খোলা চিঠি
কাকলি ঘোষ
শ্রীচরণেষু রবিঠাকুর,
তোমাকে শ্রীচরণেষু লিখতে ইচ্ছে করে না। কেমন যেন পর পর শোনায়। তুমি তো সত্যিই আর কিছু পর নও আমার কাছে—–
আমার সমস্ত চিন্তায় , মননে, শিক্ষায়, সৃষ্টিতে তোমারই অপ্রতিরোধ্য পদধ্বনি।
“সহজপাঠ” এর হাত ধরে বেড়া ডিঙিয়ে ডিঙিয়ে যেদিন “শেষের কবিতা ” য় এলাম মনে হোল হৃদয় পূর্ণ আজ কানায় কানায় । মনে হোল এই পৃথিবীর সমস্ত আকাশ শুধু তোমারই গানে ভরে তুলতে পারি আমি।
তরতর করে পার হয়ে যেতে পারি জীবন সমুদ্র তোমার- ই ” সোনার তরী” তে। অবলীলায় চলে যেতে পারি সেই শান্তি পারাবারে যেখানে বিলীন হয়েছো তুমি।
দুর্বার ইচ্ছে জাগে ফিরে আসার আহ্বান জানাই তোমায় । কিন্তু কোথায়? এ কোন মরুদেশে?
তোমার ” বলাকা” খচিত আকাশ আজ হিংসার বিষে পরিপূর্ণ !
“পূরবী” র মাধুর্যে আজ আর কোন
” নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ ” হয় না !
অজ্ঞতা আর অশিক্ষা অশুচি করেছে তোমার “কনিকা” র ” নৈবেদ্য”!
মনে পড়ে। এক “সাধারণ মেয়ে” র দুঃখে কেঁদে উঠেছিল তোমার হৃদয়। মুখর হয়েছিল তোমার লেখনী। তুমি তো বিধাতার মত কৃপণ নও। তাই উত্তরণের শীর্ষে পৌঁছে দিতে চেয়েছিলে তাকে !
আজ ! আজ তুমি থাকলে কী করতে রবিঠাকুর? পদে পদে লাঞ্ছিতা, অপমানিতা, ধর্ষিতা নারীত্ব কী সান্ত্বনা পেত তোমার কাছে? কোন ভাষায় শোনাতে তাদের শান্তির ললিত বানী ?
এক জালিয়ানয়ালা বাগ কেড়ে নিয়েছিল তোমার রাতের ঘুম। ধিক্বারে , প্রত্যাখ্যানে কেঁপে উঠেছিল বিদেশীরাজ !
আজ!! অলিতে গলিতে প্রতিনিয়ত সৃ্ষ্টি হয়ে চলেছে শত শত জালিয়ানবাগ।
নির্বাক! অসহায়! পঙ্গু মানবত্ব!
তবু তোমাকে মিনতি করি রবিঠাকুর
আর ও একবার ফিরে এসো তুমি
ফিরে এসো বঞ্চিত , রক্তাক্ত ,শোষিত মানুষের মিছিলে—
যারা চেয়ে আছে শূন্যে—–
যারা অপেক্ষা করে আছে আশায়—-
এসো রুদ্র কঠোর মৃত্যুঞ্জয়ী অগ্রদূতের বেশে
অদৃশ্য থেকে দৃশ্যে—-
অন্ধকার থেকে আলোয় ঘটাও উত্তরণ—
ইতি তোমার নন্দিনী।
–~০০০XX০০০~–