অশনি সংকেত
পার্থসারথী চট্টোপাধ্যায়
উত্তাল বিভীষিকা
ঘনীভূত দুর্যোগ
জীবনের এস্রাজে
মৃত্যুর সুর যোগ।
উত্তরণের কোনো
নেই পথসংকেত
শূন্য প্রতিশ্রুতি,
দগ্ধ শস্যক্ষেত।
ধূ ধূ কলকারখানা
চিমনির সাইরেন,
ক্রমশ লুপ্ত হলো
ব্যস্ত লোকাল ট্রেন।
ট্রাম বাস মেট্রো বা
ট্যাক্সির চলাচল
স্তব্ধ, কার্ফু জুড়ে
বিচিত্র কৌশল।
জীবনের সংগ্রহে
রসদ ফুরিয়ে যায়
ধ্বংসের সংগীতে
সময় গুঁড়িয়ে যায়।
শহরে লোডশেডিং
পথ জলমগ্ন
চোরা চালচিত্রের
রেখা আজ ভগ্ন।
ভিতরে অস্থিরতা
প্রবল আলস্য,
আগাছা ভর্তি মাঠ
উবে গেছে শস্য।
মনের খামারে আর
একটিও ধান নেই
জীবন রয়েছে, তবু
জীবনের গান নেই।
মধ্যদিনের ঘুঘু
ভিটে জুড়ে চরে যায়
অবেলার কত স্মৃতি
বৃথা মনে পড়ে যায়।
উত্তরণের কোনো
নেই পথসংকেত
পুঁজিবাদী খাঁচাকল,
বোকা প্রলেতারিয়েত !
দুঃসময়ের কবিতা
পার্থসারথী চট্টোপাধ্যায়
বিষন্নতার বড় কাছে দুঃসময়ের পাখিগুলি
নৈঃশব্দের সিঁড়িঘরে ডানা ঝাপটিয়ে মরে ওরা
নেভে সমস্ত পাণ্ডুর মুখ, ভিজে আসে রঙ তুলি
হু হু বাতাসের অশ্রুতে,জাগে আস্তিনে কালো ছোরা!
ফুলের বাগানে হেসে ওঠে নরকঙ্কাল, কেন হাসে?
কেন খ্রিষ্টের কাঁটার মুকুট আকাশের বুক চিরে
রক্ত ঝরায় ক্লান্ত রাতের অবাক দীর্ঘশ্বাসে,
কেন যে দীঘল সাশ্রু নয়নে মহাপৃথিবীর তীরে!
সুন্দর সে তো হারিয়ে গিয়েছে, একা ধ্বংসস্তূপ
গর্জে উঠেছে রাইফেল, কারো বাঁকানো ছুরির ফলা
নিজেদের মতো পরিচ্ছন্ন — তোমাকেই প্রতিরূপ
সাজিয়ে কেবল কুশ্রী করেছি, নতজানু হয়ে বলা।
তুমি বুদ্ধের বিগ্রহ, দিলে অহিংসা-ক্ষমা-প্রেম
ওরা ছুঁড়ে দিল ঘৃণার কামান, ধ্বংসের ক্ষিপ্রতা!
ছিল জীবনের তৃষিত দুঃখ, প্রাণে নিকষিত হেম
দ্রুত মুছে দিয়ে ভেসে গেল লাশ, যে ঢেউ খরস্রোতা!
পাহাড়ি নদীতে ছোট সাম্পান, চারিপাশে দেবদারু
কিরকম ঋজু দাঁড়িয়ে রয়েছে, সাদা কাগজের বক
ওড়ে গোধূলির কমলা আলোয়, ভ্রুক্ষেপ নেই কারু
জেগে মানুষের ভগ্নমূর্তি, ঘুমিয়ে পর্যটক !
–~০০০XX০০০~–