কথামালা
মহুয়া বন্দ্যোপাধ্যায়
আর বৃষ্টি হবে নাই বা কেন বলো?দেবযানীর রঙ্গনগাছে যে উপুড় ঝুপুর কুঁড়ি! জানালার পিছনে শিউলিগাছটা একমাত্তর ল্যাদ খাচ্ছে। বোধনের আগে পোয্যন্ত তিনি পাশবালিশ জাবড়ে ঘুমোবেন। পুজো এলে তখন নাইড্ডিউটি করে করে কুসুমে কুসুমে ছয়লাপ।
আর আরো খানিকটা পুবে গন্ধরাজ গাছ দুটো, একজন ফুল দেয় আরেকজনা নেবু। নেবুজনার আবার পাতাতেও সুবাস। দক্ষিণে বড়ো মেজো সেজো দেবদারু…ঝোড়ো হাওয়ায় তারা আদাব মুদ্রায়…বাদশার সুমুখে শির ঝুঁকিয়ে ঝুঁকিয়ে…
টিকিতে কাকের বাসা নিয়ে চাঁপাগাছটিও নাজেহাল।
কাল বিকেল থেকেই এই মুলুকে মকমকি। একসঙ্গে একসুরে সবার প্রেম পেয়েছে…রাতভর ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ… তারসপ্তক মন্দ্রসপ্তক…আরো কত কিছু আমি অতো জানিনে বাপু।
তো বলেনা যার কেউ নাই তার ভগমান আছে? দেবযানী জল দেয়নি বলে কি গাছেরা তেষ্টা বুকে মরবে নাকি? নাকি মরবে না খেয়ে? ঐ বুড়ো ফাদারের মতো ? বুড়ো ফাদার কিন্তু ভালোবেসেছিলো জল জঙ্গল পাহাড় ঝোরা আর খ্যাঁদা নাক, গালের হনু উঁচু ঐ মানুষগুলোকে। আরে ঐ যে গো যারা কাঠকুটো দিয়ে রাঁধে বাড়ে, মাটি খুঁড়ে কন্দমূল বের করে খায়, আর খায় বুনো খরগোশ, বনমোরগ। পাতায় ছাওয়া ঘরে ঘুমোয় আর জ্বর আর পেটের গোলমালে যখন তখন মরে যায়।
দেবযানীদের এখেনে সব শহুরে গাছ। ওদের পূর্বপুরুষ আত্মীয়কুটুমদের কেউ থাকে তরাইয়ে,কেউ উড়িষ্যার সমতলে কেউ বা আবার মানভূম বা মালভূমিঅঞ্চলে। সবাই বলাবলি করছে নিজেদের মধ্যে, আর হায় হায় করছে ,
___” আহা বুড়া ফাদারকে কেউরীর মায়া হল্য না গো! চুখে দ্যাখে না, চৈলত্যে ফিত্তে লাড়ে…হাঁত কাঁপে…জলের গেলাসও ধৈর্ত্যে লাড়ে উ। একটো সরুমতোন পাইপ দিলে না গো কেউ উয়কে জল খাত্যে! কত্য ভুখ আর তিয়াস লিয়ে উ মৈল্য বল্য দিকিনি?”
–~০০০XX০০০~–