অন্য মানুষ…
শিল্পী মিত্র হাতি
এখন জৈষ্ঠ, তীব্র গরম। বাড়িটার ভূগোল এমনি যে এতটুকু হাওয়া খেলে না ঘরে, রোদের তাপটা কমতে কমতে সেই বিকেল। এ বাড়ির তিনতলার ভাড়াটে বৌ রমা চাতকের মত চেয়ে থাকে বিকেলের জন্য। এক ছুটে ছাদ, এক ছুটে মুক্তি।
এলাকাটা কোলকাতার দক্ষিণে, ‘সজনেতলা’ ঠাকুরপুকুর সংলগ্ন, শহরতলী একপ্রকার। পূবদিকে অটোয় মিনিট দশেক ডায়মন্ড হারবার রোড, দক্ষিণ আর পশ্চিমে গায় গায় বেশ কিছু দোতলা তিনতলা বাড়ি। ছাদগুলোও পাশাপাশি। বাড়িটার ঠিক পিছনে একফালি পোড়ো জমিতে একটা জামরুল, সবেদা আর ছড়ানো ছেটানো কয়েকটা সুপুরী গাছ। ঐটুকু চৌকো জমি বেশ ছায়া ছায়া, মায়া মায়া, তীব্র গরমেও একটু চোখের আরাম, মনের শান্তি।
ছাদের পশ্চিমদিকের কার্নিশটা বেশ মোটা, পাশের বাড়ির ছাদটি লাগোয়া বলে রমা সেখানে নির্ভয়ে বসে। একটা কাক এসে ডিস টিভির স্ট্যান্ডটায় বসল, কিছুক্ষণ কঁ কঁ করে খানিক বেসুরে গলায় ডাকল, তারপর গলাটা বেঁকিয়ে ঘাড়টা চুলকে নিলো। চোখাচুখি হল, তবে রমাকে ওর পাত্তা দিতে বয়ে গেছে। তিড়িং বিড়িং লাফাতে লাফাতে প্রায় নাগালের মধ্যে এলো, সঙ্গীটাকেও ইশারায় ডেকে নিল। তারপর দুজনে বিদঘুটে গলায় কি যে কথা চালালো কে জানে।
রমা ভুরু তুলে বলে, ‘কি রে, আজ খাওয়া জুটেছে? বিকেল তো শেষ, ঘর যাবি না?’
‘যাব তো, তোমার মত নাকি, ঘর আর ছাদ, আর কি আছে তোমার। আমরা কখনও নিজের বাসায় থাকি, কখনওবা আত্মীয়বাড়ি থেকে যাই, সময় হলে উড়ে যাব, তোমায় ভাবতে হবে না’।
হেসে ফেলে রমা। তারপর আদুরে গলায় বলে, ‘আমার বয়ে গেছে তোদের কথা ভাবতে৷ আমার আর কেউ নেই বুঝি!! যা তো’।
দুবার হুঁশ করতেই ওরা উড়ে গেল।
বেশ কটা বেড়াল আছে, ঐ যে পিছনের চওড়া ছাদ, ওখানে হুটোপুটি করে। একেক দিন হুলোটা একাই আসে, বেশ বদমেজাজি মনে হয়, চোখ দুটোয় হিংস্রতা এনে গড়র গড়র করে ঘাড় ফুলিয়ে দেখে। ‘কি রে তোর বউ বাচ্চা কই রে ? আজ যে দেখছি না বড়’।
‘আছে বহাল তবিয়তে, গেছে বোধহয় অন্য তল্লাটে । আজ আমার তেমন খাওয়া জোটেনি, মেজাজ ঠিক নেই, চললাম’।
হুলোটা চলে যায় একেবারে কার্নিশ ঘেঁষে ঘেঁষে, কী সুন্দর ব্যালেন্স করতে জানে। আর কি নিঃশব্দ চলন।
দখিন পানে দুটো বাড়ির ছাদে দুখানা ইয়া লম্বা লম্বা মোবাইল টাওয়ার, যেন গাঁয়ের মোড়ল, সবদিকে নজর। একবার ঝড় এসেছিল, সে ভয়ানক ঝড়। তখন ঐ টাওয়ারগুলো কেমন যেন গর্জন করছিল। কি বীভৎস আওয়াজ হচ্ছিল। রমা পরদিন এসে দেখে যে কে সেই, কী শান্ত। ‘কি গো, কাল যে ঝড়ে তোমরা নাস্তানাবুদ হলে, এত গজরাচ্ছিলে কেন?’
‘আর বোলোনা, এমন হাওয়ার জোর, মনে হচ্ছিল কোমর খুলে যাবে, যা হোক টিকে রইলাম’।
ছাদের এই নিভৃত যাপনের সময়টুকুতে বেশ কটা প্লেন উড়ে যায়, একদম নিয়মমত, কী সুন্দর ঝকঝকে রূপোলী ডানা৷ রমা হয়ত এর ওর সাথে কথার পসরা সাজিয়ে বসেছে, এমন সময় আকাশপানে গুড়গুড়, গুড়গুড় শব্দ, প্রথমে মৃদু তারপর জোরালো। খুশিয়াল হয় রমা, ছেলেমানুষের মত হাসি খেলে যায় ওর মুখে, চোখ তুলে তাকায় উপরে। বিদায়ী সূর্যের মরা আলোয় ওদের গাগুলো কেমন ঝিকিয়ে ওঠে।
‘আজ কোথায় নামবে তুমি?’
‘কোথায় আবার, বম্বে গো, যাবে নাকি, ইচ্ছে করলে বোলো, তোমায় নিয়ে যাব’।
‘সে তো অনেক দূর, ওখানে তো আমার কেউ নেই, তাছাড়া আমার কি অত পয়সা আছে গো, ও তো বড়লোকেদের চড়ার জন্য’।
হা হা করে হেসে ওঠে বম্বেওয়ালি। চোখ উজিয়ে রাখে রমা, যতদূর দেখা যায়। একেবারে কালো বিন্দু হয়ে মিলিয়ে যাওয়ার আগে ছুঁড়ে দেয় ‘কাল আবার আসবে তো?’।
‘নিশ্চয়ই, তুমি আরেকটু থাকো, আরো কজন আসবে গো একটু পরে’।
সত্যি সত্যি তিন চারটে প্লেন যায় কিছু সময় অন্তর অন্তর। রমার ভারী লোভ হয়, ওমনি করে যদি মামাদের গাঁয়ে চলে যাওয়া যেত।
আকাশ পাতাল ভাবতে থাকে, সময় পেরোয়, সন্ধ্যা হব হব। আজান ভেসে আসে, শাঁখের ফুঁ, রমা এবার নীচে নামে। রাতের খাবার, সুরেশের জন্য অপেক্ষা। সেই গতে বাঁধা একঘেয়ে জীবন।
******
‘গেলি কই..ও ভাল্ মানষের বিটি? বলি এক ডাকে কোনদিন সাড়া পাওয়া যাবে কি, হারামজাদি কোথাকার!’
ঐ এসে পড়ল সুরেশ, হাতে একটা থলে মত, এক মিনিট দেরী হলেই এরকম হাঁকডাক। আগে আগে রমা এর সুযোগ দিত না, হাতের কাজ ফেলে ছুটে এসে হাত থেকে থলেটা নিত, কাঁসার গ্লাসে করে জল এগিয়ে দিত। এখন কান সওয়া হয়ে গেছে, তবু সাড়া পেয়ে চলে আসে, হাত থেকে থলেটা নেয়, জল দেয়।
আজ বলে নয়, নতুন বিয়ের পরও একদিন লোকটাকে মুখে হাসি নিয়ে ঘরে ঢুকতে দেখেনি। সেই ভুরু ভাঁজ করা আর মুখে অমন ছোটলোকের মত ভাষা।
এত তিরিক্ষি মেজাজ নিয়ে ব্যবসা চালায় কি করে কে জানে।
ঘরে ঢুকে তক্তপোশে বসে এখন সুরেশ কয়েন গুলো গুণবে,নোটগুলোকে আলাদা করে রাখবে, বার দুয়েক মেলাবে, তারপর একটা মিনি ডায়েরীতে কী সব হিসেব নিকেশ করে হাতের তালুতে এক খাবলা নারকেল তেল নিয়ে মাথায় ডলতে ডলতে, ঘাড়ে গামছাটা ফেলে বাথরুমে ঢুকে যাবে। এই রুটিনের কোন বদল নেই।
রমা মেঝেতে আসন পাতে, গুছিয়ে থালা সাজিয়ে ভাত দেয়। সুরেশ এলে নিজেও ভাত বেড়ে খায়। তবে এই গোটা দৃশ্যটাও নির্বাক। প্রথম বিয়ের পর অন্তরঙ্গ হয়ে দোকানের বিক্রিবাটার খবর জানতে চেয়েছিল, চোখ পাকিয়ে সুরেশ বলেছিল, ‘খবরদার, মেয়ে মানুষ মেয়ে মানুষের মত থাকবি। ঘরের কাম কাজ করবি, যা দরকার বলবি, আর কিছুতে নাক গলাবি না’।
দরকার তো কত কিছুরই হয়েছে। অল্প বয়স, একটু নেলপালিশ, ঢঙের ক্লিপ, ঝুটো কানের দুল। প্রথম প্রথম দু একদিন বলার পর এনে দিয়েছে বটে, তারপর সেই শখ আহ্লাদ কবেই বিদেয় নিয়েছে, এখন সামান্য তেল সিঁদুরই সই।
মানুষটা এক অদ্ভুত রসায়নে তৈরি। না আছে শখ, না কোন কিছুর উপর মায়া মমতা, স্নেহ ভালোবাসা বা টান। রমারও কপাল পোড়া, ছোটতেই মা বাপ খেয়ে বসে আছে, ঠাঁই হল মামাবাড়ি। মামা যদিও একটু ভালো চোখে দেখে তো খাণ্ডারনী মামীমার চক্ষুশূল। কোনক্রমে ম্যাট্রিকটা দিয়ে সংসারের কাজে লাগানো, তারপর ঐ আধবুড়ো লোকটার গলায় ঝোলানো। সুরেশেরও মা বাপ কেউ নেই, এক অকৃতদার মামার সাথে বিয়ের রাতে একবারই দেখা হয়েছিল। একলা থাকে, একলাই হাত পুড়িয়ে খায়। রমার খানিক মায়া হল, ভাবল নাই বা থাকল চালচুলো, ভালোবাসায় ভরিয়ে তুলবে সংসার।
ভুল ভাঙল ফুলশয্যার রাতেই, এ লোক যে শুধু কতৃত্বই ফলাবে তা বুঝতে সেই রাতের ব্যবহারই যথেষ্ট ছিল। একটা দিনের তরে একটু আদর সোহাগ, নিদেনপক্ষে দুটো মিষ্টি কথাও জোটেনি৷
রমা নিজেকে প্রশ্ন করে, আদৌ কি ভালোবাসে ওকে এতটুকু… সারাদিন শুধু অর্ডার তামিল করা, না একটু বেড়ানো, না একটু সিনেমা, না কোন ভালো মন্দ খাওয়া।
কায়মনে একটি সন্তান চেয়েছিল রমা, ভেবেছিল সন্তানই তো সেতু, তখনও ওকে আর উপেক্ষা করতে পারবে না। সেখানেও বিরূপ ভগবান।
দশ বছর বিয়ে হয়েছে, বার তিনেক গর্ভপাত, তেমন করে বড় কোন ডাক্তারের কাছে নিয়েই যায়নি সুরেশ। সন্তানের জন্য আকুল হয়েছে রমা একাই, কর্তার কোন হেলদোল নেই। সে শুধু জানে নোট গুণতে আর স্বার্থপরের মত শরীরের চাহিদাটুকু মিটিয়ে নিতে।
মন সায় না দিলে দেহ কি আর সঙ্গ দেয়, অনিচ্ছার সঙ্গমে কেবল কষ্ট, কি শরীরে কি মনে। আজও দুপুরে তাই হল, সুরেশ নিজেরটা বুঝে নিয়ে বিছানায় শ্রান্ত অচেতন, রমা শাড়িটা গায়ে
জড়িয়ে সোজা বাথরুম, বালতি থেকে মগে করে জল ঢালে বেশ করে, শরীরটা জুড়োলো বটে, মনের ক্লেদটুকু পড়ে রইল।
ক্ষিপ্ত মনটাকে টেনে নিয়ে চলে এলো ছাদে, এটাই তো ওর মনোভূমি। গরমকাল, হাওয়া দিলে ভালো, না দিলেও ক্ষতি নেই, মাথার উপর অনন্ত আকাশ আর কত বন্ধু।
*******
পিছনের জামরুল গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে সূর্যের আলো ঘুমন্ত রমার ঠোঁটদুটো ছুঁয়ে যায়, চোখের পাতা মেলে আলতো করে, মনে মনে চায় একটা পুরুষালি আদুরে হাত কপালে লেপ্টে থাকা চুলগুলোকে সরিয়ে দিক, ভালোবাসার ওমে জারিত হতে হতে আরেকটু ক্ষণ আলসেমিতে মটকা মেরে পড়ে থাকুক। এভাবে তো শুরু হতে পারে নতুন একটা দিন, নতুন একটা সকাল। কোথায় কি, নিজেকেই শাসায় আকাশকুসুম চয়নের লজ্জায়, ধড়ফড় করে উঠে পড়ে।
কম কাজ পড়ে আছে নাকি সংসারে, রুটি তরকারি করে টিফিন বক্সে ভরে দিতে হবে, আটটার মধ্যে বেরিয়ে যাবে সুরেশ। আসতে আসতে সেই দুপুর। এর মাঝে রান্না, ঘর মোছা, বাসন ধোয়া, কাপড় কাচা, সবই একার হাতে। তবে রোজ একই কাজ করতে করতে আয়ত্তে এসে গেছে। বেশ কিছুটা সময় হাতে থাকে নাড়াচাড়ার।
টিভি নেই এ বাড়ি, তবে একখান রেডিও আছে৷ রেডিওর নব ঘোরায় রমা।
‘রেডিও মির্চির সকালম্যান মীর আছি আপনাদের সাথে’..
‘উমমম্ জানি তো, তোমাকে আমার এত ভালো লাগে, তুমি কি সুন্দর কথা বলো। কত ভালো গান শোনাও’
রেডিওর বাকি কথা ঢাকা পড়ে যায় রমার নিজের স্বরে। আঁচল দিয়ে রেডিওটাকে আদর করে মুছিয়ে দেয়, এটাই ওর খোলা জানালা। বাইরের পৃথিবীটার খবর এই তো এনে দেয়। একবার কর্তাকে বলেছিল, ‘একখান খবর কাগজ এনো দিও না রোজ আসার পথে৷ আমি তো একটা পাশ দিয়েছি, একটু পড়ব’।
ঝাঁঝিয়ে উঠেছে সুরেশ, ‘নে ধেঁড়েবয়সে আর রঙ্গ করতি হবে না। অত পড়ে কাজ নেই। ঘরের কামকাজ কর’। তাইই তো করে যাচ্ছে উদয়াস্ত, তবু এক সময় সে কাজটুকুও তো শেষ হয়।
আগে দিনের কাজকম্মো সারা হলে একটু আধটু সেলাই ফোঁড়াই করত। এখন কিছুই ভালো লাগে না। এমন একটা বাড়ি, আর যাই হোক, পাড়া বলা চলে না। আত্মীয় বন্ধু দূর অস্ত, কোন ফেরিওয়ালা বা ভিখারীও আসেনা এ বাড়ি।
কোথাও যে একলা একটু ঘুরে আসবে সে উপায় আছে নাকি। এক তো সন্দেহবাতিক, বৌ যেন কারো চোখে না পড়ে, আর দুই হল কড়ায় গণ্ডায় হিসেব। অতএব, দিনভর ‘রাঁধার পরে খাওয়া আর খাওয়ার পরে রাঁধা’।
সব কিছুকে ভাগ্য বলে মেনে না নিয়ে উপায় কি… সব তো আর চাইলে পাওয়া যায় না, জোর করলেও হয়না৷ যতটুকু ভাগ্যে আছে তাই পাবে, কানা কড়ি বেশি পাবে না। নিজেকেই বোঝায় লোকটা তো ছোট থেকেই একা, ভালোবাসা পায়নি, তাই হয়ত প্রকাশ করতে জানে না। আর যাই হোক, গায় তো হাত তোলে না, মারধর করে না, রুক্ষ স্বভাব, মুখের ভাষায় কোন ছিরিছাঁদ নেই, তো কি করার আছে। ওরই বা কী এমন আছে বড়াই করার মত, ঐ তো গায়ের রঙ কালো, মা বাপ নেই, টাকা পয়সা নেই, বাপের বাড়ি বলে কিছু নেই। খেতে পরতে তো পাচ্ছে, খেদিয়ে দিলে যাবে কোথায়…
রাস্তা তো তার ফুল বিছোনো ছিলনা কোনদিনই, এবড়ো খেবড়ো ডিঙিয়ে এতখানি কাটাতে হয়েছে, না পেতে পেতে অনেকটাই অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গেছে, নতুন করে অভাবনীয় কিছু আশা করে না। প্রাপ্য বা পাওনার সীমা টুকুও অজানা, এমনকি তার বোধের সূক্ষ্ম অনুভূতিগুলোও আজ ভোঁতা। এমনি করেই সে রোজের দিন শুরু করে, দিন শেষ হয়ে রাত হয়। কালের আবহে আবর্তিত হয় জীবন, সাধের জীবন।
পূবের রাস্তাটা দিয়ে যখন এক একখানা অটো বা রিক্সা যায় তাদের নিজস্ব যান্ত্রিক শব্দ তুলে, মনের অন্তহীন নীরবতায় ছেদ পড়ে। কল্পনার উড়ালে চেপে বসে সেই যানে, নেমে পড়ে বড় হয়ে ওঠা মামাদের গাঁয়ে। উঠোন গাছপালা, পুকুর সবজি খেত… বিকেল বেলা মাঠের ধারে গেলে চোখ জুড়োতো। এই বাড়ি নামেই কোলকাতা, আসলে ইটেরই বস্তি, কেমন যেন নির্মম, নীরস কাঠখোট্টা, সুরেশেরই মত।
*******
ইদানীং রমার প্রায়ই গালমন্দ জোটে কর্তার কাছে, ও নাকি একা একা কথা বলে। এই তো আজই দুপুরে কর্তা এসে চান সেরে খেতে চেয়েছে, রমা শুনতেই পায়নি। পিছনের জানলা দিয়ে কী দেখছিল কে জানে, বিড়বিড় করছিল নাকি একার মনে।
হয়েছে কি, চিলতে জমিটায় কোথা থেকে এক পাল ছাতারে পাখি এসে জুটেছে। খুঁটে খুঁটে খাচ্ছে আর ক্যাচোর ম্যাচোর, কী চেল্লামিল্লি। ব্যস পায় কে, কথায় পেয়ে বসল।
‘ ওরে তোরা ঝগড়া কেন করিস রেএএএএএ’।
‘ ঝগড়া কোথায় করলুম গো, আমরা তো ফুর্তি করছি, একটা ইঁদুর মরে আছে, তাই খাচ্ছি সবাই মজা মেরে’।
‘ও তাই বল, তা সেই তখন থেকেই চিবিয়ে যাচ্ছিস, তোদের চেল্লানিতে তো কান যায়’।
‘আমাদের এমনই স্বর, সবাই ভাবে ঝগড়া করছি। তা তোমার দুপুরের খাওয়া মিটল?’
‘উনি আসুক দোকান থেকে, চান করুক, তারপর তো’।
আসলে ভুলেই গেছে, তাই যখন উঁচু গলায় ‘ভাত দিসনি এখনও বড়লোকের ঝি, তখন থেকে দেকতিচি জানলা দিয়ে কার পানে চেয়ে বকে মরতিচিস’।
কানে এলো, তখনই শশব্যস্ত হয়ে আসন জল নিয়ে ভাত বাড়ল।
খেতে বসে
‘সকালে রুটির তরকারিতে অত নুন দিইচিস কেন? নুন পোড়া করে রেখিচিস, বলি মন কোন দিকে থাকে অ্যা? রান্নার সময়ও একা একা কি গুজগুজ করিস, যত্ত সব পাগলের কারবার?’
মাছের কাঁটা চিবুচ্ছিল রমা, থেমে যায় জিভ, দাঁত, ঠোঁট। চুপ মেরে বসেই থাকে, সত্যি কি ওর পাগলের ব্যামো ধরেছে। একা একা কখন কথা বলে, কখন হাসে, কই মনে পড়ছে নাতো। সুরেশ ততক্ষণে খাওয়া সেরে সুখের বিছানায়।
ছাতারে পাখিগুলো চলে গেছে মরা ইঁদুরের চিহ্নটুকু সাবড়ে নিয়ে। টুকরো জমিটাতে এখন খাঁখাঁ শূন্যতা। কেবল জামরুল আর সবেদার পাতাগুলো মৃদু হাওয়ায় তিরতির করে কাঁপছে।
কবে আসবে বৃষ্টি। এত গরম যেন আর সহ্য হয়না, আকাশে টুকরো মেঘ জমে, আবার কেটেও যায়, ঝরে আর পড়ে না। জীবনে তো কোন বদল নেই অন্তত প্রকৃতিতে একটু বদল আসুক। বৃষ্টির ছন্দেই না হয় কিছু দিন কাটিয়ে দেবে রিমঝিমিয়ে।
*******
আষাঢ় আসব আসব, তাই প্রাকবর্ষার বৃষ্টি নেমেছে। তৃষ্ণায় কাতর প্রকৃতি একটু জলের আশায় কাটিয়েছে কত প্রহর। এতদিনে অপেক্ষার অবসান, প্রকৃতির মত রমাও কতকাল ধরে বসে আছে এই বৃষ্টির জন্য। যেদিন বিকেলে বছরের প্রথম বৃষ্টি নামল তরতরিয়ে ছুটল ছাদে, আকণ্ঠ ভিজল, খোলা ছাদে দুদিকে হাত প্রসারিত করে জলধারাকে শিরে ধারণ করতে থাকল। শরীরে এলো শিহরণ, অকারণ ছেলেমানুষী হাসিতে ভরে উঠল একলা ছাদ। শেষে ভিজে চুপ্পুস হয়ে চানঘরে।
কদিন বৃষ্টি নেই, চলছে গুমসানি, রাতে ভালো ঘুম হয়না, যদিও পাশের মানুষটি দিব্যি নাক ডাকিয়ে ঘুমোতে থাকে। বিছানায় থাকতে ভালো লাগেনা, অনেক কাজ পড়ে আছে যে। খুব ভোর ভোর উঠে পড়ে সে, কোথা থেকে একটা সুশীতল আদুরে বাতাস চোখ মুখ ছুঁয়ে যায় এই জানলার কাছে দাঁড়ালে।
কদিন হল ছাদে এসে খেয়াল করেছে পশ্চিমদিকের বড় তিনতলা বাড়িটার পিছনদিকের জানলাগুলো খোলা। কই এতদিন তো খোলা থাকত না। বাড়িটার ছিরিছাঁদ কেমনতরো, গা বেয়ে একটা চিমনি আছে, হয়ত একতলায় কোন ছোট কারখানা টারখানা আছে। কিন্তু তিনতলায় যে মানুষজন থাকত, এতকাল তো বোঝা যায়নি। এখন জানলা গুলো যদিও খোলা থাকে, খালি চোখে ঘরের ভিতরে কিছুই বোঝা যায়না।
কৌতূহলটা বেড়েছে, সন্ধ্যে পেরিয়ে গেলেও তাই ছাদে বেশ খানিক্ষণ অকারণ পায়চারি চলতে থাকে। এরই মধ্যে পাশের বাড়িতে আলো জ্বলে ওঠে, দিব্যি দেখা যায় জানলার পাশে একটা তক্তপোশ, তাতে রঙচঙে টানটান রাজস্থানি ছাপা চাদর, একটা আলনা, তাতে যতদূর মনে হয় পুরুষেরই পোশাক। পাশের একটি ঘর, তার জানলা চেনায় ওটি রান্নাঘর। একটা অ্যালমুনিয়াম হাড়ি, কিছু বাসন ছড়িয়ে ছিটিয়ে। হাড়ির নীচটা কালো ঝিম ধরা, তাহলে হয়ত স্টোভে রান্না, তাই ঝুলকালি। তবে কোন মানুষ এযাবত চোখে পড়েনি।
আজ শ্রাবণ পূর্ণিমা, বিকেল থেকে দৈত্যাকার কালো একটা মেঘে চরাচর ছেয়ে এলো, মনে হল এই বুঝি নামবে, ভাসিয়ে দেবে। তবে দিক, তুমুল বৃষ্টি নামুক, উড়িয়ে দিক আলুথালু আঁচল, ভিজে যাক উপোসী ঠোঁট, মুখ, গাল, গোটা শরীর। বুকের মাঝে বদ রক্তের মত জমানো কষ্ট গুলো মুক্তো দানা হয়ে ঝরে পড়ুক, বৃষ্টির সাথে মিলে মিশে একাকার হয়ে যাক।
মা বেড়াল তার ছানাগুলোকে দুধ খাওয়াচ্ছে, ছানাগুলো মাকে ঘিরে কিলবিল করছে। মা নির্বিকার, আরামে আবেশে চোখ বুঁজে পড়ে আছে। এমন দৃশ্যে রমার মনে সন্তান বাসনা জেগে ওঠে ক্ষণকাল।
হাত দিয়ে ছুঁয়ে নেয় পুরুষ্ঠু ভারী বুক দুটো, কোনদিনও হয়ত এই শুষ্ক জড় মাংসপিণ্ডে দুধ আসবেনা !!! আঁচলচাপা নারীর এই সৌষ্ঠবের বাহার হয়ত এ জনমে সন্তানের সঞ্জীবনী সুধা হয়ে উঠবে না!!
অবশ হাত তলপেটে এসে থমকায়, আসবে না, আসবে না এখানে কোন প্রাণ, জীবনের ধুকপুকুনিটুকুর স্বাদও রয়ে যাবে অধরা। হৃদয়ের অন্তরমহল থেকে উঠে আসে দীর্ঘশ্বাস।
দুধ খেয়ে ছানাগুলোর আনন্দ আর ধরেনা, মারামারি আর খুনসুটিতে মেতেছে। হাসি পেয়ে গেল রমার।
‘ছানাগুলোর নাম রেখেছিস এই মা বেড়াল? তোর তো চারটে ছানা, ঐ দুধসাদা একটাকে দিবি আমায়, আমি পুষব’।
‘তুই পুষবি কিরে, তোকে কে পোষে তার ঠিক নেই?’ চোখ বুঁজিয়ে মিচকে হাসিতে মুখ ঘোরাল মা বেড়াল।
চেনা কাক দুটোর দেখা নেই। ঐ বড় রাস্তার দিকে হলুদ বাড়িটার ছাদে অনেকগুলো কাক লাইন দিয়ে বসে আছে। কোন মিটিং চলছে হয়ত। আসন্ন বৃষ্টির জন্য চিন্তিত কি! একদল বক উড়ে যাচ্ছে সাদা ডানা মেলে, কালো মেঘের আকাশটাকে চিরে চিরে। কি সুন্দর লাগছে চারদিকটা, মন ভালো হয়ে যাচ্ছে।
হঠাৎ করে ঘনিয়ে আসা এই আঁধারভাবটা আবার কাটতেও শুরু করেছে, মেঘগুলো পাঁই পাঁই উত্তরে ছুটছে।
‘কি ব্যাপার আজ তোমরা ঝরবে না মেঘ, এই তো নামবে নামবে করছিলে, জান না বৃষ্টি এলে আমার মনটা ভালো হয়ে যায়’।
‘না গো, তোমার ছাদে আজ আমাদের নামা হবেনা, অন্য জায়গায় ছুটতে হবে। সাধ করে কি আর যাচ্ছি গো, আমরা তো পোয়াতি হয়ে আছি, ঝরে গেলেই হালকা হই, কিন্তু ঐ যে বাদলা হাওয়া এসে টান মারল, ওর কথামত চলতে হয় আমাদের’।
‘ ও, তোমাদেরও নিজের মর্জি নেই বুঝি?’।
‘না গো, আমাদেরও মর্জি নেই, টান মারলে দৌঁড়তে হয়। তা তুমি আরেকটু সময় থাকো, আমরা চলে গেলেই চাঁদ দেখতে পাবে, তোমার মন ভালো হয়ে যাবে গো, চললাম’.।
কথা বলতে বলতে মেঘগুলো ভ্যানিশ, আর সত্যি সত্যিই আকাশ জুড়ে থালার মত হলুদ একটা চাঁদ উঠল, জোছনায় ছাদ ভরে গেল। কি আশ্চর্য, প্রতিবেশির ঘরেও আলো, ঐ তো… ঐ তো একজন মানুষ, হ্যা একজন পুরুষ, নীচু হয়ে বটি নিয়ে সবজি কাটছে, বাসন নিয়ে নাড়াচাড়া করছে।
আলোয় মোড়া ছাদের কার্নিশে স্থবির এক ছায়ামূর্তি নজর রাখছে জানলার ওপারের মানুষটিকে। কত কথা মনে হচ্ছে, উনি কি একা? নিজে রান্না করছে কেন, কেউ নেই বুঝি। বুকের ভেতর প্রশ্ন ওঠে, প্রশ্ন নামে। উত্তর নেই।
রাত বাড়ে, গোটা আকাশে চাঁদটাকে আটকে রেখে রমাকেও ফিরতে হয় নিজের চার দেওয়ালে।
********
সময়ের বালুঘড়িতে ঋতু পাল্টায়, এসে পড়ে শীত। রমার ভালো লাগে না এই শীতকাল। দীর্ঘ দুপুর নেই, নেই লম্বা বিকেল, খেয়ে আচাতে আচাতে দুপুর শেষ, বিকেলটুকু কে যেন চুরি করে নেয়, আঁধার নামে তড়িঘড়ি। কদিন বড্ড ঠাণ্ডা পড়েছে, লেপ কাঁথাগুলো ছাদে দিতে বলেছে কর্তা, আজ তাই বেলার দিকে ঘাড়ে ফেলে চলে এসেছে ছাদে। হোক অসময়, তবু প্রতিবেশির জানলায় চোখ না রেখে কি যাওয়া যায়। আজ তো রবিবার নয়, এই অসময়ে জানলা খোলা কেন। একভাবে তাকিয়েই আছে,ভাবনারা জড়ো হচ্ছে ইচ্ছেমত। উনি কি বাসা পাল্টাচ্ছেন, চলে যাবেন বুঝি, কোথায় যাবেন তা তো জানা হবে না, একদিনও তাকে চোখে দেখা হলনা….. তবে তো ছাদে আসাটাও নীরস বিবর্ণ হয়ে যাবে….
দাঁড়িয়ে রইল সে নিস্পৃহ নিস্পন্দ হয়ে, চোখে নেই কোন কৌতূহল, নেই ঔৎসুক্য, কেবল আছে মনখারাপির নিষ্পলক উদাসীনতা। তাই প্রতিবেশীর ছাদে যখন ধূমকেতুর মত একজন মানুষ পায়ে পায়ে একেবারে মুখোমুখি এসে পড়েন, সেটা কি আর ‘আসা’ হয়, হয় আবির্ভাব। বয়সে হয়ত রমার চেয়ে খানিক বড়, সুঠাম, এক গাল হাসি।
জগতে কিছু কিছু ঘটনা ঘটে যায় কোন কার্যকারণ ছাড়া। রমার মনের কল্পনায় প্রতিবেশীর একটি কাঠামো ছিল, সহসা পূর্ণ অবয়ব নিয়ে এত আকস্মিকভাবে সামনে এসে দাঁড়াবেন, সে যে তার ভাবনারও অতীত।
ভীষণ লজ্জা লাগছে, চলে যাবে দ্রুত পায়ে, ছি ছি কী না কী ভাবছেন হয়ত৷ ও যে রোজই অলক্ষে নজরে রাখে ওনার গতিপ্রকৃতি সে তো কেবল ওই জানে।
লোকটি হয়ত দেশে স্ত্রী সন্তান কে রেখে এখানে কাজ করেন, মাসে নিয়ম করে বাড়ি যান, প্রিয়জনদের জন্য টুকটাক উপহার, খাবার দাবার। সন্তানকে কোলে নিয়ে আদর করেন, আড়াল পেয়ে স্ত্রীকে… ননা, এসব আগডুম বাগডুম চারণ করত সে একা একাই। ভাবনার বিস্তারে কখনও লজ্জা পেয়ে যেত, চকিতে অন্য মোড়ে ঘুরিয়ে দিত।
কিন্তু আজ, আজ কি হবে!! ফেরার উদ্যোগ করলেও পারল না, শেকলে আটকে আছে পা, প্রতিবেশী সপ্রতিভ ভঙ্গীতে বলে উঠলেন, ‘আপনি রোজই ছাদে এসে এদিকে চেয়ে থাকেন, এই বাড়িতে তো অারেক ঘর ভাড়াটে আছে, আপনার চেনা বুঝি?’,…
‘না তো। আমি এমনিই দাঁড়িয়ে থাকি। আপনি বুঝি একা? একা রান্না বান্না করেন, একাই থাকেন? আপনার বাড়ি কোথায়? আর কে কে আছে সংসারে?’
বন্ধ কলের মুখ হঠাৎ খুলে গেলে যেমন ফোয়ারার মত জল ছোটে, রমার অবস্থা আজ তেমনি।
‘এত প্রশ্ন একসাথে, বলছি। আমি মুর্শিদাবাদে থাকি, ঘরে মা বাপ, বৌ, ছেলে মেয়ে সবাই আছে। এখানে একতলার কারখানায় কাজ করি, একাই থাকি, যাই মাঝে মাঝে, আজ বড়দিনের ছুটি’।
গ্রাম্য অনাধুনিক অল্প শিক্ষিতা রমার মুখে আর কথা জোগায় না। মনের মধ্যে লালিত প্রশ্নগুলোর উত্তর তো সে পেয়েই গেছে।
তাই চুপ।
‘তা দাদা কোথায়? আপনি কত বছর ঐবাড়িতে? আপনার ছেলেমেয়ে কটি’
‘আমি সাত বছর এই বাড়িতে, আগে অন্য একখানে থাকতাম, ওনার দোকান, মুদি দোকান। আর ছেলেমেয়ে…..’
বিনা শব্দে দুদিকে মাথা নেড়ে জানিয়ে দেয়। প্রতিবেশীর হয়ত মায়া বা সংকোচ হয়। তাই কথা ঘুরিয়ে বলে ওঠে, ‘একদিন আসবেন গরীবখানায় দাদাকে নিয়ে। পাশাপাশি থাকি তো, আলাপ হবে, দরকার অদরকারে প্রতিবেশীরাই তো আত্মীয়, তাইনা?’
মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়৷ কত যুগ পরে আজ একজন মানুষের সাথে কথা হচ্ছে, বড় ভালো লাগছে আজ। মনে হচ্ছে পৃথিবীটা কত সুন্দর, এই ছাদ কত সুন্দর, এই বেঁচে থাকা কত সুন্দর।
তবে জগতের সব চিত্রনাট্য তো আরেকজনের হাতে থাকে। তিনি কলকাঠি নাড়ান ক্রমাগত, আমরাও বনে যাই কাঠের পুতুল। এত সুখ কি সহ্য হয়, কখন যে সুরেশ চলে এসেছে, কেউ তা খেয়াল করেনি। এসেছে হয়ত কিছু আগে, সব শুনেছে কি শোনেনি, তাই এবার গলা উঁচিয়ে স্বমূর্তিতে ‘ঝিয়ের বেটি ঝি, ছাদে দাঁড়িয়ে ছেনালি হচ্ছে অ্যাঁ? পরপুরুষের সাথে গপ্প মাড়াচ্ছ? চল্ নীচে, তোর ব্যবস্থা করছি’।
প্রতিবেশী হতবাক, স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি এরকম কিছুর জন্য। কিছু বলতে চাইল, কিন্তু বুঝতে পারল, একজন অভদ্র নরাধমকে সব কিছু বোঝান ভস্মে ঘি ঢালা।
কার কখন কিভাবে বোধোদয় হয়, সে বড় আশ্চর্যের। কোন অদৃশ্য যাদুকাঠির ছোঁয়ায় রমার মান অপমান বোধ হঠাৎ জেগে উঠল। চোখে আগুনবাস্প, গলায় চাপা হুঙ্কারে সুরেশের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘খবরদার, একটা বাজে কথা যদি আর বলেছ, এখুনি লোক ডাকব চেঁচিয়ে। আমি তোমার বিয়ে করা বৌ, দাসী নই। অনেক সহ্য করেছি, আর এতটুকু নয়’।
এই রমাকে চেনে না সুরেশ। এত গাল মন্দ যে কোন দিন গায় মাখেনা, মাথা নীচু করে সবকিছু মেনে নেয়, সারা দিন সংসারের কাজ করে মুখ বুঁজে, তার এহেন মূর্তিতে সুরেশ একটু ভয়ই পেয়ে গেল। কোন কথা সরল না মুখে।
কার্নিশে ভারসাম্য রেখে হেঁটে চলা বেড়ালটা একবার মুখ তুলে চাইল, কাক দুটো ইলেকটিক তারের উপর বসে ঘাড় উঁচু করে দেখলো, কাঠবিড়ালিটা চিলেকোঠার উপর একটু মুখ দেখিয়ে ভিতরে সিঁধোলো। অসময়ে ছাদে কোন নাটক চলছে নাকি প্রকৃতিতে কোন ছন্দপতন…
–~০০০XX০০০~–