বই সমালোচনা
✍ বৈশাখী রায়
লেখক শ্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় রচিত সমাদৃত উপন্যাস “রসিক”- এর পাঠ প্রতিক্রিয়া !
এখানেই তরণীসেন প্রভঞ্জনকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে; রসিক কে! উত্তর পেয়েছিলেন; যিনি প্রেমের রস আস্বাদন করতে পারেন তিনিই রসিক। তবে এই রসাস্বাদন একার দ্বারা হয় না, এর জন্য দরকার পড়ে সাধনসঙ্গিনীর। আর এই প্রেমই তাদের কাছে সাধনা। রসিক আর নাচনি মিলেই গড়ে তোলে সেই প্রেমের স্বর্গ। রসিক এখানে নাগর, আর নাচনি হলেন রাধারানী, সুর ছন্দ তাল লয়ে তারা পিরিতির সোপান তৈরি করেন।
যারা সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের অন্যান্য লেখা পড়েছেন, তারা জানেন, ওনার লেখায় নিটোল কোনো গল্পকাহিনী পাওয়া যায় না তেমন, কাহিনীর দৃঢ়সংবদ্ধতা, ঘটনার ঘনঘটা বা সংলাপের কারুকার্য বরাবরই অনুপস্থিত থাকে ওনার লেখায়। বরং একটা সহজিয়া টান প্রকট হয়ে ওঠে থেকে থেকেই। #রসিক উপন্যাসটিও ব্যতিক্রম নয়, মানভূম অঞ্চলের মেঠো টান, সুর ও ছন্দ বারবার প্রছন্ন থেকে প্রকট হয়েছে এই উপন্যাসেও। আসলে তার চরিত্র গুলো মানুষের মতোই, তবুও যেন মানুষ নয়।
তবে সবকিছু ছাড়িয়ে এই উপন্যাসে যেটা প্রবল ভাবে ধরা পড়েছে তা হলো শিল্পের শাশ্বতভাব। জীবন এবং মৃত্যুর মাঝে বাস করে প্রেম, আর এই প্রেমই জন্ম দেয় শিল্পসত্ত্বার- যা অবিনশ্বর; মানুষ মরে যায়, রয়ে যায় শিল্প; কালাতীত কাল ধরে বয়ে চলে তা, জন্ম নেয় নব কলেবরে, নবরূপে! কাজেই জগতের মূলভাব হলো সৃষ্টি, ধ্বংস নয় কখনোই। মানুষ থাকুক বা না থাকুক, শিল্পকে থাকতেই হবে।
গোটা উপন্যাসে লেখক এই দর্শনবোধকেই গড়ে তুলতে চেয়েছেন। তাই তো উপন্যাসের শেষে বিরহকাতর ঝুমুর নাচনি বিজুলীবালা গাইতে পারেন,
“ধন যৌবন জোয়ার পানি বহি উতরলা
পানিয়া বহিয়া গেলো, তখন পাছু আড় দেলা
রে দিন চলি গেলা, এ নব যৌবনে পিয়ার ছাড়ি গেলা,
বড়ি দাগা দেলা!”……
#ঝুমুর_নাচনি সম্প্রদায়ের ওপর লেখা সম্ভবতঃ প্রথম বিস্তারিত উপন্যাস এটিই।
–~০০০XX০০০~–