উত্তরবঙ্গ ভ্রমণ (২)
✍ কাকলি ঘোষ
কাল কাঞ্চন কন্যা এক্সপ্রেস যথা নির্দিষ্ট সময়ে নামিয়ে দিল নিউ ম্যাল জংশনে। স্টেশনে গাড়ি নিয়ে হাজির ছিলেন হাস্য মুখে প্রসাদ জি। উত্তর প্রদেশের বাসিন্দা। পুরুষানুক্রমে উত্তর বঙ্গে বাস। বাংলা বলেন জলের মত। জলঢাকা রিভার ভিউ রিসর্ট বুক করা ছিল আগেই। সম্পূর্ণ জঙ্গলের মাঝখানে জলঢাকা নদীর ধারে অতি মনোরম রিসর্ট। ম্যানেজার ইন্দ্রনীল ব্যানার্জী অতি সজ্জন। আদর যত্ন করে ঘরে তুললেন। এবং আসা মাত্রই জানালেন গত রাত্রেই হাতি ঘুরে গেছে রিসর্টের পাশ দিয়ে। দুপুরে চমৎকার একটি লাঞ্চের পর ঠিক হল গরূমারা অরণ্যে সাফারিতে যাওয়া হবে। সেই মত ব্যবস্থা করে যথা সময়ে ড্রাইভার নুরুল হাসান এবং গাইড দীনেশ ভাইএর সঙ্গে চেপে বসা গেল সাফারির জিপে। গাড়ি প্রবেশ করল সভ্য সমাজ থেকে দূরে __ অরণ্যে__ গভীর অরণ্যে।
গা ছম ছম
পাতা শন শন
বুক দুর দুর
মৌন দুপুর।
শাল, সেগুন, জারুল চিরুনি গাছে ঘেরা নিবিড় অরণ্য, গাছের পাতার ফাঁকে ফাঁকে এক চিলতে ম্লান রোদ্দুর, আকাশে থেকে থেকে কালো মেঘের আনাগোনা, তারই মধ্যে শুরু হল আমাদের জঙ্গল ভ্রমণ। কিছুদূর যাবার পরই দাঁড়িয়ে গেলো জিপ। অভূতপূর্ব দৃশ্য। বুনো দাঁতাল হাতি রাস্তা পার হচ্ছে। একেই বলে বোধহয় গজেন্দ্র গমন। মুগ্ধ চোখে দেখলাম। কিছুটা সম্ভ্রমের সঙ্গেও।
তারপর আবার শুরু হল চলা। বনের অন্তঃস্থল থেকে উঠে আসা এক অদ্ভুত মাদকতাময় গন্ধ, মাঝে মাঝে নিবিড় হয়ে আসা গাছ গাছালি, পাখির কাকলি, জঙ্গলের বুক চিরে চলা ঝোরার কলতান সব মিলিয়ে হারিয়ে যেতে চায় মন___ ওই কুহকিনী,মায়াবিনীর গভীর আঁচলের নিচে।
দীনেশ ভাই জানালেন হাতি দেখা গেছে সুতরাং আরো কিছু দেখার আশা আছে। কিন্তু ততক্ষণে শুরু হয়েছে বৃষ্টি। প্রথমে অল্প পরে মুষল ধারায়। ড্রাইভার নুরুল হাসান শঙ্কার সাথে জানালেন এই বৃষ্টিতে আর হয়ত কোন জীব জন্তুর দেখা পাওয়া যাবে না। ব্যাড লাক।
হয়ত তার মতে তাই। কিন্তু আমার চোখ, মন, সমস্ত সত্তা তখন অন্য কথা বলে চলেছে। এমন নিবিড় জঙ্গল, এমন মেঘলা আকাশ, মুষল ধারায় বর্ষণ, লতা পাতায় আকীর্ণ সুড়িপথ ধরে চলা জিপের সওয়ারী আমরা এ কি কম ভাগ্যে মেলে? সে হিসেবে ধরলে আমরা তো ভাগ্যবান!
বিকেল পাঁচটা নাগাদ শেষ হল জঙ্গল ভ্রমণ। মন প্রাণ মাটির, গাছপালার সজীবতায় পূর্ণ করে ফিরে এলাম বাসস্থানে।
আজ এই পর্যন্ত। আবার সামনের সপ্তাহে…
–~০০০XX০০০~–