বুড়াই আর ত্রিদিবেশ ভালোবেসে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। অসাধারণ রবীন্দ্রনাথের গান গাইত। একঢাল কালো কুঁচকানো চুল। কাঁচা হলুদের মত গায়ের রঙ। মুক্তোমালার মতো হাসির ছটা। বিবাহের কিছুদিন পরে দেখে স্বামী মাদকাসক্ত। স্ত্রীর উপর শারীরিক নিগ্রহ ও চালায়। বিবাহের দেড় বছরের মধ্যেই ওদের একটি ফুটফুটে মেয়ে জন্মায়। ত্রিদিবেশ অফিস থেকে ফিরে হঠাৎ স্ত্রীকে মারধোর শুরু করে। বুড়াই আর সহ্য করতে না পেরে তিনমাসের শিশুকন্যা কে নিয়ে বাপের বাড়িতে আশ্রয় নিতে চায়। মা নেই, বাবা বৃদ্ধ। ইস্কুল মাষ্টার। শ্বশুরবাড়ি থেকে কোনো গয়নাগাটিও ফেরত দেওয়া হয় নি। ওদের ডিভোর্সও হল না। বুড়াই এর মেয়েটি তখন ছয় মাসের। হঠাৎ খাট থেকে পড়ে দুটো পা প্যারালিসিস হয়ে যায়। অনেক লড়াই বুড়াইয়ের সেই সময়ের দিনগুলোতে। অনেক ধৈর্য্য ও সহ্য ক্ষমতা দিয়ে মেয়েটিকে সুস্থ করার চেষ্ঠায় থাকে। অবশেষে মেয়েটি একটু খুঁড়িয়ে হাঁটে। বুড়াই একটা শাড়ির দোকানে চাকরি নেয়। মেয়েটিকে মানুষ করার দায়িত্বে। শ্বশুরবাড়ি থেকে কোনো খোঁজ খবরই নিত না। দীর্ঘ দিনের এভাবেই লড়াইয়ের পর মেয়েটি মাইক্রোবায়োলজি নিয়ে এম, এস, সি পাশ করে। বুড়াইয়ের মতই অপূর্ব সৌন্দর্য তার। মেয়েটির সাথে আজকাল আলাপ হয়েছে এক সিভিল ইঞ্জিনিয়ার ছেলের। বুড়াই খুবই দুশ্চিন্তায়। ইতিমধ্যে বুড়াই খবর পেল তার স্বামী লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। মৃত্যুর আগে ত্রিদিবেশ সমস্ত সম্পত্তি, টাকা পয়সা স্ত্রী ও কন্যার নামে রেখে যায়। কিন্ত বুড়াই কিছুই গ্রহন করে নি। আকুল নয়নে কেঁদেছিল স্বামীর শোকে। বৃষ্টি নেমেছিল। বহুদিন পরে আজ সূর্যাস্ত। কমলা ছটা। তারই সাথে রামধনু বিচ্ছুরন। বুড়াই তার মেয়ে ও হবু জামাইকে নিয়ে নদীর ধারে বেড়াতে যায়। জীবনের বাঁকে বুড়াইয়ের জীবনে এক নতুন অধ্যায় আসে। কন্যার চাকরি ও বিবাহ হয়। তার কোলে একটি ফুটফুটে হাসিখুশি পরী। জীবনটাকে অঙ্ক ভাবেনি বুড়াই। সততার সাথে লড়াই করেছে। আজ নাতনীর সাথে একটা ছবি তুলল। উজ্জ্বল নক্ষত্রদের ভিড়ে জ্বলজ্বল করছে বুড়াইয়ের জীবনে ফেলে আসা গান, ” যে রাতে মোর দুয়ার গুলি ভাঙল ঝড়ে। “