দাবানল
ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায়
অঞ্জলি পুকুর ঘাট থেকে ভিজে কাপড়ে বাড়ির দিকে আসছে।দীনু র বৌ বললে “রান্না করবি কখন?বেলা যে গড়িয়ে যায়।”
অঞ্জলি বললে “উনোনে কুচো কাঠের উতো দিয়ে ঠিক ভাতে ভাত করে নেবো।কতক্ষণ যাবে কাকীমা”।
দীনুর বৌ বললে “দুকুরের খাওয়া।ভাতে ভাত ক্যানে লা।সকাল থেকে কী করছিলি শুনি।বুড়ি শাউরি একবেলা ভাত খাবে।এটুনি মাছ তো রাঁদবি।”
অঞ্জলি বিরক্ত হয়।এই স্বভাব।ঘোঁট পাকানো।সব জেনে বুঝে ন্যাকামি।তবু মুখে হাসি রেখে উত্তর দেয় অঞ্জলি।বলে “আসি গো কাকীমা।বড়ো বেলা হয়ে গেছে।ভিজে কাপড়ে থাকলে আবার সর্দি হবে।বড় সর্দির ধাত।”
বাড়িতে এসে তাড়াতাড়ি করে কাপড় ছাড়লো অঞ্জলি।এককোণে বসে আছে শাউরি।বললে “বৌ।জয়দেব কে ওরা ধরে নিয়ে গেল।ক্যানে ধরলে।তুই কিছু জানিস বৌ”।
অঞ্জলি আর চুপ থাকতে পারে না।চোখ দিয়ে জল ঝরতেই থাকে।বলে “মা গো।গরীব হলে বিরাট দোষ।ছোট মাথাতে দোষ চাপানো সোজা।”
অঞ্জলির শাশুড়ি রেবা।ছেলে বাড়িতে নেই।তাই সকাল থেকে দাঁতে কুটোটি কাটেনি।বললে “বৌ।আমার ভাগ্যিটাই খারাপ।জয়দেব এর বাপকে বাঘে খেল।কালীপুজো এলেই আমার বুক ধড়ফড় করে।মানুষ টা কাঁকড়ার শিক নিয়ে সেই বেরোলো।আর ঘরে এলো না”।
অঞ্জলি একথা অনেক বার শুনেছে।হা হুতাশ করেছে।তবে আজ অন্য চিন্তা।তাড়াতাড়ি দুটো রেঁদেবেড়ে পঞ্চায়েত এ যেতে হবে।বললে “আজ মানভাতে দিয়ে দুটো ভাত খেয়ে নাও।কী আর করা যাবে।এদ্দিন মানুষ শুনেছে বাঘে গরুতে জল খায়।আর এই সোঁদরবনে মানুষ বাঘে একঘাটে জল খায়।”
শাশুড়ি বলে “বাঘের হাত থেকে শুধু,আর ওই মানুষ রূপী বাঘগুলো।ওরা তো হাড় বজ্জাত।আমার জয়দেব কে নৈলে ফাঁসায়”।
অঞ্জলি অগ্নিশর্মা হয়ে ওঠে।বলে “হ্যাঁ।ফাঁসাচ্ছি।যাহোক একটা বানিয়ে বলে দিলেই হল।আমরা গরীব মানুষ।বনের মধু,কাঠ সংগ্ৰহ করে দিনপাত করি।এই হোগলা পাতায় ছাওয়া কুটির আমাদের সগ্গো।ভাতে নুন জুটলেই অমিত্তি।বলে কিনা আমরা বনে আগুন ধরাই।বললেই হল।প্রমান লাগতে নেই।”।
শাশুড়ি কিছু টা আশাণ্বিত হয় বৌ এর উগ্ৰ রূপে।বলে “তুই দুটো খেয়ে যা।ছেলেটাকে ঘরে আন।ও না থাকলে আমাদের পেটের আগুন নেভাবে কে”?
অঞ্জলি পঞ্চায়েতে গেল।দেখলে সেখানে কার্তিক মন্ডলের বৌ আছে।প্রধান বলল “তোদের মরদরা বনে আগুন লাগায়”।
গর্জে উঠল অঞ্জলি।বললে “কতা খুঁজে পেলেন নি।রাঘব বোয়ালদের আড়াল করতে আমাদের হেনস্থা।”
প্রধান দেখলে এ যেন একটা বাঘিনী।বললে “ঠিক আছে।দেখছি কী করা যায়”।
অঞ্জলি বলে “কী করবেন আপনারা।আমরা তো মরা ই।নতুন করে মরবো না।মামলা ঠুকুন আমাদের নামে।মাছ ধরার পাস পারমিট কেড়ে নেন।তারপর ও দেখবেন দাউ দাউ করে জ্বলছে আগুন।”
অঞ্জলির সাথে যোগ দেয় কার্তিক এর বৌ।বলে “আপনারা তো বখরা পান লাভের।সেসবের বিচার আদালতে ই হবে।এখন ই আমাদের মরদদের ছেড়ে দিন।নৈলে অনর্থ বাঁধাবো”।
প্রধান রাখহরি ভয় পেয়ে গেল মেয়েমানুষের এই সামান্য কথাতেই।কথায় আছে “রতনে রতন চেনে শুয়োরে চেনে কচু”।পান খাওয়া দাঁত বার করে বললে “দেখছি কী করা যায়”।
অঞ্জলি বললে “সন্ধ্যের আগে মরদ ঘরে না গেলে আমিও দেখিয়ে দেবো কত ধানে কত চাল।আসল অপরাধীদের আড়াল করার চেষ্টা।সে যুগ আর নেই গো।”
গজগজ করতে করতে বাড়ি ফিরছে অঞ্জলি আর মাধু।মাধুর পেটে বাচ্ছা।এই শরীরে ছুটে এসেছে।বিদ্যাধরী নদীর তীর ধরে ওরা আসতে লাগলো।মাধু বললে “নদীর ধারে একটু বসবি বেলফুল।বড় ক্লান্তি লাগে।”
এরা দুজনে স’ই।বিয়ে হয়েছে প্রায় এক ই সময়ে।গরমকালে যখন উঠোনের গাছে বেলফুল হয়েছিল তখন মাধু অঞ্জলির হাতে বেলফুল দিয়ে স’ই পাতিয়েছে।অভাবের মধ্যেও এরা চেষ্টা করে বাঁচবার রসদ খুঁজতে।
নদীতে কত ডিঙি নৌকা।একটা গাছের নীচে বসলো দুজন।অঞ্জলি বললে “তোর আঁচলে কি”?
মাধু কান পর্যন্ত হাসে।বলে “খাবি স’ই।মুড়ি আর গুড়ের বাতাসা আছে”
অঞ্জলি বলে “খাবো না আবার।সকাল থেকে ভালো করে খাই নি।এই পশুগুলো বন্য জন্তুর থেকেও ভয়ঙ্কর।ওরা আমাদের পেটে লাতি মারে।নিজেদের আখের গুছায়।”
দুজনে মুড়ি বাতাসা খায়।মাধু বলে “ওই দ্যাখ।আর্জান মোল্লা গান গাইছে।”
অঞ্জলি হাসে।বলে আর্জান চাচার গান মনকে উদাস করে দেয়।তুই জানিস।ওই গানকে কী গান বলে।”
“কী বলে রে” মাধু চোখ বড় বড় করে জিজ্ঞেস করে।
অঞ্জলি বলে “ও গান ভাটিয়ালি”।
মাধু বলে “ও বুঝেছি।নদী নালার দেশ তো।ভাটা থেকে ভাটিয়ালি”।
“হ্যাঁ রে মাধু।কর্তা বলে ভাটায় মাঝি মাল্লাদের দাঁড় বাইতে হয় না।তখন উদাত্ত সুরে গান গায়।তাই ভাটিয়ালি।”বলেই উদাসীন হয়ে যায়।
আর্জান মোল্লা ওদের দেখতে পেয়েছে।বলে “বেটিছাওয়ারা নদীর ধারে কেন?”
অঞ্জলি বলে “ডিঙিটা নোঙর করে একখানা গান শোনাও না চাচা।”
আর্জান চাচা স্নিগ্ধ শান্ত মানুষ।বললে “বেশ তো।তোমাদের দেহতত্ত্বের গান শোনাবো আজ।”
অঞ্জলি আর মাধুর কাছে গামছা পেতে বসে চাচা।ওরা দুজন একমনে শোনে গান।
“দেহতরী দিলাম ছাইড়া গুরু
তোমার নামে।
আমি যদি ডুবে মরি
কলঙ্ক তোমার নামে”
গানে কী সুর।কী মাদকতা।তন্ময় হয়ে যায় অঞ্জলি।বড়ো আবেগপ্রবণ মেয়ে।চোখ দিয়ে টপটপ করে জল ঝরতে থাকে।
সন্ধ্যের আগেই জয়দেব বাড়িতে উপস্থিত।দাওয়ায় বসে মা এর সাথে গল্প করছে ও।বললে “এখেনে আর থাকবো না।বড়ো নাকাল হতে হয়।আয় উপায় নেই।হাঁড়িতে জল ফোটে তো চাল ফোটে না।নেতাদের ফাঁকা বুলি ভোটের আগে।তারপর ফক্কা”।
অঞ্জলি চা করে শাউরি আর কর্তাকে দিল।বললে “সরকার থেকে দু টেকা কেজি চাল তো দেয়।
আর রেশন দুকানের মালিক গরীব গুলো কে হাতে কেজি প্রতি দশটেকা গুঁজে দিয়ে চাল হাপিস হয়ে যায়।আবার এরাই বড় বড় কতা কয়।আর দেশ ছেড়ে কুতায় যাবে?এখানে তো মাটির টান।”
জয়দেব আজ খুব অপমানিত হয়েছে।এই শীতকাল এলেই যত গেরো ফাঁড়া।হতাশ সুর ওর গলায়।বলল “আমি রাইস মিলে কাজ পেয়েছি।ওখানে তুদের নিয়ে চলে যাবো।মিলের শ্রমিক দের থাকতে ঘর দেবে বাবুরা।ওরা জেতে আগুরি।”
অঞ্জলির কান্না আসে।রাতের আঁধারে জয়দেব কে জড়িয়ে ধরে বলে “কোথায় যাবো।এখেনেই ঠিক থাকবো।আচ্ছা।খামোখা তুমাকে ওরা সন্দেহ করে ধরে নিয়ে গেল ক্যান।আমার বুদ্ধিতে কুলায় না।”
জয়দেব ম্লান হাসে।বলে “উদের একটা চক্কর আছে।শীতকালে খাল শুকিয়ে গেলে উরা হাঁটু জলে খাল পার হয়।হরিণের মাংস অনেক দামে বিক্রি করে।প্রচুর টেকা।”
শীতের সকালে কুয়াশা।রেবা মুড়ো ঝেঁটাটা নিয়ে উঠোন আর বাড়ির চারপাশ ঝাঁট দেয়।কটা বাচ্ছা ছেলেকে এমনভাবে চাদর বেঁধে দিয়েছে যে হাত দুটো বার করতেই পারবে না।নেড়ি কুত্তাটা লেজ নাড়ায়।মাটির সরায় গোবর আর মাটির মিশ্রনে ঘরে ন্যাতা দেয় অঞ্জলি।শাউরির ঘরের চালে লকলক করছে পুঁইশাক।মনে মনে ঠিক করে আজ পুঁইশাক দিয়ে মুসুরডাল রাঁধবো।শাউরি হাঁসগুলো কে খোল থেকে ছেড়ে দিতে ই ওরা কুটির গাদায় মুখ ঘষে।খোল থেকে দশটা ডিম বার করেছে।
কার্তিক এর বাড়িতে থাকতে মন চায় নি।মাধুকে সাথে নিয়ে সকালেই হাজির।অঞ্জলি কে ডেকে বললে “বৌঠান।আয় উপায় এই শীতকালে একদম বন্ধ।তোমার বেলফুল কে কদিন এখেনে রেখে দেও।পোয়াতি মানুষ কে একা রেখে কোতা যাবো।তুমার কাছে মাধুকে কদিন রাখো।আমি ক্যানিং যাওয়া আসা করি কয়েকটা দিন”।
অভাবের সংসারে আরো একটা মানুষ এর প্রবেশ ঘটে।তবু হাসিমুখে বেলফুল কে জড়িয়ে ধরে অঞ্জলি।আজ বড়ো হাঁড়িতে ভাত বসেছে।জয়দেব বললে “কার্তিক এখানে খেয়ে নিবি।”
এর মধ্যেই আর্জান চাচা হাজির বললে “আমিও খাবো”।
হাতে করে এনেছে এক কাঁদি ডাব আর ট্যাংরা মাছ”।
বললে “ফকির দরবেশ মানুষ।কাজার নামাজ পড়ে এলাম মা জননীর হাতে আজ খাবো”।
দীনুর বৌ উঁকিঝুঁকি দিয়ে দেখে গেছে জয়দেব দের বাড়িতে যেন উৎসব চলছে।ওদের রেশন দোকান।আরো কতশত ব্যবসা ওদের।তবু অঞ্জলি কে হিংসে করে।সেদিন শিউলিকে বলেছে “বাঘবিধবার ছেলের বৌ এর দেমাক দেখলে বাঁচি না।খাস তো বাসি পান্তা।”
শিউলির মুখে একথা শুনেছে অঞ্জলি।বলেছে “শাউরিকে বাঘবিধবা বলছে ওরা ।একতাটা খুব অসহ্য।”
মাধুর সাথে রেবা গল্পে মেতে থাকে।বলে যায় তার বিগত জীবনের কাহিনী।বলে “মাধু রে। মানুষ সব স’ইতি পারে।তবে ভালোবাসা হারিয়ে গেছে যার সে বাঁচে কি করে।কোলের ছাওয়াল রেখে যার স্বামী গেল বাঘের প্যাটে।কত অদিন অসময় আসছে।ছাওয়াল কে শাপলা সিদ্ধ করে বড়ো করেছি।তবু আজ ও মনের ভিতরিটা উথাল পা তাল করে।যদি একবার সে আসতো।রেবা বলি ডাকতো।”
মাধু স্তব্ধ হয়ে শোনে।রেবা বলে যায় হারানো জীবনের কথা।বলে “সেদিন তবে খুব বৃষ্টি পড়তেছিল।আমি ক’ইলাম কাঁকড়া ধরে কাজ নেই।নদীতে যাবা।আকাশ এর গতিক ভালো না।তা শুনলি না কর্তা আমার কতা।বললে বাড়িত বসে থাকলি হা ত মুখে উঠবা না।আমি অত সাধলাম।”
এতক্ষণে অঞ্জলি ও কাজ সেরে যোগ দিয়েছে।রেবা বলে “কার্তিকের বাপ হরিপদ আর শিউলির খুড়ো ধনাই সাথে ছিল।আর বর্ষাকালে ই তো কটা টেকা আয়।মাছটা বেশি পড়ে।”
তারপর খাল পেরিয়ে বড় নদীতে সেই যেখানে বঙ্গোপসাগর সেহানে বনে ঢুকলো।বাঘে ওর শ্বাসনালী টা বার করে নদীর জলে ফেললে হরিপদ আর ধনাই ওর নিথর দেহটা আনলে।গোটা গেরামের মানুষ হাহাকার করলে।আহা করলে।আর আমি হলেম বাঘবিধবা”।
রেবার কথায় চোখের জল বাগ মানে না কারো।সবাই চোখ মোছে।আর ঠিক সেইসময় দীনুর বৌ আসে।বলে “কী করছিস লা।এ মাগী আবার কে লা অঞ্জলি”।
অঞ্জলি যেন তৈরি হয়েই ছিল।বললে “কীসব ভাষা কাকীমা।ও আমার বেলফুল।আর বাঘবিধবার বাড়ি কী মনে করে।”
দীনুর বৌ হতচকিত হয়ে যায়।ভাবতেই পারেনি এমন উত্তর পাবে।নকল হাসি মুখে টেনে বললে “কাল জয়দেব কে কখন ছাড়লে?একটু চিন্তা তে ছিলাম কিনা।তাই খপরটা নিতে এলুম”।
অঞ্জলি বললে “ছেড়ে দেছে।বললে ওরা ভুল করে ওকে অপরাধী ভেবেছে।আসলে ওরা সরকারী চালচোরদের খুঁজছে।”
দীনুর বৌ হাঁ হয়ে গেল।সরকারের চাল ওরাই চুরি করে।বললে “আসি বৌ।পরে আসবো খনে ।”বলেই ধড়ফড় করে উঠে পালায়।
অঞ্জলি মনে মনে বলে “ঘুঘু দেখেছো বাছা,ফাঁদ দেখো নি।”
কথাটা দীনুর কানে গেছে।প্রথমে বাড়িতে কিছু টা তর্জন গর্জন করলেও পরে বিপদের আশঙ্কাতে থেমে গেছে ।বৌ কে বললে “ওদের নিয়ে বেশি কথা বলতি যাস নি।জয়দেব এর বৌ খতরনাক।সামশেরপুরে ওর বাপের দ্যাশ।সোঁদরবনের নাড়ি নক্ষত্র ও চেনে।”
দীনুর কথাটা মিথ্যে নয়।অঞ্জলি সোঁদরবনের অনেক কিছুই জানে।মাধুকে বলে “চল মাধু।একটু নদীর কাছে যাই।ওখানে আর্জান কাকা মাছ দেবে।চারকোদা মাছ আর লছি মাছ রাঁদবো।আর চাচাকে বলবো চাচা গান করো শুনি।”
মাধুর বাপের বাড়ি হাওড়াতে।রাণীহাটিতে ওর ভাই থাকে।এ বনকে ও চেনে না।তবে নিস্তব্ধ সৌন্দর্য ওকে বড় টানে ।কার্তিক কে ভালোবেসে বিয়ে করেছে ও।
ভোরের আগে দুই মরদে বেরিয়ে গেছে।অঞ্জলি বলে “কখন আসবা।”
জয়দেব বলে” বাড়িতে এসে খা বো।ভালো করে রাঁদবি।আমরা জাল কিনবো।কাছি লাগবে।আর বঁড়শি কিনবো।”
অঞ্জলি বলে “বঁড়শি নিলে দশ কি বারো নম্বর বঁড়শি কিনবা।”
কার্তিক হাসে।বলে “বৌঠান দেখি সব জানে”।
অঞ্জলি ওদের চা মুড়ি দেয়।রেবা বলে এঁটো বাসন আমি মাজতাছি।আজ ন্যাতা দিস লাই বৌ।আকাশ নলপায়।”
“ঘরদোরে ঝাঁট ওরা যাবার আগেই দেছি গো মা।”মাধু হেসে বলে।অঞ্জলি বলে “তোকে কে ঝাঁট দিতে বলল শুনি”?মাধু হাসে।বলে” বৃষ্টি আসবে শুনে কাঠগুলো চালায় তুলেছি”।
অঞ্জলি খিলখিল করে হাসে।বলে “বৃষ্টি আসতে বিকাল”।
মাধু অবাক হয়।কী করে বেলফুল সব বুঝতে পারে প্রকৃতি কে।
ওরা বেরোবে ।নদীর মাছ চাই।আর্জান চাচা দেবে।ঠিক সেই সময় শিউলি হাজির।বললে “আমিও যাবো তুমাদের সাথে”।
অঞ্জলি বলে “তুই এতক্ষণ কী করছিলি?”
“হাঁড়িয়া বানালাম।বাপু হাটে নে যাবে বুধবার।”
মাধুর চোখ কপালে।বলে “হাঁড়িয়া তো মদ।তুমি বানাতে পারো!”
অঞ্জলি বলে “খুব সুজা।গরম ভাত গুটা গুটা থাকতে ঠান্ডা জল ঢেলে দিতে হবে।তারপর নেশাগুলি মিশিয়ে তিনদিন রাখলেই খাসা মদ।এক গ্লাস কুড়ি টেকা”।
তিনজনে নদীর তীরে দাঁড়িয়ে।আর্জান চাচা বললে “ডিঙা বাইবা?”
তিনজনে ডিঙাতে উঠলো।চাচা বললে “আজ আমার সাথে তুমরা বিটি ছাওয়া রা গলা মেলাও দিনি”।
তারপর শুরু হল গান
“সুন্দর সুন্দর কথা শোনো
সুন্দর বনের মানুষ
জলে কুমীর কামট আছে
গাঙে ভরা মাছ।
পাতার আড়ে বাঘের চোখ
হরিণের নাচ”
আর্জান চাচা অনেক মাছ দিয়েছে আজ।অঞ্জলি বললে “শিউলি কটা মাছ নে।ভোলা মাছ।আর বৌমা মাছ”
মাধু কখনো বৌমা মাছের নাম ই শোনেনি হাসতে থাকে ও।আর্জান বলে “জয়দেব আর কার্তিক মাছ ধরবে ।বলেছে চাচা।আমাদের নৌকা নেই।তুমারটা দেও।আমি বললেম তা নাও ক্যানে।দুজনে মিলি খাটো ।আয় উপার্জন করো।আমি ফকির বাউল ।সংসার নাই।”
অঞ্জলি পুলকিত হয়।চাচা ডিঙা নোঙর করে এগিয়ে আসে ওদের সাথেই।হঠাৎ এক সুদর্শন এর আবির্ভাব।চাচার দিকে তাকিয়ে বলে “আর্জান চাচা কেমন আছেন”?
অঞ্জলি তাকিয়ে থাকে।বয়সটা পঞ্চাশ পেরিয়েছে বোধ হয়।আর্জান হেসে বলে “হ্যাঁ বাবু।আল্লাহ র কৃপায় চলে যাচ্ছে”।
ভদ্রলোক হাসতে হাসতে চলে গেলে অঞ্জলি বলে “ও কে গো চাচা।এই চত্বরে আগে দেখি নি তো”!
চাচা হাসে।নির্মল সে হাসি।বলে “উনি বনবিভাগের অফিসার ।এই কলসা ইউনিটের সর্বেসর্বা।”
অঞ্জলি অবাক হয়।বলে “কী কাজ ওর।নতুন এয়েছে?”
চাচা বলে চলে “এই একমাস হল এয়েছে ।জেলেদের মাছ ধরার পাস পারমিট দেওয়া,বনভূমি তে অপকর্ম বন্ধ করা ওর কাজ।”
বাড়িতে ফিরে মনের আনন্দে রান্না চাপায় অঞ্জলি।মাধু মাছ বেছে আনে।চিংড়ি দিয়ে ডাল রান্না হচ্ছে।পলতা পাতার বড়া।ভোলা মাছের তেলঝাল।অঞ্জলি বললে “তোমাকে মরিচ আনতে সকালে পয়সা দিলাম।আনো নি মা?”
রেবা গম্ভীর হয়ে থাকে।অঞ্জলি বলে “কী হল তোমার।কতার উত্তর দাও না কেনি?”
রেবা বলে “সকালে দুকান গেছি।ওরা বললে অপয়া অলুক্ষুণেকে দে ব’উনি করলে দুকান লাটে উটবে”।
কথাটা শুনে অঞ্জলির হৃদয় ভারাক্রান্ত হয়ে যায়।কী নিষ্ঠুর এই সমাজ।
আজ খাওয়া দাওয়া মিটতে বড়ো দেরি হয়ে গেল।জয়দেব আর কার্তিক আসতে একটা বাজলো।একটু জিরিয়ে স্নান করে এল ওরা।সবাই তৃপ্তি করে খেল।ওরা কত কী কিনেছে।
রেবা রেডিও চালিয়ে খবর শোনে।মৎস্যজীবী দের নদীতে যাওয়া মানা।রেবা দাওয়া থেকে চেঁচায়।”রান্না বসিয়ে দে বৌ।ঝড় আসছে ঝড়।বাদুলে বাতাস জ্বালিয়ে খাবে।কুপিতে কেরোসিন দে রাখ।আমি হাঁস,মুরগী তুলি।”
অঞ্জলি বলে “চিংড়ি ডাল আছে।ওবলার ভোলা মাছ আছে।শুধু আলুভাতে আর ভাত রাঁদবো”।
মাধু বলে “আমি চাপ্পে দিচ্ছি।”
এইসময় আর্জান চাচা এল।বললে “আমার চাল নিস।”
চাচা সবার জন্য চপ ভাজা এনেছে বললে “সবাই মুড়ি খাও ।মাধু রে।চা খাওয়া।”
অঞ্জলির হৃদয়ে ঢেউ খেলে যায়।অসীম আনন্দে ভাবতে থাকে খিদের দাবানল কী নিভতে চলেছে তবে!
জয়দেব আর কার্তিকের সাথে কী সব আলোচনা করলে আর্জান চাচা।তারপর বলল “পারমিট আমি জোগাড় করে দেবো।নতুন অফিসার ভালো মানুষ।আমি বললে না করবে না”।
নতুন অফিসার কে অঞ্জলি দেখেছে।বললে “সে আমি মুখ দেখেই ধরেছি ।মনিষ্যির মুখ কিন্তু আয়না।”
আর্জান বলে “সে না হয় হল বেটি।তুই কী অফিসার কে রান্না করে দিতে পারবি?”
অঞ্জলি আকাশ থেকে পড়ে।বলে “তা কী করে সম্ভব।কখন যাবো?”
আর্জান হাসে।বলে “তোকে যেতে হবে নে।আমি খাবার টা দে আসবো।তুই শুধু রেঁদে দিবি।একা থাকে।ঠিক করে খা ওয়া হয় না।”
অঞ্জলি চুপ করে থাকে।জয়দেব বলে “খরচাপাতি দিলে অসুবিধা কি”?
অঞ্জলি বলে “তাই হবে”।
আর্জান বলে “টাকা পয়সা নিয়ে ভাবতে হবে না”।
পরের দিন অঞ্জলি বললে “বেলফুল।চল।মেলা দেখতে যাবো”
শিউলি ছুটে আসে ।বলে “আমিও যাবো।আজ বাপু হাটে যাবে না।হাঁড়িয়া যা তৈরি হচ্ছে সব দীনুকাকার বাড়িতে যাবে”।
অঞ্জলির মুখে যেন বিদ্যুৎ খেলে যায়।একটা পথের হদিশ পেয়েছে যেন।
কলসের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে মণি নদী।ওখানে বনের চরে বাঘুৎ দেবতার মেলা।ওরা তিনজন যাবে আর্জান চাচার সাথে।
বাঁধা গরু ছাড়া পেলে যেমন লাফাতে থাকে ওদের অবস্থা তাই।কত পুঁতি র মালা আর আলতাপাতা কিনলে।কিনলে কুলো,ঝেঁটা আর যত তৈজস।বনমেলা তিনটি হৃদয়কে রাঙিয়ে দিয়েছে।
অফিসার আনন্দময় শিকদার মণি নদীর তীরে দাঁড়িয়ে আছে।নদীর মতোই বহমান এ জীবন।স্ত্রীর সাথে মনোমালিন্য ছিল চিরদিনের।জটিল মনের অধিকারী ছিল স্ত্রী সুদেষ্ণা।একমাত্র কন্যাকে ফেলে রেখে পাড়ি দিল প্রেমিক এর সাথে।আর কন্যারত্ন নিয়ে সুখের জীবনে বাধ সাধলেন ঈশ্বর।সেও ছ’মাস হল পরলোকে পাড়ি দিয়েছে।সেদিন আর্জান চাচার সাথে একটা মেয়েকে দেখেছিল।মনে হল মেয়েটা আবার এখানে ফিরে এসেছে।এইসব ভাবতে ভাবতে চশমার কাচ ঝাপসা হয়ে আসে।
হঠাৎ সম্বিত আসে আর্জান চাচার ডাকে।বলে “বাবু।কেমন আছেন গো।আপনগোর খাওয়ার কোনো ঝক্কি নেই।সব আমার এই বিটি ছাওয়া করবে।”
অঞ্জলি কে দেখে খুব খুশি অফিসার।বললে “ভালো থাকিস মা।মঙ্গলময় মঙ্গল করুক।”
বাড়ি ফিরে গৃহকাজে ব্যস্ত অঞ্জলি।কাল সজনেখালিতে মহারাজ এর কাছে যাবে ও।মেলায় মহারাজ কে দেখে পেন্নাম করেছে অঞ্জলি।মহারাজ আত্মস্থানন্দ ভারত সেবাশ্রম সংঘের কাজ করেন।অঞ্জলিকে বললেন “তোকে কোথায় যেন দেখেছি?”
অঞ্জলি বলে “কলসার গেরামে গো ঠাকুর।সেই যেবারে কম্বল দান করলে শাউরিরে”।
মহারাজ বলেন “তোর শ্বশুর কী বাঘের আক্রমণে গেছে”?
অঞ্জলি সায় দিলে মহারাজ বলেন “কাল আশ্রমে শাশুড়ি কে নিয়ে আসবি।দশ হাজার টাকা পাবে”।
সজনেখালিতে শাশুড়িকে নিয়ে গেল অঞ্জলি।মাধুকে বলে গেল “আমি এসে রান্না করবো বেলফুল।এই শরীলে তুই কাজ করতে যাসনি”।এদিকে জয়দেব আর কার্তিক বড় কাছির গায়ে গায়ে বঁড়শি বাঁধছে।মাধু বলে “এই কাছি জলে কখন পাতবা”।
কার্তিক হেসে বলে “জোয়ার দুবার আসে।পেতে দিলে প্রচুর মাছ।তুকে মাছ খাইয়ে আলা করে দেবো”।
অঞ্জলি দেখেছে মণি নদীর পাশের খালে ফান্দ পাতা।ওই এলাকাটা খুব নির্জন।কীসের ফান্দ ওগুলো।কী ধরে।কালো কালো সুতো খুঁটিতে আটকানো ।
শাশুড়ি টেকা পেয়েছে।বললে “বৌ।তুই নে টেকা।আমারে শুধু পাঁচশ টেকা দে।দুক্তা খেতে টেকা লাগে।আর চাইমু না এখন।”
অঞ্জলি বলে “তুমার টেকা তুমার ই।এখন মাছ ব্যবসাতে লাগাবো।পরে ফেরত দেমো”।
বাড়ি ফিরতে এগারোটা বেজে গেল।মাধু ভাত করেছে।অঞ্জলি বললে “মাধু রে।অফিস বাবুকে ভাত দেতে হবে টাইমে।ওরা বাবু নোক।দেরি করে খেলে অসুখ হয়।তুই উনোনে উতো দে ।সজনেখালিতে কত বাজার।শিম আর বিলিতি বেগুন এনিচি।বড়ি দিয়ে রাঁদবো।”
মাধু বড় বড় চোখ করে বলে “ওখানে অনেক পাখি আছে।কত লোক বেড়াতে আসে।”
অঞ্জলি বলে “এই সোঁদরবন আমাদের মা।আমাদের প্যাটে অন্ন জোগায়।এই শীতে প্রচুর পাখি আসে।কোথাকার কোন দ্যাশের পাখি”।
বলেই অঞ্জলি হাসতে থাকে।মাধু বলে “বেলফুল।আর্জান চাচা বলছিল ওগুলো না কি পরিযায়ী পাখি।ওগুলো মারতে নেই।এই পকিতি মা এর খেতি হয়।দ্যাশের আইন বলে উকথা।ধরা পড়ি গেলে জেল জরিমানা”।
অঞ্জলি বলে “আইনের চোখে ধুলো ছোঁড়ে পাজি পাঝাড়ার দল।এতক্ষণে বুঝেছি ওই কালো সুতো আসলে ফান্দ।পাখি ধরে উড়া।মাংস বিক্রি করে।”
রান্না এগোতে থাকে।মাছ গুলো ভাজতে দিয়ে জল আনতে গেল অঞ্জলি।দেখলে দীনু কাকার বাড়িতে লুঙ্গি শুকোচ্ছে।অবাক হয় অঞ্জলি।কী রকম যেন একটা রহস্যগন্ধ।লুঙ্গির রঙটা সবুজ আর হলুদের মিশেল।এমন ধরণ তো দেখেনি আগে।তবে কী!!!
জয়দেব কে বলতে হবে।চেঁচিয়ে বলল “বেলফুল।সরষে বাটি রাখছি।মাছ ভাজা হয়ে গেলে সরষে বাটা জলে ছেঁকে দে।লঙ্কা চিরে দে।”
মাধু বলে “জল টা দে যা।তুই কুতা যাচ্ছিস।বাবু মানুষ খাবে।আমি কি তুর মতো রান্দতে পারি?বাবু খাবে।নিন্দে করবে।বলবা কোন হারামজাদি তে রেন্ধেছে”।
মাধুর কথায় অঞ্জলি হাসতে থাকে।রেবা বলে “আমি দেখতেসি”।
অঞ্জলি গুগলি ছাড়িয়ে নিল কিছুটা।হাঁসবাচ্ছা গুলো কে খাওয়াবে।মাধু বলে “ক’টা হাঁসবাচ্ছা উটেছে।মুরগির ছানা ক’টা?”
অঞ্জলি বলে”মুরগীটা কোঁরক নিলে।হাঁসের ডিম বসিয়েছিলাম।দশটা হাঁসবাচ্ছা আর পাঁচটা মুরগী বাচ্ছা।”
বলেই গুগলি গুলো নিয়ে খোলের কাছে গেল।আর তারপর ই হাঁউমাউ করে কেঁদে উঠলো অঞ্জলি।জয়দেব রেগে গেল।বলে “কী হয়েছে কী?কান্দিস কেনি?”
অঞ্জলি বলে “একটা ছানাও নেই।চুরি হয়ে গেছে”।
জয়দেব বলে “ভামবেড়ালে নে গেছে তাইলে”।
অঞ্জলির কান্না দ্বিগুণ হয়।বললে “খোলের দরজা যেমনকার বন্ধ।কেউ চুরি করেছে।”
জয়দেব বললে ‘”আজব চিড়িয়াখানা।কে নিলে রে”?
অঞ্জলি কাঁদতে থাকে।ওর দেখা দেখি রেবাও কাঁদে।ছোটো ছোটো মানুষের ছোট্ট আশাগুলো কারা এসে নষ্ট করে দেয়।কেন করে?কী আদিম সুখ পায় তারা।বনের ভেতর আগুন লাগলে তাকে দাবানল বলে।আর যখন ইচ্ছে করে আগুন লাগায় কেউ।অঞ্জলি ভাবে কত কী।আগুন এর কত প্রকার।খিদের আগুন, লোভের আগুন, কামের আগুন আবার বনের আগুন।ভাবতে ভাবতে তার গন্ডদেশ ভেসে যায়।মনে মনে ডাকে “হে ঈশ্বর।তুমি কী নেই।আমাদের চোখের জলে তোমার চরণ কী ভেজে না?কী আছে মুদের।চোখের জল ফেলি তুমাকে ডাকি”।
জয়দেব বলে “এমনি করে হাঁস মুরগির শোক করবি তো বাবুকে খাবার দিবি ক্যামনে।আর্জান চাচা নুরুল কে দিয়ে বলে পাট্টেছে ওর শরীর ভালো নয়।জ্বর হৈছে।আমি জালের কাজ করতাসি।তুই যা।খাবার দে আয়।ভাল্লাগে না এমন”।
মাধু বলে “শিউলি রে একবার আয়।বেলফুল এর সাথে বাংলোতে যা।বাবুকে খাবার দে আয়”।
শিউলি আর অঞ্জলি খাবার নিয়ে যায়।আনন্দবাবু অঞ্জলিকে দেখে ছুটে আসেন।বলেন “তুই আমার হারিয়ে যাওয়া মেয়ে।তা তোর মুখটা এত শুকনো কেন রে”?
অঞ্জলি ভাত বেড়ে দেয়।বলে যায় হাঁসের বৃত্তান্ত।
আনন্দ বাবু বলেন “এই কথা।কেউ বালিহাঁস ধরবে বলে ফান্দ পেতেছে।দ্যাখ গে”।
আনন্দবাবু বলেন “এই নে।দশ হাজার করে মাসে দেবো।দুবেলা খাবার টা দিয়ে যাবি।তোর মুখখানি তে খুব মায়া।”
অঞ্জলি অবাক হয়ে যায়।ভাগ্যদেবী তবে মুখ তুলে চাইছেক।
অঞ্জলি ভাত দিলে খেতে বসেন আনন্দবাবু।অঞ্জলি বলে চলে “মণি নদীর সাথে যে খাল উখানে ফান্দ পাতে কালো সুতো দিয়ে।আমি দেখেছি।”
আনন্দবাবু চমকে ওঠেন।বলেন “ঠিক দেখেছিস।আমি মণি নদীতে তল্লাশি চালিয়েছি।তবে খালে যাই নি।খবর আছে পরিযায়ী পাখি ধরছে অসাধু মৎস্যজীবী।তাহলে খেয়েই বের হতে হবে।”
বিকালে দীনুকাকার বাড়িতে কত লোক।শিউলি এসে খবর দিলে ওদের বালিহাঁস রান্না হচ্ছে।অঞ্জলি বললে “তাইলে বোঝা গেল কারা হাঁসচুরি করেছে।”
আনন্দবাবু আজ সদলবলে মণি নদীর খালের কাছে ওৎ পেতেছেন।সশস্ত্র বাহিনী প্রস্তুত।
হঠাৎ দেখলেন শীতকালে র হাঁটুজল খাল পেরিয়ে জঙলা ছাপেল লুঙ্গি পরা মানুষ গুলো।মুখ ঢাকা।একজন বললে “জয়দেব এর বৌ কে একদিন খুন করবো।ও মাগী বড্ড বেড়েছে।”
অপরজন বললে “তোমাকে কাকা কয়। ওকি কথা।”
আনন্দবাবু দেখলেন ওরা আগুন লাগাচ্ছে বনে।পরে বলবে দাবানল।এক ঢিলে দুই পাখি।
আগুন লাগানোর সাথে সাথেই অ্যারেস্ট হল ওরা”।দু দুটো কেস।বনদস্যু এরা”।
পরের দিন খবরের কাগজে বেড়িয়ে গেল সুন্দরবনের গ্ৰাম্য বধূ বনদস্যু দের হদিশ দিয়েছে।আনন্দবাবুর চেষ্টা তে বনদপ্তর দু লক্ষ টাকা পুরস্কার দিয়েছে অঞ্জলিকে।আর হাঁসচোর দীনুর বৌ বাঘবিধবার বাড়িতে হন্যে হয়ে ছুটছে।
অঞ্জলি এখন শুধু অপেক্ষা করছে মাধুর সন্তান পৃথিবীতে আসার।ওর বেলফুল এর ছেলে মানে ওর ও ছেলে।
–~০০০X(সমাপ্ত)X০০০~–