পুরুলিয়ায় মাইকেল
পল্লব কুমার চট্টোপাধ্যায়
ভূমিকা
…………
আজ ২৯শে জুন মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের তিরোধান দিবস। তাঁর স্মৃতিবিজড়িত সাগরদাঁড়ি, কলকাতা, মাদ্রাজ, ফ্রান্স, ইংল্যাণ্ডের খবর অনেকেই রাখে, কিন্তু তাঁর হ্রস্ব জীবনের এক উল্লেখযোগ্য অধ্যায় যে বাংলার স্বল্পখ্যাত, ব্রাত্যই বলা যায়, মানভূম-পুরুলিয়ায় কেটেছে তার বিস্তারিত বিবরণ অনেকেই হয়ত জানেন না। বাতিঘরের সদস্যদের জ্ঞাতার্থে ও পুরুলিয়া-বিশেষজ্ঞ ও গবেষক শ্রী দিলীপকুমার গোস্বামীর ‘মানভূমে মাইকেল মধুসূদন’ বই থেকে তাঁর অনুমতিক্রমে কিছু তথ্য পেশ করছি।
পুরুলিয়ার পঞ্চকোট ভারতের অন্যতম প্রাচীনতম রাজবংশ। ৮০ খ্রীষ্টাব্দে মধ্যভারতের ধার রাজবংশের ভ্রমক্রমে পরিত্যক্ত ও মানভূমের ঝালদার কিছু আদিবাসী সর্দারদের হাতে পালিত সন্তান বয়ঃপ্রাপ্ত হয়ে দামোদরশেখর নাম নিয়ে শিখর রাজবংশের পত্তন করেন। একসময় এই বংশের রাজারা ‘সিং দেও’ উপাধি গ্রহণ করেন। তারপর দীর্ঘ ১৮০০ বছরে সাতবার রাজধানী পরিবর্তন হয়ে পঞ্চকোটের রাজধানী কাশীপুরে স্থানান্তরিত হবার পর তৎকালীন মহারাজা নীলমনি সিংদেওএর আমন্ত্রণে মাইকেল মধুসূদন আইনজ্ঞ ব্যারিস্টার হিসেবে এস্টেটের একটি মামলা লড়তে নিযুক্ত হন ও ১৮৭২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে দুই সপ্তাহের জন্যে একবার, তারপর মার্চে এসে প্রায় সাড়ে-পাঁচ মাস কাল পুরুলিয়ায় অতিবাহিত করেন। এরপর কলকাতা ফিরে তিনি আর বেশিদিন বাঁচেন নি, ১৮৭৩এর ২৯শে জুন প্রয়াত হন।
আমার এই রচনার উদ্দেশ্য কিন্তু মহাকবির পুরুলিয়া-বাসের বিশদ বিবরণ জানানো নয়, তাঁর এই ছয়মাস পুরুলিয়াবাসের কাল বাংলা সাহিত্যকে কিভাবে আর কতটা পুষ্ট করেছে সেটুকুই আমাদের আলোচ্য এখানে। এই সময়কালে কবি মোট সাতটি চতুর্দশপদী কবিতা বা সনেট লিখেছেন যা তাঁর একটি স্থানের উপরে লেখা সর্বাধিক। পুরুলিয়ার German Evangelic Lutheran Mission দ্বারা প্রতিষ্ঠিত GEL Church কবির প্রথম প্রবাসেই তাঁকে সম্মানিত করে ও খ্রীষ্টদাস নামে একটি যুবকের ধর্মান্তরণ বা ব্যাপ্টিজম অনুষ্ঠানে তাঁকে যুবকটির অন্যতম ধর্মপিতার (Godfather) দায়িত্ব নিতে বিশেষ অনুরোধ জানায়। এই সম্মানে অভিভূত হয়ে তিনি দু’টি কবিতা লেখেন- একটি পুরুলিয়ার উদ্দেশ্যে, অন্যটি সদ্য ধর্মান্তরিত ধর্মসন্তান খ্রীষ্টদাসের জন্য আশীর্বাণী-রূপে। এছাড়া ‘পরেশনাথ গিরি’ নামে তিনি একটি সনেট লেখেন যদিও পঞ্চকোট থেকে প্রায় ১০০ কিমি পশ্চিমে পরেশনাথ দূর থেকেও দৃশ্যমান হয় না, আর সেখানে যাত্রার কোন প্রামাণ্য তথ্যও পাওয়া যায় না। দ্বিতীয়বার পুরুলিয়ার স্থতিকালে তিনি আরও চারটি সনেট লেখেন। আগামীদিনে এই সনেটগুলি মুদ্রিত করে সেগুলির সম্বন্ধে সংক্ষেপে আলোচনা করার ইচ্ছে আছে।
…………
(এই গবেষণাধর্মী রচনাটির প্রসঙ্গে একালের একজন গদ্য ও পদ্যকার শ্যামাপ্রসাদ সরকার যিনি মাইকেলের একজন গুণগ্রাহী ও “প্রতিস্পর্ধী” এবং “মধুহীন কোকনদে” এইদুটি আখ্যানের লেখকও বটে, তাঁর ব্যক্তিগত অনুভূতি –
” মাইকেলের প্রবাসজীবনের বিড়ম্বনা গোলাম মুরশিদ তাঁর ‘আশার ছলনে ভুলি’ এই বইটিতে যতটা বিশদে লিখেছেন ততটা দেশীয় জীবন বিশেষতঃ খ্রীষ্টধর্মে এসে তিনি আর শুধু মধুসূদন নন বরং মাইকেল মধুসূদন! সে বিষয়ে ভাবীকাল ও তৎকাল দুইই নীরব।
পাইকপাড়ার রাজা শ্রীকন্ঠ সিংহ বা তাঁদের মাইকেলকে দেয় সম্বর্ধনাটি বা তৎসম্পর্কীয় বাবু কালীপ্রসন্ন সিংহের পানপাত্র উপহার দেওয়ার বিষয়টি যতটা আলোচিত ততটা কিন্তু অন্য দেশীয় রাজন্যবর্গদের কাছে পেশাগত পরিক্রমণের কাহিনী কিন্তু ইতিহাসে সুলভ নয়।
রাণী রাসমণির এস্টেটের কাজে এসে তিনি যে রামকৃষ্ণের মুখোমুখি হন সেটা অচিন্ত্যকুমার না লিখলে হয়ত কেউ জানতেই পারতো না।
সেইখান থেকে এই লেখা যথেষ্ট পরিশ্রমী ও সততার নিবন্ধনের জন্য আগামীর আয়ুষ্কালকে ছাড়িয়ে থেকে যাবে এটা নিশ্চিত।
বাঙালি আত্মঘাতী হলেও বোধহয় কষ্টকল্পিত অনাধ্যায়ী নয়। এটা বেঁচে থাকবেই। এ লেখা মধুচর্চায় আমাদের মক্ষিকার মত অমৃতহ্রদে ভাসতে সাহায্য করবেই।
দাদা, এজন্যই ফেবু আর এই দলগুলোকে কূর্ণিশ জানাচ্ছি। এ লেখা প্রকাশের সময় আমি গতবছর জুলাই মাসে ওই ফেসবুকের দলটিতে সভ্য বা অ-সভ্য কোনরকম বিশেষণ ছাড়াই অজ্ঞাতই ছিলাম।
এটা পড়িয়ে দেওয়ার জন্য নতজানু থাকলাম🙏
……….
(১)
পুরুলিয়া
……………
পাষাণময় যে দেশ, সে দেশে পড়িলে
বীজকুল, শস্য তথা কখন কি ফলে?
কিন্তু কত মনানন্দ তুমি মোরে দিলে,
হে পুরুল্যে! দেখাইয়া ভকত-মণ্ডলে!
শ্রীভ্রষ্ট সরস সম, হায়, তুমি ছিলে,
অজ্ঞান-তিমিরাচ্ছন্ন এ দূর জঙ্গলে;
এবে রাশি রাশি পদ্ম ফোটে তব জলে,
পরিমল-ধনে ধনী করিয়া অনিলে!
প্রভুর কী অনুগ্রহ! দেখ ভাবি মনে,
(কত ভাগ্যবান তুমি কব তা কাহারে?)
রাজাসন দিলা তিনি ভূপতিত জনে!
উজলিলা মুখ তব বঙ্গের সংসারে;
বাড়ুক সৌভাগ্য তব এ প্রার্থনা করি,
ভাসুক সভ্যতা-স্রোতে নিত্য তব তরী।
(* পুরুলিয়ার খ্রীষ্টান-মণ্ডলীকে লক্ষ্য করে লিখিত। কবি-রচিত চতুর্দশপদী কবিতাবলির এটি ১০৫ নং সনেট। পুরুলিয়ার German Evangelic Lutheran (G.E.L.) Mission সংস্থা প্রকাশিত ১৮৭২এর এপ্রিল সংখ্যা ‘জ্যোতিরিঙ্গন’ পত্রিকায় সনেটটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল।)
১৮৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সিভিল কোর্টে বাদীপক্ষের হয়ে একটি মামলা লড়তে কবি প্রথম পুরুলিয়া এসেছিলেন। সেই মাসেরই মাঝামাঝি পুরুলিয়ার খ্রীষ্টান সমাজ, যাঁরা মধুসূদনের কবি-খ্যাতি সম্বন্ধে বিশেষ সচেতন ছিলেন, কবিকে G.E.L. Church-এ একটি সম্বর্ধনা দেন। জীবনের গোধূলিবেলায় হতাশাগ্রস্ত জীবনে এই আশাতীত সম্মান কবির প্রাণে সঞ্জীবনী সুধার সঞ্চার করেছিল, কৃতজ্ঞতায় আপ্লুত হয়ে কবি সনেটটি রচনা করেছিলেন।
কবিতাটির ভাষা সরল, তবু কিছু ব্যাখ্যার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি। পুরুলিয়ার লৌকিক উচ্চারণ ‘পুরুল্যা’। এই শব্দের সংস্কৃতকৃত সম্বোধনে ‘পুরুল্যে’ – এই লৌকিক শব্দটি এক অলৌকিক মর্যাদা পেয়েছে। বাংলা সাহিত্যের একমাত্র মহাকাব্য রচয়িতা কবি (হেমচন্দ্রের ‘বৃত্রসংহার’ নিয়ে বিতর্ক আছে) শ্রীমধুসূদন এই কবিতায় নিজেকে ‘ভূপতিত জন’ বলেছেন। অতি ব্যক্তিগত অনুভবের এই প্রকাশ বিস্ময়কর। কবিতাটিতে পুরুলিয়াবাসীর প্রতি অজস্রধারে কবির শুভেচ্ছা ও আশীর্বাণী বর্ষিত হয়েছে, যা স্মরণ করে আজকের পুরুলিয়াবাসী অবশ্যই রোমাঞ্চিত হবেন।
প্রসঙ্গতঃ উল্লেখযোগ্য যে পুরুলিয়া যাত্রার সামান্য পূর্বে ১৮৭১ সালের সেপ্টেম্বরে কবি একটি মামলার কাজে ঢাকা যান। এই সুযোগে ঢাকাবাসী সাহিত্যপ্রেমী মানুষ কবিকে সম্বর্ধনা দিয়েছিলেন। খুশি হয়ে কবি লিখেছিলেন ঢাকাবাসীদের উদ্দেশ্যে একটি সনেট-
“নাহি পাই নাম তব বেদে কি পুরাণে
কিন্তু বঙ্গ-অলঙ্কার তুমি যে তা জানি
পূর্ব-বঙ্গে।……”
বঙ্গভূষণ কবির চরণধুলিতে ঢাকা শহর পবিত্র হয়েছিল। এবার বঙ্গের প্রত্যন্তপ্রদেশের অবহেলিত উপেক্ষিত পুরুলিয়া সেই গৌরবের অধিকারী হল।
…….
পুরুলিয়ায় মাইকেল।
(২)
‘পরেশনাথ গিরি’
…………………..
হেরি দূরে ঊর্দ্ধ্বশিরঃ তোমার গগনে, *
অচল, চিত্রিত পটে জীমূত যেমতি।
ব্যোমকেশ তুমি কি হে, (এই ভাবি মনে)
মজি তপে, ধরেছ ও পাষাণ মূরতি?
এ হেন ভীষণ কায়া কার বিশ্বজনে?
তবে যদি নহ তুমি দেব উমাপতি,
কহ, কোন্ রাজবীর তপোব্রতে ব্রতী-
খচিত শিলার বর্ম্মকুসুম-রতনে
তোমার? যে হর-শিরে শশীকলা হাসে,
সে হর কিরীটরূপে তব পুণ্য শিরে
চিরবাসী, যেন বাঁধা চিরপ্রেমপাশে!
হেরিলে তোমায় মনে পড়ে ফাল্গুনিরে
সেবিলে বীরেশ যবে পাশুপত আশে
ইন্দ্রকীল নীলচূড়ে দেব ধূর্জ্জটিরে।
(*- লক্ষ্যণীয় যে বাংলা বানান সংশোধনের আগে লেখা বলে প্রাচীন রীতি- যেমন ঊর্দ্ধ্ব, বর্ম্ম, ধূর্জ্জটি লেখা হয়েছে।)
পটচিত্রে আঁকা মেঘমালার মত দূরে উচ্চশৃঙ্গ একটি পর্বত দেখলাম (কবি মধুসূদন ১৮৭২এর ফেব্রুয়ারিতে প্রথমবার পুরুলিয়া আসেন বরাকর-পুরুলিয়া রোড ধরে। এই রাস্তা থেকে পরেশনাথ পর্বতের ন্যূনতম রৈখিক দূরত্ব প্রায় ৮০ কিলোমিটার। আজকের দিনে আকাশ পরিষ্কার না থাকলে পর্বতশৃঙ্গ এতদূর থেকে দেখা যায় না, তবে সে যুগে এত ধুলো-ধোঁয়া বাড়ি-ঘর না থাকাতে হয়ত সেটা সম্ভব হয়েছিল। হয়ত ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় ঐতিহ্য পাহাড়টির সঙ্গে সম্পৃক্ত বলেই কবি এর সম্পর্কে এত আনুকূল্য় দেখিয়েছেন। কবির দেওয়া নাম ‘পরেশনাথ গিরি’ না হলে যে কোন পাহাড় সম্পর্কেই কবিতাটি প্রযোজ্য হতে পারত।)। তুমি কি মহাদেব, তপস্যার প্রভাবে পাষাণমূর্তি ধরেছ? এই পৃথিবীতে তোমার মত ভীষণমূর্তি আর কারো নেই। তুমি যদি শিব না হও, তবে তুমি কোন তপস্যারত রাজবীর? কুসুম-রতনে শোভিত তোমার অঙ্গে শিলার বর্ম কেন? শিবের মাথায় চন্দ্রকলা শোভা পায়, সেই মহেশ তোমার মস্তকে শোভিত হচ্ছেন। এ উভয়ের শাশ্বত বন্ধন। তৃতীয় পাণ্ডব অর্জুন পাশুপত অস্ত্র লাভের জন্যে হিমালয়ের ইন্দ্রকীল গিরিশৃঙ্গে সাধনা করেছিলেন, তোমাকে দেখলে এই রূপটি স্মরণে আসে।
এটি কবির সনেটমালার ১০৬ সংখ্যক সনেট, সেক্সপীয়ারীয় ও পেত্রার্কীয় রীতির সংমিশ্রণে এটি গঠিত।
………
(৩)
‘কবির ধর্ম্মপুত্র’ (শ্রীমান খ্রীষ্টদাস সিংহ)
হে পুত্র, পবিত্রতর জনম গৃহিলা
আজি তুমি, করি স্নান যর্দ্দনের নীরে
সুন্দর মন্দির এক আনন্দে নির্ম্মিলা
পবিত্রাত্মা বাস হেতু ও তব শরীরে;
সৌরভ কুসুমে যথা, আসে যবে ফিরে
বসন্ত, হিমান্তকালে। কি ধন পাইলা-
কি অমূল্য ধন বাছা, বুঝিবে অচিরে,
দৈববলে বলী তুমি, শুন হে, হইলা!
পরম সৌভাগ্য তব। ধর্ম্ম বর্ম্ম ধরি
পাপ-রূপ রিপু নাশো এ জীবন-স্থলে
বিজয়-পতাকা তুলি রথের উপরি;
বিজয় কুমার সেই, লোকে যারে বলে
খ্রীষ্টদাস, লভো নাম, আশীর্বাদ করি,
জনক জননী সহ, প্রেম কুতূহলে।
২৫শে ফেব্রুয়ারি ১৮৭২, G.E.L. Church-এ কবি মধুসূদন স্থানীয় কাঙালিচরণ সিংহের পুত্র কৃষ্ণদাসের ধর্মান্তরণ(baptism) অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়ে ধর্মপিতা(God Father) হিসাবে দায়িত্ব-পালনকালে এই সনেটটি উপহার দেন। কবির সাথে আরো একজন ধর্মপিতা ছিলেন ধর্মপ্রকাশ সাগর ও ধর্মমাতা কৃষ্টপ্রসন্ন সাগর। গির্জার রেকর্ড অনুযায়ী কৃষ্ণদাসের বাড়ি ছিল Chorea গ্রাম, সম্ভবতঃ সেটি পুরুলিয়া-সংলগ্ন ছড়রা হবে।
কবির নিজের জীবনে ধর্মান্তরণ মোটেই সুখকর অভিজ্ঞতা ছিল না। পিতা রাজনারায়ণ দত্ত ও মাতা জাহ্নবী দেবীর জীবন এই ধর্মান্তরকরণের ফলে দুর্বিষহ হয়ে ছিল, সাজানো সংসার তছনছ হয়ে যায়। তাঁরা উন্মাদবৎ হয়ে প্রয়াত হয়েছিলেন। তাই ধর্মপুত্র খ্রীষ্টদাসকে তিনি আশীর্বাদ দিচ্ছেন পিতামাতার সাথে প্রেমময় জীবন উপভোগ করার।
জেরুজালেম ও ইস্রায়েলে প্রবাহিত পবিত্র যর্দনের (জর্ডন নদীর) জলে প্রভু যিশুর জন দি ব্যাপ্টিস্ট দ্বারা ধর্মগ্রহণ হয়। তার পরবর্তী যে কেউ খ্রীষ্টকে গ্রহণ করতে চায় তাকে জর্ডনে স্নান বা তার পবিত্র জল শরীরে ছিটিয়ে ব্যাপ্টাইজ করা হয়। কবি খ্রীষ্টদাসের উদ্দেশ্যে লিখছেন যে তাকেও এভাবে খ্রীষ্টের সঙ্গে একাঙ্গীভূত করা হল। পবিত্র আত্মাকে ধারণের জন্যে সে যেন দেহমধ্যে এক মন্দির তৈরি করল, যেন শীতের শেষে ফুলের সৌরভ প্রকৃতিতে ফিরে এল। সৌভাগ্যক্রমে কী ধন সে পেয়েছে তা সে অচিরেই বুঝবে। তাকে কবি আশীর্বাদ করছেন যেন এই ধর্মের বর্ম পরে সে পাপ-রূপী রিপুর নাশ করে জীবনযুদ্ধে বিজয় লাভ করে পিতামাতা নিয়ে সুখে জীবন কাটায়।
সনেটটির ক্রম ১০৭, ১৮৭২ নভেম্বর সংখ্যা জ্যোতিরিঙ্গন পত্রিকায় এর প্রথম প্রকাশ।
……….
(৪)
পঞ্চকোট গিরি
কাটিলা মহেন্দ্র মর্ত্ত্যে বজ্র প্রহরণে
পর্ব্বতকুলের পাখা; কিন্তু হীনগতি
সেজন্য নহ হে তুমি, জানি আমি মনে,
পঞ্চকোট ! রয়েছ যে,- লঙ্কায় যেমতি
কুম্ভকর্ণ,- রক্ষ, নর, বানরের রণে-
শূন্যপ্রাণ, শূন্যবল, তবু ভীমাকৃতি,-
রয়েছ যে পড়ে হেথা, অন্য সে কারণে।
কোথায় সে রাজলক্ষ্মী, যাঁর স্বর্ণ-জ্যোতি
উজ্জ্বলিত মুখ তব? যথা অস্তাচলে
দিনান্তে ভানুর কান্তি। তেয়াগি তোমায়
গিয়াছেন দূরে দেবী, তেঁই হে! এ স্থলে,
মনোদুঃখে মৌন ভাব তোমার; কে পারে
বুঝিতে কী শোকানল ও হৃদয়ে জ্বলে?
মণিহারা ফণী তুমি রয়েছ আঁধারে।
পঞ্চকোট পাহাড়ের তলদেশে শিখরবংশের তৃতীয় রাজধানী ৯৬২ খ্রীঃ থেকে ১৭৫০ পর্যন্ত প্রায় ৮০০ বছর ধরে বিরাজিত ছিল। তারপর আভ্যন্তরীণ গৃহবিবাদের ফলে রাজবংশ প্রায় সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়, বালক রাজপুত্র মণিলাল রাজভক্ত এক রাজকর্মচারীর সাহায্যে প্রাণে বাঁচেন। মণিলাল বয়ঃপ্রাপ্ত হয়ে রাজ্য পুনরুদ্ধার করে মহারাজনগর, রামবনি, কেশরগড় হয়ে ১৮৩২ সালে কাশীপুরে রাজধানী স্থানান্তরিত করেন।
মাইকেল মধুসূদন দত্ত ১৮৭২ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে পুরুলিয়ার সেশন কোর্টে একটি মামলা লড়তে বাদীপক্ষের আইনিজীবী হয়ে পুরুলিয়া আসেন। সেসময় মহারাজা নীলমণি সিংদেও কাশীপুরে শিখরবংশী শাসক ছিলেন। তিনি মাইকেলের সুখ্যাতি শুনে কলকাতায় লোক পাঠিয়ে তাঁর একটি মামলার পরামর্শ দিতে আইন-উপদেষ্টা করে কাশীপুরে আমন্ত্রণ জানান। কবি সেসময় ঋণভারে জর্জরিত, জীবনযুদ্ধে প্রায় পরাজিত হতোদ্যম। এই অপ্রত্যাশিত আমন্ত্রণে হতাশাগ্রস্ত কবির জীবনে নতুন প্রাণের সঞ্চার হয়, আর্থিক সমস্যারও সাময়িক সুরাহা হয়। তিনি ১৮৭২এর মার্চের মাঝামাঝি সময়ে কাশীপুর রাজসভায় এসে কাজে যোগদান করেন। অকস্মাৎ এই ভাগ্য পরিবর্তনে উচ্ছ্বসিত কবি এসেই পঞ্চকোট রাজ্যের ইতিহাস নিয়ে অধ্যয়ন করলেন, আর এই রাজ্যের গৃহদেবতার বা রক্ষক-প্রহরীর মত শায়িত পঞ্চকোট গিরিকে দেখে মুগ্ধ হয়ে এই সনেটটি লিখলেন। এটি ১০৮ নং সনেট, পুরুলিয়া বিষয়ে কবির চতুর্থ যদিও রচনার সঠিক তারিখের কোনও উল্লেখ নেই।
যদিও কবির হতাশ ভাব তখনও তাঁকে পশ্চাদ্ধাবন করে চলেছে, এই সনেটে তা প্রচ্ছন্ন, প্রকট নয়। তাঁর প্রতি কাব্যে, সাহিত্যে ধ্রুপদী সাহিত্যের প্রতি তাঁর জ্ঞান আর আকর্ষণের প্রমাণ দেখা যায়। পুরাণের মতে পর্বতের এককালে পাখা থাকত, তারা উড়তে পারত। ইন্দ্রদেব তাই সব পর্বতের পাখা কেটে ফেলেন। রবীন্দ্রনাথের পংক্তি- ‘পর্বত চাহিল হতে বৈশাখের নিরুদ্দেশ মেঘ’, হয়ত এখানে প্রাসঙ্গিক নয়, তবে হিমালয়-পুত্র মৈনাক যে সেই ভয়েই যে সমুদ্রের গর্ভে আশ্রয় নেয় তা পুরাণে আছে। তবে কি সুপ্ত কুম্ভকর্ণের মত বিশাল পঞ্চকোট সেই কারণেই হীনবল আজ? কবির বক্তব্য, তা সত্য নয়। পঞ্চকোট একদা রাজলক্ষ্মীর স্বর্ণজ্যোতিতে উজ্জ্বল হত। সেই লক্ষ্মী পঞ্চকোটকে পরিত্যাগ করেছে বলেই তার আজ এই ম্লান দশা, মনোদুঃখে সে মৌন হয়েছে, মণিহারা নাগের মত একাকী অন্ধকারে বিরাজ করছে। তার হৃদয়ের শোকানল প্রবল দহন সৃষ্টি করেছে, একথা কেউ বুঝতে পারছে না।
……
(৫)
পঞ্চকোটস্য রাজশ্রী
হেরিনু রমারে আমি নিশার স্বপনে;
হাঁটু গাড়ি হাতী দুটি শুঁড়ে শুঁড়ে ধরে-
পদ্মাসন উজলিত শতরত্ন-করে,
দুই মেঘরাশি-মাঝে, শোভিছে অম্বরে,
রবির পরিধি যেন। রূপের কিরণে
আলো করি দশ দিশ; হেরিনু নয়নে,
সে কমলাসন-মাঝে ভুলাতে শঙ্করে
রাজরাজেশ্বরী, যেন কৈলাশ-সদনে।
কহিলা বাগ্দেবী দাসে (জননী যেমতি
অবোধ শিশুরে দীক্ষা দেন প্রেমাদরে),
“বিবিধ আছিল পুণ্য তোর জন্মান্তরে,
তেঁই দেখা দিলা তোরে আজি হৈমবতী
যেরূপে করেন বাস চির রাজ-ঘরে
পঞ্চকোট;- পঞ্চকোট- ওই গিরিপতি।”
পঞ্চকোটের গৌরবময় ইতিহাসের কাহিনী শ্রীমধুসূদনের কবি মনে এক রোমান্টিসিজমে ঘেরা কল্পলোক তৈরি করেছিল। কাশীপুরের স্বল্পসময়ের বাসেও তিনি যেন শয়নে-জাগরণে স্বপ্নের মত সেই অতীতকে মনশ্চক্ষে প্রত্যক্ষ করতেন। এই সনেটের মধ্যেও একটি উৎকৃষ্ট কবিকল্পনা আছে। পঞ্চকোট রাজবংশের আরাধ্যা দেবী রাজরাজেশ্বরী কবিকে যেন রাজ্যের প্রাচীন গৌরবময় কোন এক মুহূর্তসহ দেখা দিয়েছেন।
কবি ‘নিশার স্বপন’ কথাটির এখানে উল্লেখ করেছেন। তবে আমার মনে হয় নব বর্ষার মেঘমালায় ঈষৎ আচ্ছন্ন পঞ্চকোট শীর্ষকে কাশীপুর বা তার নিকটবর্তী কোন স্থান থেকে প্রত্যক্ষ করে কবির মনে এই অদ্ভুত ভাবের সমাবেশ হয়। কালিদাসের ‘মেঘদূতম্’ কাব্যে বর্ণিত আছে এরকম একটি মুহূর্ত-
‘আষাঢ়স্য প্রথমদিবসে মেঘমাশ্লিষ্টসানুং।
বপ্রক্রীড়া পরিণতং গজপ্রেক্ষনীয়ং দদর্শ।।’
এই বপ্রক্রীড়া সাধারণ মানুষের মনে তেমন কোন ভাবের সঞ্চার না করলেও, কবির রোমান্টিক মনে তার গভীর প্রভাব ফেলতেই পারে। শোনা যায় কবি ওয়ার্ডসওয়ার্থ থেকে আমাদের পরমপুরুষ শ্রীরামকৃষ্ণ পর্যন্ত এধরণের অলৌকিক সৌন্দর্য দেখে ভাব-সমাহিত হতেন। আর মধু-কবি এই মেঘময় হস্তীযূথের শুঁড়ে শুঁড় মিলিয়ে খেলার মাঝে ভাববিভোর হয়ে প্রত্যক্ষ করলেন দেবী লক্ষ্মীকে। মহেশের রূপে সাক্ষাৎ মূর্ত গিরিপতি পঞ্চকোট পর্বতের কোলে তিনি বিরাজিত। মেঘরাশির মাঝে দূর আকাশে তাঁর রূপমাধুরী শোভা পাচ্ছে, তাঁর রূপে দশদিক আলোকিত। পঞ্চকোট-রাজ্যের আরাধ্যা দেবী রাজরাজেশ্বরী রূপ নিয়ে দেবী হৈমবতী ভোলানাথ শঙ্করের মনোলোভনের জন্যে যেন কৈলাসে উপস্থিত আর কবির জন্ম-জন্মান্তরের অর্জিত অসীম পুণ্যবলে তাঁর মানসপটে এই দৃশ্য আজ ধরা পড়েছে।
এই কবিতাটি ১১০ নং সনেটরূপে প্রকাশিত।
……..
(৬)
পঞ্চকোট-গিরি বিদায় সঙ্গীত।
হেরেছিনু, গিরিবর! নিশার স্বপনে,
অদ্ভূত দর্শন!
হাঁটু গাড়ি হাতী দুটি শুঁড়ে শুঁড়ে ধরে,
কনক-আসন এক, দীপ্ত রত্ন-করে
দ্বিতীয় তপন!
সেই রাজকুলখ্যাতি তুমি দিয়াছিলা,
সেই রাজকুললক্ষ্মী দাসে দেখা দিলা,
শোভি সে আসন!
হে সখে! পাষাণ তুমি, তবু তব মনে
ভাবরূপ উৎস, জানি উঠে সর্ব্বক্ষণে।
ভেবেছিনু, গিরিবর! রমার প্রসাদে,
তাঁর দয়াবলে,
ভাঙা গড় গড়াইব, জলপূর্ণ করি
জলশূন্য পরিখায়; ধনুর্ব্বাণ ধরি দ্বারিগণ
আবার রক্ষিবে দ্বার অতি কুতূহলে।
কাব্য বিচারে এটি সনেট নয়, সনেট-কল্প কবিতা।
মহাকবি মাইকেল মধুসূদন পুরুলিয়ার কাশীপুরে পঞ্চকোট মহারাজার নীলমণি সিংদেওয়ের রাজসভায় সম্মাননীয় রাজকর্মচারী হিসাবে দায়িত্ব পেয়েছিলেন। ১৮৭২ খ্রীষ্টাব্দের মার্চ থেকে প্রায় সাড়ে পাঁচ মাসকাল তিনি সেখানে অবস্থান করেন। এই সময় কবি অবসরকালে পঞ্চকোট ইতিহাসের সম্যক চর্চা করেন। পঞ্চকোটের গৌরবগাথা শুনে তাঁর মনে তৈরি হয় এক কল্পলোক। ইতিহাসের উজ্জ্বল কালের যে খণ্ডগুলি কবির মনে রেখে গেছে গভীর প্রভাব, শয়নে-স্বপনে সেই কল্পলোকের হাতছানি তাঁর মনোভূমে দোলা দেয়। এক নিশীথে অদ্ভূত এক দৃশ্যপট কবির সামনে মূর্ত হয়। পঞ্চকোট পর্বতের পশ্চাদ্পটে দুটি হাতি যেন শুঁড়ে শুঁড়ে ধরাধরি করে রাজসিংহাসনে উপবিষ্টা রাজলক্ষ্মীর সম্মুখে বসে রয়েছে, রাজ্যের কুললক্ষ্মী দেবী রাজরাজেশ্বরী যেন অসীম করুণা-বশে কবির মনশ্চক্ষে ধরা দিয়েছেন।
এই কয়েকমাসের মধ্যে এই পঞ্চকোট পাহাড়, এই রাজ্য কবির সঙ্গে যে সখ্যতার সম্পর্ক গড়ে তুলেছিল, কবির মনে তাদের সান্নিধ্য নানা ভাবের উৎস ছিল। তিনি আজ তাদের বিদায় জানাচ্ছেন। কবির স্বপ্ন ছিল পঞ্চকোটের গৌরবময় ইতিহাসকে আবার স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠিত করবেন। রাজগড় নতুন করে গড়াবেন, ১২ বর্গমাইল ব্যাপ্ত রাজধানীর তিনদিক ঘিরে যে পরিখা ছিল সেগুলিকে আবার জলপূর্ণ করবেন। রাজধানীতে চারধারে চারটি তোরণ ছিল- দুয়ারবাঁধ, বাজার মহল দুয়ার, খড়িবাড়ি দুয়ার আর আঁখ দুয়ার- তিনি কল্পনা করছেন ওই তোরণগুলির সামনে ধনুর্বাণ নিয়ে দ্বারীরা পাহারা দেবে।
কিন্তু বাস্তব অতি নির্মম। কঠিন বাস্তব এসে স্বপ্নকে আঘাত করে, কল্পলোক চুরমার হয়ে যায়। তবু কবির এই স্বল্পকালের প্রবাসে তিনি তিনটি কবিতায় পঞ্চকোটের কালজয়ী মহিমাকে কাব্যে অমর করে রেখেছেন, মহিমান্বিত করেছেন এখানকার মাটি, বাতাস, পাহাড়, জল, আকাশ ও মানুষকে। এই গৌরব পুরুলিয়ার, পঞ্চকোট রাজ্যের। এই ভূমিখণ্ড তাঁর লেখনীর জাদুস্পর্শে চিরজীবি হয়ে থাকে।
……..
(৭)
হতাশা-পীড়িত হৃদয়ের দুঃখধ্বনি।
ভেবেছিনু মোর ভাগ্য, হে রমাসুন্দরি,
নিবাইবে সে রোষাগ্নি,-লোকে যাহা বলে,
হ্রাসিতে বাণীর রূপ তব মনে জ্বলে;-
ভেবেছিনু, হায়! দেখি, ভ্রান্তিভাব ধরি!
ডুবাইছ, দেখিতেছি, ক্রমে এই তরী
অদয়ে, অতল দুঃখ সাগরের জলে
ডুবিনু; কি যশঃ তব হবে বঙ্গ-স্থলে?
এটিও সনেট নয়, একটি সনেটকল্প কবিতা। এতে কবি মধুসূদনের বিড়ম্বিত জীবনের যন্ত্রনাময় ছবি প্রতিভাত হয়েছে। শেষ জীবনে প্রায় ঋণভারে জর্জরিত কপর্দকশূন্য অবস্থায় কবি কাশীপুর মহারাজা নীলমণি সিংদেওএর এস্টেটে আইন-উপদেষ্টা হিসেবে যোগ দেন। সেখানে একজন ব্যারিস্টার রূপে তাঁকে এস্টেটের জটিল মামলাগুলি দেখতে হত। এমনি একটি মামলায় মহারাজ কলকাতা হাইকোর্টে পরাজিত হন। আইনের চোখে রাজার তরফে কেসটি দুর্বল ছিল, তাই আপ্রাণ চেষ্টা করেও মধুসূদন মামলা জেতাতে পারেন না। এতে রাজার আত্মসম্মানে আঘাত লাগে যার ফলস্বরূপ কবিকে চাকরি খুইয়ে পঞ্চকোট রাজ্য ছাড়তে হয়। এই চাকরিকে ঘিরে কবির অনেক প্রত্যাশা ছিল যে তিনি ঋণমুক্ত হয়ে আবার সম্মানের জীবনে ফিরে যেতে পারবেন। ভাগ্যদোষে সে স্বপ্ন তাঁর পূরণ হল না।
এই কবিতাটি সাত পংক্তির, আমার মনে হয় এটি অসম্পূর্ণ, কেমন যেন মধ্যখান থেকে শুরু হয়েছে। গঠনে এটি একেবারে সনেটের মত। হয়ত এটি একটি পরিপূর্ণ সনেট ছিল যার প্রথম সাতটি চরণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। অবশ্য কবির হতাশা অবশিষ্ট সাত পংক্তিতেই পরিস্ফুট। বেশ বোঝা যায় লক্ষ্মীর সঙ্গে বাণী অর্থাৎ সরস্বতীর বিবাদ নিয়ে কবিতার শুরু। কবি মনে করছেন, যেহেতু তিনি বাণীর সাধনা করেন মানে কাব্যরচনা করেন, ধনের অধিষ্ঠাত্রী দেবী রমা (লক্ষ্মী) তাঁর প্রতি চিরকাল রুষ্ট, জীবনে তিনি কোনদিনই লক্ষ্মীর কৃপা পান নি। তবে কাশীপুরের চাকরি আর রাজ-অনুগ্রহ পেয়ে তাঁর মনে আশা হয়েছিল এবার হয়ত সেই রোষ শান্ত হবে, ভাগ্যের অনুগ্রহে তাঁর জীবনজুড়ে নেমে আসা বিপর্যয়ের অন্ত হবে। কিন্তু তা হয়নি, কবির ভাগ্যতরী দুঃখের সাগরজলে নিমজ্জিত হল। এই বঙ্গভূমিতে যাঁর প্রাপ্য ছিল অসীম যশ ও মর্যাদা, সেই মহাকবির জীবনে ঘনিয়ে এল দুর্বিপাক। তিনি যশ তো পেলেন না, স্বস্তিও পেলেন না।
–~০০০XX০০০~–
(কৃতজ্ঞতা – অবসর পত্রিকা)