হেলিকপ্টারে উঠেই সেদিন সে তার এই চাকরিটার জন্য নিজেকে ধন্য মনে করছিল।বারবার বাড়ির কথা মনে পড়ল। বহুদিনের স্বপ্ন পূরণের জন্য বিধাতাকে স্মরণ করে জানালো প্রণাম। PQ PLATFORM এ জয়েনিং এর আগেই কোম্পানি থেকে তাকে দিল BTITISH GAS (BG)কোম্পানির নির্দিষ্ট আইডেন্টি কার্ড।প্ল্যাটফর্মে পৌঁছাতেই প্রথমে নিয়ে গেল সেফটি অফিসে।সেখানে প্রায় চার ঘন্টা ধরে বিভিন্ন রকমের ট্রেনিং করানো হলো।অক্সিজেন গ্যাস সিলিন্ডার পিঠে নিয়ে কি করে মাস্ক পরতে হবে সেই সমস্ত প্রাকটিকাল ভাবে দেখানো হয়।সেফটি অফিসারের নির্দেশ মত সব ট্রেনিং শেষ হবার পর দেখানো হলো অ্যাক্সিডেন্ট হলে কিভাবে সেভ হতে হবে। তার বিভিন্ন DVD চালিয়ে দেখানো হলো।তারপর সেখান থেকে প্লাটফর্ম সুপারিন -টেনডেন্টের কাছে।সেখান থেকে ক্যাম্পবস।তিনি তার রুম দেখিয়ে দিলেন।লাগেজ রেখে পরে গেল গ্যালিতে (কিচেন রুম)।সারাদিন ক্লান্ত তাই ক্যাম্পবস সেদিন রেস্ট নিয়ে পরদিন থেকে ডে ডিউটিতে কাজ শুরু করার নির্দেশ দিলেন।পরের দিন থেকে শুরু হয়ে গেল তার নির্ধারিত কাজ।প্লাটফর্মের ভেতরটা খুব ভালো ছিল।কি না ছিল সেখানে! হোটেলের মত সাজানো গোছানো।যেমন খাওয়া দাওয়া তেমন থাকার জায়গা। প্রত্যেকের জন্য আলাদা আলাদা কেবিন।বড় সিনেমা হল,কাঁচের ঘেরা জিমরুম,হসপিটাল,খেলারজন্য কেরাম,দাবা ,টেবিল টেনিস— খুব সুন্দর ব্যবস্থা ছিল।সবার জন্য ফ্রিতে প্রতিদিন মোবাইল নেটের ব্যবস্থা। প্রতিদিন বাড়িতে আমার মোবাইলে SMS পাঠাতো। আমিও প্রত্যুত্তরে পাঠিয়েছি বিভিন্ন সময়ে SMS।বন্ধু -বান্ধবদের সাথে নেটে যোগাযোগ করেছে। বিশেষ করে ওর বন্ধু পিন্টুর সাথে।নেটে যোগাযোগ হলেও মোবাইলে কিন্তু কথা বলতে পারতোনা।খুব ভালো জায়গা ছিল।প্লাটফর্মে সে এই প্রথম তাই তার সেখানে কাজ করতে খুবই ভালো লাগছিল।সেখানে ক্যাটারিং ক্রিউ ছিল ১৯ জন আর অন্যান্য স্টাফ ১৭০ জনের মতো।প্রায় প্রত্যেক দিনই ক্রিউ চেঞ্জ হতো।রিলিভার নিয়ে কেউ চলে যাচ্ছে আবার কেউবা আসছে।এই ব্রিটিশ সংস্থা BG কোম্পানির নিয়ম- কোন স্টাফকে ৪২ দিনের বেশি রাখা যাবে না।ইমার্জেন্সি হলে দু একদিন আলাদা ব্যাপার।কিন্তু তার বেশি কিছুতেই নয়।প্রত্যেক ক্রিউকে ৪২ দিনের মাথায় সাইন আপ করিয়ে ল্যান্ডে পাঠানো হোত।প্রয়োজনে একদিন কি দুইদিন পর আবার তাদের নতুন করে জয়েনিং করানো হতো।প্লাটফর্মে প্রতিদিন ২-৩ বার করে হেলি- কপ্টার আসতো।মাঝে মাঝে তার থেকে বেশিও হয়ে যেত।আসলে মাঝে মাঝে সার্ভে করতে বা জ্যাকেটে লোক যেত সেজন্য।আর কখনোবা BG কোম্পানির মেইন অফিসার কিংবা কখনও গেস্ট আসতেন তাই কোন দিন চার পাঁচ বারও হেলিকপ্টার আসতো।তবে খুব বৃষ্টিতে বা দুর্যোগ থাকলে সেদিন বন্ধ থাকতো।সেখানে কাজ করতে বেশ ভালোই লাগছিল।খুব ভালো পরিষেবা ছিল।নেই কোন ঝুট ঝামেলা,কোন অশান্তি।সবাই মিলেমিশে খুব শান্তিতে কাজ করে গেছে। ডে এবং নাইট ডিউটির সকল স্টাফদের ভিতর ছিল এক মধুর সম্পর্ক।গ্যালিতে ডিউটি টাইম শেষ হয়ে গেলেও কুকেদের অনেকটা বাড়তি সময় দিতে হয়।যেহেতু সে কুক তাই তাকে একটু আগেই গ্যালিতে পৌঁছাতে হতো।আর নাইটে যাদের ডিউটি তাদের হাতে ওদের কাজ হ্যান্ডওভার করিয়ে আসতে হতো।আবার যারা নাইটে ডিউটি করতো তারা ওদের উপর সমস্ত দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে যেত।আসলে সকালে যত- ক্ষণ না তারা কাজে জয়েন করছে ততক্ষণ ওরা রেস্টে যেতে পারত না।ঐ সময় অন্যদের খাবারের অর্ডারও নিতে হতো কারণ তখন ছিল ব্রেকফাস্টের সময়।দু’একজন করে কেউ কেউ তখনই আসতে শুরু করতো। তাদেরও তাই সময় মতো ব্রেকফাস্ট করা হতো না।গ্যালির স্টাফ পরে এক এক করে ব্রেকফাস্ট করে নিতো।তার আন্ডারে দুইজন অ্যাসিস্ট্যান্ট কুক ছিল।সেখানে ছেলে ছাড়া আরও একজন কুক ছিল।ওরা দুইজনে মিলে করে ফেলত রান্নার সমস্ত কাজ- গুলি।ওখানে বিভিন্ন দেশের ক্রিউ ছিল।তাই প্রতিদিন তৈরি হতো বিভিন্ন রকমের মেনু।সুপ,তার সাথে হালকা প্রোটন,২ রকমডাল,বয়েল ভেজিটেবল,সবজি দুই রকমের, দুই রকমের ননভেজ,প্লেন রাইস,পোলাও, ফ্রাইড রাইস,চাপাটি,পরোটা,মিষ্টি তিন রকমের, নরমাল গ্রীন স্যালাড, আর একটা ননভেজ–।টেবিলে ফ্রুট অলটাইম- আপেল, অরেঞ্জ ২৪ ঘন্টা থাকতো। যা প্রতিদিন চেঞ্জ করা হতো।এগুলি প্রতিদিন লাঞ্চ ডিনার আর মিড নাইটের মিলের জন্য।এছাড়া অনেক টাইপের জুস,মিল্ক,ক্যাডবেরি,চকলেট,হরলিক্স,চা, কফি,কমপ্লান,গ্লুকোন ডি,স্নাক আইটেম,পিনাট, চিপস,ভূজিয়া,মিক্সার,বিস্কুট আরও অনেক কিছু।কে কত খাবে খাও-কিন্তু নষ্ট করা চলবে না।কোন কোন দিন পানিপুরি(ফুচকা) কোনদিন দহিপুরী(দই ফুসকা) শেভপুরি, পটেটো,ওয়াডা, কখনো সামুশ (সিঙ্গারা) কান্ডা ভুজিয়া( পিঁয়াজি) পাকোড়া-এরকম ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নানা রকম মেনু করা হতো।মোটকথা খাও- য়ার শেষ নেই। সারাদিন এইসব করতে করতে ওদের টাইম কেটে যেত। ওদের যখন ডে ডিউটি ছিল তখন নাইট ডিউটির কুক এসে গ্যালির সমস্ত কিছু বুঝে নেওয়া অব্দি তারা অপেক্ষা করত।তারপরেও অনেকক্ষণ তারা অপেক্ষা করত।গ্যালির ডে এবং নাইটে কুকেদের মধ্যে একটা মধুর সম্পর্ক ছিল তাই নাইটের স্টাফ এলেও যদি কখনো প্রয়োজন হতো তখন সাথে সাথে তারাও হাত লাগিয়ে মেকআপ করে দিত। রাতের ডিউটিতে ছিল মাত্র একজন কুক আর একজন অ্যাসিস্ট্যান্ট কুক। বাকি হেলপার,স্টুয়ার্ড থাকতো।ডিউটিতে রাতে বেকারি ম্যান থাকতো।প্লাটফর্মে মাত্র একজনই বেকারী ম্যান ছিল এবং তার ডিউটি ছিল শুধু রাত্রেই। তার কাজ ছিল অনেক টাইপের ব্রেড বানানো, বিস্কুট কেক, মুফিনস,পাভ ইত্যাদি তৈরি করা। তার ডিউটি নাইটে ছিল কারণ বেকারির কাজ হয়ে গেলে যাতে রাতের কুককে একটু হেল্প করতে পারে। কাজের চাপ নাইটে একটু কম থাকে। তবুও এই দুইজনের পক্ষে তা কষ্টকর হতো। তাই সন্ধ্যা সাতটার পরেও ওরা ডিউটি অফ করেও ওদের সঙ্গে কিছুক্ষণ থেকে হেল্প করে আসতো।প্লাটফরমের ক্যাম্পবস ছিলেন ইউপির বাসিন্দা।ভারী অমায়িক লোক ছিলেন।ওদের সাথে হাসি,ঠাট্টা,মস্কারা,গল্প করে সময় কাটিয়ে দিতেন।সম্পর্কটা ছিল অন্তরঙ্গ বন্ধুর মত। ১৯শে জুন ২০০৭। প্ল্যাটফর্মে কাজ করাকালীন এমন একটা অবিস্মরণীয় দিন এল, যা জীবনে কিছুতেই ভুলতে পারবেনা।সেদিন ডিউটি ছিল সকাল সাতটা থেকে সন্ধ্যা সাতটা।সন্ধ্যায় খুব বৃষ্টি হচ্ছিল।আস্তে- আস্তে আরও বাড়লো। সে কি সাংঘাতিক বৃষ্টি! প্রচন্ড বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে।সবে সন্ধ্যা নেমেছে।সময়টা ৭টা৫০ কি ৮টা হবে।সে তখন রুমে কম্পিউটারের সামনে চেয়ারে বসে বাড়িতে ও বন্ধুদের মেইল পাঠাচ্ছে।হঠাৎ ফায়ার এলার্ম বেজে উঠলো।সে ভাবলো এত বৃষ্টির মধ্যে আবার ফায়ার ড্রিল করবে নাকি? আবার ভাবল হয়তো ফলস ফায়ার এলার্ম বাজিয়ে দিয়েছে। এইসব ভাবতে ভাবতে সে একটু টাইম নিয়ে নিল। হঠাৎ রুম বয় সব রুম চেক করতে করতে আসছিল। তার ডিউটি ছিল আগুন লাগলে সবাইকে রুমে গিয়ে নক করে বাইরে বের করে আনা। তার রুম বন্ধ থাকায় বাইরে থেকে নক করতেই- কাম ইন বলতেই ডোর খুলেই তাকে দেখেই বলে উঠলো-আরে বাঙালি দাদা!(তাকে সবাই বাঙালি দাদা বলে ডাকতো) বিল্ডিং এ আগুন লেগেছে।সে শোনা মাত্র চমকে উঠলো। তাকে জানিয়েই পাশের কেবিনে সে ছুটে গেল নক করতে।তখন তার ইমার্জেন্সি ডিউটিতে সে ব্যস্ত। ছেলে রুমের বাইরে বেরিয়ে আসতেই দেখল সবাই লাইফ জ্যাকেট মাথায় হেলমেট,পায়ে সেফটি সু পরে যে যেদিকে পারছে সেদিকে দৌড়াদৌড়ি করছে।এমতাবস্থায় সবাইকে দেখে তার ভয় হয়ে গেল। সে হঠাৎ থতমত খেয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে দেখতে লাগলো।ঐ দিকে ননস্টপ ফায়ার এলার্ম বেজেই চলেছে। আর কাল বিলম্ব না করে তাড়াতাড়ি বয়লার স্যুট পরে নিল।কারণ এমন ইমার্জেন্সিতে তাদের সকলকে এই ড্রেস পরে নিতে হয়। বয়লার সুট পরার পর সেফটি সু ও লাইফ জ্যাকেট পরে মাথায় হেলমেট দিয়ে সোজা দৌড়ে চলে গেল গ্যালিতে।গিয়েই হট প্লেটের মেইন সুইচ,এক্সজাস্ট ফ্যানের পাওয়ার সহ বাকি সব ওভেনের পাওয়ার অফ করে,ফাস্ট এইড বক্স আর দুটো জলের বোতল নিয়ে সোজা চলে গেল মাস্টার স্টেশনে। কারণ তখনকার পরিস্থিতির উদ্ভবে সবার আলাদা আলাদা ডিউটি ছিল।তাইতো ওদের সবাইকে এখানে এত ট্রেনিং নিতে হয়! মুহূর্তেই সে গিয়ে পৌঁছালো মাস্টার স্টেশন (এমন পরিস্থিতিতে সবাইকে যেখানে গিয়ে দাঁড়াতে হয় তাকে মাস্টার স্টেশন বলে)দূরে তাকাতেই দেখল ওদের পেছনের বিল্ডিং এর উপরের দিকে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে।তখন সে এক ভয়ঙ্কর বিরূপ দৃশ্য! পিছনে দাউ দাউ করে জ্বলছে আগুন। নিচে জল। প্রচন্ড হাওয়ায় ১৫ /২০ ফুট ঢেউ এসে আছড়ে পড়ছে বিশাল পিলারের গায়ে।প্রচন্ড বৃষ্টি আর অনবরত বিদ্যুৎ চমকানো—– সেখানে সেফটি অফিসার ও ডিউটি অফিসার আসলে তাঁরা সবাই লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন। ক্যাম্পবস তখন তার কাছে জিজ্ঞাসা করলেন গ্যালির পাওয়ার সব অফ করা হয়েছে কিনা! সে তখন বলল- ইয়েস ক্যাম্পবস। তখন ওদের সকলের অ্যাটেনডেন্স চেকিং শুরু হল। তখন দেখতে পেল ওদের মধ্যে এক- জন রুম বয় অনুপস্থিত। সঙ্গে সঙ্গেই সে কাম্পবসকে বলল- আপনারা দাঁড়ান! আমি দেখছি। বলেই ছুটে গেল। মুহূর্তেই তাকে খুঁজে নিয়ে এলো। তাকেও হাজির করল মাস্টার স্টেশনে। তখন সবাইকে নির্দেশ দেয়া হলো দাঁড়িয়ে থাকতে।কেউ কোথাও যেন এখন না যায।হঠাৎ বুম করে জোরে একটা প্রচন্ড আওয়াজ হলো।সবাই ভয় পেয়ে চিৎকার করে উঠলো। পিছনের দিকে তখন আগুন আরও বেড়ে গেছে। আসলে তখন একটা গ্যাসের পাইপ ব্লাস্ট করেছে। প্ল্যাটফর্ম থেকে একটা চিমনির পাইপ উঁচুতে বের করা থাকে।সেখান থেকে যত ময়লা,ধোঁয়া, জমা গ্যাস থাকে- সেটাকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ঐ চিমনি ২৪ ঘন্টা জ্বলতে থাকে। সেখানে কোন কারণে কোন ময়লা জমে গিয়েছিল তাই চিমনিটা ব্লাস্ট করে। তার থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়তে থাকে।তার চারপাশে তেল ও গ্যাসের পাইপ তাই আগুনের তাপে তার নিচে একটা পাইপ ফেটে যায়।পরিস্থিতি আরও ভয়ানক হতে লাগলো।তাদের সেফটি অফিসার বললেন- তোমরা তোমাদের পজিশনে গিয়ে দাঁড়িয়ে যাও। তখন তাদের নিজেদের মধ্যে একটা আতঙ্ক সৃষ্টি হয়ে পড়ল। প্ল্যাটফর্মে সিকিউরিটি টিম,অন্যান্য অফিসার, সেফটি স্টাফ- সবাই ছোটাছুটি করছে। তারা চেষ্টা করছে কি করে তাড়াতাড়ি আগুন নিভানো যায়। নইলে আরও ভয়ংকর বিপদ ঘটে যেতে পারে। কিন্তু ওখানে পৌঁছাবে কি করে? তখন লাউড স্পিকারে বারবার অ্যানাউন্স হয়ে চলেছে-ডেঞ্জারাস সিচুয়েশান! সবাই আগুন নিভানোর ড্রেস, ফায়ার এক্সটিংগুইসার নিয়ে যেতে লাগলো আগুনের দিকে। ডাইভাররা জলে নেমে গেল সমস্ত অয়েল ও গ্যাসের চেম্বারের পাইপ লাইনের কানেকশন লক এবং ডিস- কানেক্ট করতে। সবাই আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। ওরা তখন খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে আছে। বৃষ্টিতে সবাই ভিজে গেছে। বৃষ্টি কিছুতেই থামছে না। সবাই ঠান্ডায় কাঁপছে। তখন রাত এগারোটা কুড়ি। বার বার ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সময়টা দেখে চলেছে হঠাৎ ওদের মধ্যে একজন কেঁদে ফেলল। তাকে তারা সবাই সান্তনা দিতে লাগলো। তার দেখাদেখি আরও একজন কেঁদে উঠলো। তখন ওরা পড়ে গেল সমস্যার মধ্যে। অনেকটা আতঙ্কও বটে। কেউ বলছে- স্যার! আমি গিয়ে পাসপোর্ট ও ডকুমেন্টসগুলি নিয়ে আসছি।কেউ বলছে তার বাথরুম পেয়েছে। এক এক জনে এক এক রকম বলতে লাগলো। যেন এক এক করে সবার মাথা খারাপ হতে লাগলো। ছেলে চিরকাল ছোটবেলা থেকে ছিল বড় সাহসী।সে সবাইকে এই মুহূর্তে সান্ত্বনা দিতে লাগলো।তবুও যেন ভয়ে বুক ধড়ফড় করতে লাগলো।মাথায় আসতে লাগলো উল্টোপাল্টা চিন্তা। ভাবল- “আমি বাঁচবো তো! আমি কি আবার বাড়ির সবাইকে দেখতে পাবো? বেঁচে কি আর বাড়ি ফিরতে পারবো?হে ভগবান! একি হলো!!” শেষে সব চিন্তা মাথা থেকে দূর করে দিয়ে মনে সাহস আনলো। ভগবান আর মা- -বাবাকে স্মরণ করে মনকে শক্ত করার চেষ্টা করলো। তখন সেফটি অফিসার বললেন- এখন কেউ যেন কোথাও না যায়।কারও বাথরুম পেলে এখানেই করবে তবুও কেউ কোথাও যাবে না। ক্যাম্পবসকে অর্ডার করলেন- অ্যাকোমোডিশনের সমস্ত ডোর যেন বন্ধ করে দেওয়া হয়। সঙ্গে সঙ্গেই দুজনে গিয়ে সমস্ত ডোর বন্ধ করে দিয়ে আসলো। তখন আবার অ্যাটেনডেন্স কাউন্ট করা হলো।কিছুক্ষন পর লাউড স্পিকারে অ্যানাউন্স হল- পজিশন ইজ ডেঞ্জারাস!সঙ্গে সঙ্গেই সেফটি অফিসার আর ডিউটি অফিসার লাইফ র্যাফট আর লাইফ বোট চেক করতে শুরু করলেন। তখন হঠাৎ দূর থেকে দেখা গেল সাপ্লাই ভেসেল আর ছোট ছোট শীপ তাদের প্লাটফর্মের দিকে দ্রুত এগিয়ে আসছে–