মহারাজা তোমারে সেলাম
✍ অনিমেষ চ্যাটার্জী
হীরক দেশের রাজসভাতে
বিরাট শোরগোল
খোয়া গেছে গুপি বাঘার
জুতো এবং ঢোল।
মানিকজোড়ের মাথায় হাত
সারাক্ষণ ভাবে,
ঢোল জুতো ফেরত আনার
উপায় কি হবে ?
হাঁকেন রাজা ঢোল কোথায়,
হদিশ দেয় কে তার ?
গবেষক গবচন্দ্র বলেন,
” আছেন পি. সি. মিটার ” ।
মিত্র আসেন সাথে নিয়ে
সহকারী তপেশ,
টাক চুলকে জটায়ু কন
” কেসটি বড় সরেস।
ঢোলটি শেষ কে দেখেছে,
কোথায় মনে পড়ে ?? “
চরণ দাস কয়, ” দেখেছিলেম
উদয়নের ঘরে “।
পন্ডিত বলেন সাহস করে,
” দোহাই মিটার বাবু
চরণ দাসের চোখ দুখানি
ছানি পড়েই কাবু।
কি দেখতে কি দেখেছে
ঠিক ঠিকানা নাই,
ঢোল তো জানি দেখেছিলেন
শিক্ষামন্ত্রী মশাই। “
শিক্ষামন্ত্রীর রাগ চিরকাল
আমার উপরে
তাইতো ছাত্র মুকুলকে নিয়ে
থাকি পাঠশালার ঘরে।
তোপসে বলে , ” মুকুল জানো
বাঘার ঢোলের খবর ? “
মুকুল বলে, ” তোপসে দাদা
খবর খানা জবর “।
কালকে রাতে ঘুমটি ভেঙে
হঠাৎ চেয়ে দেখি,
হাল্লার মন্ত্রী ষড়যন্ত্রী
বাঁশের বনে একি !!
সঙ্গে তার আরো দুখান
ছায়া আশে পাশে
চাঁদের আলোয় দেখি, বরফি
আর মগনলাল হাসে।
এমন সময় দূরের মাঠে
পড়লো হঠাৎ চোখ
কে যেন আসছে হেঁটে
ছায়ার মতো লোক !!!
একটু কাছে আসতে ছায়া
চোখ কচলে দেখি
ঢোল মাথায় কোষাগারের
প্রধান পেয়াদা একি !!!
তারই পিছন ধরে আসে
আর এক ছায়া দূরে,
আরে, স্বয়ং শিক্ষামন্ত্রী
কালো চাদর মুড়ে।
এই দেখেই মাস্টারমশাইকে
দিলাম জোরে ঠ্যালা,
শোনো ওগো মাস্টার মশাই
উঠে পড়ো এই বেলা। “
উদয়ন বলেন, ” তেড়ে যেতই
ছাত্র ছিল যত,
মন্ত্রী পেয়াদা অমনি উধাও
ভোজবাজির মতো।
নিখোঁজ হাল্লার মন্ত্রী ব্যাটা
সাথে বরফি মগন,
ধরতে পারলে সমস্যার
সুরাহা হয় এখন “।
চারমিনারের ধোঁয়া ছেড়ে
বলেন এবার পি. সি. ,
” বুঝলি তোপসে ব্যাপারটা
ফিসি, ভারি ফিসি।
শিক্ষামন্ত্রীর মোটা মাইনে,
চুরির প্রয়োজন থোড়াই,
আগেরবার তো হয়েছিল
তার মগজের ধোলাই।
হেড পেয়াদা ও শিক্ষামন্ত্রীর
জেরা চাই আজ,
পেয়াদা যাক খুঁজতে তাদের
মহামান্য হীরকরাজ “।
এমন সময় বাইরে হঠাৎ
কিসের গোলযোগ ?
ফজল মিঞার সঙ্গে কে
এক বস্তা বাঁধা লোক।
চাগিয়ে নিয়ে আসছে ধরে
বিক্রম জনা তেরো
হৈ হৈ রব উঠেছে
” মারো ধরে মারো “।
ভেতরে এনে বস্তার মুখটি
খুলে দেওয়া যেই
বেরিয়ে এলো কোষাগারের
প্রধান পেয়াদাটাই !!!
ফজল বলে, ” হুজুর দিন
আচ্ছা দলাই মলাই,
তাও যদি না বলে কিছু
দেবেন মগজ ধোলাই”।
রাজা বলেন, ” পেয়াদা হয়ে
চুরির সাহস করে !!
শিগগিরই নিয়ে যাও একে
যন্তর মন্তরে “।
মিত্রমশাই তাড়াতাড়ি ধরেন
তাকে চেপে,
বলেন, ” ব্যাটা নচ্ছার, তোর
চুরির সাগরেদ কে কে ?? “
পেয়াদা কাঁদে, ” পায়ে পড়ি
মারবেন না মশাই,
একা ফেলে পিঠটান দেয়
শয়তান গুলো কষাই।
খবর তো জানেন সবই
মন্ত্রিমশাই বটে,
আমায় কেবল বলেছিলেন
ঢোল পৌঁছে দিতে।
আমি বাপু গরীব মানুষ
করি কি আর,
মন্ত্রির কথায় ঢোল নিয়ে
হচ্ছিলাম পগার পার।
কথা ছিল পৌঁছে দেওয়ার
হাল্লার মন্ত্রীর হাতে,
মগনলাল আর বরফি পাচার
করবে সাথে সাথে।
ঘাপটি মেরে উত্তরের বনে
থাকবে কদিন গাছে,
মন্দার বোস ফাইনালি নেবে
সোনার কেল্লায় কাছে।
এই অবধি সবই তো প্ল্যান
ঠিক ঠাকই ছিল
চুরি করতে গিয়েই শেষে
গোলমালটা হলো।
মন্ত্রিমশাই আমার সাথে
ওদের ঘরে ঢুকে
বলেন ওরে চাই আমার
ঐ দু জোড়া পাদুকে।
পাদুকা ঢোল কোনক্রমে
হাতিয়ে নিয়ে সোজা
মেলার মাঠে শর্টকাট
সঙ্গে ভারি ঢোলের বোঝা।
তারপরেই তাড়া খেয়ে
ফজলের গোয়ালঘরে,
বাকিটা নয় ইনটারোগেট
করুন মন্ত্রীবরে “।
এমন সময় বিষম চিৎকার,
” ওরে বাবা গেছি,
দিলো বাঘে সাবাড় করে,
প্রাণ থাকলে বাঁচি “।
অবাক সবাই, ” এমন করে
কে চিৎকার করে,
ফেলু বলেন, ” চিৎকার কেন
কোষাগারের ভিতরে ” ?
দৌড়ে গিয়ে দৃশ্য দেখে
সবাই হলেন বোবা,
শিক্ষামন্ত্রী বসে আছেন
সামনে বাঘের থাবা।
ঢোল কোলে অর্থমন্ত্রী
কেঁদে ভাসান বসে
রাজগুরু শ্রী ব্রহ্মানন্দ ভয়ে
মূর্ছা গেছেন পাশে।
বাঘ সরিয়ে মূর্তিমানদের
সভায় আনা হলো,
জিজ্ঞাসেন ফেলু, ” ভালো চাও
তো ব্যাপার খুলে বলো “।
ভ্যাবাচ্যাকা শিক্ষামন্ত্রী
বলেন কেঁদে কেটে,
” পায়ে পড়ি হুজুর, আমরা
দোষী নই মোটে।
গোড়া থেকেই গুরুদেবের
ইচ্ছাটি প্রবল,
টাকা কামাই করবেন পাচার
করে জুতো ঢোল।
অর্থমন্ত্রী এবং আমাকে
শাসিয়েছিলেন, ” জানিস,
কাজ যদি না করিস তোরা
করবো তোদের ভ্যানিস “।
তাই তো ভয়ে এই কাজে
বাড়িয়েছিলাম পা,
দোহাই হুজুর মলছি দু কান
আর করবো না। “
অর্থমন্ত্রী বলেন, ” হুজুর
পড়েছি গন্ডগোলে,
বন্ধ করতে রাজকোষাগার,
পেয়াদা গিয়েছিল ভুলে।
শিক্ষামন্ত্রীর কথা ছিল,
পেয়াদার পেছনে যাবে,
আমায় আবদার করেছিল,
দাদা ব্যাক এন্ড সামলাবে।
শিক্ষামন্ত্রীর দেখা গেল
সাহসের বহর,
তাড়া খেয়েই পড়লো এসে
আমারই ঘাড়ের ওপর।
মন্ত্রণা ঘর ভেবেই
বাঁচতে রাতের অন্ধকারে,
ভুল করে ঢুকেছিলাম
রাজকোষাগারে।
আলো ফুটতেই ঠাহর পেলাম
কি করেছি ভুল,
সামনে দাঁড়িয়ে জ্যান্ত বাঘ
চোখে সরষের ফুল।
তখন থেকেই ফন্দি আঁটা
বাঘ শান্ত হলে
তিনজনে চুপচাপ পালাবো
উত্তরের জঙ্গলে।
সেখান থেকে সাগরেদ নিয়ে
সোজা সীমান্ত পার,
ধরা ছোঁয়ার বাইরে খোঁজ
কেউ পাবে না আর ? “
রাজা হুকুমে পেয়াদা ছুটলো
উত্তরের বনে,
একে একে ঘাড় ধরে
সবকটাকে আনে।
মিটার বলেন, “আসি তবে
কাজ হয়েছে শেষ,
অ্যাসিস্ট্যান্ট ভালোই পেলাম
বাঘ বাবাজী বেশ।
গুপি বাঘা ফিরে পেল
জুতো এবং ঢোল,
হীরে পুরস্কার পেলো মুকুল,
মিটলো গন্ডগোল।
গল্গ এবার এইখানেই
শেষ করলাম আমার
সেলাম করি মহারাজা
শতবর্ষে তোমার।
( শ্রদ্বেয় সত্যজিৎ রায়ের সৃষ্ট চরিত্রদের নিয়ে তাঁর জন্মশতবর্ষে নিতান্ত সামান্য গঙ্গাজলে গঙ্গাপূজোর মাধ্যমে বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলী 🙏)
–~০০০XX০০০~–