সমান্তরাল
স্বাগতা ভট্টাচার্য
****************
মেঘসিঁড়ি পেরিয়ে মোহাচ্ছন্ন ঝর্ণা আর-
কুহেলি নদীর দেশে আজ তোমার নীরব নিমন্ত্রণ।
আকাশ নীলে অনন্ত বিস্ময়!…
তোমার শূন্য করতলে মৌন সন্তাপ! …
আমার দু’চোখে আশ্চর্য ঘুমঘোর।
উঁকি দিলাম তোমার মনের শূন্য খাঁচায়।
প্রাণপাখিটা বলে উঠলো,
“আলো দাও! আলো!….”
একটু ছায়া তরু!…
নিরুচ্চারে খুলে দিলাম বন্ধ দুয়ার।…
রুদ্ধ ডানা থেকে খসে পড়লো একটা-দুটো শ্বেত পালক।
সুগন্ধি চন্দনে চর্চিত করে,
সেই অবাঞ্ছিত প্রেম গুঁজে নিলাম এলো খোঁপায়।…
সাদা ক্যানভাসে সাতরঙের ইল্যুউশন।…
এক উদ্ভ্রান্ত হাতছানি!
গাছে গাছে পোখরাজ,
পাতায় পাতায় রক্ত প্রবাল,
আকাশে মেঘের গর্জন,
কণ্ঠে চাতকী’র তৃষ্ণা,
বিনিদ্র চোখে অন্তঃসলীলা ফল্গুধারা।…
অচরিতার্থ প্রেম খুঁজতে-
আবারো ডুব দিলাম অন্ধ পাতালে।….
পলেস্তারা খসা যাপিত জীবনে-
সুখের মখমল কিংবা ফুলের শয্যা নয়,
কাঁটা বিছানো রক্তাক্ত ছায়াপথ আর দুঃখের কলস উপচানো অবাঞ্ছিত রাত,
তোমার নিঃসীম চরাচর।
তোমার হৃদয় থেকে চুঁয়ে চুঁয়ে পড়ছে
বিষাদ কান্না।
আলো নেই, ছায়া নেই, বৃক্ষ নেই, নদী নেই।…
শুধুই ধূ ধূ বালির পাহাড়।…
তোমায় ভেবে ভেবে-
শ্রাবণ মেঘ বৃষ্টি ঝরালো কয়েক ফোঁটা।…
একটা আস্ত নদী বয়ে গেল কুল কুল।….
একটা কবিতা এঁকে দিলাম ওই ভেজা চোখের পাতায়,
প্লাবন এলো দু’কুল ছাপিয়ে।…
তুমি রুদ্র! তুমি অভিরূপ!
অহং তোমার হীরক দ্যুতি!…
কিন্তু অনর্থ হলো সেদিন।…
ঘুচে গেল আজন্মের নিরুচ্চার সাধনা।…
গাঢ় অন্ধকারে ওই প্লাবনে ভিজে গেল পাথরের মন।…
চোখে চোখে সহস্র সংলাপ।
ঠোঁটে ঠোঁটে গোধূলিবেলার মগ্নতা।…
সম্মুখে অবয়বহীন ছায়াপথ।
জ্যোতিসমুদ্র মাঝে ফুটে আছে সহস্র নীলকন্ঠ।
আমি চেয়ে আছি অপলক।
তোমার ভাবনায় যুগান্তের বিস্ময়।
আঁখিপটে অবেলার আলো।
তুমি হারিয়ে গেলে হৃদয়ের অন্তরালে।….
আমার ভুবনে আলোর স্পর্শ!
হৃদয়ে অলক্তরাগ!
পত্রলেখায় সীমন্তফাগ!…
নিজেকে নিংড়ে দিয়েছি ওই ভ্রষ্ট পথের বাঁকে।….
শেষ প্রহরের ক্লান্ত দেহটা,
তুমিও এলিয়ে দিয়েছো তোমার কবিতার আশ্চর্য বাগিচায়।…
কবিতার শরীর জুড়ে-
তুমি আমি পাশাপাশি শব্দ ছোঁয়ার অছিলায়।….
“বৃষ্টি-মেঘ-কান্না-নৈঃশব্দ্য”
সমান্তরাল নির্বাক অপেক্ষায়।….
–~০০০XX০০০~–