১. নতুন প্রদীপ
কিশোর বিশ্বাস
এখনও অভিভাবকেরা ছেলে মেয়েদের প্রেমটা ঠিক মেনে নিতে পারেনি। নিশিতা ও বিজয়ের প্রেমটাও নিশিতার অভিভাবকেরা মেনে নিতে পারলেন না। তাই ঠিক করলেন নিশিতাকে ভারতে তার মামার বাড়িতে পাঠিয়ে দেবেন। যাওয়ার আগের রাতে নিশিতা ও বিজয় দুজনেই খুব কান্নাকাটি করল, শেষে নিশিতা একটা রুদ্রাক্ষের মালা বিজয়ের গলায় পরিয়ে দিয়ে বলল “আমার শিব, তোমার দুর্গা ; তোমাকে এই মালা দিয়ে বরণ করল। কোনোদিন যদি এ মালা খুলে ফেলো বা ছিঁড়ে যায় বুঝবে তোমার নিশিতা তোমার বিরহে মারা গেছে।” তারপর দু’বছর কেটে গেছে। বিজয় গলার রুদ্রাক্ষের মালাটা খুব যত্ন করে রাখে, কোনোভাবেই ছিঁড়তে দেয় না ৷ কিন্তু হঠাৎ সত্যিই একদিন মালাটা ছিঁড়ে গেল। সঙ্গে সঙ্গে বিজয়, “আমার নিশিতা মারা গেছে” — বলে কেমন হয়ে গেল। অগত্যা তাকে মানসিক রোগের ডাক্তার দেখানো হলো। তিনি বললেন প্রচন্ড শক থেকে এটা হয়েছে, খুব ভালো হয় যদি মেয়েটাকে এনে দেখানো যায় — সে বেঁচে আছে, তবেই বিজয় স্বাভাবিক জীবনের ছন্দে ফিরতে পারবে ৷” বিজয়ের ভাই অরুণ ভারতে তার এক বন্ধুকে চিঠি লিখলো। তার উত্তরে বন্ধু জানালো — নিশিতা তার সেই রেখে যাওয়া পুরনো প্রদীপ নিভিয়ে দিয়ে, একটা নতুন প্রদীপ জ্বালিয়েছে।
২. রাক্ষসী পদ্মা
কিশোর বিশ্বাস
পদ্মার পাড় ভেঙে পড়তেই জলে পড়ে গেল দুটি শিশু। হারান মন্ডল দৌড়ে গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল পদ্মায়। অতঃপর দু’হাতে বাচ্চা দু’টোকে জড়িয়ে ধরে কুলে আসার চেষ্টা করতে লাগল, কিন্তু পদ্মার মাতাল ঢেউ তাকে ক্রমশ গহ্বরের দিকে টানতে লাগল। তিনজনই জল খেতে থাকল। হারু দেখল ভয়ঙ্কর বিপদ, তারা তিনজনই মারা যাবে। বাঁচানো যাবে না কাউকেই । কোনো উপায় না দেখে সে রাজনারায়ণকে বুকে জড়িয়ে ধরল, খোকনকে ধরে থাকা হাতটা কখন যে হালকা হয়ে গেল তার হুঁশ নেই। ছোট্ট ছেলেটাকে নিমেষে গ্রাস করে নিল পদ্মা। হারু কোনোরকমে সেই ভয়ঙ্কর জল পার করে পাড়ে উঠল, পাগলের মতো দৌড়াতে দৌড়াতে গেল জমিদারবাড়ি ৷ সারা রাস্তায় শোরগোল পড়ে গেল ৷ পুরোনো মন্দির থেকে হন্তদন্ত হয়ে জমিদার শিবপ্রসাদ ছুটে এসে আনন্দে চিৎকার করে বললে — তুই আমার ছেলেকে বাঁচিয়েছিস হারু ! আমি তোকে পুরস্কার দেব ৷ তোর আর কোনো…কোনো অভাব থাকবে না তোর… দেখিস৷” ম্যানেজারকে হাঁকডাক করে আদেশ দিয়ে একতাড়া নোট ওর হাতে ভরে দিলেন। হারু ভিতর থেকে চমকে উঠলো, তারপর টাকার দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললো, ” টাকা! অনেক টাকা। আমার খোকন ল্যাখাপড়া শিখতে চেয়েছিলো, এই টাকায় অরে লেখাপড়া শিখাবো,ভালো স্কুলে পড়াবো।” অতঃপর সেই হাতভর্তি টাকাগুলো আকাশের দিকে ছুঁড়ে দিয়ে হাঃ হাঃ করে হাসতে হাসতে সিংহদরজা ঠেলে বেরিয়ে গেল। টাকাগুলো পাক খেয়ে খেয়ে মাটিতে পড়তে লাগলো। সকলের চোখেই তখন রাক্ষসী পদ্মার জল, কিছুটা শান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে ৷
–~০০০XX০০০~–