গান নিয়ে কিছু কথা
-: পর্ণা চক্রবর্তী :-
মারের সাগর পাড়ি দেবো…
রবিঠাকুরের জনপ্রিয় একটি গান। যে গানে তাঁর জীবনদর্শনের আলোকিত প্রতিফলন ঘটেছে।
রবীন্দ্রনাথ… যিনি সারাজীবন ধরে
বহু ভাবে ,বহু রূপে প্রত্যক্ষ করেছেন মৃত্য কে। তাঁর অতি প্রিয় মানুষদের
অকালে চলে যাওয়া,জীবন চলার পথে নানান ধরণের সমস্যা তাঁকে ক্ষত বিক্ষত করেছে বহুবার।
ঈশ্বরময় ,আলোকময় এক জীবন দর্শনের জন্য তিনি পেরেছেন অনন্ত ,অসীম বোধের সাথে নিজেকে যুক্ত রাখতে। তাই তিনি আহত হয়েও ,পরিশ্রান্ত হয়েও আবার উঠে দাঁড়িয়েছেন,পথ চলেছেন নিজের ছন্দে থেমে থাকেনি নি কোনো সময়।এই ঈশ্বর বোধ তিনি লাভ করেছেন , নানান দুঃখ কষ্টের সাথে লড়াই করে , এক গভীর সাধনার মধ্য দিয়ে। তাই তিনি realized এক অবস্থা। যিনি অনুভব করছেন সেই অমৃতময়ের অস্তিত্ব কে। সেই বোধের প্রকাশ কবির প্রায় প্রতিটি রচনায়,বিশেষ করে কবিতা,গান প্রবন্ধে।
মার…জগৎসৃষ্টির সাথে সাথে তৈরি হয়েছিল মার এর জগৎ।
শুভের সাথে অশুভের। এক অতীব নেতিবাচক অবস্থা,যা মানুষকে বিপথ গামী করে, তমসাবৃত করে রাখে তার চেতনা আর বোধ কে। সেই মার …
নানা রূপে,লোভ হিংসা ক্রোধ,ইর্ষা …
নিয়ে দাপিয়ে বেড়ায় চারপাশে।
এক ভয়ংকর “আমি” যাকে চিনেছিলেন রবীন্দ্রনাথ খুব ভালো করে।সেই মার ঝড় ঝঞ্ঝার মতো আছড়ে পড়ে মানুষ কে দিকভ্রান্ত করে তোলে।
এই ভবসাগর একদিক থেকে মারের সাগর ও বটে।ভয়ে ভাঙ্গা এই নায়ে ,অর্থাৎ শরীর ভয়ে জর্জরিত।সেই ভাঙা শরীর মন নিয়ে সমস্ত প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করে তিনি এই জীবনসমুদ্র পাড়ি দিয়েছেন। তার প্রতিকূল পরিস্থিতি কে তিনি ছেঁড়া পালের সাথে তুলনা করেছেন। কিন্তু মনে তাঁর অখন্ড ,অটল বিশ্বাস পরমের প্রতি। তাই তার কোনো ভয় নেই,
দ্বিধা নেই।
মারের সাগর হলো অহঙ্কারের সাগর।তাই এই সাগর অতিক্রম করতে পারলে তিনি অহং মুক্ত হয়ে পৌঁছবেন সোহমে।
ঈশ্বর যিনি ভক্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ,তিনি স্বয়ং সেই ভক্তকে রাস্তা দেখাবেন।
অহংকারে মগ্ন থেকে ,অজ্ঞানতার অন্ধকারে ডুবে থেকে যে যাতনা ,দুঃখ তিনি ভোগ করেছেন ,সেই যাতনা থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য কঠিন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে সোহমে পৌঁছতে হবে। সেই সোহম প্রাপ্ত হওয়া তাঁর কাছে রক্ত কমল তুল্য। আত্ম উপলব্ধির এই রক্ত কমল নিবেদন করবেন কবি ঈশ্বরের চরণে।
তাই নির্ভীক বিশ্বাস নিয়ে যদি জীবন পথে চলা যায়,তবে তার শেষে প্রতি টি প্রাণ পৌঁছে যাবে তার লক্ষ্যে ,তার উৎস
স্থলে,যেখান থেকে আসা ,সেখানেই ফিরে যাওয়া।
গভীর এক সমর্পণের সুর ঝংকৃত হয়েছে রবীন্দ্রনাথের এই গান টি তে।
–~০০০XX০০০~–