একটা ফুলকির জন্যে
– নবারুণ ভট্টাচার্য
একটা কথায় ফুলকি উড়ে শুকনো ঘাসে পড়বে কবে
সারা শহর উথাল পাথাল, ভীষণ রাগে যুদ্ধ হবে
কাটবে চিবুক চিড় খাবে বুক
লাগাম কেড়ে ছুটবে নাটক
শুকনো কুয়োয় ঝাঁপ দেবে সুখ
জেলখানাতে স্বপ্ন আটক
একটা ব্যথা বর্শা হয়ে মৌচাকেতে বিঁধবে কবে
ছিঁড়বে মুখোশ আগ্নেয় রোষ
জুলবে আগুন পুতুল নাচে
ভাঙবে গরাদ তীব্র সাহস
অনেক ছবি টুকরো কাচে
একটা কুঁড়ি বারুদগন্ধে মাতাল করে ফুটবে কবে
সারা শহর উথাল পাথাল ভীষণ রাগে যুদ্ধ হবে।
…………………………..
কবিতার অনুধ্যান –
কলমে – শ্যামাপ্রসাদ সরকার
বিপ্লব আসলে প্রাবল্য ও প্রেমের জয়গান আর তার উদযাপন বলে শতকের পর শতক অতিক্রম করে এদুটোই প্রাসঙ্গিক থেকে গেছে। তাই কবি নবারুণ বলতেই পারেন,
একটা কথায় ফুলকি উড়ে শুকনো ঘাসে পড়বে কবে/সারা শহর উথাল পাথাল, ভীষণ রাগে যুদ্ধ হবে/কাটবে চিবুক চিড় খাবে বুক/লাগাম কেড়ে ছুটবে নাটক/শুকনো কুয়োয় ঝাঁপ দেবে সুখ
/জেলখানাতে স্বপ্ন আটক/একটা ব্যথা বর্শা হয়ে মৌচাকেতে বিঁধবে কবে..”
এটাই তো সেই অন্তহীন অঙ্গীকারের ভাষা যেখানে সাম্যবাদ বেঁচে থাকে সোচ্চার গলায়।
দিলীপকুমার রায়, ” গান, দেশ, প্রেম, ভগবান” নামে একটি লেখায় প্রেমকে যে ঈশ্বরলোকে এনে সব শেষে মিলিয়ে দেন তা আসলে নবারুণেরও কাঙ্খিত আবাস যেখানে তিনি স্বপ্নচারণের অক্ষরবৃত্তে দেখতে পান,
“সারা শহর উথাল পাথাল
ভীষণ রাগে যুদ্ধ হবে”।
এই রাগ আসলে প্রেমহীনতার আক্ষেপ মাত্র। আসলে সংহত মানবিকবোধ আর বাঁধনহীন প্রেমের উদ্ভাস দুটোই যে একই বিষয় সেটা সমকাল ভুলে গেলেও যে ভাবীকাল কখনো ভোলে না।
তাই তো নবারুণ থেকে যান অসংখ্য স্বপ্নসন্ধানীর আতশকাঁচে! কারণ বিপ্লব আর প্রেম এর দুটোকেই যে খুঁজে পেতে হয়।সারাজীবনের এটাই তো আসঙ্গলিপ্সা।
(এরপর