পরম শরণ
শ্রী নীলকান্ত মণি
সে ছিল আমার শৈশব
হামাগুড়ি দিয়ে যবে চিনতে চেয়েছিনু
পৃথিবীর পথ, চার পায়ে৷
তারপর একদিন বুঝলাম, হঠাৎ ই,
সামনে আমার বিস্তর পথ
বুক পেতে পড়ে আছে আমার মুখের দিকে চেয়ে৷
সেই পথ পার হতে গেলে দাঁড়াতে হবে সোজা হয়ে
নিজের দুই পায়ে ভর দিয়ে৷
এ ভাবেই পৃথিবীর অনেক টা পথ
হেঁটে ছিনু, অতিক্রান্ত পথ জীবনের
সকাল বিকেল দুপুর৷ কখন যে
সন্ধ্যা নেমে এলো খেয়াল করিনি৷
জীবন সায়াহ্নে এসে দেখি, ঠিকানা ছুঁতে
এখনো কিছু পথ বাকী রয়ে গেছে৷
অবুঝ সবুজ বন বীথি দিগন্তে এঁকেছে বলয়
সুয্যি ডুবু ডুবু, মন্দ গতি বহিছে মলয়৷
পথ, তখনও ডাকছে আমায়, থাকি থাকি!—
এসো, পৌঁছাতে ঠিকানায় আছে আরো বাকি৷
তাড়া খেয়ে কোথায় পড়েছে যেন নাড়া!
অন্তর গভীর হতে আসে সাড়া, –যাই!
অশক্ত পা দুটি আমার ভয়ে কাঁপছে থরথর,
গন্তব্যে তবে কি যাবে না পৌঁছানো!
‘তা হতে দেওয়া যায় নাকি, বুক চিতিয়ে হাঁটো
লাঠিতে ভর দিয়ে’!—কে যেন বলল আমাকে
ঠেলা দিয়ে৷ অগত্যা করলাম ও তাই৷
আমি একা৷ একাকী খুঁজি দিগন্ত পথ একরোখা৷
যন্ত্র- চালিত৷ শুরুতে ছিলাম চার পেয়ে,
কালে দু’ পেয়ে হলাম, এখন তিন পেয়ে!
ভ্যালা রে জীবন, তোর পায়ে কোটি নমস্কার!
আবিস্কার, আবার হঠাৎ ই,
জীবন বহন কারী দেহ টি এবার হারিয়ে সক্ষমতা বিছানা কে করেছে আশ্রয়৷
জীবন প্রমাদ গণে!
কী হবে এখন!? কে দেবে এখন, অভয়!
মুখ এনে শ্রবণের কাছে কে যেন বলল, চুপে,
চিনতে পারিনি যদিও ঠিকঠিক, তবু শুনলাম—
নাও তো শরণ এখন মননের, তারপর, কি হয়,
না হয়, দেখা যাবে৷
হক কথা৷ এতো টা পথ পার হয়ে এসে
শেষে কি ব্যর্থ হতে হবে! অচেনা এ জীবন
চিনে চিনে এতো টা পথ হাঁটা, না হোক,
কিছু তো বিশ্বাস সঞ্চিত রয়েছে, জীবন-মন্দির
প্রয়োজনে নিশ্চয় সাহারা দেবে সে রসদ থেকে৷
পথের বেদনা কথা কয় বন্ধুর মতো কাঁধে হাত রেখে৷
পথ বন্ধুর, বড়োই আঁধার এখন, আকাশে ঘনিয়েছে
ঘন ঘন, হয় না ঠাহর দিগ্বিদিক, নয়ন চলে না৷
বুঝলে হে, এখন আমার শরণ ই না হয় নাও,
বলল মনন, পথ চলা করো সমাপন; হোক সায় এ বারের এই পরিক্রমা৷ নির্ভয়, সরল বিশ্বাসের
সবল সক্ষম হাতের ’পর ভর দাও!
—oooXXooo—