প্লাবন
রবীন কুমার চক্রবর্ত্তী
প্লাবন দেখেছি আমি
সবুজের
সারা মাঠ জুড়ে
চাষ-বাস নিয়ে যারা
দিন মাস বৎসর কাটায়
তাদের অন্তরে
লুকোচুরি খেলে কুঁড়ে ঘর
উসকো খুশকো চুল
খোঁচা খোঁচা দাড়ি
ফোকলা দাঁত
সে যখন হাসে
স্নিগ্ধ এক আলোর প্লাবন
তাদের দু-চোখ উপচে পড়ে!
দুস্তর অন্তর
রচণা সে আমার
যতোই না রচি
প্রাণের সম্পদ
সোনালী ধানের উৎসবে
সে হেসে ওঠে
অকাতরে!
পূর্ণতা পেয়েছে কেউ
যারা তা পায়নি এখনও
তারও,
হলেও মন্থর সে অগ্রগতি,
উঠবে পূর্ণ হয়ে
সে বিশ্বাস রাখি
শুধু অপেক্ষা সময়ের!
শঙ্কা
সম্ভাবনার বুকের উপরে
নাচে তিরতির করে!
গাছ
গাছেরা
কাছে-দূরে
এক পাশে ছোট্টো পরিসরে
দাঁড়িয়ে রয়েছে এক পায়ে!
আলো সে মায়াবী
তার মাথার মুকুট হয়েছে
স্তব্ধতা
তার পায়ের কাছে নীচে
গুঁড়ি মেরে বসে
গুণছে প্রহর
অন্ধকারে!
দূরে
আলোতে ছায়াতে ঢাকা
সবুজ নীলিমা
বাহু ডোরে দিগন্তে বেড়েছে
আরো দূরে
আকাশ
তার গম্ভীর মুখ থমথমে
ঘন-পল্লব মেঘ-মায়া
এখন ঢেকেছে তাকে
প্রায়-উপচানো চোখ-ভরা-জল
উথলে উঠেছে
এখুনি পড়বে বুঝি ঝরে
বৃষ্টি হয়ে
অল্প কিছু পরে!
ঝড়
সে ব্যাপ্ত-অন্তর-আকাশ
দম বন্ধ করে আছে!
কী যেন আশঙ্কা এক
ওৎ পেতে আছে
শিকারী বাঘ যেন
শিকারের গন্ধ পেয়েছে
তাই ঘাপটি মেরে বসে আছে
এ মায়বী আলোর আঁধারে!
চাষা-ভুষো যারা গাঁয়ে থাকে
তারা একে চেনে
এ ভেঙ্গে দিতে পারে একটি থাবা য়
তার বুকের পাঁজর
এ আলোর উদ্ভাস
এর সঙ্গে
যাদের নিয়মিত রয়েছে পরিচয়
তারা জানে
এ নিঃশব্দ পদ-সঞ্চারে এসে
মুহূর্তে ছিঁড়ে নিতে পারে
ধড় মুণ্ডু সব
সে সোনালী ধানের!
হে সুন্দর-ভয়ঙ্কর
তুমি
এমন মায়বী পরিসর
কী দিয়ে কি করে রচো!
তোমার হৃদয়
স্তব্ধ তোমাকে দেখে
স্থির অপলক
চঞ্চল অস্থির মনন
পায়চারি করে যুগপৎ
একই আধারে
আসন্ন প্লাবন সঙ্কেত
মায়বী এ আলোর আরশি তে
স্পষ্ট যা লেখা আছে
কী করে বাধ্য কর
হাজিরা দিতে
অপার আনন্দ-বেদনা কে!
—oooXXooo—