মোক্ষদা
ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায়
।।১।।
অনেক দিন আগের কথা। তখন আমি জন্মাইনি। তাই বলে তো আর ঘটনাটা মিথ্যে হতে পারে না। আমার ঠাগমার মুখে শোনা।আর সে কথা এক্কেরে হক কথা।তখনকার দিনে রাস্তা ছিল শুনশান। অনেক দূরে দূরে ছিল এক আধটা দোকান। তারমধ্যেই ছিল নিধে কামারের চা এর দোকান।
নিধের ছিল বিড়ির নেশা। আর রামযাত্রার নেশা।তখন কার রামযাত্রার কদর ছিল। একবার চকের বাজারে রামযাত্রার আসরে পাঁচটাকা দিয়েছিল নিধে।যাত্রার কুশীলবেরা ছড়া কেটে নিধের গলায় মালা পরিয়ে জোরে জোরে বললে “নিধেবাবু ভালো।পাঁচটা টাকা দিল।পাঁচটা টাকা দিয়ে মোদের। সম্মান রাখিল। “
নিজের জয়গান শুনে নিজের হাসিহাসি মুখ নিধের।ওই যাত্রা দেখতে এসেছিল দত্তবাড়ির মেজোবৌ এর খাস ঝি মোক্ষদা।কে জানতো এই খানে চারহাত এক হবে।
চকের দত্ত বাড়িতে নিধে কামারের প্রশংসা শুনে গদগদ হল মোক্ষদা।কলা বিনুনি বেঁধে চোখে কাজল দিলে।মেজোবৌ ডাকলে “মোক্ষদে।লম্ফখান নিব্বে দে ।বড় ধুঁয়া”।
দাঁতউঁচু মোক্ষদা ফুঁ দিতেই পারে না।এই দাঁতগুলো ওর কাল।কত সুন্দর সুন্দর পাত্তর চলে গেল এই দাঁতের কারনে।অভিমানীর শেষ চেষ্টা নিধে কামার।অনেক কষ্টে কুপি নিবিয়ে মোক্ষদা গেল রামযাত্রার আসরে।আঁচলে পান নিয়ে গিয়েছিল। নিধেকে সাধলে “পান খাবে?”
নিধে যেন কেমন হয়ে গেল। এদ্দিনে কোনো মেয়েমানুষের পাত্তা পেল সে।বললে “নিশ্চয়ই “।দিন দুই দুজনে খুব গুজুর গুজুর ফুসুর ফুসুর করে অবশেষে গাঁয়ের ছেলেরা চাঁদা তুলে ওদের বে দিলে।সবাই বললে “একেবারে রাজযোটক “।
নিধের কার্তিক ঠাকুরের মতো চুল দেখেই মোক্ষদা গলেছিল।কিন্তু অশান্তির সূত্রপাত হল ফুলশয্যার ঘরে ।নিধে বললে “বৌ।মাথাটা একটু হাত বুলিয়ে দাও।’
মোক্ষদা চুলে বিলি কাটতে কাটতে হঠাৎই পুরো নকল চুল ওর হাতে উঠে এল।টাক মাথার কয়েক টা চুল মাত্র। ছি ছি।এমন করে কেউ মানুষ ঠকায়।।
দত্ত গিন্নিমা বলেছিল “মোক্ষদে।সোয়ামী হল দেবতা। ফুলশয্যার ঘরে গড় হয়ে পেন্নাম করিস।”
মোক্ষদার পেন্নাম এখন মাথায় উঠেছে।একবার নিধেকে দেখলে। গা পিত্তি জ্বলে যায়।কতদিন স্বপ্নতে মোক্ষদা দেখেছে একটা সুন্দর সুপুরুষ ।শেষ পর্যন্ত কপালং কপালং মুলোং।আবার ক্যামন হাসে দেখো।মাগো।রামায়ণ এ দেখেছিল একটা কালো হাঁড়লমুখোকে।
ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলে।
নতুন বৌ এর চোখে জল দেখে নিধে অস্থির হয়ে উঠল।বললে “কী হয়েছে আমার মোক্ষ রাণীর”?
মোক্ষ বললে “কিছু না।এমনি”
নিধে বললে “বুজিচি।বাপের বাড়ির জন্য মনখারাপ। সে তো হবেই। ঠিক আছে।কিছুদিন পরেই তো আমরা জোরে যাবো”।
মনে মনে মোক্ষ বললে খেয়ে দেয়ে আর কাজ নেই। সবাই বিয়ের সময় দেখলে মোক্ষ র বরের একমাথা চুল। আর এখন যদি সবাই দেখে দু একটা বাতাসে উড়ছে।তবে মান সম্মান থাকে কি করে।মোক্ষ জোর গলায় বললে “বাপের বাড়ি যাবো না।”
বিয়েটা ঘটাপটা করে হয় নি।ওই তো নুন আনতে পান্তা ফুরানোর সংসার। দত্ত গিন্নিমা কটা টেকা দিয়েছিল। তাই দিয়ে রূপোর বিছেপদক কিনেছে মোক্ষ। পেন্নাম করে বললে “এটা তোমার জন্য। পরো”।
মোক্ষ আশা করে আছে নিধের উপহারের।জীবনের একটা বড় দিন। পেরথম সোহাগ রাত।।
নিধে বিছেপদক পেয়ে ভাবলে “এমন রাজকন্যা আমার কপালে ছিল। আর আমি টের পাইনি।”
বললে “তোকে আজ একটা সোন্দর গান শোনাবো।”
বলেই নিধে কেঁপে কেঁপে গান ধরলে “দেখো ঝুলতো রামচন্দ্র
অপরূপ মণিরাম”।
এমন গান মোক্ষ কোনও দিন শোনেনি মাইরি।এ কী গান?ঝুলন পুন্নিমের গান নাকি।মোক্ষ জোরে কেঁদে উঠলে।বললে “গান থামাও।গান থামাও।”নিধে বললে “এত দেবদ্বিজে ভক্তিপ্রেম। আহা।”
রাত কেটে ভোর হতে চলল।বিছেপদক পরে আদুল গায়ে শুয়ে আছে মোক্ষদার সোয়ামী।যাকগে।কিন্তু এখনও কোনও উপহার পেলে না ।মনে হয় ঘুম থেকে উঠে দেবে।মোক্ষদার ঘুম আসছিল। মাদুরের উপর কাঁথা পাতা ।নিধের পাশে ও ঘুমিয়ে পড়ল।
নিধে খুব ভোরে উঠে পড়েছে।এতদিন একা ছিল। এখন সংসার হয়েছে।ঘরে দানাপানি নেই। সকাল সকাল দোকান খুলতে হবে।কিন্তু বেরোতে যাবে জামায় টান পড়ল।স্বয়ং মোক্ষদা বললে “আমার উপহার কোথায়।বাপের বাড়ি লোক জিগাবে তোর সোয়ামি কি দিলে সোহাগ রাতে।তখন কী বলবো”?
নিধের ভারি লজ্জা হল।বললে “আসলে হট করে বে টা হয়ে গেছে।তা তুমি পাঁচটা টেকা রাখো”।
নিধে দোকান খুলতে গেল। খুব গরীব মানুষ নিধে।ভাঙা এই চালাঘরটুকুই তার পৈতৃক সম্পত্তি। তবে বড় সুন্দর তার ব্যবহার। পাড়ার লোকের উপকারে সবার আগে নিধেকেই পাওয়া যায়।
নিধে তার মাকে হারিয়েছে সেই আড়াই বছর বয়সে।মা এর মুখ স্পর্শ কিছুই সে মনে করতে পারে না।মা এর মৃত্যুর পর বাপ আবার বে করলে।সৎ মা এলো ।সৎ মা নিধেকে ভালোবাসতো।তারপর এই মায়ের পরপর চারটে মেয়ে।
নিধে আজ দোকান খুলতেই খদ্দের রা বললে “নিধিরাম বে করেছে।আমাদের খাওয়ালে না কিছু।আজ সব ফ্রি তে চা খাবো”।
নিধের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল।ভেবেছিল সকালে কিছু বিক্রিবাটা হলে সংসারের মালপত্র কিনবে।নতুন বৌটা সকাল থেকে কিছুই খেতে পাবে না।এতো এখন আচ্ছা গেরো। তবুও হাসিমুখ করে বললে “সেসব পরে হবে খনে।কদিন থিতাই”।
মোক্ষদা ঘরের চালের দিকে তাকায়।ঘর তো ফুটো।বর্ষায় টিকতে পারবে না।ঘরের সাথে ছোট্ট দুয়ার।মাটির। দুয়ারের একপাশে একটা ছোট্ট উনান।কাঠের জ্বাল দিয়ে রান্না।হঠাৎই মনটা কেমন যেন হয়ে গেল। ভাবলে এই তো আমার ঘর।একেবারেই আমার ।রান্নাচালায় গিয়ে দেখলে সামান্য কিছু চাল আর কৌটোর মধ্যে খানিকটা ডাল।নিপুণ হাত পড়ল সংসারে।একটা সরাতে গোবর মাটি গুলে মাটির ঘর লেপতে লাগল।সুন্দর করে গোছালো রান্নাচালাটা।তারপর স্নান করে দত্ত গিন্নিমার দেওয়া রামধনু রঙের শাড়ি পরে ছোট্ট আয়নাটা নিয়ে সিঁদুর পরতে যাবে ঠিক তখনই চারজন মহিলা আর তাদের বাচ্ছা সমেত মোট দশজন হাজির।সবাই একে একে পেন্নাম করছে মোক্ষদাকে।আর বলছে “ভালো আছো বৌদিদি”।
মোক্ষদা হাঁ করে তাকিয়ে ভাবে “কারা এরা।এরা কি থাকবে।কী খাবে সব।”
কিছুক্ষণ পরেই বুঝতে বাকি থাকলো না যে এরা ননদিনী।সকলেই গদগদ।ছোটোটি বললে “যাকগে।এদ্দিনে আমাদের বাপের বাড়ি আসার পথ খুলল।বলেই একটা লাল ছাপা শাড়ি ধরিয়ে দিল।আর একজন দিলে সবুজ।বাকী দুজন দুটো ধুতি দিলে।বললে “দাদার ধুতি এনিচি”।
দশটা বাজছে।বারোজনের খাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।মোক্ষদার হাতে পাঁচটা টাকা।এছাড়াও দত্ত গিন্নিমার দেওয়া একশ টাকা আছে।নিজেকেই ব্যবস্থা করতে হবে।ছোটোননদকে বললে “একটা কাজ করো।চাল ডাল আর মশলাপাতি কিনে আনো।আমি খিচুড়ি রাঁদবো”।তখনকার দিনে একশ পাঁচ টেকা মানে অনেক টেকা।তার থেকে কুড়িটাকা খরচ হল।চাল ডাল পেঁয়াজ রসুন মশলা সব এল।সবাই এর আজ কত আনন্দ। ।রান্না করছে মোক্ষদা।দত্ত গিন্নিমার খাস ঝি।নিধে কামারের বৌ এখন।
ননদিনীরা গোল হয়ে বসে আছে।তাদের উজ্জ্বল মুখ বুঝিয়ে দিচ্ছে কত খুশি তারা।আর মোক্ষদার মনে চলেছে শতেক ভাবনা।কেমন করে এই সংসার নৌকার কান্ডারী হবে সে।তার উঁচু দাঁত এখন কোনও সমস্যার কারণ নয়।এই মানুষ গুলোর ভরসা সে।এখানে অভাব আছে ঠিক ই।কিন্তু অন্তরের শ্রী আছে এই মানুষ গুলোর। বড় ননদ বলে “কী ভাবছিস লা বৌ।আমরা এসে তোরে বিপদে ফেললাম না রে”?
মোক্ষদার সম্বিত এল।বললে “না না দিদি।সেসব নয়।তবে আমাদের একটা পথ বের করতে হবে।যাতে আমরা হৈ হৈ করে বাঁচতে পারি”।
নিধে বাড়িতে ঢুকে অবাক। সারা বাড়িতে খিচুড়ির সুগন্ধ। বাড়ি ভর্তি মানুষ। নিধের মন যেন পূর্ণ হয়ে গেল। মনে পড়ে গেল মায়ের কথা।হলেই বা সৎ মা।তবুও কখনও খাবার চেয়ে পায় নি সে এমন নয়।ঘরের মধ্যে গিয়ে চোখের জলটা মুছতে যাবে তখনই মোক্ষদাকে দেখে কেঁদে পড়ল।বললে “কেন এলে আমার অভাবের সংসারে।আমার তো কোনও যোগ্যতাই নেই তোমাকে ভালো রাখার”।
মোক্ষদার বুঝতে কিছুই বাকি নেই। তবে সহজে হেরে যাবে তেমন মেয়ে মোক্ষদা নয়।স্বামীর হাতটা ধরে মৃদু টান দিল।বললে “কত কষ্ট করে রান্না করলাম। আর এখন খালি উল্টো গাইছে।তাড়াতাড়ি নেয়ে এসো দিকি।একসাথে আজ সবাই খাবো।”
আজ নিধের ভাঙা ঘরে আনন্দের সীমা নেই। তিজেল হাঁড়ির এক হাঁড়ি খিচুড়ি।কী অপূর্ব তার স্বাদ।আর মোক্ষদা যেন অন্নপুন্নে।ভিখারি সোয়ামী মহাদেব। হাসিখুশিতে ভেসে যাচ্ছে দুটি মন।মোক্ষদার অসীম ভালোবাসার স্বাদ লুটেপুটে নিচ্ছে তার স্বজনরা।এমন দৃশ্য স্বর্গীয়।
ঠিক এই সময় বাড়িতে হাজির শৈলেন। দোর থেকেই হাঁকলে “নিধে বাড়ি আছিস নাকি”?
নিধে শশব্যস্ত হয়ে খাবার ছেড়ে উঠে যাচ্ছিল। বাদ সাধলে মোক্ষদা। বললে “অন্ন হল মা নক্কী।সারাদিন খাওয়া নেই। এক্কেরে ভাতে জলে বসেছ।তা ছোটবার কী আছে শুনি”।ছোটননদ ঘাড় নেড়ে বললে “বৌদি ঠিক বলেছে।তু করে ডাকলেই ছুট।যেন পোষা কুত্তা।বলি ছাতা দিয়ে তোর মাথাটাও ধরে রেখেছে বুঝি?”তারপরেই চেঁচিয়ে বলে “দাদা খেতে বসেছে গো শৈলেন দা।পরে এসো”।
শৈলেন ভাবলে :দিনে দিনে হল কী।বস্তুত নীচের এত স্পর্ধা শৈলেন এর সহ্য হল না।
২
বিকেলে দোকান খুলতে নিধের দেরী হয়ে গেল। আর হবে নাই বা কেন?কতগুলো শোলা নিয়ে মোক্ষদার যত ছেলেমানুষী।সুন্দর সুন্দর সাজের জিনিস তৈরি করে ভাগ্নে ভাগ্নিদের সাজিয়েছে সে।সকলেই খুব খুশি ছিল। পুরোনো সাইকেল টা নিয়ে দোকান এ পৌঁছাতেই শৈলেন কে দেখতে পেল।বললে “তোর কি আক্কেল নিধে।বলি বস্তাটা তোর দোকানের মধ্যেই যদি থাকে তবে আমার ব্যবসা যে লাটে ওঠে।এরকম মামদোবাজিটা কে শেখালে তোকে।শুনলাম তোর নাকি মোক্ষ লাভ হয়েছে?”
শেষের কথাখানা ব্যঙ্গ মিশ্রিত। মুখচোরা নিধে গুম হয়ে গেল। বললে “এরপর থেকে এখানে কিছুই রাখবে না।বস্তায় কী জিনিস তুমি রাখো।তোমার ব্যবসার জিনিস আমার দোকানে রাখার কারণ কী? তোমার তিন মহলা বাড়ি থাকতে এখানে কেন “?
নিধের মুখ থেকে এমন কথা বের হবে তা আশা করে নি শৈলেন। চোখ গুলো তার ছানাবড়া।মনে মনে আওড়ালে “একেই বলে কলিকাল/শেয়ালে চাটে বাঘের গাল”।কতদিন থেকে এই গরীব গুর্বোদের কাঁধে ভর করে তাদের বিজয়শকট চলে।আর আজ একি হল।নিধে কি বুঝতে পেরে গেল ওর প্রকৃত উদ্দেশ্য।কে ওকে এত চালাক করে দিলে এই দুদিনে ।ওর ওই বৌটা নাকি?
শৈলেনের মতো মানুষ রা সমাজের বহুরূপী।রঙ বদলাতে ওর সময় লাগলো না।কালো কালো দাঁতে দেঁতোহাসি দিয়ে বললে “পরিহাসটাও বুঝলে না নিধে দা। এক পাড়ায় থাকি ।সংসার পেতেছ।আপদে বিপদে আমরা।আমাদের এত পর ভেবো না”।
সেই সময় সব্জিওলা কুনু সেখানে হাজির। কুনুকে গুনে গুনে পাঁচশ টাকা দিলে শৈলেন। কুনু একেবারে গলে জল।বললে “শৈলেনদা দ্যাবতা গো দ্যাবতা।ওর পা ধরে পড়ে আছি।নৈলে সংসারের ভুখাদানা জুটতো না গো নিধেভাই”।
নিধে অবাক হয়ে গেল। সত্যিই শৈলেন কে সে ভুল বুঝেছে।এমন দিলদরিয়া মানুষ কে সে বড় কঠিন কথা বলে ফেলেছে।কান দুটো মলে বললে “ক্ষমা করো শৈলেন দা।তুমার মতো মনিষ্যিকে এমন কথা বলে ফেললাম গো”।
শৈলেন মুচকি হেসে বললে “তাইলে তুও রাখ শ পাঁচেক।আর এই দুশো টেকা দিচ্ছি বৌকে কিছু কিনে দিবি।চকের বাজার থেকে শাড়ি বেলাউজ কিনে দিবি।যা নে যা”।
নিধে গড় হয়ে পেন্নাম করলে শৈলেন কে।সাথে সাথেই খুশিতে মন ভরে গেল তার। মোক্ষদার জন্য শাড়ি কিনতে ছুটলো।চুলের ফুল কিনলে।চকের বাজার থেকে মাংস কিনলে।
বাড়ি ফিরে দেখল অন্ধকার চারদিক। দোকান বন্ধ করে চকের বাজার হয়ে আসতে অনেক রাত হয়ে গেল। হাঁক দিলে “মোক্ষদা।আমার মোক্ষ। কোথায় তুমি?”
ননদিনীরা চলে গেলে মোক্ষদা গিয়েছিল চকের বাজারে।অনেক শোলা আর কিছু সরঞ্জাম তার দরকার। বাড়ি ফিরে সন্ধ্যার প্রদীপ জ্বেলে অপেক্ষা করছিল কখন সোয়ামী আসবে।এই পাড়াটায় তাকে কেউ চেনে না।আর তারা গরীব। তোষামোদ করার লোক তাদের থাকে না।প্রদীপের মৃদু আলোয় মনে আসছিল তার বিগত জীবনের কথা।মনে পড়ছিল বাবা মায়ের কথা।বাবা শোলার কাজ করত।ডাকের সাজ কিনতে দূর দূরান্ত থেকে কত মানুষ আসতো।ঠাকুরের মুকুট,হার গয়না।ওদের গাঁয়ের নাম ছিল শোলা গাঁ।ঘরে ঘরে শোলার কাজ।
মোক্ষদার হাসি পেল। সেই ঘুম পাড়ানো গাঁয়ের কথা মনে পড়ল যেখানে তার পূর্ব পুরুষদের চরণস্পর্শ আছে।মনে মনে বলল “বনকাপাসি”।যেখানে বাপ কাকারা ছিল জাত শিল্পী।
বাপ বলতো “মোক্ষ রে।জীবন মানে সংগ্রাম।নিজের হাতদুটোকে কাজে লাগাবি।কারো মোসায়েব হবি নি।শিল্পীরা কখনও মাথা বিকোয় না মা।অপমানের অন্ন জীবনে ছুঁবিনে।যখন দেখবি জীবন জটিল হই গেছে তখনই শিল্পীজীবনের অপমৃত্যু”।
এইসব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছে মোক্ষ। হঠাৎই দোরে আওয়াজ শুনে ঘুম ভাঙলো।প্রদীপ টাও নিভে গেছে।নিধে দেশলাই জ্বাললো।দোর খুলতেই দেখলো সোয়ামীর হাসিমুখ। ওদের ভাঙা ঘরে চাঁদের আলোয় ওদের আর একবার শুভদৃষ্টি হল যেন।
নিধে বললে “তোমার জন্য কত কী এনিচি দ্যাখো।বলেই শাড়ি আর মাথার ফুল দেখালো।”
মোক্ষ ভীষণ আনন্দ পেল।বাজারের ব্যাগ এর দিকে তাকিয়ে বলল “ওতে কী আছে?”
নিধে বললে “খাসির মাংস আছে।আমি রেঁদে খাওয়াবো তোমায়।তুমি প্যাঁজ রসুন ছাইড়ে মশলা করি দেও দিখি”।
রাতে দুজন অনেক গল্প করলে।হঠাৎ মোক্ষ বললে “তুমি একটা মিথ্যুক।কাল বললে তুমার পইসা নাই।আজ অমনি বড় নোক হই গেলে?”
নিধে বললে “শৈলেন দা দিলে।একটা কিসের বস্তা রাখে দুকানে মুখ আঁটা।তাইতেই এত দ্যায়”।
নগদ পাঁচশ টাকা মোক্ষদার হাতে দিয়ে পরের দিন দোকান খুলতে গেল নিধে।মোক্ষ ঘর নেপে চান করলে।দোরের কাছে কী বিক্রি হচ্ছিল। তাই দেখতেই বাইরে এল মোক্ষ। যা ভেবেছিল তাই।সব্জীওলা।মোক্ষ ডাকলে “আমি সব্জি কিনবো”।
কে একজন ইশারা করতেই একটা ব্যারেলে করে কী যেন দিল সব্জীওলা।লোকটা হাসতে হাসতে বললে “কাল পইসা লেবে কুনুদা”।
গতকাল রাতে নিধের গল্প তে কুনুর নাম শুনেছে সে।কিন্তু ভ্যান নিয়ে সব্জি বেচা যার কাজ সে ব্যারেলে কী দিল এই চিন্তা করছিল মোক্ষ। হঠাৎই কুনুর উপস্থিতিতে সম্বিত এল মোক্ষর।কুনু দাঁত বার করে বললে “বৌঠান। নিধে আর আমি এক গোয়ালের গরু।তা কী লাগবে বলুন”?
মোক্ষ বেগুন কিনলো।আজ সে বেগুন বাসন্তী রাঁদবে।
দুপুরে খেতে বসে নিধে আত্মহারা।নিজের কপালকে তার বিশ্বাস হচ্ছে না।কদিন আগেও যে ডালভাত ছাড়া কিছুই পেতো না তার এমন ভাগ্য।মোক্ষ বললে “বিকেলে দুকান খুলে কাজ নেই। তুমি তোমার বোনদের খপর দাও। আমার কারখানায় উরা কাজ করবে।”
নিধের চোখ মার্বেল হয়ে গেল। বললে “তুমার কারখানা।সেটা আবার কোথায়?”
মোক্ষ বললে “ক্যানে।আমার এই বাড়ি।এটাই কারখানা”?
বলেই শোলাগুলো দ্যাখালে।বললে “ঠাকুরের ডাকের সাজ।”
নিধে ঘুম থেকে উঠে বৌ এর কথামতো বোনদের বাড়ি খবর দিতে যাবার উদ্যোগ নিচ্ছে।ঠিক সেই সময় শুনতে পেল “গাঁয়ে পুলিশ টহল দিচ্ছে”।
বোনদের পাশাপাশি গাঁয়ে বিয়ে হয়েছে।তারাও অভাবী মানুষ। নিধের মুখে ডাকের সাজের কারখানার খবর শুনে তারা যেন হাতে স্বর্গ পেল।তড়িঘড়ি আবার চলে এল তারা।ঘোর বর্ষা।নিধের মাটির বাড়ি ঘর।দুয়ারে চলছে শোলার সাজ বানানো।নিধে মাটির দুয়ার চট দিয়ে ঘিরে দিয়েছে।মোক্ষ বললে “এই কদিন আমাদের সাজগুলো করতেই হবে।আর কদিন পরে দুগ্গাপুজো।শোলার সাজ বিক্রি হবে চড়াদামে। মৃৎশিল্পীরা এর কদর করে”।
নিমেষের মধ্যেই তৈরি হচ্ছে কানবালা,’বাজু,মুকুট,রাণীমুকুট।কী অপূর্ব কারুকাজ। পাড়া প্রতিবেশীদের মধ্যে গুঞ্জন। নিধে কামারের বাড়ি যা ছিল যমের অরুচি সেখানে মানুষের উঁকিঝুঁকি।কেষ্টর মা বাড়িতে ঢুকে বললে “নতুন বৌ বুঝি মালাকারের মেয়ে”?
ননদেরা বললে “জেতপেতের কতা ক্যানে গা।খেয়ে দেয়ে কাজ নেই লাকি”?
কেষ্টর মাকে বসতে দিলে মোক্ষ। বললে “কাকীমা।বসুন গো।চা করি”।
কেষ্টর মায়ের মনের কতা যেন টেনে কয়েছে মোক্ষ। বসে পড়ল সে।গুনগুন করে গান গায় মোক্ষ। বড় ননদ বলে”জোরে গা না বৌ।তোর গানের গলা ভালো।শুনতে শুনতে কাজ করি”।
সবাই তাতে সায় দেয়।আর নিধে আনন্দে আটখানা।গান শুরু করে মোক্ষ
“গিরি গণেশ আমার শুভকারী/পুজে গণপতি পেলেম হৈমবতী/যাও হে গিরিরাজ আনিতে গৌরী”।
কেষ্টর মা বলে “এটা কী গান বৌ?এমন সোন্দর গান পরান জুইড়ে গেল রে”।
মোক্ষ বলে “আগমনী গো আগমনী।ঘরের মেয়ে নাড়ি ছেঁড়া ধন বাপের বাড়িতে আসবে ।মা মেনকার মন তাই আকুল”।
নিধে বলে “থামলে কেন মোক্ষ। গাও”।
আবার শুরু হয় গান। “মেয়ের কোলে মেয়ে/দুটি রূপসী/লক্ষ্মী সরস্বতী শরদের শশী/সুরেশ কুমার গণেশ আমার/তারে না দেখিলে ঝরে নয়ন বারি”।
গানের আওয়াজে আরও অনেক মানুষ উঠোনে জড়ো হয়েছে।সবাই কে ফ্রিতে চা আর পাঁপড় ভাজা দিচ্ছে নিধে আর তার মোক্ষ রাণী। পাড়ার বৌ ঝি রা সবাই বলে “আমরা ডাকের সাজ বানাবো”। জোরকদমে চলতে থাকে ডাকের সাজ।মৃৎশিল্পীরা নিয়ে যায় সেসব সাজ।
নিধে বলে “ভগবানের সৃষ্টির কথা ভাবো।নিজের সাজ নিজেই এনেচে শোলা গাছ সৃষ্টি করে”।
মোক্ষদা বলে “সেসব পুরাণ সাহিত্যের কতা ।সেই যখন শিব ঠাকুর পার্বতীকে বে করতে গেসল তখন বিশ্বকর্মাকে বললে “আমার হালকা মুকুট চাই।তাই শুনে বিশ্বকর্মাতো থ।বললে বাবা।আমার তো লোহা লক্করের কাজ।তখন শিব ঠাকুর মণ্ত্রবলে এক সুন্দর যুবক সৃষ্টি করলে।আর তারাই হল মালাকার।নিয়ে এল শোলাগাছ”।
কেষ্টর মা বললে “তবে তো তোরা খুব উঁচু।শিব ঠাকুর সৃষ্টি করেছে “।
মোক্ষদা বললে “ঈশ্বর যদি সৃষ্টিকর্তা তবে ছোটবড় কিছুই হয়না গো কাকীমা”।
নিধে বললে “কেষ্টর খপর কী? সে কুতায়?”
কেষ্টর মা কী যেন বলতে গিয়ে চুপ করে গেল।কারা যেন কাঁদছে।কার কী হল?”
মোক্ষদার কানে এল কান্না ।বললে “পুজোর আগে কে মরলো গো”?
কেষ্টর মা চেঁচিয়ে উঠল “এতো আমার বৌমার গলা। কী হল আবার কে জানে?”
সবাই তড়িঘড়ি ওদিকে ছুটলো।কেষ্টর বৌ চেঁচাচ্ছে “ওগো তুমি কথা বলছো না ক্যানে।”
খিঁচুনিতে শরীর টা বেঁকে যাচ্ছে।মোক্ষদা কেষ্টর মুখ খানা দেখে বললে “কাল তো একে ভালোই দেখলাম। কুনুর কাছ থেকে ব্রারেল নিলে।আজকের মধ্যেই এমন অবস্থা কী করে হল”?
কেষ্টর মা কাঁদতে কাঁদতে বললে “নির্ঘাত ভূতে ধরেছে।এই গাঁয়ে ভূতের তান্ডব চলছে গো।বীরপুরে কাল দুজন মরে গেছে।এমনি খিঁচুনি।তারপর মুখে ফ্যানা”।
মোক্ষদার কপালে ভাঁজ পড়ে।ভূতের কারণে এমন হচ্ছে সে মানে না।বললে “এখনই হাসপাতালে নিয়ে চলো।দেরি করলে বাঁচানো যাবে না।”
নিধে পাঁজাকোলা করে তুলে নিয়ে গেল কেষ্ট কে।কেষ্টর মা বলে “গুনিনের কাছে নে চল।এ ডাক্তারের রোগ নয় বাপ।মোক্ষদা বলে “আগে ডাক্তার।”
গোটা গ্রাম যেন তটস্থ হয়ে আছে। এ কোন রোগ এল গাঁয়ে।কিছুক্ষণ আগে শৈলেন এসেছিল। মোক্ষ কে বললে “তুমাদের দুকানের চাবি খান দেও। কটা বস্তা আছে রেখে আসি”।
মোক্ষদার মনে প্রশ্ন জাগলো।কিসের বস্তা।যা নিধের দোকানে রাখতে হয় ।মুখে হাসি এনে বলে “চাবি কুতা রেখেছে আমি জানি নে।সে তো হাসপাতালে।কেষ্টর অসুখ “।
শৈলেনের পাশে কুনু ছিল। বললে “সে আর জানিনে।গাঁয়ে ভূতের রাজত্বি চলছে।পরপর মানুষ মরছে”।
শৈলেন ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে। মোক্ষদা বিরক্ত হ্য়।ঘরে পুরুষ মানুষ নেই। এরা কেন যে থাকে কে জানে।একটু পরেই শৈলেন বলে “একটা কাজ করা।তোমাদের দুয়ার চট দিয়ে ঘেরা।এখেনে কটা বস্তা লাট্টে দিই।”
মোক্ষদা আপত্তি জানায়।বলে “এখেনে রাখা যাবে না।এটা শোলার সাজের কারখানা”।
ঠোঁট বেঁকিয়ে শৈলেন বলে “এ ব্যাওসা কটা টেকা দেবে ।আমার ব্যাওসায় সাহায্য করলে রাণী করে দেবো”।
কামটের মতো লাগে শৈলেনকে ।মোক্ষ বলে “থাক।আমার রাণী হয়ে কাজ নেই। আপনি আসতে পারেন “।
গরীবের এত স্পর্ধা পছন্দ হয় না শৈলেন এর।
ওরা চলে গেল। কিছুক্ষণ পরেই নিধে আসবে।রান্নার কাজে মন দিল মোক্ষ। কাল নদীর আর মাছ কিনে এনেছিল নিধে।মাংসের মতো রাঁধলো মোক্ষ। তবে মনে মনে একটা কথা ভেবে চলছে ।কিসের ব্যাওসা করে ওই শৈলেন। বস্তা করে কী রেখে যায় দুকানে।কুনু ওর পিছনে ক্যানে ঘোরে।
নিধে এসে দুয়ারে বসলে।বললে “বীরপুরে ঈশান সামন্ত মৃতদেহ পুলিশ নে গেল। বললে পোস্ট মটাম হবে।ভূতের গল্প গুজব “।
৩
আজ বর্ষারাণী যেন নিজের রূপে টৈটম্বুর।নিধের উঠোনে উঠে এসেছে সারি দিয়ে কৈ মাছ।বৃষ্টির দাপটকে উপেক্ষা করে উঠোনে ছোটাছুটি করে ঝপাঝপ মাছ ধরছে মোক্ষদা। আজ মনের মাঝে আমোদ জেগেছে।নিধে হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে আসে মোক্ষকে।আদরের সুরে বৌকে বলে “খুব আনন্দ হচ্ছে না?আর যখন জ্বর হবে তখন কী হবে? পুজোর সময় তখন খুকখুক কাশবে বুঝি?”
মোক্ষদার হাসি আর ধরে না।বলে “তুমি তবে মাছ ধরো।আমি বরং ঠাকুরের সাজ বানাই।”
ভিজে কাপড় ছেড়ে মোক্ষ নিজের মনে হাসতেই থাকে।মনে পড়ে যায় সেই স্কুলের কথা।একটা বড়ো মাঠ পেরিয়ে ইস্কুল ঘর।বৃষ্টির দিনে বন্ধুদের সাথে কাকভেজা হয়ে দৌরাত্ম্য। হেড স্যার বলতেন “মোক্ষদা। তোকে বর্ষাকালের গান শোনাবো”।
সেই সব স্যারেরা কত ভালো।বিজয়ার দিনে বাড়ি গেলে নাড়ু দিত।ওই স্যারের শেখানো গান টা আজ গাইছে মোক্ষদা।কী ভাষা।কী সুন্দর সুর।
“নীল অঞ্জন ঘন পুঞ্জ ছায়ায় সম্বৃত অম্বর/হে গম্ভীর হে গম্ভীর।
বনলক্ষ্মীর কম্পিতকায় চঞ্চল অন্তর”
গাইতে গাইতে হঠাৎই তার দুচোখ বেয়ে জল ঝরতে থাকে।মনে হয় কেমন আছেন সেই স্যার। মন উচাটন হয়ে যায়।মনে মনে পেন্নাম করে শিক্ষাগুরুকে।কতবার বলতেন “জীবনের আর এক নাম সংগ্রাম। কখনও হেরে যেও না।পুরুষকার থাকে যেন “।
নিধে অবাক হয় বৌকে দেখে।এই তো আনন্দে নাচছিল।এর মধ্যেই আবার কান্না।তবে কী সে অযোগ্য উপায়হীন বলেই কাঁদছে ।বললে “মোক্ষ। আমার দোকানে পুঁজি কম।তোমার ব্যবসায় লাভ হলে আমাকে কিছু টাকা দিও।আমি তখন উপায় করতে পারবো।তোমার কুনো দুখ থাকবে না”।
মোক্ষদা সপ্রতিভ হয়।নিধের গলাটা জড়িয়ে ধরে।তারপর চোখের দিকে বিদ্যুত হেনে বলে “আজ তুমার দুকানটা দেখতে যাবো। কোন দিকে ওটা?”
নিধে বলে “সেইই সড়কের ধার।পাশে মেঠো পথ।কিছুটা গেলেই ঝিরিঝিরি কুলুকুলু ঘিয়া নদী।নদীর পাশে সাঁওতাল দের গেরাম।ওর নাম ফাঁশুরে।চারদিক কত গাছ আর তার ছায়া”।
দুপুরের খাওয়া দাওয়া মিটলে ঘুমিয়ে পড়ে মোক্ষ। আর ঘুমের মধ্যেই স্বপ্ন দেখে সে হয়েছে ফাঁশুরে গ্রামের আদিবাসী।নিধে তার মরদ।বিরাট পরায় চলে আদিবাসী নাচ।মোক্ষ মাথায় মোরগফুল গুঁজেছে।
কোমরে শাড়ির আঁচল টিপে বেঁধেছে ।পায়ে ঘুঙুর।মাথায় ফেত্তা বেঁধে ধামসা মাদল বাজাচ্ছে নিধে।আর মোক্ষদার সেকি নাচ।তার উন্মত্ত যৌবন আনন্দে ভরপুর। গান গাইছে মোক্ষ। “গাঙ নারী কিও নারী”।
নিধে এক ঠ্যালা দেয়।”কী হল মোক্ষ রাণী।কী গান গাইছো”।
ঘুম ভেঙে লজ্জা পায় মোক্ষ। খিলখিল করে হেসে স্বামীকে জড়িয়ে ধরে।
পরের দিন কেষ্টর মা এসে জানালো “কেষ্ট ভালো আছে বৌ।ডাক্তার কয়েছে ঠিক সময়ে না আনলে বাঁচানো যেত না।কী ভাগ্যিস তুই কয়েছিলি।নৈলে গুনিনের কাছে নে গেলে কী যে হোতো ।”বলেই আঁচলের খুঁটে চোখ মোছে।
মোক্ষদা বলল “কী থেকে এমন হয়েছিল?ডাক্তার কী কৈলো”?
কেষ্টর মা উত্তর দেবার আগেই নিধে বললে “বিষ।
পেটে বিষ পাওয়া যাচ্ছে।ঈশান সামন্ত র পোস্ট মটাম রিপোটেও তাই। পুলিশের সন্দ এখন অন্যদিকে”।
চমকে উঠল মোক্ষদা। বললে “সবার প্যাটে বিষ। তবে কুনো মেয়েমানুষের এমন হচ্ছে না।সব ব্যাটাছেলে”।
কেষ্টর মা ফিসফিস করে বললে “যোগেন গুনিন বলছিল এগুলো ডানভূতে করছে লো।পরিস্কার হাত চেলে আলোচাল পুড়িয়ে বললে এ ভূত আদিবাসী পাড়ায় ডুমকোর মায়ের কাছে আছে।ওদিকে গেলে তো মরণ।আর ডুমকোর মায়ের রকম সকম বুইতে পারবি লা।কখনও বেড়াল ছাড়ে।কখনও ছোট্ট শিশু ছাড়ে।ওই করে মানুষ এর রক্ত খায়”।
মোক্ষ এসব শুনে হাঁ হয়ে যায়।এসব কী শুনছে সে।বললে “যত্ত সব আজগুবি কথা ।”
কেষ্টর মা ঝাঁঝা করে উঠে বলে “এসব অবিশ্বেস করিস না লো বৌ।শৈলেন কতবার দেকেচে।বললে কেষ্টর মা।সন্ধ্যার আগে কুনো মেয়েমানুষ যেন মাঠের দিকেন যেও না।”
এই একটা লোক গোটা গাঁ তে দাদাগিরি করে।মোক্ষদার চোখ দুটো ছোট্ট হয়ে যায়।ঠিক তখনই একটা গুঞ্জন কানে আসে।দৌড়ে দরজাটার কাছে যায়। মালতী কেষ্টর ভাইঝি।মোক্ষদার দিকে তাকিয়ে বলে “ঘরে ঘরে পুলিশ খানাতল্লাশি করছে বৌদিদি ।উপুরমহলের আদেশ। ওরা কাউকেই কিছুই বলচে না।কুনুদাদা গরীপ মানুষ। তার বাড়িতে গেসলো। “
চোখ বার করে মোক্ষদা বলে “তারপর “?
মালতী হাত বেঁকিয়ে বলে “আর তারপর। তাকে পেলে তো?সে যে কুতায় গাঢেকা দেছে কে জানে?ওর বৌকে বলে গেছে সোয়ামীকে থানায় দেখা করতে বলবে”।
সবকিছুর মধ্যেই একটা ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছে মোক্ষদা।কুনুর খোঁজ করছে পুলিশ। ব্যারেলে কী ছিল কুনুর। তবে কি কেষ্ট র অসুখ এর সাথেই এর যোগ আছে?
সন্ধ্যার সময় তুলসীর মূলে প্রদীপ জ্বালানোর সময় কেন যেন একটা ভয় করছিল।ওর সহজ সরল সোয়ামী।তার কোনও ক্ষতি হবে না তো।না না।মোক্ষ থাকতে নিধে কামারের কেউ কিছুই করতে পারবে না।ঢাল হয়ে থাকবে মোক্ষ। কিন্তু কুনু কোথায় গেল?
চিনকে পুকুরের পাশ দিয়ে আসছিল নিধে।দোকান বেশ কিছুদিন বন্ধ। শোলার কাজের মালসামান আনতে হচ্ছে।কাল আবার চকের বাজারে যেতে হবে।হঠাৎই তার সামনে একটা শোল মাছ লাফিয়ে এল।নিধের আনন্দ দেখে কে।দোর থেকেই হাঁক “মোক্ষ। ও মোক্ষ রাণী।দ্যাকো।কত্তবড় শোলমাছ।”
মোক্ষ উঁচুদাঁত বার করে হ্যাবলা হ্যাবলা হাসে।বললে “কাল আমশোল রান্না করবো।ননদিনীরা আসবে কাল।তুমিও চকের বাজার যাবে সক্কাল সক্কাল”।
নিধে বললে “তারপর দুকান খুলবো।তবে একটা আচ্চর্য্যি ঠেকছে শৈলেন দা বস্তার তাগাদা দেয় নি।ওর দুটো মুখবাঁধা বস্তা কব্বে থেকে পড়েই আছে দুকানে।”
মোক্ষ বলে “কী আছে বস্তার মাঝে”?
নিধে বলে “জানিনে।বলে কাউকে বলবি নে।ভাড়া পাবি।যা পাই তাই ভালো”।
রাতে ঘুম আসে না মোক্ষদার। একটা অজানা আশঙ্কা শান্তি দেয় না।মালতী বললে কুনু গা ঢাকা দিয়েছে।তবে কি ওই ব্যারেল এর কারণ। কুনুর সাথে শৈলেনের যোগ। আর ওই বস্তা।মোক্ষ র উদ্বেগ বাড়ায়।
দেখতে দেখতে মহালয়া এসে গেল।গাঁয়ে রামযাত্রার মহড়া চলছে।এবার শোলার সাজ বানিয়ে ভালো উপায় হয়েছে।পুজোর আগে ধান উঠেছে।চাষীপ্রধান গাঁ।সবাই আনন্দে মাতোয়ারা।কদিন থেকে শৈলেন উধাও। কী ব্যাপার সব কে জানে।মোক্ষদার আর পুজোর সময় ওদের কথা ভাবতেই ইচ্ছা করছে না।
কেষ্টর মা বলেছিল “জানিস বৌ।মাঠে কত শাক।নিধের দোকানের পাশে নধর শুশনি যেন থিকথিক করছে।”
শুশনি শাক খুব প্রিয় মোক্ষদার। আর তার থেকেও নিধের দোকান দেখার ইচ্ছা।বললে “কাকীমা।আমি যাবো সেখেনে”।বস্তুত নিধে আজ গঙ্গায় তর্পন করতে গেছে।এসেই বলবে “কী রেঁধেছো মোক্ষ। আমার পেটের নাড়ি ছিঁড়ে যায়।খেতে দাও। “
মোক্ষ এখানে সর্বময়ী কর্ত্রী।দরকার নেই বাইরের রূপের।ওর নিধের ভিতরে কত মায়া।কত ভালোবাসা।কোটি কোটি মণিমানিক্যের থেকে দামী।
কেষ্টর মা বললে “তুকে জেগাটা দেক্কে দে আমি চলে আসবো।নিত্যগয়লা গাই দুইতে আসবে।ওর থেকে আগাম টেকা নেবো।সামনে পুজো।পহার প্রচুর পেয়োজন।
কেষ্টর মা জায়গাটা দেখিয়ে দিয়ে চলে আসে।মোক্ষ নিপুণ হাতে এক কোঁচল শুশনি শাক তোলে।তারপর আঁচলের খুঁট থেকে চাবিটা নিয়ে দোকান খোলে।সুন্দর করে গোছায় দোকান টা।কোনে ঝাঁটা দাঁড় করানো।মোক্ষ ঝাঁট দিতে থাকে।সব কাজ মিটলে কৌটো থেকে দুটো বিস্কুট নিয়ে খায়।
চকিত হরিণীর মতো মোক্ষদার চোখ ।হঠাৎই নজরে আসে দোকানের ওইকোনে বস্তা।তার মানে এই সেই বস্তা।দোকানের দরজাটা ভিতর থেকে এঁটে বস্তার মুখ খোলার চেষ্টা করে।পাউরুটি কাটার ছুরিটা দেখতে পায়।কেটে ফেলে মুখ। তারপর দেখে সাদা সাদা কী যেন সব।তবে কি রাসায়নিক কিছু।না।আর কোনও ঝুঁকি নেবে না মোক্ষ। দরজা খুলে দেখে আশে পাশে কেউ নেই। এগুলোকে দোকান থেকে বের করার এই সুযোগ। তারপর কী করবে পরিকল্পনা করে ফেলে মোক্ষ।সবকিছুর সদগতি করে মোক্ষ বাড়ি ফিরে আসে।রান্না করে ফেলে তাড়াতাড়ি।তবে আজ ওকে খুব অন্যমনস্ক লাগছে নিধের। বললে “কী ব্যাপার মোক্ষ। কী এত ভাবো?”
মোক্ষ বোকা বোকা হাসে।
দুপুরের খাওয়ার পর ঘুম দিচ্ছিল নিধে।সেই ভোরের ট্রেনে সে গিয়েছিল শেওড়াফুলির নিমাইতীর্থ ঘাট।কেষ্টর মা হন্তদন্ত হয়ে এসে বললে “শুনিচিস বৌ।কুনুকে ধরে নে গেল পুলিশ। ওরা তক্কে তক্কে ছিল। “
কুনুকে নিয়ে গেছে পুলিশ। কিন্তু কুনু কী করেছে। আজ অনেক এলোমেলো চিন্তা গ্রাস করেছে মোক্ষ কে।এইভাবেই নিরীহ মানুষ গুলোকে কাজে লাগায় সবাই। আসল অপরাধী বহাল তবিয়তে থাকে।নিধে দোকান যাবে বলেই বেরোচ্ছিল। হঠাৎই বাড়িতে পুলিশ। বললে “তোমার দোকান এ নিষিদ্ধ সব বস্তু রাখো।আমরা খবর পেয়েছি।কী ভাগ্যিস শৈলেন বাবু আসল অপরাধী চিনিয়ে দিলেন। চলো থানায় চলো”।
মোক্ষদা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেছে।আহত বাঘিনীর মতো গর্জে উঠেছে “আমার সোয়ামীর কুনো দোষ লাই।উর গায়ে আঁচড় পড়লি কেট্টে ফিলবো তুদের।কুন নিষিদ্ধ জিনিস উর দুকানে আছে দেখ্যা দিকি”।
শৈলেনের চোখ ধূর্তামিতে ভরা।বললে “বেশ তো।বৌঠান যা চাইছে তাই হোক”।
শৈলেনের ষড়যন্ত্র নিধে বুঝে গেছে।কিন্তু মোক্ষদার ক্ষমতা নেই ওকে এই প্রবলের হাত থেকে বাঁচায়।ওই বস্তা তো দোকানের মধ্যেই আছে।এখন কী হবে ।মোক্ষদার কী হবে।শৈলেনের দিকে তাকায় নিধে।দেখতে পায় কত নিষ্ঠুর হাসছে।
দুনিয়া সবার নয়।শান্তিকামী স্নিগ্ধ মানুষ কে কাজে লাগায় সমাজের দুর্বৃত্তরা। সমাজের সব আখের ওদের হাতে।শৈলেনের মতো মানুষ শুধুই টাকা ভালোবাসে।প্রশাসন চলে ওদের অঙ্গুলিহেলনে।কিন্তু।না।মোক্ষদার বুকে আজ হাজার হাতির বল।সে নারী।সে দশভূজা।কিছুতেই এ অন্যায় সে মানবে না।তার চোখেও আগুন।এখানে খেলা চলবে না।খেলতে এসো না শৈলেন।জ্বলে যাবে ওই আগুনে।শৈলেনের ভয় করে মোক্ষদার এই রণমূর্তি দেখে।
পুলিশ নিধেকে গ্রেফতার করতে পারে নি।নিধের দোকানে কোনো নিষিদ্ধ বস্তু নেই। ভুল খবর দেওয়ার জন্য শৈলেনকে তিরস্কার করে পুলিশ। আর শৈলেন হতভম্ব হয়ে যায়।কী করে সম্ভব। তবে কী নিধের বৌটা সব বুঝতে পারছে।ওর দিকে নজর রাখতে হবে।
নিধের দোকানে মোক্ষ বসে আছে।কিছুতেই সে স্বামীকে চোখের আড়াল করবে না।কুনুর বৌ যাচ্ছিল ওই পথ ধরে।মোক্ষদার ডাকে কাছে এসে কেঁদে ফেলল।বললে “কতবার বারণ করেছি বৌ।কুনো কতা শোনেনি।ওই শৈলেন যত নষ্টের গুড়া।নিজে ভদ্দরলোক সেজে ঘুরছে “।
কুনুর বৌ সব জানিয়ে দিলে মোক্ষ কে।মোক্ষ বললে “কুনো ভয় নেই বৌ।তুর সোয়ামী ছাড়া পাবে।”
চোখের মধ্যেই ঝিলিক খেলছে মোক্ষ র।নিধে আন্দাজ করে বলে “সাপের গর্তে পা দিতে যাস না।”
মোক্ষ মৃদু হাসে।
দুপুরের ভাত ঘুম দিচ্ছিল নিধে।ঠিক সেই সময়ের অপেক্ষায় ছিল মোক্ষ। নিধের দোকানের পাশ দিয়ে ছুটছে।খুব জোরে দৌড়াচ্ছে মোক্ষ রাণী।চলে এসেছে সেই ঘিয়া নদীর পাড়ে।এদিক ওদিক তাকায় ।দূরে একটা ধোঁয়ার কুন্ডলী।সন্তর্পনে এগিয়ে যায়।
চারিদিক তাঁবু দিয়ে ঘেরা।তাঁবুর আড়ালে থেকে লক্ষ করে মোক্ষ। কালো মদ্দ তিনটে লোক।একটা চটের মধ্যেই বসে আছে দুজন।আর একজন উনানে জ্বাল দিচ্ছে।কিসে জ্বাল দিচ্ছে লোকটা।কেমন যেন একটা গন্ধ আসছে।মোক্ষদার কী সাহস।
সব দেখে বাড়ি ফিরে এল মোক্ষ। নিধে আজ অগ্নিশর্মা।মোক্ষ কে বকুনি দেয় “কুতায় গেসলে।ঘুম ভেঙে দেখি নেই। কেন এমন ভাব তোমার। বুইতে তো পেরেছি শৈলেনের কারসাজি।উরা বড়নোক।একদম ওদিকে নয়”।
সন্ধ্যার মুখে কুনুর বাড়ি গেল মোক্ষ। আজ একটা হেস্তনেস্ত করতেই হবে।কুনুর বৌ বললে “কী ভাগ্য আমার। তুমি এখেনে এয়েচো বৌদিদি। “
মোক্ষ ফিসফিস করে বললে “কথা এখেনে নয়।ঘরে চল।তৈরি হয়ে নে।একজেগায় যাবো”।
কুনুর বৌ ঘরে নিয়ে যায় ।দুজনের কথা হয়।মোক্ষ বলে “এখনই থানায় যেতে হবে।শিগগির”।
কুনুর বৌ বলে “থানায় কাল থাকি জাঁদরেল অফিসার এয়েচে।আমার ভয় করে”।
মোক্ষ আর কুনুর বৌ থানার মধ্যেই প্রবেশ করলো।অফিসার এর ঘরে ঢুকে মোক্ষ কী সব বললো।অফিসার শান্তনু মুখার্জি সব শুনে অবাক। বললেন “ছোটোগাড়িটা বার করো ড্রাইভার। মেঠোপথে যেতে হবে।”
কুনুর বৌ বললে “আমার সোয়ামীকে ছেড়ে দিন দারোগাবাবু।আমরা দিন আনা দিন খাওয়া মানুষ। ডানহাত মুখে উঠছে না।ছেলেপুলে নে মরে যাবো বাবু গো”।
মেঠো পথ।চারিদিক শুনশান। ধান কাটা খালি মাঠ।সেই পথে পুলিশের গাড়িতে চলেছে মোক্ষদা। দত্তবাড়ির খাস ঝি।নিধে কামারের বৌ।ভয় কাকে বলে তার জানা নেই। স্যার বলেছিলেন পুরুষকার থাকা চাই।সব অন্যায়ের মুখোশ খুলবে সে।দূরে আদিবাসী গাঁ।পুলিশের গাড়ি ওই পথে।নতুন অফিসার থানার মেজোবাবুকে বললেন “এদিকটা আপনারা সার্চ করেন নি কেন?”
কাঁচুমাচু হয়ে তাকায় মেজোবাবু।কথা বলতে গেলে তুতলে যায়।শান্তনু মুখার্জি হাসেন।
ঘিয়া নদীর কাছে একটা গাছের আড়ালে পুলিশের গাড়ি থামে।মোক্ষদাকে অনুসরণ করে এরা।
এদিকে কুনুর বৌ গোটা গাঁয়ে জানিয়ে দেয় মোক্ষদার কথা ।গোটা গ্রামকে সর্বনাশের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য কী দুঃসাহস সে দেখিয়েছে।নিধে বৌ এর চিন্তায় পাগল।গোটা গাঁ আজ ক্ষেপে লাল।শেষ করে দেবে আজ শৈলেন কে।
পুলিশ অফিসার তাঁবুর একটা ফুটো দিয়ে দেখছেন ওদের কীর্তি। ওদের মধ্যে শৈলেন উপস্থিত। একটা বড় মাটির হাঁড়িতে চিটে গুড় ফুটছে।
তার উপরে একটা মালসা চাপানো।অদ্ভুত মালসাটা।চারিদিক ফুটো ফুটো।চিটেগুড়ের মধ্যেই সাদা পদার্থ ঢেলে দিলে শৈলেন। মুখে অশ্রাব্য গালি।
বললে “ওই হুদোটা এমন বাট মেশালে মদটা বিষ হয়ে গেল। ঈশান টা খেলে।ব্যাস।থানার মেজোবাবুকে ঘুষ দিয়েছি।তবে নতুন অফিসার এয়েছে।ও শালা জাঁদরেল খুব। আর একজনের সাথে আমার হিসেবনিকেশ বাকী আছে।ওই নিধে কামারের দাঁত উঁচু বৌটা।ওই মেয়েছেলে গাছচালানী।নিধেটাকে মেরে ওটাকে তাড়াবো গাঁ থেকে।
মোক্ষদা আর স্থির থাকতে পারে না।বলে “আমার সোয়ামীর গায়ে হাত ঠেকাবি তুই।তুকেই গারদবাস করাবো”।
চমকে ওঠে শৈলেন। আরে।এই বৌটা সব জেনে গেল।একটা মোটা লাঠি নিয়ে তেড়ে এল শৈলেন। বললে “তোর আস্পর্ধা তো কম নয়”।
কিন্তু পুরো কথা শেষ হল না।নতুন অফিসার সব ছবি তুলে নিলেন। আর বললেন “অনেক হয়েছে শৈলেন বাবু।চলুন এবার শ্রীঘরে চলুন”।
এদিকে গোটা গাঁ মশাল জ্বেলে এসে গেছে।সবাই আজ সত্যিটা জেনেছে।আর কদিন পরে পুজো।
দূরে কোথায় গান বাজছে “রূপং দেহি জয়ং দেহি যশো দেহি দ্বিষো জয়ী”।
মোক্ষদার গল্প শেষ করলাম।ঘটনাটা খুব সত্যি।আমার আপন ঠাগমার মুখে শোনা।
—ooXXoo—