিতে গাঁথলে কেঁচোর দেহ। আর তারপর পাশের পুকুরে যেই ফেলা অমনি বড় বড় পুঁটি মাছ পড়তে লাগল। আমি বললাম “জয়া। এগুলো রামপুঁটি”। ও কী বুঝলো। খিলখিল করে হাসতে লাগল। কী দারুণ বড় বড়। মাছ ধরে বাড়িতে নিয়ে গেল জয়া। সন্ধের সময় পড়তে বসবো আমি। হঠাৎই দেখি গরম গরম পুঁটিমাছ ভাজা এনেছে জয়া। মুখে এক মুখ হাসির সাথে আলতো করে ঘাড় নাড়ছে। বলতে চাইছে তুই খা”। ছেলেবেলার সেই মুহূর্ত গুলো আমাকে শিখিয়ে দিয়েছে মানুষ কে কেমন করে কাছে টানতে হয়। মনের মানুষ কে আগলে রাখতে হয়।
বাড়ির সব বাধা উপেক্ষা করে আমি মাঝে মাঝেই চলে যেতাম ওদের কাছে। ওদের মলিন কাঁথার মাঝে জীবনের যে স্বাদ তা অন্য কোথাও নেই। আমার রূপকথার দেশের কল্পনার রাজকুমারী আমার জয়া। ওর বড় দিদি বিরাট একটা সানকিতে আলু মাখছে। ঘর দোর নিকানো ঝকঝকে। আর মনে হোতো ওদের বাড়িতে আমার কত কদর। নিজেকে ভীষণ দামী মনে হোতো। সেবার বর্ষাকাল এল যেন বানের বার্তা নিয়ে। কতদিন ধরে নাগাড়ে বৃষ্টি। দামোদর ক্ষেপে উঠেছে। নিকাশি খাল জলে টৈ টম্বুর। ঘরের মধ্যেই চলছে সঙ্গীত চর্চা। আমরা ভাইবোনেরা বারান্দার বিরাট খোলা জায়গায় মঞ্চ সাজিয়েছি। হয়ত বর্ষামঙ্গলের একটা চেষ্টা। যে যেমন পারছি নাচছি গাইছি। জয়াও হাজির। মঞ্চ বাঁধতে কত ফরমাশ ও ছাড়া কে করবে।
রেডিওতে খবর শুনেছে সবাই। ভয়াবহ দুর্যোগের ঘনঘটা। নদীর জল গাঁয়ে ঢুকবে। ভয়ের সাথে রোমাঞ্চিত আমরা। হঠাৎই জয়া আমাকে ইশারা করে তিনতলায় যেতে। দুজনেই আশ্চর্য হয়ে যাই। দূরের মাঠে নদীর জল ঢুকছে। জয়ার সব কথা আমি বুঝতে পারি। ও আমাকে মাতাল নদী দেখতে যেতে বলে। কিন্তু সে কী করে সম্ভব। ওই দূরের মাঠে কখনও যাই নি। তার উপরে এই বর্ষাকাল। মাঠে সাপ ভেসে বেড়াচ্ছে। আল কেউটে খুব খতরনাক। তবুও একটা অদম্য ইচ্ছা জাগে। মনে হয় জয়ার মতো টো টো করে ঘুরে বেড়াই। না আর কোনও বাধা নয়। আমি আর জয়া টিপটিপ বৃষ্টির মধ্যেই দৌড় দিলাম। কয়েক টা বাড়ি পেরোতেই খোলা মাঠ। আল দেখা যাচ্ছে না।জলের ছপাং ছপাং শব্দ। আমার হাঁটু পর্যন্ত জল। কী অপূর্ব আনন্দ আমাদের গ্রাস করেছে।
জয়া এই টিপটিপ বৃষ্টির মধ্যেই জলের উপর ভেসে থাকা মেঠো কলমীশাক তুলতে লাগল। এমন তো ও কতদিন তোলে। আমার হাতে দেয় নধর শাকগুলো। তারপরেই আলের গায়ে গর্তে হাত ঢোকায়। এত বোকা। বোকারা বিপদের আশঙ্কা করতে পারে না বলেই এত সাহসী হতে পারে। আর আমি চিৎকার করতে থাকি “জয়া। গর্তে হাত কেন ঢোকাচ্ছিস। সাপ আছে। ছোবল দেবে তোকে”। ও আমার বলা কথা বুঝতেই পারে না। গর্ত থেকে কাঁকড়া বার করে। ছোট্ট ছোট্ট কাঁকড়া। গরীবের অন্নের পাশে প্রকৃতির তরকারি সম্ভার। এই বোবা মেয়েটার যা জানা আমার জানা নেই। ভীষণ ভয় করে। অন্ধকার নেমে আসছে।কালো হয়ে আসছে আকাশ। নিশ্চয়ই বাড়িতে আমার খোঁজ পড়েছে। আজ কপালে প্রচুর বকাঝকা।
আমি জয়ার হাত ধরে টানতে লাগলাম। ইশারাতে আকাশ দেখালাম। এবার ওর উচ্ছ্বাস কমলো। বুঝতে পারল বিরাট ভুল হয়ে গেছে। আলপথ ধরে এগিয়ে আসছি আমরা। জৈমিনী ঋষিকে স্মরণ করছি। আকাশে ভীষণ চিকুর হানছে।
এদিকে বাড়িতে খোঁজ খোঁজ রব।কোথায় গেল মেয়েটা। অন্য ভাইবোন বললে “ঠিক জয়াদের বাড়িতে গেছে।” অমন একটা অবস্থা। ঠাকুরদার চিন্তার শেষ নেই। জয়াদের বাড়িতে গিয়ে বললে “স্বপন! আমাদের মেয়েটা কী আছে!” এবার আরও চিন্তা সকলের। এখানেও নেই। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ। দুটো মেয়েই নেই। স্বপন মাজি বললে “মাঠের দিকটা দেখে আসি। জয়ার সাথে ওদিকে যেতে পারে নদী দেখতে”। সবাই অবাক। এই হাঁটুজলে তা কী করে সম্ভব। তাড়াতাড়ি মাঠের দিকে আসে স্বপন জেঠু। অন্ধকার এর মধ্যেই দেখার চেষ্টা করে দুটো অবয়ব দেখা যায় কিনা। কিন্তু কিছুক্ষণ এর মধ্যেই আকাশ ভেদ করে নেমে আসে দেবরাজ ইন্দ্রের বজ্র। একটা আগুন আকাশকে যেন বিদীর্ণ করে দেয়। দূরে নারকেল গাছে আগুন। আমরা ছুটছি। কিন্তু আগুন ধরা নারকেল গাছের নীচেই তো ছিল স্বপন মাঝি। তার নিথর দেহটা পড়ে আছে। গলায় রুপোর হারটা কালো হয়ে গেছে।
আমাদের চিৎকার শুনে গোটা গাঁ সেখানে উঠে এল। সকলের ঘৃণা বর্ষিত হল আমদের মাথায়। আর জয়ার অপয়া উপাধি অক্ষত রয়ে গেল। জয়া অনুভবে বুঝলো আর আমি সকলের সমস্ত কথা নত মস্তক শুনে গেলাম। এই মৃত্যুর দায় অস্বীকার করার উপায় নেই। ঠাকুরদা শুধু বললে নিয়তি।কিন্তু ঈশ্বরের এই পক্ষপাতিত্ব কেন হল। মনে হল আমার কেন মৃত্যু হল না। এদিনের এই ভয়ঙ্কর ঘটনায় আমরা হঠাৎই বড়ো হয়ে গেলাম। কালের নিয়মে সবকিছুই ফিকে হয়ে যায়। আমরা একটু বড়ো হয়েছি এখন। জয়ার দিদিদের বিয়ে হয়েছে ঠাকুরদার তৎপরতায়। জয়া এখন কোথাও যায় না। মাটির পুতুল বানায় ঘরে বসে বসে।
সেবার দুর্গাপুজোর সময় গাঁয়ের বারোয়ারি পুজোর ঠাকুর তৈরি করতে এল এক মূৎশিল্পী। ঠাকুরদা বললে “খুকু। তুই জয়াকে নিয়ে একবার বারোয়ারীতলায় যা। গোবিন্দ ঠাকুর তৈরী করতে এসেছে। ওকে বলে আয় দুপুরে আমাদের বাড়িতে খাবে।”
জয়া এখন সবসময়ই ব্যস্ত। ওর দেখা পাওয়া ভার। দিদিদের বিয়ে হয়ে গেছে।দাদার সংসারে রয়েছে।দাদার জন্য রান্না করে। দাদা এখন বাবার কাজে বহাল হয়েছে। সেরেস্তাতে যাবার আগে সব ব্যবস্থা করে দেয় জয়া। শুধুই কী তাই। সেই নদীর ধারে যেখানে পলিমাটি বালতি করে আনে জয়া। মাটি ছানে। একেবারেই আকাঁড়া মাটি করতে হয়। তারপর কতরকমের পুতুল তৈরি করে।
আমাদের বাড়িতে গোবিন্দ পাল খেতে এল। বারোয়ারীর ঠাকুর তৈরি করবে। আর দুপুরে আমাদের বাড়িতেই খাবারের ব্যবস্থা। কলাই এর ডাল,আলুপোস্ত,চুনোমাছের টক আর বেগুনঘূর্ণি দিয়ে ভাত খেলে। গোবিন্দ পাল শিল্পী মানুষ। বাড়ি আঁটপুরে। বয়স প্রায় ষাটের মতোই। ঠাকুর দা বলেন “গোবিন্দ টা বড় দুখী”। আমার মনে হোতো গোবিন্দের দুখের আবার কী আছে। ঠাকুর তৈরিতে কত মজা”।
গোবিন্দ পাল এই চত্বরের সব থেকে বড় মৃৎশিল্পী। জাতিতে কুমোর । বাড়িতে ওর ছিল বিরাট কারখানা। মাটির বাসনকোসন থেকে শুরু করে ঠাকুর তৈরি । সব হোতো সেই কারখানায়। ওর ছেলে মিন্টু পাল বাপকে সাহায্য করত। মাটি আনা, দুদিন ধরে ভিজিয়ে সেই মাটি ছানা। খুব পরিশ্রম করতো ছেলেটা। এখন সব বন্ধ। কোনও এক দুখের কারণে ওর নাকি সব উপার্জন বন্ধ। ঠাকুরদা বললে ” কী গোবিন্দ! তোমার কোনও অসুবিধা হচ্ছে না তো। তাহলে আমাকে জানিও”। গোবিন্দ হাসলে। বললে “পলিমাটির একটু দরকার পড়ছিল। যদি জোগাড় করা যেত তবে এঁটেল মাটির সাথে মেশাতাম।ঠাকুর এর মুখ করতে ওটুকু চাই “।
ঠাকুরদার চিন্তার লাঘব করে আমি বললাম “জানো দাদু। জয়ার কাছে অনেক পলিমাটি আছে। ও ঠাকুর করে। পুতুল করে। মেলাতে সেসব বিক্রি করে পয়সা পায়”।ঠাকুরদা বললে “ঠিক বলেছিস। খাওয়ার পর গোবিন্দ মিস্ত্রীকে নিয়ে দাদু গেল জয়ার বাড়িতে। জয়া তখন মাটি গুলে মোটা কাপড়ে জল ছাঁকছে। শুনতেই পেল না জয়া ।গোবিন্দ মিস্ত্রি বললে “আশ্চর্য! আপনি এত জোরে ডাকলেন তবুও সাড়া দিলে না কেন!” ঠাকুরদা বললে “যারা বোবা তারা কানে খাটো। ইশারাতে বোঝাতে হয়।” গোবিন্দ পাল শিল্পী মানুষ। বুঝে যায় জয়া আসলে শিল্পী। সামান্য উপকরণ অথচ অসাধারণ সব শিল্প কাজ। ঠাকুরদা বলে “মেয়েটার কপাল মন্দ। এইটুকু বয়সে দাদার সংসারে অবাঞ্ছিত হয়ে মুখ বুজে কাজ করে চলে”। জয়ার ডাক পড়ল বারোয়ারী তলায়। গোবিন্দ বললে “মেয়েটার হাতের এলেম আছে। আমাকে মাটি করতে আর মের বাঁধতে সাহায্য করুক। “ এই প্রথম সবাই বুঝে গেল অপয়া আর অপাঙক্তেয় মেয়েটার মধ্যেই কত গুণ আছে। এদিকে সংসারের কাজ বৌদিকে সামলাতে হচ্ছে। দিব্যি বিনি পয়সায় অমন একটা হাবাগোবা ননদ পেয়ে গিয়েছিল। তাই জয়ার উপর অত্যাচার বাড়ল। দাদার কান ভারী করে জয়ার গায়ে পর্যন্ত হাত দিল ওরা। আর বিধাতা পুরুষ সেদিন অলক্ষ্যে হাসলেন।
পুজোর আর কয়েক টা দিন। ঠাকুরের চোখ আঁকতে গিয়ে শিল্পী গোবিন্দ কেঁদে ফেললে। ঠাকুরদা বললে “তুমি আবার কাঁদছো গোবিন্দ!” গোবিন্দ উত্তর দিলে “কী হবে ঠাকুর। আমার ছেলেটার অমন দুর্ঘটনায় একটা পা বাদ চলে গেল। এই বুড়ো বয়সে আমি একা কীকরে সবদিক সামলাবো। ভেবেছিলাম খুব ঘটাপটা করে ছেলের বিয়ে দেবো। আর আজ। বিধাতার প্রতিমা মূর্তি গড়ি। তাতে দেব দেবীর প্রাণ প্রতিষ্ঠা করে মানুষ। কোন পাপে এমন হল বুঝতেই পারি না”।
দেবীর চোখ আঁকা হচ্ছিল। গোবিন্দ বললে “এখনও জয়া মা এলো না। যাই ডেকে আনি।হাতেনাতে সাহায্য করে মেয়েটা”। শিল্পী গোবিন্দ জয়ার বাড়িতে গিয়ে দেখলে অপয়া অলুক্ষনে বলে জয়াকে মেরেছে ওরা । বোবা মেয়েটার চোখে জল। একপাশে বসে বাসন মাজছে।
দুর্গাপুজোর মহাষ্টমীতে বারোয়ারী তলায় ঢাক বাজছে। এবার কার্তিক মাসে পুজো। গোবিন্দ মিস্ত্রি লুচি আর ঘুগনি খাচ্ছে আমাদের বাড়ি ।সঙ্গে একটা ছেলে এসেছে। অল্প বয়সী যুবক। জয়াকে বিয়ে করবে সে।সামনের অঘ্রাণে আমার জয়া শ্বশুর বাড়ি চলে যাবে।বাড়ির কারখানা আবার চালু হবে। ছেলেটার নাম মিন্টু পাল। শিল্পী গোবিন্দ পালের ছেলে। গ্রামের অপয়া মেয়েটা এবারে ঠাকুর তৈরি করেছে গোবিন্দ পালের মতো শিল্পীর সাথে। ওর নাম অপয়া নেই। গোবিন্দ পাল বললে “বড়ো লক্ষীমন্ত মেয়েটা”। দাদুর মুখে হাসি। বললে “জয়া মানে মা দুগ্গা”।