অনিকেত
✍ মঞ্জুলিকা রায়
সকালে তপতী কাজ করে চলে যাবার পর প্রতিদিন না হলেও সপ্তাহে দু তিন দিন বাজারে যান সুস্মিতা। একা মানুষ তাই বাজার সামান্যই কিন্তু বেশি বাসী মাছ বা সবজি ওনার মুখে রোচে না। যখন অফিস ছিল তখন উপায় না থাকায় খেতেই হতো, পারলে তখন অফিস থেকে উড়ে উড়ে বাড়ি ফিরতেন কারণ জোজো ঘরে একা আছে। সেই সময় বাজার হতো সপ্তাহে একবার, তবে মুর্গীওলাকে বলা ছিল সে সপ্তাহে দুবার মুর্গী কেটে এক কিলো করে দিয়ে যেত জোজোর জন্য। তিনি মাছ ভালোবাসেন তাই জোজো চলে যাবার পর থেকে বাড়িতে আর মাংস আসে না, এখন তিনি খুঁজে খুঁজে নড়ছে এমন দেখে তাজা মাছ কেনেন।
আজ বাজার করার জন্য বেরিয়ে মোড়ের মাথায় আসতেই একটা গোলমাল কানে এলো। মোড়ের মাথায় পানুর চায়ের দোকান, সকালে বেশ ভীড় হয়। পানুর তখন মাথা তোলার সময় থাকে না, একা হাতে চা বানাচ্ছে, কাউকে বয়াম থেকে স্থানীয় বেকারির বিস্কুট দিচ্ছে, কারুর টোস্ট ওমলেটের অর্ডার সামলাচ্ছে। এই ভরা বিক্রিবাটার সময়ে সে কাজ বন্ধ রেখে এতো চেঁচাচ্ছে কেন !
পায়ে পায়ে এগিয়ে দেখেন পানুকে ঘিরে একটা জটলা, পানুর দোকানে একটা ছোটো ছেলেকে কিছুদিন ধরে দেখছিলেন, তাঁর নড়া ধরে পানু ঠাস ঠাস করে কেঠো হাতে থাপ্পড় কষাচ্ছে। এই শীতেও বাচ্চাটার গায়ে একটা নোংরা হাফ হাতা গেঞ্জি আর ঢ্লঢলে অনেক বড়ো হাফ প্যান্ট, পতনের হাত থেকে বাঁচাবার জন্য প্যান্টের উপরে একটা দড়ি দিয়ে পেটের সাথে কষে বাঁধা।
বাচ্চাটার মুখ থেকে, নাক থেকে গড়িয়ে রক্ত পড়ছে, কান্নায় শরীরটা কেঁপে কেঁপে উঠলেও মুখ দিয়ে একটা গোঁ গোঁ ছাড়া আর কিছুই বেরুচ্ছে না। সকালের বাজারমুখী পাব্লিক দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মার খাওয়া দেখছে কিন্তু একজনও এগিয়ে যাচ্ছে না। সাতাশ বছর আগের একটা ঘটনা মাথায় আসতেই সুস্মিতার মাথায় রক্ত চড়ে গেল, এগিয়ে গিয়ে বাচ্চাটাকে আড়াল করে দাঁড়িয়ে কঠিন গলায় প্রশ্ন করলেন ” এইভাবে মারছো কেন? কি করেছে ও? । ”
পানুর মুখে একটা শ্লেষাত্মক হাসি ফুটে উঠে মিলিয়ে গেল, মুখে বলল ” যান যান নিজের কাজে যান, পরের ব্যাপারে মিছে নাক গলাবেন না। ” সুস্মিতাও কঠোর স্বরে বললেন ” একটা বাচ্চাকে তুমি এতো লোকের সামনে এইভাবে মারছো আর ভাবছো যে কিছুই হবে না! আমি এই মারের ভিডিও তুলে নিয়েছি, এখনি থানার নম্বরে সেন্ড করছি, তারপর দেখো এই মারটাই তোমার কপালে জুটবে।”
যে সব পাবলিক দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মার খাওয়া দেখছিল তারা এবার পানুর মার খাওয়ার কথায় মজা পেয়ে সুস্মিতার দিকে ঢললো, কয়েকজন অত্যুৎসাহী হাত পা নেড়ে ব্যাখ্যাও করলো ” এই পানুটা কি মানুষ না কি ওটা তো একটা পিচাশ! বাচ্চাটাকে শুধু বাসী পাউরুটি আর পচা ঘুগনি খাইয়ে রাখে আর রাতদিন ভূতের মতো খাটায়। ওইটুকু বাচ্চা এতো পারে না কি? আজ হাত থেকে গ্লাসের ক্রেট পড়ে দশটা গ্লাস ভেঙেছে বলে এক ঘন্টা ধরে গরুর মার মারছে। ”
পানু বেশি ঝাঁজ না দেখালেও উত্তর দিল, ” সক্কাল সক্কাল একশো টাকার ক্ষতি করে দিল! তোমাদের বাপের তো আর গ্লাস যায় নি, গিয়েছে এই পেনো শালার! ফোকটে তোমরা দরদ দেখাচ্ছ। ” ফোকট কথাটা কানে যেতেই সুস্মিতার আবার মেজাজের পাড়া চড়লো, তিনি পার্স থেকে একটা একশো টাকার নোট বের করে পানুর হাতে দেন এবং বলেন ” একশো টাকার জন্য তুমি মানুষ খুন করবে? ও যে কাজ করে তার মাইনে কি দাও? এতো টুকু বাচ্চাকে কাজে রেখেছ,
পুলিশকে জানলে দেখো তোমার কি হাল হয়!
পানু এবার গলা নামিয়ে জিভ কেটে দুনিয়ার সর্বোৎকৃষ্ট আপ্তবাক্যটি বলে ” দুনিয়ার কোনো শালার ভালো করতে নেই। না খেয়ে মরছিল, মামাটা নিজে এসে হাতে পায়ে ধরে আমার কাছে রেখে গেছে, পেনোর শালা দয়ার শরীল নইলে এই পুঁইয়ে পাওয়া বাচ্চাটাকে কি কেউ রাখে? ”
মামলা ঠান্ডা হয়ে যাওয়ায় ধীরেধীরে ভীড় কমে আসছিল, সুস্মিতাও বাজারের রাস্তা ধরলেন। বাজার থেকে ফেরার পথে দেখেন বাচ্চাটা একটা বন্ধ দোকানের সিঁড়িতে জড়সড় হয়ে বসে আছে। কষ্ট লাগলো দেখে তাই এগিয়ে গিয়ে বলেন ” বসে আছিস যে? খেয়েছিস কিছু? ” মাথা নাড়ে বাচ্চাটা, ” কেন রে পানু এখনো রেগে আছে? পুঁচকেটা ধীরেধীরে বলে ” তাইরে দেছে ” কেন? তাড়িয়ে দিল কেন? ” তুমি পুলিশকে বইল্যে দেব্যে বললেক না, তাই পানু দাদা বইলে দিল ” তোরে আর রাখা চলবে নিকো । বাচ্চা ছেলেরে রাইখলে পুলিশে ধইরবেক বুললো। ”
সুস্মিতা কাছে গিয়ে বলেন ” তোর এখানে কেউ নেই?
বাড়িতে কারুর ফোন আছে? তোর বাবাকে ফোন করে খবর দিতে হবে যে!” বাচ্চাটা ধীরেধীরে বলে ” আব্বু আবার বে করেছে, আমারে ঘরে নেয় না। ” তোর মা “?
“আম্মু তো নেই, মইরে গেছে? “তাহলে তুই এতো দিন কার কাছে থাকতিস? আব্বু মামা ঘরে রেইখে গেল, মামী ভাত দেয় না, খালি মারে তাই মামা পানু দাদার দোকানে দিলো ”
বাচ্চাটার থাকা খাওয়ার আশ্রয় তাঁরই জন্যে ঘুচেছে, সাতপাঁচ ভেবে বাচ্চাটার হাত ধরে বলেন ” চল, আমার সাথে। ” পুচকেটা নিয়ে আসেন বাড়িতে, বাড়িতে মাত্র দুটো ঘর তা অবশ্য তাঁর একার জন্যে যথেষ্ট। বাচ্চাটাকে দুধ গরম করে, পাউরুটি সেঁকে খেতে দেন, ওর খাওয়া দেখে বোঝেন যে ওর খুব খিদে লেগেছিল।
সামনের ঘরে দেবাশীষের একটা বড় ফটো, ফটোটার দিকে চোখ যেতে সাতাশ বছর আগের সেই দিনের কথা মনে আসে।
দেবাশীষের বন্ধু অমিতাভর বিয়ে ঠিক হয়েছিল আউশ গ্রামে। অমিতাভ বরযাত্রীতে দেবাশীষ আর দুজন কোলিগকে যেতে বলেছিল , জোজোর বয়েস তখন দশ মাস । দেবাশীষের মোটেই ইচ্ছে ছিল না, বউ বাচ্চাকে ছেড়ে শীতের রাতে বাড়ির বাইরে থাকার কিন্তু অমিতাভের পিড়াপীড়িতে শেষ পর্যন্ত রাজী হয়েছিল।
ভাত খেয়ে দুপুর দুপুর যাত্রা, তাই সাত তাড়াতাড়ি ভাত রেঁধেছিলেন সুস্মিতা। ভাত খেয়ে উঠে বিছানায় লেপের মধ্যে ঢুকেছিল দেবাশীষ, তারপর জ্বর হয়েছে বলায় সুস্মিতা যখন কপালে হাত ছোঁয়াতে আসেন তখন বোঝেন সব দুষ্টুমি। সুস্মিতাকে চটকে চুমু তে ভরিয়ে যখন ছাড়ল তখন সুস্মিতার গাল মুখ দেবাশীষের লালায় ভিজে। সুস্মিতা রেগে পিঠে গুম করে কিল মেরেছিলেন , দেবাশীষ ছদ্ম রাগে ঠোঁট ফুলিয়ে ঘুমন্ত দশ মাসের জোজোর কাছে নালিশ জানিয়েছিল। ঘুমন্ত ছেলেকে আদর করতে নেই তাই ফ্লাইং কিস ছুড়ে দিয়েছিল মা ছেলের দিকে তারপর চোখ টিপে বলেছিল ‘ বাকিটা ফিরে এসে। ‘
পরের দিন সকাল বারোটায় অফিসের সুমন্ত আর দুই তিন জন না চেনা অফিস কোলিগ এসে বলেছিল ” বৌদি, তাড়াতাড়ি চলুন । দেবাশীষদের গাড়িতে অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে, আপনাকে যেতে হবে এখনি। ”
কী ভাবে সে গিয়েছিল সেই দু’ ঘন্টার যাত্রা পথ, মৃত্যুর আগের দিন পর্যন্ত মনে থাকবে , বুকের মধ্যেটায় যেন হাতুড়ির বাড়ি পড়ছিল , ভয়ে আর উৎকণ্ঠায় খালি বমি পাচ্ছিল, কোলের মধ্যে জোজো ঘুমচ্ছে, পথ যেন আর শেষ হয় না। গাড়িটা গিয়ে দাঁড়িয়েছিল বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের মর্গের সামনে। নামতে গিয়ে চোখ আঁধার হয়ে আসে, সুমন্ত তাড়াতাড়ি এসে জোজোকে কোল থেকে নিয়ে নেয়, তাঁর হাত চেপে ধরে ফিসফিস করে বলে ” শক্ত হও, জোজোর কথা ভেবে শক্ত হও প্লিজ। ”
তারপর কলের দম দেওয়া পুতুলের মতো সুমন্তর হাত ধরে ভিতরে ঢোকেন। মর্গের লকার থেকে যে মানুষের শরীরটা বের করে তাঁকে দেখানো হয়েছিল সেটা যে দেবাশীষের তা না বলে দিলে তিনি চিনতেও পারতেন না। ছোটোবেলায় বটের ঝুড়ি ধরে দোল খেতে গিয়ে হাত ভেঙেছিল, সেই হাত প্লাস্টারে সেট হয় নি, অপারেশন করে হাড় ঠিক করতে হয়েছিল, বাঁ হাতের কনুই এ আছে অনেকটা বড় অপারেশনের দাগ, সেটাই দেবাশীষের আইডেন্টিটি মার্ক। ওই দাগ দেখানো হল তাকে, ধপধপে ফর্সা দেবাশীষ ধুলো ময়লা আর রক্ত জমে কালো কুচকুচে হয়ে গেছে। মুখের হাড় ভাঙা, মুখটা হাঁ হয়ে আছে, তারমধ্যে সামনের দাঁতগুলো ভাঙা।
ভয়ে আঁ আঁ চিৎকার করে তিনি ছুটে বাইরে এসেছিলেন, তারপর হাসপাতাল চত্বরেই অজ্ঞান হয়ে যান। জ্ঞান ফিরলে কিছু সই সাবুদ তারপর সেখান থেকে শ্মশান, কলের পুতুলের মতো কী যে করেছিলেন তা মাথায় আর নেই। পিছন থেকে কেউ তাঁকে ধরে রেখেছিল নাহলে হয়ত পড়ে যেতেন। পা দুটি যেন রাবারের আর তাতে কোনো জোর নেই। ফেরার পথে জোজোকে আঁকড়ে চুপচাপ বসে ছিলেন, কাঁদবার মতো শক্তিও যেন শরীরে নেই। সুমন্তরা তাঁকে বাপের বাড়ি পৌঁছে দিয়েছিল, মাস দুই ছিলেন সেখানে। ততোদিনে বুঝতে পারছিলেন যে জায়গা দু বছর আগে ছেড়ে গেছিলেন তা ভরাট হয়ে গিয়েছে প্রকৃতির নিয়মে।
তাঁর বাবার দু কামরার বাড়িতে তিনি আর জোজো ছাড়াও রয়েছে চাকরী না পাওয়া দাদা আর কলেজ যাওয়া বোন। ওদের ভয়ানক অসুবিধে হচ্ছিল বুঝতে পারছিলেন তাই বাবাকে বলে আগের ভাড়া বাড়ির পাট চুকিয়ে বাপের বাড়ির পাড়ায় একটা এক কামরার ঘর ভাড়া নেন। এদিকে দেবাশীষের ব্যাঙ্কেও তাঁর জয়েন করার কথা চলছে, প্রায় দুই মাস তখন হয়ে গেছে দেবাশীষ চলে যাবার, একে তাকে জিজ্ঞেস করে চলে গেছিলেন অমিতাভের বাড়িতে।
অমিতাভ একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী, তখনো ওর পায়ে ট্রাকশন লাগানো, তাকে দেখেই শিশুর মতো কাঁদতে আরম্ভ করেছিল। ততোদিনে তাঁর চোখের সব জল শুকিয়ে গেছে। কান্না আর ফোঁপানির মধ্যে যেটুকু তিনি উদ্ধার করতে পেরেছিলেন তা হল আউশ গ্রাম আসার আগে ওরা যখন NH1 ধরে যাচ্ছিল তখন গাড়ির সামনে একটা ছাগল ছানা এসে পড়ে। ড্রাইভার আপ্রাণ চেষ্টা করা সত্বেও সেটা চাপা পড়েছিল। ওরা গাড়ি থামিয়ে দেখতে গিয়েছিল যে ছানাটা বেঁচে আছে না মরে গেছে। মুহূর্তের মধ্যে ওদেরকে ঘিরে ধরেছিল একদল লোক, অমিতাভরা প্রথমে ক্ষতিপূরণ বাবদ একটা মোটা অঙ্ক দিতে রাজী হয়ে যান, তারপর যা ছিল ওদের কাছে সব কিন্তু জনতা তখন রক্তের নেশায় মেতেছে।
জনতার রোষ বাড়ছিল, খবর পেয়ে মজা দেখার জন্য আরো লোক ছুটে আসে। ওরা বরযাত্রী জেনে একজন ধুয়ো তুলে দেয় যে মদ খেয়ে এরা গাড়ি চালাচ্ছিল, মুহূর্তে জনতা পাগল হয়ে যায়, কোথা থেকে এতো বাঁশ, লোহার রড আর ইঁট এসে পড়ল তা কে জানে। জনতার উন্মত্ত মার খেয়ে পাঁচ জন হাত পায়ে ধরেছিল, ধুলোয় গড়াগড়ি খেতে খেতে বাড়িতে সন্তান স্ত্রী আছে সেই কথা বলেছিল বারবার। অমিতাভের ধুতি আর কপালে চন্দনের টিপ দেখে না কি কেউ কেউ বলেছিল ‘ এটা বর, এটাকে জানে মারিস না ‘ কিন্তু লোহার রডের বাড়িতে দুই পায়ে মাল্টিপল ফ্রাকচার হয়েছিল। অমিতাভ অজ্ঞান হয়ে যায়, জ্ঞান ফেরে হাসপাতালের বেডে, কে তাকে হাসপাতালে দিয়েছে সে কিছুই জানে না, ছয় মাস পরে সেই জায়গায় অমিতাভর বিয়েও হয় কিন্তু অমিতাভের পা আর ঠিক হয় নি, এখনো খুঁড়িয়ে চলে।
তারপরে একা হাতে জোজোকে বড় করেছেন, অন্য কোনো কিছুর খেয়ালই ছিল না, জোজো কম্পিউটার সাইন্সে মাস্টার্স করে একটা স্কলারশিপ পেয়ে জার্মানিতে আছে। জোজো চলে যাবার পর তিনি ভি আর এস নিয়েছেন, অনেক খেটেছেন একা একা আর ভালো লাগছিল না, পেনসনটা তো আছে, চলে যাবে তাঁর একার। জোজো মাতৃভক্ত ছেলে, রোজ তাদের কথা হয় কিন্তু তিনি বুঝতে পারেন জোজোর এদেশে ফেরার ইচ্ছে নেই, সে মাকে পাসপোর্ট বানাতে তাগাদা দেয়।অন্য একটা কারণও বোধহয় আছে, কথা বলার সময়ে তিনি খাটের উপর একটা ধপধপে ফর্সা, নির্লোম পা দেখেছেন একদিন, আর একদিন আবার মেয়েদের পোশাক।
জোজো বড় হয়ে গেছে, জীবনের টানে সে চলে গেছে, মা হিসাবে তাঁর স্নেহ ভালোবাসা আছে কিন্তু ছেলের বড় হয়ে যাওয়াকে মেনে নিতে হয়, তিনিও নিয়েছেন।
লফট হাতড়ে পুরনো সুটকেস থেকে জোজোর ছোটোবেলার জামাকাপড় কিছু পান। খুদেটাকে ডাকেন ” এই এদিকে আয় না, তোর নাম কি? ” কালো কুচকুচে ছেলেটা আস্তে আস্তে বলে ” করিম “। ওর হাতে জামাপ্যান্ট দিয়ে বলেন ” পরে দেখ তো এগুলো তোর হয় কি না? ”
পোশাক পাল্টানো করিমকে দেখে তার ভালো লাগছিল, বড় আর ঢলঢলে হলেও গা ঢাকা। তিনি আস্তে আস্তে শুধান ” তুই আমার কাছে থাকবি এইখানে? ” করিম উত্তর দেয় ” হুঁ, তুমার সব কাজ করি দিবো। ”
সুস্মিতা হেসে বলেন ” তুই ! তুই কি কাজ করবি রে?
তুই আমার কাছে থেকে পড়াশুনা করবি, থাকবি তো?
বড় বড় চোখ মেলে করিম মাথা নাড়ে।
নদী কোনোদিন উৎসে ফিরে আসে না, জীবন স্রোতো উল্টো দিশায় বয় না তবু প্রকৃতির নিয়মে কোথাও কোনো ফাঁক থাকে না। শূন্যতা ঢেকে যায় নব নব পদ তাড়নায়, দেবাশীষ অসময়ে চলে গিয়েছিল কিন্তু জোজোকে তিনি একা পুরোপুরিভাবে পেয়েছিলেন। আজ জোজো চলে গেছে তার যায়গায় করিম এসে গেছে। জীবন এক স্রোতস্বিনী নদীর মতো, প্রতিটি বাঁকে কেউ না কেউ দাঁড়িয়ে আছে হাত ধরার জন্য, সাথে থাকার জন্য। যার সাথে যতটুকু সময় কাটানো হবে তা যেন পূর্ব নির্ধারিত , নইলে এই পুঁচকে অনিকেত বাচ্চাটির তো তার নিকেতনে আসার কথা ছিল না। আশ্বাস পাবার জন্য দেবাশীষের ছবির দিকে তাকান, মনে হয় দেবাশীষের মুখের হাসিটা যেন আর একটু উজ্জ্বল, চোখদুটো যেন আরো মায়াময় হয়ে উঠেছে।
–~০০০XX০০০~–