বেলফুলের গন্ধ
নন্দিতা চক্রবর্ত্তী
————-
দরজা খুলে অন্ধকার বারান্দায় এসে দাঁড়াতেই পাগল করা সুগন্ধে যেন ডুবে গেলাম। বেলফুলের গাছটা ফুলে ফুলে ভরে সুগন্ধ ছড়াচ্ছে।
বাইরে অন্ধকার রাত। মনের উড়ান অ– নে– কটা পেছনে।
তোর মনে আছে কুন্তল?
চিত্রার বিয়ে। বাসরঘরে আমরা সবাই গান খুনসুটিতে ব্যস্ত। পরিপূর্ন আনন্দে উত্তাল একটা রাত।
হঠাৎ কি মনে হতে ওই হুটোপুটির পরিবেশ ছেড়ে বারান্দায় এসে দাঁড়াই আমি। বাসরের শালিকের কিচির মিচির ছাড়া চারদিক নিস্তব্ধ। সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে।
বাইরে ভেসে যাচ্ছে জ্যোৎস্না। অন্ধকার বারান্দায় বাসর ঘরের আলো এসে পড়েছে। আলো- আঁধারির আবছায়ায় বারান্দায় সাজানো ফুলে ফুলে ভরা টবগুলো থেকে বেলফুলের মন মাতানো গন্ধে চারপাশের বাতাস মাতাল।
হঠাৎ কাঁধে কারো স্পর্শে ঘুরে তাকাতেই তুই আমার হাতদুটো তুলে জড়ো করে একমুঠো বেলফুল ভরে দিলি। তারপর হঠাৎ হাঁটুমুড়ে দুহাত ছড়িয়ে আবৃতি করলি” এবার আমারে লহ করুনা করে।”
সাথে সাথেই চারদিক থেকে হাসির ফোয়ারা ছুটল। তোর পিছন পিছন বাসর ঘর থেকে চিত্রা প্রশান্ত সহ সবাই বেরিয়ে এসেছিল।
হাসতে হাসতেই অনু বলল ” ওসব করুনা টরুনা পরে হবে,এবার একটা গান শোনা কুন্তল।”
তুই সাথে সাথেই ভরাট গলায় গেয়ে উঠলি
” রাখব গেঁথে তারে রক্তমনির হারে
বক্ষে দুলিবে গোপনে নিভৃত বেদনাতে”
সব রক্তমনির হারগুলো নিভৃতেই রয়ে যায় রে কুন্তল। কোনটাই হারায় না।
কাজের চাপে, প্রতিদিনের ধুলোর তলায় অযত্নে অবহেলাতেই রয়ে যায় আমাদের মনের মনিকোঠায়।
তারপর একদিন —- বসন্তে কি শীতে, গ্রীষ্মে কি বরষায়, হেমন্তে কি শরতে বেল বকুল শিউলি যুঁইএর সুগন্ধে পুরনো দিনের ধুলোর বোঝা সরিয়ে চকিতে সামনে এসে হেসে দাঁড়ায়।
বলে যায়—- আমরা ছিলাম,আছি, থাকব — অলক্ষ্যে প্রতিটি নিশ্বাসে, প্রতিটি বিশ্বাসে। থেকে যাব আমরণ হৃদয়ের প্রত্যেকটা তন্ত্রীতে সুর তুলে আনন্দ ব্যথায়, সুখে দুঃখে।
–~০০০XX০০০~–