“ক্লিওপেট্রা”
✍ ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায়
(পঞ্চম পর্ব)
অক্টোভিয়ান টাইবার নদীর তীরে কার জন্য যেন অপেক্ষারত। রোমানরা নাম দিয়েছে শান্তির রাজপুত্র। মনে মনে হাসলেন। রাজমাতা পম্পেইয়া কদিন থেকেই উদ্বিগ্ন।কর্ডিলেরার মৃত্যুর পর পিতার হৃদয়েশ্বরী তো তিনিই ছিলেন। আজ যৌবন সমুদ্রে ভাটা পরেছে। জানতে বাকি থাকে নি ক্লিওপেট্রা এখন সিজারের মনমন্দিরের সম্রাজ্ঞী।
প্যাট্রেসিয়ান আর প্লেবিয়ান। যেন উত্তরমেরু আর দক্ষিণ মেরু। সেই কবে থেকে বিবাদ। আর এখন গৃহযুদ্ধ। এর উপরে গোদের উপর বিষের ফোড়া ক্রীতদাস। রোম সাম্রাজ্যের উত্থান আর সমৃদ্ধি তো এই দাসেদের কাঁধে ভর করেই। মনুষ্যত্বের চরম অপমান করেছে রোম । তার ফলশ্রুতি একেবারে হাতেনাতে।
সিজারের উপরে কত আস্থা ছিল ।পালকপিতা উনি ।ঔরসজাত সন্তান না হলেও কখনও মনে হয় নি ।আর আজ বড় বিভ্রান্তি গ্রাস করেছে তাকে । পম্পি, ক্রেসাস আর জুলিয়াস ।তিন জনের জোটে রোমান দের মনে বিশ্বাস জেগেছিল ।এবার হয়তো একটা সুরাহা হবে ।
পারস্য আক্রমণে ক্রেসাস মারা গেলেন ।জুলিয়াস তখন গল দেশ আক্রমণ করে ওখানেই ।আর পম্পি ।অভিজাত প্যাট্রেসিয়ান দের তাঁবেদার ।বলা নেই , ক ওয়া নেই ।ঘোষণা করলে জুলিয়াস এর কোনো ক্ষমতা নেই ।আমি সর্বেসর্বা ।ব্যাস !জুলিয়াস দেশে ফিরে পম্পিকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে ।পম্পি চলে গেছে আলেকজান্দ্রিয়া তে ।ওখানে গিয়েই ক্লিওপেট্রার মুখ দেখে এখন প্রেমে হাবুডুবু ।
রোমের শত্রু সুলা ।চিরকাল সাধারণ মানুষ কে বঞ্চিত করেছে ।আর মারিয়াস ।ঠিক উল্টো ।শ্রদ্ধা তে মাথা নত হয়ে যায় ।
সকালে জুপিটারের আরাধনা রত পম্পেইয়া কে দেবী মনে হচ্ছিল ।
একটু পরেই সামির আসবে । পারস্যের এই কার্পেট ব্যবসায়ী ভীষণ আমুদে ।ওর ই সমবয়সী ।ওর মুখে ভারতবর্ষের কথা শুনতে বেশ ভালো লাগে ।
সামিরের বিলম্ব দেখে রাজমাতার কাছে গেল অক্টোভিয়ান ।
মাতা বললেন “পুত্র ! তুমি কি জানো তোমার পিতার মতিভ্রম হয়েছে । তিনি জনান্তিকে জানিয়েছেন যে ক্লিওপেট্রা কে তিনি রাণী করবেন “।
মদমত্ত হস্তীর মতো গর্জে উঠলেন বীর ।বললেন “আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন মাতা ।এ অধম বেঁচে থাকতে তা কখনোই সম্ভব হবে না ।আর এটাও শুনে রাখুন এমন স্বপ্ন দুঃস্বপ্ন ছাড়া আর কিছুই নয়”।
“পুত্র! মাতা হয়ে এ আলোচনা করতে হল ।বৃদ্ধের তরুণী ভার্যা অত্যন্ত ভয়াবহ । এই বয়সে সতীনের জ্বালার কথা কিন্তু আমি বলিনি ।আমি কী বলতে চাইছি তুমি নিশ্চয় আন্দাজ করতে পারছো ।”
“মাতা! আমার অগোচরে কিছু নেই ।শুনেছি প্রেম অন্ধ ।ভালো মন্দের বিচার করার শক্তি থাকে না ।আলেকজান্দ্রিয়া তে নিজের জায়গা পাকা করতে গেলে ক্লিওপেট্রা অভিনব কৌশল এঁটেছেন ।এটা ওনার কূটনৈতিক চাল ।তাই ফাঁদ পেতেছেন ।যে ফাঁদে পিতা ধরা দিয়েছেন ।”
“এখন কী হবে পুত্র !রোমের ভবিষ্যত !
“চিন্তা করবেন না মাতা ।আমি অগাস্টাস সিজার ।জুলিয়াস সিজারের পালক পুত্র ।তাঁর মতোই শক্তিশালী আমি ।রোমান সাম্রাজ্যের জাতীয় পিতা হবো আমি ।দেশমাতৃকার জন্য এই জীবন উৎসর্গ করেছি ।নারীলোভী যুদ্ধপ্রিয় নয় ।ভালোবাসার মণ্ত্রে জাগাবো রোমকে ।আর এই পথ ত্যাগ,তিতিক্ষা আর সংযমের পথ। যা ভারতবর্ষ শিখিয়েছে।”
“ভারতবর্ষ ! সে কেমন দেশ ? সে দেশ কী শান্তির দেশ ?”
“হ্যাঁ মাতা। সেখানে রাজপুত্র রাজসুখ পরিত্যাগ করে শান্তির সন্ধান করে। সেখানে নারীজাতি কল্যাণী অপূর্ব সেই দেশ। বুদ্ধের দেশ। জ্ঞানের দেশ। আমি সেই আদর্শে ব্রতী হয়েছি। রোমের শান্তি তবেই তো আসবে।”
(এরপর… ক্রমশ…)