“লীলাকে একটি চিঠি”
✍অমিতাভ মল্লিক অমি
লীলা,প্রিয় বোন আমার
বাড়ি যাইনা আজ কতদিন জানিস?
কতদিন ঠিক তা মনে নেই
তবে অ নে ক- অনেক দিন হবে
বাড়ি যাব করে করে দিন বাড়ে -মাস বাড়ে -বছর যায়
এই যাব- সেই যাব- আর হয়না
ব্যস্ততা?
তা বেড়েছে বৈকি
ব্যস্ততাতো বাড়বেই
মস্ত এ শহরে ব্যস্ততাই বাস্তবতা
তাই বলে বাড়ি যাবার ফুরসৎ একদম না?
ঠিক তা নয়
লীলা,বাড়ি ছিল নাড়ীর টান
পুজো কিংবা মহোৎসব
পর্ব কিংবা পার্বন
সেই সাথে তোকে সময় দেবার আবদার পুরণে
প্রস্তুতি থাকত পক্ষকালের।
ছুটির দরখাস্ত ফেলে হুড়োহুড়ি করে
সদরঘাটের লঞ্চে পা পড়তেই
বুড়িগঙ্গার পঁচা জলের গন্ধেও
নিতাম একটি আয়েশী নিঃশ্বাস,
অজ্ঞাতে বুক ফেরে মুখ ফুটে বেড়িয়ে আসত- ‘যাক্,তাহলে বাড়ি যাচ্ছি’
লঞ্চের রাতটায় পরিকল্পনার পাহাড় জমতো,
সদ্য লেখা নাটকের সংলাপগুলোর পূণর্বিন্যাস,
বিশেষ করে তুই যে চরিত্রে- ছাঁটকাঁট বেশী সেটাতেই
তারপর-
বাড়িতে দিন কতক নাটকের মহড়া
তোর সংগে অবিচ্ছিন্ন সময়
পুজো মন্ডপের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান
লক্ষ্মী দশরার নৌকা বাইচ
মামা বাড়ি
পাগলের আশ্রম
নদীপাড়
রাস্তায়
বাড়িতে
অতঃপর-
ছুটি শেষ–
পা নড়ত না,
“একদিন পড়ে গেলে হয়না?” তোর আবদার
রাখতে গিয়ে কর্তব্যবোধে ছেদ পড়ত,
তাও কি করার?
একদিন
দুইদিন
তাও তোর ‘আরেকদিন’ শেষ হতোনা,
লঞ্চে চড়ার কালে তোর ভিজে চোখ
বড় ভারাক্রান্ত করে দিত মন,
লঞ্চের ছাঁদে দাঁড়িয়ে হাত নাড়তে নাড়তে
বুকের ভিতরটা ছিঁড়ে ছিঁড়ে পড়তো কুলে
আঁছড়ে পড়া ঢেউয়ের মতন
প্রিয় বোন আমার,প্রিয় লীলা,সেই যে
প্রবাসী হলি, আর না———
কতদিন হয়ে গেল
বাচ্চার মা হলি শুনলাম
সংসারের ব্যস্ততা যে কি জিনিস
জেনেছিস ভেবে স্বস্তি লাগছে
ব্যস্ততাই বাস্তবতা
সবাই এখন শুধু ব্যস্ত হয়ে পড়ে,
তাহলে আজ আর না
রাখি
আমারও অনেক ব্যস্ততা—-।
–~০০০XX০০০~–