“দূরত্ব ও শেষ লোকাল”
দেবী প্রসাদ বটব্যাল
এই শোন- কণিষ্ক ভান্ডারে একটা যা বালুচরি দেখলাম না-।ফাটাফাটি– কালো জমির উপর মুগার কাজ । সোনার মতো জ্বলজ্বল করছে আঁচল জুড়ে টেরাকোটা মন্দিরের কারুকার্য ।
–নীলা সাত তাড়াতাড়ি বলে ওঠে– এবার পূজোয় দিবি–? — এই বলনা রে? এই দেব? — দেবকান্তকে সে
দেব বলে ডাকে ।
–হুম– বুক করে এলাম–। তবে বিয়ের পর–,বেতনের অর্ধেক যাবে তো! বাকি মাস কি আঙুল চুষবো?
— কি কিপটে রে–, যেমন হোক একটা সরকারি চাকরি তো করিস । আর সামান্য একটা– উঁ–হুঁ–হুঁ–। এই সঙ্গে– ব্লাউজ পিস্ আছে–?
— বোঝো ঠেলা–, মূলে মা রাঁধেনি- তাই পান্তা আর তপ্ত
–থাক,নাকে কাঁদিস না । বেতনের টাকায় ওসব হবে না
— দেখি চৌধুরীগিন্নি আজ মাল দেয় কিনা– দুমাসের বকেয়া । দুটো দামড়াকে আজ সাত বছর ধরে রগড়াচ্ছি । ওই যে বোনাস নাকি বলে?আমার প্যান্ট শার্টের টাকা সমেত ।
–হ্যালো–বুক করেছিস কিনা?– পৃজোর আর পনেরো দিনও বাকি নেই ।
— করেছি রে–,শোন– ব্লাউজটা পিঠের দিকে গোল করে কাটা বানাস । — কণিষ্কের মালিকের কাছে খোঁজ নিয়েছি– স্পেশাল মূগার জরি পাড় কিনতে পাওয়া যায়– বিষ্ণুপুরেই বালুচরি যারা বানায়-তাদের বাড়িতে
— ব্লাউজের হাতা আর গলায় লাগাবি । গলা যেন ভি-কাট হয়–,ওই– তোর যা ক্লিভেজ–!! মারমার কাটকাট
— শোন — অন্য কেউ তাকালে দাঁত ভেঙ্গে দেবো শালা-
–যাঃ–অসভ্য– হুঁ–উউ-চুমু নে একশোটা– হবে?–
আমার সোনা–সোনা—,।
এই এই–ফোনে আদর হয় না– , ট্রেনে তো তিন ঘন্টা লাগে– মেরে দে তো আজ– আমি তোকে হাওড়া পৌঁছে দিয়ে আসবো–,
–পাগল–নীলা বলে– ।এই শোন এক্ষুণি যা তো একবার দোকানে । আমি তোর একাউন্টে সাত হাজার
ট্রান্সফার করে দিচ্ছি ।
–গুডগার্ল– দে তো–দে তো–TEACHER হবার পর অনেক দিন TEACHER খাইনি ।
–ওরেঃ তোকে যা মানাবে না–তোর ওই গম-মাখন শরীর– সোনালী কালো বালুচরি– গভীর নাভি–
লরিয়েল চুল– ল্যাকমে ঠোঁট– লে পাগলি খাবি কি–
ঝালে মরে যাবি— হা হা হা হা হা হা হা ।
–থাম–থাম– মরে যাবো– সত্যি বলছি মরে যাবো–
–এই দেব একটু আদর কর না–
কেন?মরে যাবি কেন?– আমি কি তোর যেখানে সেখানে হাত বুলোচ্ছি নাকি?
–ধেত্–অসভ্য-‘
-টিং–টিং–টি টিং–। thnx–টাকা ঢুকে গেছে—
–দেব শোন— শোন— যাঃ–বদমাশ—।
আবার রিং– হ্যাঁ বল–
তাহলে আজই বুক করে দিই—?
-ওরে গাধা, এখুনি কর বলে নীলা—।
হ্যালো–হ্যালো—
তোর জন্য রেডিমেড কাকিমার মল্লারের খবর কি?
সে তো এই পূজোতে ল্যান্ড করবে বলছিলি । এই আশ্বিনের মেঘহীন আকাশে মল্লার–ফুঃ–
–তোর কি?– জ্বলুনি হচ্ছে–? ঠিক জ্বলছে–, হুম ঘুরবো– দেবের সোনালী কালো বালুচরিতে দেবী ঘুরবে-মেঘ-মল্লারের বিলম্বিত লয়ে—।
–ঘোর– আমিও— প্রোফাইলে যাসনি– ফ্রেন্ডলিস্ট অনেক দিন চেক করিসনি মনে হচ্ছে–?
এই–এই– দাঁড়া,আমি এক্ষুণি দেখছি– ।
জেলাস— জেলাস—আমাকে জ্বালাবি—-
——— সাতদিন পর——–
হ্যালো–এই- শিবরঞ্জনী মেয়েটি কে রে? দেখলাম তোর নতুন বন্ধু–।
ও আমার সাথে অনার্স পড়তো । অনেকদিন পর ফেবুতে দেখা ।
তো অতো গদগদ কমেন্ট কেন?
ওকেই জিজ্ঞাসা কর না–
তোর হচ্ছে দাঁড়া–। —
আরে- রাগছিস কেন,শুনবি তো–
রাগবো না– তোর গায়ে চিনি মাখিয়ে চাটবো? তোর চৌদ্দপুরুষকে নরকে পাঠাবো দাঁড়া–
আয়- আমি ওদের লাইন দিয়ে দাঁড় করাচ্ছি ।
শালা নিজে মল্লারের সঙ্গে ঘূরছো । বৃষ্টি ছাড়ায় যখন তখন বেজে উঠছো–, তার বেলা–
-তোর মুখে পোকা পড়বে–, আমি মোটেই ঘুরিনি–
শুধু মা’র পিড়াপিড়িতে একদিন রেস্তরাঁয় খেতে যেতে হয়েছিল ।
তাতো হবেই– যা হবে–সব মা’র পিড়াপিড়িতে– বিয়েও
বোধহয় তোর মা করবে–?
তুই তো জানিস আমাদের ব্যাপারটা সবাই জানে -বলে নীলা–, । জানে তো কি? তোদের বাড়ির কোনো শালাতো স্বীকার করে না আমাকে । কোনদিন দেখবো তুইও অস্বীকার করবি–।
হবেই তো– , শিবরঞ্জনী –কি নাম মাইরি– তা বাজছে কিসে–?– মানে-? আরে শুনছিস কিসে– সানাই এ–
শ্লেষের গলা নীলার–
–না- প্রথমে-সে-নাই -এ ছিল, এখন সে-তারে-বাজে ।
মানে কি বলতে চাস-?
একটি বিশুদ্ধ গর্দভ– , আরে একবার বিসমিল্লা তো একবার রবিশঙ্কর–আর কি–?
চারদিন বাদ ষষ্ঠী- নীলা বলে–আমার বালুচরি কই?
জানিস সেদিনকেই গেছিলুম । — পাসনি তো?– নীলার
গলা প্রতিহিংসায় হিসহিস করে–
কি বলতো–দোকানি শালা হারামি আছে । বিক্রি করে দিয়েছে । তা ছাড়া তোকে মানাতোও না । –তবে যে আগে বলেছিলি-দারুণ দেখাবে– তীক্ষ্ম বিদ্রুপ স্বরে ।
–স্বাগতা বলছিল- গতকাল শিবরঞ্জনী আর তুই সদর হাসপাতালের কাছে ঘুরছিলি– । শিবরঞ্জনী কালো-সোনালী বালুচরি পরেছিল । –বেইমান কোথাকার–
ভেবেছিস আমি কিছু জানিনা না?– তুই এটা করতে পারলি দেব? তুই কেন–করলি–কেন—করলি–?
টাকার লোভ? সামলাতে পারলি না নিজেকে? তোরা শুধু অর্থনৈতিক ভাবে নয় মানসিকভাবেও অনেক অধোগামী ।
–এনাফ–নীলু–এনাফ–, স্বাগতা ঠিক বলেছে তোকে ।
হ্যাঁ ঘুরছিলাম । আমি আর শিবরঞ্জনী ঘুরছিলাম ।
ওই শাড়ি শিবরঞ্জনী পরেছিল– ভালো মানিয়েও ছিল
ওকে, এবং ইনফ্যাক্ট আমার দোকানে যাবার আগে
ওই কিনেছিল শাড়িটা । তাতে কি–?
–চিবিয়ে চিবিয়ে বলে নীলা-তাতে কি–নতুন চিড়িয়া ।
নিজেকে বড়ো নৈতিক চরিত্রবান দেখাস তো তাই ।
একেবারে ধম্মোপুত্র যুধিষ্ঠির– ছি ছি– তোর নাম নিতে
ঘেন্না হয়—।
নিস না– কে মাথার দিব্যি দিয়েছে? –আর এখন তো ঘেন্নার মাত্রাটা আর একটু বাড়বে । হাতের মুঠোয় ফরেন ট্রেইন্ড ইঞ্জিনিয়ার । এসি কার– আইনক্স– ফুডপ্লাজা– যদিও তুই ডিসার্ভ করিস সবই– ।
এখন তো ভাঁড়ে চা– চীনেবাদাম-রাসমঞ্চে মন ভালো
থাকবে না রে—
–ছোটোলোকের মতো ঝগড়া করিস না । সত্যি তো কি আছে? ওই তো আমার টাকা দিয়ে অন্যকে শাড়ি কিনে দিস– ইতর–একটা–
হা হা হা হা হা হা হা- আরে তোর তো অনেক টাকা ।
তাছাড়া তোর মল্লারের তো কালো রঙ পছন্দ নয় ।আমি না হয় ইতরেতর– স্বাগতা বলছিল ওর একটা বিশেষ রঙ পছন্দ । তোকে নাকি পরীর মতো লাগে তাতে । সেটা শুনে তুই ও নাকি গলে যাস -স্বাভাবিক ।
ছোটোলোকটার তো ওই খুদে খুদে চোখ । তোকে কখন দেখে? কি দেখে? আর ভালোমন্দ লাগা তার আবার–!
–সাটআপ্– নীলা বলে ওঠে । তোর পক্ষেই এতোটা অরুচিকর কথা বলা সম্ভব । তুই কি ভাবিস নিজেকে?
সবাই তোর জন্য পারো হবে–,
ওই দেখ- আবার ভুল উদাহরন দিলি– ‘পারো কোনো বিশ্বাসের নাম না–যদি বিশ্বাসের কোনো নাম থাকে– আর হাজার বছর বাঁচে–তবে সে নাম ‘দেবদাস ‘–
থাক-স্বাগতা বলছিল তোদের বিয়ের তারিখও নাকি কাকিমা ঠিক করেছে । নাকি নিজেই ঠিক করলি ?
তাতে তোর কি?– ধাপ্পাবাজ–।-নীলা চিৎকার করে ।
-অতো উত্তেজিত হোস না । আর কিছু বলবি-?শুধায়
দেবকান্ত ।
না– তোর সাথে কথা বলতে আমার ঘেন্না হচ্ছে ।
—- আজ মহাপঞ্চমী। সকাল দশটা । 7/31 হাওড়ার
বাসুদেব বাবু লেন । –কাকিমা, এটা একটু নীলুকে দিয়ে দেবেন ।
আরে বসো বসো দেবকান্ত । জানো তো ও আজ মল্লারের সাথে একটু মার্কেটিংয়ে বেরিয়েছে ।ফিরতে দেরি হবে । মল্লার কি ভালো ছেলে–! মাথার মধ্যে পেরেক ঠুকছে কাকিমা । শালা আমার গালে কেউ চড় কষালো নাকি রে? সেধে অপমান হতে এসেছিলি হয়ে যা । –উঁ হু হু–গলা খাঁকারি দিই । না কাকিমা- আমি বারোটার লোকালে ফিরে যাবো । আসলে নীলু এই পেঁয়াজ খোসা রঙের বালুচরিটা কেনার জন্য টাকা দিয়েছিল আমাকে । –কাকিমা একগাল হেসে– ও তাই
-ও যে কখন কাকে কি দেয়– নিজেই জানেনা । ভুলতেও সময় নেয় না বেশি । তুমি তাও ভালো ছেলে ।মনে করে সত্যি কিনে নিয়ে গেলে-।- তাড়া লাগালো সে
–না না অতো ভালো না কাকিমা– । যেমনটি মল্লার।
কাকিমা উঠি । –কত ভাড়া লেগেছে বাবা–?
ভাড়া? লাগেনি তো । W/T তে এসেছি ।ছাত্রাবস্থার পুরোনো অভ্যাস ।–ভালো– তা তোমাকে কিন্তু নীলুর
বিয়েতে আসতে হবে বাবা–, ছুরি বোধহয় এরকম ভাবেই চালাতে হয়–।
–স্বাগতা বলছিল– ,মুখের কথা কেড়ে নেয় কাকিমা-
হ্যাঁ হ্যাঁ ঠিকই বলেছে এই নভেম্বর—এসো বাবা ।
কাকিমা এই রসিদটা–6870 টাকা । আর-130 টাকা ফেরত । আর ইঞ্জিনিয়ার জামাই এর পছন্দের বালুচরি
— দাঁত কেলাচ্ছি–বললুম উঠি তাহলে।–সেকি-?এই মিষ্টি গুলো কে খাবে । তোমার জন্য আনলাম যে ।
-দেখুন প্রায় তিনটে বাজে । আপনারও আজ খেতে দেরি হয়ে গেল । বারোটার লোকাল তো হোল না ।চারটের লোকালটা মিস্ করতে চাইনা । আপনার মেয়ে জামাইও ফিরলো বলে । অনেক বড়ো খাওয়া পাওনা তো রইলো– ।উঠি–আজ আর প্রনাম এলো না–।
হাওড়া স্টেশনের ব্যস্ততা । –কচুরি—কচুরি— শেষের দিকে আর-রি-শোনা যাচ্ছে না ।কচু–কচু–উইদাউট টিকিট লাফ দিয়ে উঠলুম– কচু কচু–।
–স্বাগতা বসে আছে ট্রেনে । দু প্যাকেট কচুরি কিনলাম । এই লাইনটা বড়ো অদ্ভুত । মেদিনীপুরের পর থেকে
ঘন জঙ্গল । ওড়িষার সিমলিপাল থেকে বিহারের দলমা পর্যন্ত বিস্তৃত । হকার ওঠানামা কম । স্পেশাল যেটা তা হোলো– কবিতা আবৃত্তি করে একজন ভিক্ষা করে । বড়ো অভিনব । তার ঝুলিতে কোন কবি নেই ।
আজ সে আমার একটা প্রিয় কবিতা দিয়ে শুরু করেছে
“—আমি ছাড়া ঘরে থাকে আর একটা জীব–এক ভাড়াতেই–নেই তার অন্নের অভাব–“–,বাঁশি বাজায় করুন সুরে হৃদয় মাঝে রবিঠাকুর । তুমি কি নির্দয়–কি নিষ্ঠুর— কি সহজ ভাষায় একজনকে উন্মোচিত করে দাও আমারই মতো । —— নীলা-। ওর টাকাটা প্রথমে ঢুকেছে দেখালেও– ওটিপি র সময় লিঙ্ক ফেল বিভ্রাটে
শেষ পর্যন্ত কেঁচে গেছে । তাই চৌধুরীগিন্নির দেওয়া- জামা প্যান্টের বোনাস আর দুমাসের বকেয়া বেতনে
নীলুর পেঁয়াজখোসা রঙের বালুচরি । স্বাগতা নীলার টিকটিকি । ধরা পড়েছিল আমার হাতে । সব শুনেটুনে
অবাক । হয়তো আমার প্রেমেই পড়ে গেছে ।
আচ্ছা দেবুদা–নীলা এটা করলো কি করে?
কি–টা–? ও ওই-‘মল্লার–?
আমি বললাম করেনি তো –? কিছু করেনি– হয়ে গেছে
–হয়ে যায়– । কবিতাবালা–“—শৌখিন মেজাজ–যত্নে পাট করা লম্বা চুল–কর্নেট বাজানো তার শখ—–“
স্বাগতা আমার পাশে বসে । ট্রেনের জানলা দিয়ে হুহু করে বাতাস ঢুকছে– আমার অবিন্যস্ত চুল উড়ছে বিধ্বস্ত মনের মতো । হাত দিয়ে চুল ঠিক করা যায়– মন—?
–তুমি যে এসব করলে–এসবের মানে নীলা কোনোদিনই বুঝবে না– । আমি বললাম বুঝবে-বুঝবে
–মনেহয় ক্ষুন্ন হোল স্বাগতা । কবিতাওয়ালা–“—ঘরেতে
এলো না সে তো মনে তার নিত্য আসা যাওয়া—-” সে আগিয়ে যাচ্ছে সামনের দিকে ।
–আচ্ছা স্বাগতা–তুমি শিবরঞ্জনী আর আমার কি কি খবর নীলাকে বলেছ? — যা দেখেছি তাই–।
যা দেখেছ মানে? — কালো সোনালী শাড়ি পরে শিবরঞ্জনী–আর তার পাশে আমার হাঁটা– আর একটা পাতলা লোকও তো তার পাশে হাঁটছিল । কই সে কথা তো তুমি নীলাকে বলোনি । জানো ও কে? ওর স্বামী ।
পুরুলিয়া থেকে বিষ্ণুপুর ঘুরতে এসেছিল । এখানে ওর বরের ডেঙ্গু হয় । যেদিন প্রথমবার তুমি দেখো–সেদিন
আমি ওর বরকে রক্ত দিতে গেছিলাম । ক্লাসিক হেমারেজিক ডেঙ্গু । প্লেটলেট নেমে গেছিল চল্লিশে
— ওরা হেল্পলেশ ছিল । আমি পুরোনো বন্ধুর কাজ করছি । ওরা কাল চলে গেছে । হ্যাপি কাপল্ । ভালো
স্টুডেন্টও ছিল । –তোমার কোনো দোষ নেই স্বাগতা ।
তুমি পুরো ইনফরমেশন জানতেই না । শিবরঞ্জনী আমার ভালো বন্ধু-‘। এখন ওরা দুজনেই কলেজে পড়ায় । –কবিতাওয়ালা–“— মেয়েটা তো রক্ষে পেলে–
আমি তথৈবচ । — পরনে ঢাকায় শাড়ি কপালে সিঁদুর——“–, , শোনো স্বাগতা- আমার একটা জীবন চলে যাবে । — আরে! কাঁদছো কেনো?–
–আমার ভুলের জন্যইতো—
-পরের বার নিজের ক্ষেত্রে সাবধানে থেকো । সব খবর পুঙ্খানুপুঙ্খ নেবে,মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষন করবে– তারপর
ডিসিশন । –আর শোনো- নীলুকে কিছু বলার দরকার নেই— । কবিতাওয়ালা–“—ছেঁড়া ছাতা রাজছত্র মিলে
চলে গেছে এক বৈকুন্ঠের দিকে– –“–। সে এবার নেমে যাবে হয়তো—“— এ গান যেখানে সত্য সেইখানে বহে চলে ধলেশ্বরী—–“–। পাশে স্বাগতা নেই । গেটের কাছে একবার উঁকি দিলাম নেই-, বাথরুমের ভিতর কারো সাথে কথা বলছে ফোনে—। চাকার সাথে লাইনের একটানা ঘষটানি শব্দে কিছু বোঝার উপায় নেই । একটা বিদ্রোহী আওয়াজ সমস্ত ভালো শব্দগুলো মুছে মুছে নিস্ফল আক্রোশে কানের কাছে চিৎকার করে যাচ্ছে ইতর—ইতর—ইতর—।
আমার ফোনটা আর বাজবে না– সুইচ অফ ।
–স্বাগতা বেরিয়ে এলো বাথরুম থেকে । পিয়ারডোবা
স্টেশন–,। কবিতাওয়ালা–“—মাঝে মাঝে সুর জেগে ওঠে এ গলিটার বীভৎস বাতাসে–কখনো ভোরবেলা আধো অন্ধকারে–কখনো বৈকালে ঝিকিমিকি আলোয় ছায়ায়—“—। আনমনে দূরন্তগতির শালগাছ দেখছি । হঠাৎ কানে তীব্র স্বরে ধাক্কা খাই– হ্যালো– নায়ক হবি—? স্বাগতা তার ফোনটা আমার কানে ধরেছে । নীলুর গলা শাণিত ছুরির মতো– ট্রাজিক হিরো হবি–, — ত্যাগ আর বিনয়ের অবতার হবি?–
— বদমাশ—- আমি আসছি । শেষ লোকাল ধরে–
তুই বিষ্ণুপুর স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকবি । স্বাগতাকে বলেছি– একটা সিঁদুর কৌটো কিনতে– নেমেই– ছিন্নমস্তার মন্দিরে যাবো । —‘
–এই শোন—শোন—-পাগলামি করিস না—
কবিতাওয়ালা–“—-হঠাৎ সন্ধ্যায় সিন্ধু বাঁরোয়ায় লাগে তান— সমস্ত আকাশে বাজে অনাদিকালের বিরহবেদনা— তখনই মনে হয় এ গলিটা ঘোর মিছে–দুর্বিষহ–মাতালের প্রলাপের মতো—“—।
— স্বাগতা আমার হাতটা ধরে জানালার পাশে বসালো।
সাতটা থেকে আটটা । স্টেশনে বসে আছি । পাঁচটার সময় হাওড়া থেকে শেষ লোকাল ছেড়েছে । জীবনে সেও সঠিক সময় মেনটেইন করলো । এইমাত্র ঢুকলো সে । সামনের দিক থেকে চার নম্বর কামরা থেকে একটা মেয়ে পাগলের মতো ছুটে আসছে । কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমাকে পিষে ফেলতে ফেলতে কাঁদতে থাকে সে—তুই ছাড়া নীলা কারো সহ্য হবে না রে—
–~০০০XX০০০~–