ঐ তো আসিছে শঙ্খধ্বনি, এই শঙ্খের ধ্বনি তো যুদ্ধের আহ্বান! প্রীয় অনুজ ভীম, অর্জুন তো এখনো আসিল না ফিরে, রনভূমি ছেড়ে কতদূরে সে, চিন্তা কর না জেষ্ঠ পিতাশ্রী, আমি তো আছি, আমি বীর অর্জুনের পুত্র অভিমন্যু! কিন্তু পুত্র অভিমন্যু, অস্ত্রগুরু দ্রোণাচার্য এখন কৌরব পক্ষের সেনাপতি, উনি পরশুরামের শিষ্য, ওনার পারদর্শিতা অপরিসীম, একমাত্র অর্জুন ছাড়া কারো সাধ্য নেই গুরু দ্রোনাচার্যকে পরাস্ত করে। জেষ্ঠ পিতাশ্রী তুমি চিন্তা কর না, আমিও শ্রেষ্ঠ ধনুদ্ধর দ্রোণ শিষ্য অর্জুন পুত্র অভিমন্যু! প্রীয় পুত্র অভিমন্যু, আমি জানি তোমার বীরত্ব, কিন্তু দ্রোণাচার্য রচনা করিয়াছে আজ মহা চক্রব্যুহ। জেষ্ঠ পিতাশ্রী, আমি চক্রবূহ ভেদ করিতে নিশ্চয়ই পারিব কিন্তু চক্রব্যুহ হইতে বেরিয়ে আসার বিদ্যা তো আমার জানা নাই। ভয় কি প্রীয় অভিমন্যু, আমরা তোমার পিছনেই থাকবো, বেরিয়ে আসতে আমরা তোমাকে সাহায্য করব। তবে আর দেরী নয় জেষ্ঠ পিতাশ্রী, অগ্রসর হও। শুরু হইল অর্জুনপুত্র বীর অভিমন্যুর চক্রব্যুহ প্রবেশের যুদ্ধযাত্রা। গগনভেদি, বজ্রনিনাদে, অভিমন্যু একে একে সমস্ত চক্রকে ভেদ করিয়া অগ্রসর হইতে লাগিল, পিছনে পড়িয়া রইল জেষ্ঠপিতাশ্রী, যুধিষ্ঠির, ভীম, ও অন্যান্য বীর সেনারা। ওদিকে অর্জুন সারথী কেশবকে বার বার মহা বিপদের আঁচ পাইতেছে জানানোর পরেও সারথী আশ্বাস দিতে লাগিল, এই ধর্মযুদ্ধে তোমার চিন্তা সামনের শত্রুকে বধ করা। ধর্মের জয় নিশ্চিত, তুমি যুদ্ধ কর পার্থ। এদিকে চক্রব্যুহের অন্তীম ব্যুহে প্রবেশ করিয়াছে বীর অভিমন্যু। সব যোদ্ধাকে উদ্দেশ্য করিয়া অভিমন্যু কহিল, হে কৌরব পক্ষ্যের যোদ্ধাগন, তোমাদের মত বীর সেনাদের জানাই প্রণাম, কিন্তু আমার বান হইতে এক জনকেও আমি বাঁচিবার আশ্বাস দিতে পারিব না। স্তম্ভিত হইল দ্রোনাচার্য, এই হল বীর যোদ্ধা অর্জুনের যোগ্য পুত্র। একে একে সবাইকে যখন অভিমন্যু একাই পরাস্ত করিতেছে, তখন, ধর্ম যুদ্ধের নিয়ম নীতিকে লঙ্ঘন করিয়া কৌরব পক্ষ্য সকলে একসঙ্গে বীর অভিমন্যুকে আক্রমন করিল। দ্রোণাচার্য, দ্রোণ পুত্র অশ্বত্থামা, কর্ন,
দূর্যোধন, দূঃশ্বাসন কেউই বিরত হয়নি এই অধর্মের যুদ্ধের সঙ্গী হতে, এমন কি, মামাশ্রী শকুনি ও দূর্যোধনকে বলিতে শোনা গেল, আমরা ওর মৃত্যু চাই। বীর অভিমন্যু মাটিতে লুটাইয়া পড়িয়া পিতা পিতা বলিয়া আর্তনাদ করিয়া বলিল, হে পিতাশ্রী, তুমি কার নিকট অস্ত্রবিদ্যা লাভ করিয়াছো, যে আমি স্মরণ করিয়া দেওয়া সত্বেও, এই অধর্মের সামিল হয়, সে কখনোই গুরু হতে পারে না। সব ধর্ম যুদ্ধের রীতি নীতি লঙ্ঘন করিয়া তোমারই গুরু আমাকে নির্মম ভাবে হত্যা করিতেছে। আমি বলিয়াছিলাম হে গুরুশ্রেষ্ঠ দ্রোণ, তুমি, তুমি এই অন্যায়ের সামিল হইলে? হে পিতাশ্রী, তুমি কি শুনিতে পাইতেছ না, এরপর পৃথিবীতে আর কখনো যুদ্ধের নীতি মেনে যুদ্ধ হইবে না। যুদ্ধ হইবে শুধু কূট কৌশলের, যার শিক্ষা তুমি আমাকে দাও নাই। হে পিতাশ্রী বিদায়..