‘ব্যোমকেশ বক্সী’ ফ্যানফিকশন -১
‘অসমাপিকা রহস্য ‘
কলমে – শ্যামাপ্রসাদ সরকার
(১)
বেলা আটটা বাজিয়া এখন প্রায় পৌনে নয়টা বাজিবার উপক্রম। সপ্তাহের মধ্যভাগে আসিয়া কর্মব্যস্ত আমার শহরটি তাহার সকালবেলার দিনগত সংগ্রামে অনেক্ষণ হল নামিয়া পড়িয়াছে। বেচারা ব্যোমকেশ তাহার শূন্য শয়নকক্ষ হইতে অনেকক্ষণ হইল বাহির হইয়া বৈঠকখানায় আসিয়াছে ও নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে একমনে কাগজ পড়িতে শুরু করিয়াছে। দেখিতে পাইলাম যে পুঁটিরামের বদান্যতায় ধূমায়িত চা ও জলযোগের বিলম্ব হইতেছে তাহা দেখিয়াও সে এখনও তাহার মুন্ডপাত করিতে বসে নাই!
আজকাল তাহার অর্ধাঙ্গিনী সত্যবতীর বিরহে সে একটু বেশী কাতর হইয়া পড়িয়াছে বলিয়া তাহার এইরূপ আচরণগত পরিবর্তনে আমি অন্তত খুব অবাক হই নাই। এইসকল প্রণয়বিলাসীদের উপলক্ষ্যেই গুপ্তযুগে কবিবর কালিদাস যে একদা মেঘদূতম্ কাব্যটি লিখিয়া ছিলেন তাহা আজ আর বুঝিতে কোন অসুবিধা হয় না।
আমি তাহার ভ্রাতৃস্থানীয় মিত্র না মিত্রপদবাচ্য ভ্রাতা তাহা লইয়া নব্যন্যায়ের টোলগুলিতেও বেশ বিতর্ক জমিয়া উঠিতে পারে বলিয়া তাহাকে আর কিছুক্ষণ পরে জ্বালাতন করিব বলে মনস্থির করিয়াছি।
যদিও এক সপ্তাহ হইল তাহাদের খোকার ইস্কুলে গ্রীষ্মাবকাশের ছুটি শুরু হইয়াছে বলিয়া খোকার সহিত তাহার মাতাটিও তস্য অগ্রজ সুকুমার ও তাহার একমাত্র বধূ ঠাকুরাণীর সমভিব্যাহারে দিন কয়েক আগে রাঁচী পাহাড়ে ঘুরিতে গেছে তাই এমতাবস্থায় ব্যোমকেশের বিরহানলে একটু ঘৃতাহুতি দিবার জন্যে আমি আর থাকিতে না পারিয়া শেষে মৃদুস্বরে রসিকতা করিয়া কহিলাম,
” আচ্ছা! আমাদের পুরন্দর পান্ডে এখন রাঁচীর কাছে পালামৌ না রামগড় কোথায় যেন বদলী হয়েছে বলছিলে না…? তা আমরাও না হয় একবার ওখান থেকে কদিন যদি….”!
….
আমার কথাটি শেষ হইলনা। খবরের কাগজ হইতে ব্যোমকেশ তাহার বিরক্তিসূচক জ্বলন্ত দৃষ্টি লইয়া ছদ্মকোপানলে আমার দিকে যেইমাত্র র্ভৎসনার নিমিত্তে নিক্ষেপ করিতে যাইবে , ঠিক তখনই আমাদের বাসার দরজাটিতে সজোরে কে যেন তিনবার ধাক্কা দিয়া উঠিল। দরজা খুলিতেই একজন প্রৌঢ় ভয়ার্ত কন্ঠে ব্যোমকেশের নাম ধরিয়া ডাকিতেছেন দেখিতে পাইলাম। যদিও লোকটিকে আমরা অল্পবিস্তর চিনি! ইনি হইলেন আমাদের প্রতিবেশী ও মধ্যবয়স্ক নবজীবন বাবু। ওঁর অপর পরিচয়টি হল যে আমাদের পাড়ায় ভদ্রলোকটি একখানি অ্যালোপ্যাথিক ঔষধালয়েরও মালিক।
দোকানটির লাগোয়া একটি অন্য ঘরে প্রবীণ ও পক্ককেশ একজন রিটায়ার্ড ডাক্তার চেম্বার খুলিয়া প্র্যাকটিস করিতে আরম্ভ করিয়াছেন। ডাঃ ভবানীচরণ বসু নামের সেই প্রাক্তন সরকারী চিকিৎসকটি একজন ক্যাম্পবেল মেডিক্যাল কলেজের একজন সিনিয়র এম ডি ও তার সাথে একজন স্বনামধন্য প্রফেসর হিসাবে রোগী ও ডাক্তারী ছাত্রছাত্রীদের উভয় মহলে বেশ পরিচিত নাম।
…..
বলা বাহুল্য মাস দেড়েক আগে ব্যোমকেশ তখন একটি তদন্তের কাজে ইলাহাবাদ যাওয়ার সময় একটি রাত্রে খোকার ভীষণ বমন ও দাস্তের বাড়াবাড়ি হইলে আমি আর থাকিতে না পারিয়া উক্ত ডাক্তারটির কাছে গিয়াছিলাম ও তাঁর মতামতানুসারে প্রয়োজনীয় ঔষধ ও পথ্যাদির গুণে খোকা অবশ্য সহজেই ভাল হইয়া উঠে।
তাহার পর নিয়মিত পথচলতি প্রতিবেশী হিসাবে আমার ইহাদের দুইজনের সহিত ক্রমে বেশ বন্ধুত্বও হইয়া যায়। ফলতঃ ব্যোমকেশ ফিরিয়া আসিলে সেও সময় পাইলে কখনো প্রবীণ ডাক্তারটির সাথে দাবা খেলিয়া বড় সুখ পাইত। ভদ্রলোক একজন কৃতী ডাক্তার হইয়াও তাহার সাথে যে বেশ দক্ষ একজন দাবাড়ু তাহা ব্যোমকেশও কয়েকদিন ওনার সহিত খেলতে বসিয়া সসম্ভ্রমে তা স্বীকার করিয়া লইয়াছিল।
….
আমাদের ঘরে ব্যোমকেশকে বসিয়া থাকিতে দেখিতে পাইয়া নবজীবন বাবু যেন খানিক স্বস্তি পাইলেন। এরপর উৎকন্ঠিত কন্ঠে অতি অনুনয় করিয়া কাঁদো কাঁদো মুখে বলিলেন,
” ইয়ে…মানে আপনারা দুজনেই এক্ষুণি আমার ওখানে চলুন! পাশের ডাক্তার বাবুটিকে খানিক আগে কে যেন গলার কাছে গুলি করে মেরে রেখে গেচে! বলুন দেখি কি হুলুস্থুলু কান্ড মশাই! সক্কালবেলায় কি অনাসৃষ্টি কান্ড বলুন তো। ঝন্টুকে থানায় পাঠিয়ে এখানে সোজা আসচি! দোকান খুলতে গিয়ে দেখি এই অবস্থা .. একবার..ভাবুন দেখি! আমার তো এর ওপরতলাতেই বাস তাও কিছু ঘুণাক্ষরে টের পাইনি !”
….
ব্যোমকেশ তাহার ঘরের কাপড় জামা বদলাইতে বদলাইতে আমাদের দিকে একটু চাহিয়া চিন্তিত ও ভ্রূকুঞ্চিত মুখে বলিয়া উঠিল,
” বেশ আশ্চর্যের ব্যাপার তো! আজকের কাগজে লিখেছে যে ‘ অ্যাটকিন্সন এন্ড রজার্স ‘ নামের একটি ওষুধ কোম্পানীর এক মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ তার পটলডাঙার মেসে দু’দিন আগে বিষ খেয়ে সম্ভবত আত্মহত্যা করে মৃত অবস্থায় ভিতরে পড়েছিল। মৃতদেহটি পচে দূর্গন্ধ বেরোতে মেসের লোকেরা পুলিশ ডেকে এনে লাশ উদ্ধার করে ও গতকাল ময়নাতদন্ত করে জানতে পেরেছে যে মৃতের গায়ে আপাতভাবে কোন ক্ষতচিহ্ন না থাকলেও মৃতের জঠরে সামান্য কার্বোহাইড্রেট জাতীয় তরলের সাথে সুতীব্র ও প্রাণঘাতী ক্যাডমিয়াম জাতীয় বিষের লক্ষণ পাওয়া গেছে। জানা গেছে যে মৃত্যুর আগে ছেলেটি যে রক্ত আমাশয়ে কাবু ছিল।সেই প্রমাণটিও অবশ্য তার মৃতদেহে পর্যাপ্ত পরিমাণে আছে। স্বভাবতই এই অকাল মৃত্যুটির সঠিক কারণ সম্পর্কে জলশূন্যতা ও তদ্বজনিত দূর্বলতাই দায়ী বলে করোনারের বিবৃতিটির কথা আজ দৈনিক কাগজে ফলাও করে লিখেছে । এখন এই খবরটা পড়ে ওঠার পরেই এখন শুনছি যে পাড়ায় স্বয়ং এক ডাক্তারের অপঘাতে মৃত্যু! নাহ্ হে অজিত! এত স্বল্পদিনের পরিসরে এরকম অদ্ভূত দুটি মৃত্যুর নজির তো খুব একটা দেখা যায়না! “
……
( ২)
আমরা সত্বর ডাক্তারখানায় আসিয়া দেখিলাম যে তখনও থানা হইতে বড়বাবু আসিয়া পৌঁছাননি। পরিবর্তে থানার সেকেন্ড অফিসারটি দুইজন কনস্টেবলের সাথে আসিয়া দোকান ও তৎসংলগ্ন ফুটপাত হইতে প্রাথমিকভাবে উৎসুক সব জনতাকে সরিয়া যাইতে নির্দেশ করিতেছে।
বলাবাহুল্য এই যে সকালবেলায় এরূপ অপ্রত্যাশিত কর্মে লিপ্ত হইয়া পড়িয়া তাহাদের কন্ঠস্বর ও মেজাজ স্বভাবতই খুব মধুর নহে।
নবজীবন বাবুর সহিত ব্যোমকেশকে দেখিয়া অফিসারটি যে খুব খুশী হইলনা তাহা বুঝিলাম। বোধ করি ঘটনাস্থলে ব্যোমকেশের আগমন ও সম্ভাব্য রহস্যের যবনিকা পতন একসাথে ঘটিলে পাছে থানার বড়বাবুটির কৃতিত্ব হ্রাস হইয়া যায় ও তৎসহিত তাঁহাদের বিলম্বজনিত স্বাদু খবরটিও যদি একইভাবে প্রচার হইয়া যায় তবে কমিশনারেটের বার্ষিক সিনপসিস্ রিপোর্টে তাহা কোনওমতেই সদর্থক ও কৃতিত্বের ভূমিকা পালন করিবেনা।
……..
ব্যোমকেশ তাহার গম্ভীর মুখে ও সুতীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে মৃত ডাক্তারের ক্ষতস্থানটি ঝুঁকে পড়িয়া অনেকক্ষণ ধরিয়া দেখিতে লাগিল। আমিও দেখিলাম যে বন্দুকের গুলিটি চোয়ালের তলদেশ হইতে এমনভাবে বিদ্ধ হইয়াছে যে ডাক্তারের প্রাণবায়ুটির নির্গমন হইতে বেশী বিলম্ব হয় নাই।
ক্ষতস্থান হইতে নির্গত রক্তের ধারা এতক্ষণে শুকাইয়া যাইলেও ডাক্তারের বসিবার জায়গাটির আশেপাশে তাহা সম্ভাব্য মৃত্যুটির নির্দয় নিদর্শন হইয়া এখনও স্পষ্ট হইয়া জাগিয়া আছে। আমরা দুজনেই মৃতদেহটি দেখিয়া বুঝিলাম যে ইহা কোনওভাবেই একটি নিছক হত্যাকান্ড নহে। বরং প্রবীণ ডাক্তারটির মৃত্যুর সম্ভাব্য কারণটি হইল আত্মহনন!
ইতিমধ্যে ঘরের চারিপাশে চোখ বুলাইতে বুলাইতে ব্যোমকেশ হঠাৎ টেবিলের নীচে হাঁটু মুড়িয়া আবার বসিয়া পড়িল। তাহার পর সে তাহার পকেট হইতে রুমালটিকে বাহির করিয়া ডাক্তারের ওই টেবিলটির নীচ হইতে একখানি আবর্জনা নিক্ষেপ করিবার পাত্র টানিয়া বের করিয়া আনিল। তারপর তাহার ভিতর হইতে কিছু বাতিল দলা পাকানো কাগজ সরাইয়া হাত ঢুকাইয়া দিয়া একখানি পুরাতন আমলের কিন্তু সচল ‘ওয়েবলি এন্ড স্কট ‘ কোম্পানি নির্মিত ৩৮ ক্যালিবার বিশিষ্ট একটি রিভলবার বার করিয়া আনিয়া আশ্বস্ত হইল ও তৎক্ষণাৎ সে সম্ভাব্য মৃত্যুর এই কারণটিকে যত্ন সহকারে থানার সেকেন্ড অফিসারটির হাতে জমা করিতেই দেখিলাম নিকটবর্তী থানা হইতে অবশেষে বড়বাবুটিও আসিয়া পড়িয়াছেন।
……
আশ্চর্যের বিষয় এই যে বড়বাবুটিও আমাদের সম্পূর্ণ অপরিচিত নহেন। মধ্যবয়স্ক দারোগা সুদর্শন হালদার গুম্ফ দোলাইয়া এতক্ষণে ঘটনাস্থলে আসিবার বিলম্ব হইবার জন্য একটু অপ্রস্তুত হইয়াই তৎক্ষণাৎ নিজেকে সামলাইয়া লইয়া কুটিল ও বাঁকা চোখে ব্যোমকেশকে একবার মাপিয়া লইলেন। তাহার পর তিনি ভ্রুকুঞ্চিত করিয়া বাজখাঁই কন্ঠে বলিয়া উঠিলেন,
” কি আশ্চর্য! এত দেখছি সুইসাইডাল কেস! আচ্ছা মিস্টার বক্সী…এই আর্মসটিতে আপনার আগে আর কেউ হাত -টাত দিয়েছে কিনা কিছু সেটা জানেন কি ? বুঝতেই পারছেন যে বডির সাথে তো এটাকেও তো এখন পরীক্ষা করতে পাঠাতে হবে!”
……
ঘরটি অগোছালো বইপত্র আর নানা ডাক্তারী অনুষঙ্গে ভর্তি থাকায় পুলিশ এখন ঘরটিকে তালা বন্ধ করিয়া অস্ত্রটির পরীক্ষা সহ মৃতদেহটিকেও ময়নাতদন্তের উদ্দেশ্যে ভ্যানে করিয়া লালবাজারের উদ্দেশ্যে পাঠাইয়া দিল।
অতঃপর সেখানে আমাদের আর অন্য কোনরূপ বিষয়ের প্রয়োজন না থাকিবার জন্য আমরাও সেখান হইতে বাহির হইয়া আসিলাম।
দেখিলাম, ব্যোমকেশ যেন ঠিক সুস্থির হইয়া থাকিতে পারিতেছিল না।পরপর দু-তিনটে সিগারেটে অগ্নিসংযোগ করিতে করিতে সে বলিল,
” বুঝলে অজিত! এখন তো সাড়ে দশটা পেরিয়ে গেছে! তোমার দোকানের আর একটা চাবিও আশাকরি প্রভাতের কাছে রাখা আছে ? তাহলে তোমার দোকানটিও এতক্ষণে নিশ্চয়ই খুলে গেছে! তাহলে জলদি একটা গাড়ি ডাক তো ! ভাবছি… আজ কলেজস্ট্রীট পাড়ায় গিয়ে তোমার বই এর দোকানেই না হয় সারাটা দিনটা একটু কাটিয়ে আসি…কিহে এতে তোমার কোন আপত্তি নেই তো…..!”
(৩)
আমার আপত্তি করিবার কোন প্রশ্নই নেই! এতদিনে ব্যোমকেশের থাকিয়া অনেকগুলি রহস্যভেদের সময় থাকিতে থাকিতে আমি আজ অন্তত বুঝিতে পারি যে আমার মিত্রবরের চিন্তাজালিকায় নিশ্চিতভাবে এমন কিছু একটা সূত্র আসিয়া পড়েছে যে তাহার বিচার তথা ঘনায়মান প্রকৃত রহস্যটির সমূলে উদ্ঘাটন করা অবধি সে কিছুতেই আর ক্ষান্ত হইয়া থাকিতে পারিবেনা।
তবে ডাক্তারের এইরূপ আত্মহননের সহিত তার অন্য সন্দেহের কারণটি যে ঠিক কি, সেটি অবশ্য আমার সহজে বোধগম্য না হওয়ায় অগত্যা একখানি ভাড়ার গাড়ি ডাকিয়া দুইজনেই একসাথে বইপাড়ার উদ্দেশ্যে রওনা হইলাম।
……
ব্যোমকেশ যাইবার পথে শুধু অস্ফূট স্বরে আমার উদ্দেশ্যে একবারের জন্য কহিল যে,
” শোন অজিত! আমার কেবল কি মনে হচ্ছে বল তো? আজকের কাগজে পটলডাঙায় মেসের যে অধিবাসীটীর আশ্চর্য মৃত্যুর খবরটির কথা বিশদে লিখেছে, সেই মৃত্যুর সাথে আমাদের পাড়ার এই ডাক্তারটির আকস্মিক আত্মহত্যাজনিত মৃত্যুরও একটা জোরালো সংযোগ আছে বলে আমার ধারণা ! যদিও তোমার পুলিশ এই প্রসঙ্গে আমার সাহায্য আর কোনমতেই চাইবেনা তাও প্রকৃত সত্যটির অণ্বেষণের জন্য এটার রহস্যভেদ করা আমার একান্ত প্রয়োজন। “
…..
প্রভাত আমাদের একসাথে দেখিয়া যারপরনাই আনন্দিত হইয়া মোড়ের মিষ্টান্ন ভান্ডার হইতে তখুনি গোটা আষ্টেক গরম গরম রাধাবল্লভী ও ছোলার ডাল আনিয়া ও কলাপাতায় সাজাইয়া আমাদের সেগুলি খাইতে দিল। তাহার সহিত সে পাঁচমিনিটে সর্দারজীর ধাবা হইতে তিনখানি ভাঁড়ে করিয়া উৎকৃষ্ট ধূমায়মান চা আনিয়া দিতেই ব্যোমকেশ স্মিত হাসিয়া জলযোগ সেবন করিয়া ফেলিয়া আমাদের উদ্দেশ্যে অতি শান্ত কন্ঠে বলিল,
” তোমরা বরং দুজনেই এখন দোকানে থাক। আমি একবার নবতারা মেস ও সন্নিকটের থানা থেকে একটু ঘুরে আসি। মনে হচ্ছে…! “
কথাটি উহ্য রাখিয়া সে ত্বরিৎগতিতে দোকানঘর হইতে বাহির হইয়া দ্রুত পদক্ষেপে কলিকাতার জনারণ্যে বিলীন হইয়া গেল।
…..
(৪)
সমস্তদিন তাহার অপেক্ষায় পুস্তকবিপণির পরিবেশে ব্যবসার অন্যান্য কর্মে অত্যন্ত অস্বস্তি সহকারে কাটিয়া গেল। তবে জলখাবারের প্রাবল্য ও মানসিক উত্তেজনায় দ্বিপ্রহরেও তেমন ক্ষুধা বোধ হয় নাই বটে, তবে বিকাল চারটার কিছু আগে ঘর্মক্লান্ত ব্যোমকেশ দোকানে ফিরিয়া আসিতেই সঙ্গে সঙ্গে প্রভাতকে ইশারা করিলাম তখুনি কিছু খাদ্যবস্তু তখন যাহা উপলব্ধ তাহা নিকটবর্তী ধাবাটি হইতে সত্বর লইয়া আসিবার জন্য।
…
তাহাকে দেখে এতক্ষণে বুঝিলাম যে ব্যোমকেশের বাহ্যিক পারিপাট্যটি বেশ অবিন্যস্ত লাগিলেও তাহার ললাটে আজিকার সকালবেলার ঘনায়মান ভ্রূকুটির মেঘটি অবশেষে অপসৃত হইয়া গিয়াছে।
সে অত্যন্ত স্বাভাবিক স্বভাববশতঃ পুনরায় জলযোগ সারিয়া চশমার কাঁচটি কাপড়ের খুঁট দিয়া মুছিতে মুছিতে কহিল,
” অজিত! তুমি তো কলমজীবি! মানব মনের অতি গভীর অভিনিবেশ তোমাদের কলমে জীবন্ত হয় ঠিকই! কিন্তু তা সত্ত্বেও এমন কিছু মনোবৈগুণ্যের পরিণাম তোমাদের কাছে যে চিরদিন অজানাই থেকে যায়.. এটাই একমাত্র বড় আক্ষেপের…..! “
আমি শান্ত স্বরে তাহাকে কহিলাম,
” তোমার কথা শুনে বেশ বুঝতে পারছি যে তুমি দুটি হত্যার স্বরূপ সম্পর্কে যা বলবে তা একেবারেই ‘প্রভাতে মেঘডম্বরম্’ সদৃশ! “
….
ব্যোমকেশকে দেখিলাম খানিকক্ষণ গম্ভীর হইয়া কিছুক্ষণ চুপ থাকিল ও তাহার পর সে বলিতে আরম্ভ করিল,
” মেডিক্যাল কলেজ থেকে আজ থেকে বত্রিশ বছর আগে এক কৃতী ছাত্র এখানকার পরীক্ষায় গোল্ড মেডেল পেয়ে সুদূর এডিনবরায় এম.ডি পড়তে যায় ও সেদেশেও তার সুউজ্জ্বল কৃতিত্বের ছাপ রেখে দেশে ফিরে এসে সেনাবাহিনীর হাউস ফিজিসিয়ান হয়ে বেশ কিছুকাল কাটায়। যখন ডাক্তারীর ছাত্র হিসাবে সে কলকাতায় পাঠরত তখন প্রণয়জালে বিদ্ধ হয় ও মদনাহত তরুণটি একটি কুমারীর সাথে তাদের এই প্রণয়লীলাটি চলাকালীন তারা জ্ঞানবৃক্ষের সুস্বাদু ফলটিকেও এক আষাঢ়ের নবজলধররাজির প্রাবল্যে আস্বাদন করে ফেলে। তার প্রণয়িনী কুমারীটি ছিল এক নিম্নবিত্ত পরিবারের মেয়ে। যদিও তার মত কৃতবিদ্যের এমন পদস্খলন তো নতুন নয়! কাজেই সে এখানকার পাট চুকিয়ে যথাসময়ে বিদেশে পড়তে গেল বটে কিন্তু এদেশে জ্ঞানবৃক্ষের ফলটির পরিণাম সম্পর্কে সে স্বেচ্ছায় আজীবন উদাসীন থেকে গেল। “
……
আমি একমনে তাহার বিবরণ শুনিতে শুনিতে উৎসাহী হইয়া পড়িলাম। ততোক্ষণে প্রভাত আরও তিন পেয়ালা চা আনিয়া আমাদের কাছে রাখিয়াছে ও আগ্রহের সহিত সেও উৎকর্ণচিত্তে একখানি মোড়া টানিয়া ব্যোমকেশের কাহিনিটি শুনিতে বসিল।
ব্যোমকেশ আর একটি সিগারেটে অগ্নিসংযোগ করিয়া পুনরায় শুরু করিল, ” ডাক্তার বিলেতের পাঠ শেষ করে দেশে ফিরে প্রথমদিকে সিভিল প্র্যাকটিসনার হয়ে কাজ করতে গিয়ে ক্রমে ‘বিষতত্ত্ব’ বা ‘ভেনোমলজি’ নিয়ে গবেষণার একটি সুবাদে পাশাপাশি একজন সফল বিষবৈদ্যও হয়ে ওঠেন। তবে এসব ঘটনার মধ্যে বাইশটি বছর আরো কেটে যাওয়ায় সেই মধ্যবয়স্কটি একজন পরিণত ডাক্তার ও তার সাথে স্বনামধন্য ডাক্তারীবিদ্যার শিক্ষকের পদমর্যাদায় অভিষিক্ত হয়েছেন। তিনি তাঁর মেধা ও কৃতিত্বের বলে সর্বতভাবে প্রায় ধণ্বন্তরীর সমতূল্য মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হয়েছেন ও এভাবে তার পরে আরও বারোটি বছর স্বাভাবিক কালক্ষেপে অতিক্রান্ত হয়েছে।
অবশ্য বর্তমানে তিনি অবসর গ্রহণের পর একটি স্বল্পমূল্যের ক্লিনিক খুলে সেবা ও প্র্যাকটিস দুটোই একসাথে চালাচ্ছিলেন। তবে দুঃখের বিষয় এই যে এসবের সমস্তটাই হয়ে এসেছে তাঁর একদা কৃত একটি তুমুল দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিণামের অগোচরে। সম্পূর্ণ বিস্মরণে থাকা সেই অতীত জীবনের ফলাফলটিকে একদা আক্ষরিকভাবেই জীবন থেকে দূরে সরিয়ে এখন অনেকদূর চলে এসেছেন।
….
তবে সেদিনের সেই নারীটি অবশ্য এতদিনে সব মধ্যবিত্ত সামাজিকতা বা অনুতাপের উর্দ্ধে ওঠার মত সাহসিনী ছিলেন না। তাই তিনি সেদিনের সেই সদ্যজাত শিশুটিকে নিকটবর্তী এক দরিদ্র-বান্ধব ধর্মযাজক ফাদার ফেয়ারবর্নের জিম্মায় গচ্ছিত করে এসেছিলেন যাতে সে অন্তত সঠিক আলোর অনুকূলে একদিন ঠিক বড় হতে পারে। অবশ্য সেই হতভাগিনী তার ছেলের বাহুতে অজান্তেই বেঁধে রেখেছিলেন ‘ভবানী’নামের একটি সুচারু জন্মকবচ যা হয়ত কোনও এক দূর্বল মুহূর্তে ‘ভবানীচরণ বসু’ নামের এক কৃতী ডাক্তারী পড়ুয়া তথা প্রণয়পিপাসুর কুমারী বাহুতে সপ্রশ্রয়ে বেঁধে দিয়েছিল পুনর্যাপী ভবিষ্যতের অমল আলোকে একদিন তার সার্থকতা দেখানোর লোভে! যদিও শিশুটিকে হোমে হস্তান্তর করার অব্যবহিত কাল পরেই সেই নারীটিও আত্মঘাতিনী হন বলেই আমার ধারণা। “
….
আমরা হতবাক হইয়া ব্যোমকেশকে দেখিতে দেখিতে বন্ধুবরের আশ্চর্য কাহিনিটির ধারাপথে স্নাত হইতে লাগিলাম।
একটু থেমে ব্যোমকেশ আবার শুরু বলিতে লাগিল,
” তারপর সেই অনাথ শিশুটি আর সবার সাথে ধীরে ধীরে বড় হতে লাগল খৃস্টানদের মানুষ গড়ার কর্মশালায় ও একদিন সে বি এ পাশ করে ‘অ্যাটকিন্সন এন্ড রজার্স’ এ মেডিক্যাল ক্যানভাসারের পদে চাকরী পেল! এ পর্যন্ত সব ঠিকঠাক চলছিল কিন্তু গন্ডোগোল বাঁধল মাস দু’য়েক আগে। ওই কোম্পানীর তৈরী একপ্রকার প্যানিসিয়া (panecea) জাতীয় সর্বরোগহরা বড়ির প্রচার করার উদ্দেশ্যে সে হঠাৎ একদিন এসে পৌঁছাল প্রবীণ ডাক্তার ভবানীচরণ বসুর কাছে। সে নিজে এক অতি সরলমতি ও সদ্যযুবা। উৎসাহে ও সততায় সে ক্রমে অগ্রপশ্চাত না জেনেই আস্তে আস্তে ভাব জমিয়ে ফেলল তার পিতৃতূল্য এই প্রৌঢ় ডাক্তারটির সাথে। অবশ্য বাহ্যিক চেহারায় তাদের সামান্য মিল থেকে থাকলেও তা সম্পূর্ণ কাকতালীয় বলেই হয়ত দুঃস্বপ্নের কোন কালো পর্দা তখনও এসে নামতে পারেনি এদের অসমবয়সী অন্তরঙ্গতার সঙ্গে।
অবশ্য এর মধ্যেই ডাক্তারটি কথায় কথায় জেনেছেন যে পিতৃমাতৃহীন একটি শিশুর মন্দভাগ্যের আপাত বিবরণ। নিজেও তাকে উৎসাহ দিয়েছেন এটা শুনে যে সেই যুবা এত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও খৃস্টান মিশনারীদের বদান্যতায় শেষমেশ সে জীবিকার্জনে প্রতিষ্ঠা লাভ করে সক্ষম হয়েছে। তার এই জীবিকাটি আপাত পরিশ্রমের হলেও সততার নান্দীপাঠ তার মজ্জাগত বলে সে আজ পর্যন্ত শুধু কঠিন পরিশ্রমটিকেই তার জীবনের একমাত্র মন্ত্র বলে যুবকটি জেনে এসেছে। তার এই লড়াইয়ের দিন – রাত্রিগুলিতে সে সর্বদাই পেয়ে এসেছে অতিদূরের মহাকাশ থেকে বিচ্ছূরিত একটি তারার অতুলান আনন্দ স্পর্শ, তার বিশ্বাস এই যে সেই তারাটি হলেন তার অতি আপনজন, অকালমৃতা মাতৃদেবীর প্রতীক !
……
এরমধ্যে একদিন সে এল কুন্ঠিত ও রুগ্ন দেহে। রক্তআমাশয় ও জিয়ার্ডিয়াসিসে খুব ভুগছে। তাই সে চায় প্রফেসর বসুর কাছে একটিবার নিজেকে দেখিয়ে তার দ্রুত রোগমুক্তির সন্ধান।
কিন্তু সেই দিনটি আসল ছিল অকালবসন্তের এক ভ্রষ্টলগ্নের দিন। তাকে খুশী মনে পরীক্ষা করতে গিয়ে ডাক্তার তার বাহুতে বাঁধা অবস্থায় দেখতে পেলেন সেই বিস্মৃতির গভীরে চলে যাওয়া একদা তাঁর প্রণয়িনীর বাহুতে বেঁধে দেওয়া “ভবানী” নামের প্রেমজ অভিজ্ঞানটিকে।
ডঃ বসু ডাক্তার বড়ই বিচক্ষণ মানুষ। মুহূর্তে তিনি চারপাশে ঘটে যাওয়া অকথিত ইতিহাসের সবই বুঝে ফেললেন। অনাকাঙ্খিত সেই প্রণয়ের মূর্তিমান আভাসে স্বভাবতই তিনি মনে মনে ভীষণ বিড়ম্বিত হয়ে উঠলেন। তাই হয়ত সেদিন তাঁর মগজে সেদিন ভর করে উঠল ‘বিষবৈদ্য’ হয়ে ওঠার তীর্যক বিজ্ঞানাভাস। ভাবলেন যে এতদিনের গড়ে তোলা সুনামের নকল সাম্রাজ্যটি যদি অচিরাৎ ভেঙে পড়ে এই অনর্থক পিতৃত্বের পরিচয়টি কোনওভাবে প্রকাশ পেয়ে গেলে ? তাই এবারে তিনি নিজেও খুব ভয় পেয়ে গেলেন। অবশ্য তাঁর সেই ভয়টি হল অঘটনঘটন পটীয়সী ভাগ্যদেবীর নিদারুণ প্রতিশোধের অনুচ্চারিত এক প্রবল বিভীষিকা।
তাই তিনি কাঁচের ইঞ্জেকশনে করে যুবকটিকে নিয়মিত পরীক্ষা করে দেখার ছলে তার ধমনীতে নিয়মিত প্রবেশ করাতে থাকলেন ক্যাডমিয়াম জাতীয় মারণ বিষ। বিষবৈদ্য এবারে নিশ্চিত হলেন যে এই বিষের ক্রমপ্রয়োগে যুবকটির দ্রুত মৃত্যু হলেও তা হবে ডায়রিয়া জাতীয় রোগের দূর্বলতায় আর সাথে এর খুনীটিও থেকে যাবে অপবিজ্ঞানের নিশ্চিন্ত আশ্রয়ে। তাই ক্রমশ তিনি নিয়মিতভাবে এই সরল যুবাটিকে ভবসাগর উল্লম্ফনের পথে ধীরে ধীরে এগিয়ে দিতে থাকলেন এক সার্থক বিষবৈদ্যের ভূমিকায়।
…..
এভাবেই সকলের অগোচরে এক কৃতী একজন সর্বজনমান্য আচার্যরূপী ডাক্তার ক্রমে পর্যবসিত হলেন এক সফল হত্যাকারীর ভূমিকায়।
যে সম্পর্ক একদিন তাঁর কাছে ছিল যৌবনের নিছক একটি ক্রীড়ার ছল মাত্র, আজ তার সেই একমাত্র অবশিষ্ট প্রমাণটিকে সশরীরে সামনে পেয়ে তিনি নিবারণ করতে পারলেন না বিদ্যাভাসের বিপ্রতীপে থাকা সেই অধর্মাচারণটিকে। “
………
একটি নিরপরাধ ও সরল যুবার অসহায়ের মত এই মৃত্যুর গ্লানি আজ সমাজের পঙ্কিল সাগর হইতে হঠাৎ যেন উদ্ভূত হইয়া আমাদের তিনজনকেই আচ্ছন্ন করিয়া তুলিল।
প্রভাত নিজেও এইরূপ এক অনাকাঙ্খিত দাম্পত্যের ফলশ্রুতি বলিয়াই হয়তো হাত দিয়া নিজের মুখটি ঢাকিতে ঢাকিতে সে অদেখা মৃত তরুণটির উদ্দেশ্য একবার ফুঁপাইয়া ক্রন্দন করিয়া উঠিল।
ব্যোমকেশ তবুও তাহার নির্মোহ কন্ঠে কাহিনীর শেষাংশটি বলিতে গিয়া একবার নিজেও যেন একটু কাঁপিয়া উঠিল,
” কাগজে আজ একজন অসহায় যুবকের অপমৃত্যু ও তার দেহে ক্যাডমিয়ামের উপস্থিতির সংবাদটি পড়ে ডাক্তারের মনে তীব্র অনুশোচনা জন্মায়। অপরাধবোধের অপরিসীম জ্বলনে তিনি তাঁর কাছে থাকা ‘ওয়েবলি এন্ড স্কট কোম্পানি নির্মিত ৩৮ ক্যালিবার ‘ বন্দুকটি লইয়া নিজের কন্ঠে স্পর্শ করিয়া অবশেষে তাহার ঘোড়াটি টিপিয়া দেন।
যে পিতৃপরিচয়ের প্রমাণটি এত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও যে এতদিন তাঁর সামাজিক পরিচিতিকে কোন বিঘ্ন না ঘটিয়ে কেবল একটি সৎ ও পরিশ্রমী জীবনের সন্ধানে রত ছিল তাকে হাতে পেয়ে ও নিজের মনোবৈগুণ্যের সূতীব্র হঠকারিতায় ক্রমে এভাবে শেষ করে দেওয়ার অপরাধ তাঁকেও যে একইভাবে আত্মহননের পথে নিয়ে আসবে সেটা কি আর তিনি এর আগে জানতেন!
আসলে অস্বীকৃত অপত্য হলেও তো একজন পুত্রহন্তার জ্বলন ও অপরাধবোধ তো আর নিছক কম নয়!
যদিও সেই যুবকটি মরবার আগে তার হন্তারকের পরিচয়টিও জানতে পারল না। আর তার সাথে সেই হতভাগ্যটির এও অজানা রয়ে গেল কেন তাকে যমালয়ে যেতে হচ্ছে!
আজ ডাক্তারের ঘরে নানা আশ্চর্য বস্তুসমূহের সাথে একটি ক্যাডমিয়ামের একটি মাসাধিক কালের পুরনো টিউব দেখতে পেয়ে তা আমাকে তা এইসব বিশ্লেষণের গভীরে ক্রমশ টেনে নামায়। এর আগে অবশ্য কাগজে লেখা মেসের ঘরে তরুণের মৃতদেহের জঠরে ক্যাডমিয়ামের উপস্থিতি আমাকে আগেই ভাবিয়ে তুলেছিল কারণ এই ধরণের প্রাণঘাতী বিষ সাধারণত ব্যাটারি জাতীয় পণ্যের বা কেমিক্যাল কারখানার বাইরে খুব যে সুলভ নয়! তাই আজ থানায় বসে মৃত ও হতভাগ্য জয়দীপ রোজারিও নামের সেই যুবকটির সমস্ত বিবরণ সংক্রান্ত ময়নাতদন্তের নথিটির সাথে তার সেই ‘ভবানী’ নামাশ্রিত সেই জন্মকবচটির ফোটোগ্রাফটিও দেখতে পেয়ে অবশেষে নিজের কাছে এই ঘটনাপ্রবাহের সম্পূর্ণ যবনিকা পতনের সহায়ক মর্মন্তুদ কারণগুলিও একইসাথে সম্পূর্ণ হৃদয়ঙ্গম হয়। “
…..
তাহার মুখ হইতে এই কাহিনির সমস্তটি শুনিয়া আমাদের কারুর মুখে আর কোন কথা সরিতেছিল না। আমরা দোকান বন্ধ করিয়া বাসায় ফিরিয়া আসিলাম।
আমার মিত্রবর ব্যোমকেশ বক্সীর আশ্চর্য বীক্ষণশক্তি ও তাহার অনুধ্যায়ী চিন্তাজগতের তল পাওয়া যে কতখানি কঠিন, তাহা আজ আবার বুঝিয়া পাইলাম।
বাসায় ফিরিবার পরেও ভুলিতে পারিতেছিলাম না যে পিতা, মাতা ও পুত্রের এই তিনটি জীবনেরই এমত শোচনীয় পরিণামত্রয় বোধ করি কাহারও একেবারে কাম্য ছিল না।
তবে ব্যোমকেশের ধী-শক্তির পুনরায় প্রমাণ পাইয়া তাহার জন্যে প্রচ্ছন্ন গৌরবে আমার বক্ষের ভিতরটিও ক্রমে স্ফীত হইয়া উঠিতে লাগিল।
—ooXXoo—