পাগলের ডঙ্কা বাজে হরিচাঁদ বলে (৩৮)
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
✍️ অমিতাভ মল্লিক অমি
লালবাগ, ঢাকা
★প্রফুল্ল পাগলের বরে গোপাল বাড়ৈ-এর পুত্রের জন্ম★
শ্রীগোপাল বাড়ৈ বাস মরিচবুনিয়া।
বিশারকান্দীর হইতে দক্ষিণে গিয়া।।
পিতা ছিল শ্রীগৌরাঙ্গ সাধক মোহান্ত।
প্রফুল্ল পাগলে ছিল ভকতি একান্ত।।
গোপালে দানিলো সাধু পাগলের পায়।
সুখের সংসার তাঁর পাগল কৃপায়।।
সুখী সংসারে তাঁর দুঃখের এক সূত্র।
কন্যা শুধু সংসারেতে নাহি কোন পুত্র।।
চারকন্যা সম্পা শান্তি তীর্থমনি দীপা।
গোপাল আনন্দে বলে সবি তারি কৃপা।।
ঘরের রমনী তাহার সন্ধ্যা নামিনী।
দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে বধু দিবস যামিনী।।
পুত্র নাই বলে যেন সামান্য অসুখী।
তবু ধনি স্বামীসনে সদা গুরুমুখী।।
গোপাল রমনী সনে একান্ত আলাপে।
বলে কেন পুড়িতেছো অযথা সন্তাপে।।
চারিকন্যা এই গৃহে শোন ওহে সতী।
সবে হরি পরায়ণা বড় ভাগ্যবতী।।
শ্রীহরিচাঁদের ছিল তিন কন্যা শোন।
শ্রীহরি কন্যাকে হেলা করেনি কখনো।।
কন্যারত্ন ঘরে যার রয়েছে আদরে।
হরিকৃপা সদা শুনি বিরাজে সে ঘরে।।
যে অভাগা কন্যাদিগে করে অবহেলা।
হরি তাহাতে বিমুখ না কমে ঝামেলা।।
যেই গৃহে কন্যা রয় পরম আদরে।
সেই গৃহে সুখ বৃদ্ধি ধনলক্ষ্মী করে।।
মতুয়ার নীতি এই পুত্র কিংবা কন্যা।
সম অধিকারী হবে বৈষম্য রবেনা।।
এহেন মধুর ভাষে গোপাল ভার্যারে।
শিখায় সংসার নীতি নানান প্রকারে।।
হরিকথা নিত্য পূজা ধর্মগ্রন্থ পাঠে।
মধুর দাম্পত্য কাল হেসে সুখে কাটে।।
পাগল প্রায়শ আসে প্রতি মাসে মাসে।
পাগলেরে গৃহে পেলে প্রেমানন্দে ভাসে।।
দম্পতি যুগল সুখী পাগল সেবায়।
পাগলও এ গৃহে এলে যে শান্তি পায়।
কিসে গৃহে ধন আনে কিসে সুখ আনে।
গোপালে শিখায় নীতি সুযুক্তি বিধানে।।
পাগলের কথা মেনে করে সব কার্য।
কার্যেতে সুফল ফলে তাতে অনিবার্য।।
এইভাবে দিনগত গোপাল সন্ধ্যার।
দাম্পত্য জীবন কাটে আনন্দে অপার।।
একবার ভাদ্রমাসে সে বাড়ী উঠোনে।
মহোৎসব মহানন্দ হরিনামগানে।
গান হল গোটা কয় পরে হরিকথা।
তুলিল প্রসঙ্গ এক পিংকী নাম্নী ভক্তা।।
তিনি কন পাগলেরে রয়েছে নালিশ।
এই বাড়ী এলে মন পোড়ে অহর্নিশ।।
গোপালের নাই আর সহোদর ভাই।
কিসে হবে বংশরক্ষা শুনিবারে চাই।।
কন্যাগণে বিয়ে দিলে গৃহ হবে শূন্য।
একটি নন্দন হলে আশা হয় পূর্ণ।।
গোপাল তোমার পদে সপিয়াছে সব।
গোপালেরে পুত্র দানে বাড়াও গৌরব।।
পাগল কহিল ধীরে কথা মন্দ নয়।
গোপালতো কহেনা তা কখনো আমায়।।
না চাহিলে কারে কেবা কিবা দেয় যেঁচে।
তুমি চাহ তার লাগি সে কি তা চেয়েছে।।
গোপাল চরণে পরে করিল প্রণাম।
কহিল কি চাব আমি ওহে গুণধাম।।
চাওয়ার আগে তুমি আশা পূর্ণ কর।
চরণ ভিন্ন চাওয়া নাই আর বড়।।
পদে রেখ হে মালিক পদে হোক মতি।
তোমার স্বকাশে মোটে এটুকো ভারতী।।
শুনিয়া পাগল কহে কথা মন্দ নয়।
পুত্র হলে তবু তোর মোর ভাল হয়।।
এখানে আজিকে যত ভক্ত ভক্তা আছে।
তোর হয়ে আমি বলি সবাকার কাছে।।
এই গৃহে আসে যেন পুত্রধন সাধ।
সব ভক্ত মিলে কর সেই আশীর্বাদ।।
ভক্তগণে সমস্বরে পাগলে বলিল।
পাগল দানিলে বর, ফলিবে সুফল।।
পাগল বলিল আমি কি বলিবো আর।
মোর আছে বিচরণ দিনু তারে ভার।।
বড় পাগলের নামে মালিকান্দাশ্রম।
পুত্র হলে চালডাল দিবে সোয়া মন।
আর দিবে ভক্তসেবায় ইলিশ মাছ।
ওড়াকান্দী তাই দিবে বলিলাম আজ।।
তবে জানি কন্যাভাগ্য গোপাল সন্ধ্যার।
গর্ভবতী হলে যেন কন্যা ততবার।
ফলহীনে ফলদাতা শ্রীহরি তা জানা।
আমি পারি করিবারে শুধুই প্রার্থনা।।
হরিগুরু বিচরণ কৃপা কর দান।
গোপালের এ গৃহে হোক পুত্র সন্তান।।
এইভাবে সেদিনের সভা ভঙ্গ হল।
সবে দিল প্রেমধ্বনি জয় হরিবোল।।
এরপরে গোপালেরে একান্তে ডাকিয়া।
পাগল দিলেন বিধি গোপনেতে নিয়া।।
বলিলেন শোন তুই মোর কথা এই।
তোর ভাগ্যে লেখা দেখি পুত্র ভাগ্য নেই।।
তবে হলে হতে পারে কিছু মেনে বিধি।
মন দিবি দোহে মিলে সেই ওড়াকাঁদি।।
শুদ্ধভাবে রবি কিছুকাল একসনে।
মিলিবিনা পরষ্পরে দাম্পত্য মিলনে।।
হরিনাম প্রাত্যহিক দোহে করা চাই।
একদিন তাহে যেন না পরে কামাই।।
এরপরে এলে মহাবারুণী দিবস।
শয্যাতে পবিত্র চিতে রাতে সহবাস।।
এই রীতি মেনে যদি মিল সহবাসে।
সন্তান আসিবে তাতে পুত্র মনে আসে।।
নারীসঙ্গ করে যেবা সন্তানের আশে।
তাহারে না পায় জানি কামনার দোষে।।
নারীতে করে গমন কাম তাড়নায়।
ধর্মরাজ্যে ঠাঁই সেই কখনো না পায়।।
গার্হস্থ প্রশস্ত নীতি মতুয়া বিধান।
সেই নীতি রক্ষা হলে বাড়ে তার মান।।
গার্হস্থ নীতিতে চাই মানা রীতিনীতি।
রীতি না মানিলে আছে তাতে নানা ভীতি।।
এই মত আরো নানা নিগুঁঢ় রহস্য।
গোপালে পাগলে কয় গোপনে অবশ্য।।
সব তা লেখনিতে প্রকাশ অনুচিত।
তাই তাহা না লিখিনু যথাযথ ঠিক।।
পাগলের উপদেশ আদেশ নিষেধ।
অক্ষরে অক্ষরে রক্ষে ভেবে বানী বেদ।।
এরপরে যথাকালে সন্ধ্যাদেবী সতী।
নিয়ম পালিয়া হল সত্যি গর্ভবতী।।
পূর্ণকাল পরে সতি প্রসব করিল।
জোড়া পুত্র কন্যা এবে গর্ভেতে জন্মিল।।
প্রতিবারে এই গর্ভে কন্যা জন্মিবেই।
সে কথাও রক্ষা পেল মনে ভাবি এই।।
সেই সাথে পুত্র হল পাগলের বরে।
গোকুল পাগলেই নামকরণ করে।।
কন্যাটির নাম রাখে পাগলে সুপর্ণা।
এভাবে গোপাল সন্ধ্যা হল ধন্য ধন্যা।।
গোকুল চন্দ্রের জন্ম অপূর্ব আখ্যান।
গোপালের মুখে শুনে করিনু বয়ান।।
পাগলচাঁদের বরে ফলহীনে ফলে।
অভাগা নিষ্ফলা শুধু নাহি মিশে দলে।।
জ্ঞানভক্তি ভাবভক্তি সর্বশক্তি মূল।
গুরুভক্তি হলে তারে ছোঁয়না শার্দূল।
হরিলীলামৃতে আছে ব্রজনাথে বনে।
গুরুভক্তি ছিল বলে জন্তু যায় ঘ্রাণে।।
অমিত বিচারে মানে আচারে পালায়।
অনাচারী ব্যাভিচারী নরকেই ধায়।।
গুরুভ্রাতাগণ যার সকলে আশ্রিত।
এক অভাগায় কেন রইল বঞ্চিত।।
ভক্তগণ কর কৃপা অধমের প্রতি।
গুরুবৃক্ষ ছায়াতলে গড়ুক বসতি।।
🍈🍈🍈🍈🍈🍈🍈
🍈🍈🍈
কবির সংক্ষিপ্ত পরিচয় :-
🌾🌾🌾🌾🌾🌾🌾
মতুয়া পরিমন্ডলের কোন একটি বিশেষ মাধ্যম থেকে বিশেষ প্রয়োজনে আমার পরিচিতি, কর্মকান্ড ও সংক্ষিপ্ত জীবনবৃত্তান্ত চাওয়া হলে, আমার সম্পর্কিত নিম্নোক্ত তথ্যসমূহ প্রদান করলাম। ভাবলাম, এটিকে টাইম লাইনে পোস্ট করে রেখে দেই। পরবর্তীতে প্রয়োজনে ব্যবহার করা যাবে। তাই এখানে সেটি পোস্ট করা।
★ নাম- মতুয়া অমিতাভ মল্লিক অমি (তরুণ কবি, ঔপন্যাসিক, গীতিকার, নাট্যকার, মতুয়া গবেষক ও পত্রিকা সম্পাদক)
★ পিতা- প্রয়াত মতুয়া দুঃখীরাম মল্লিক।
★ মাতা- প্রয়াত মতুয়া ঊরফুল রাণী মল্লিক।
★ স্ত্রী- মতুয়া পপি বিশ্বাস।
★ গুরু- প্রয়াত মতুয়াচার্য শ্রীমৎ মনিন্দ্রনাথ গোস্বামী (মনু গোঁসাই) ও শ্রীমৎ প্রফুল্ল পাগল।
★ভাইবোন- ৫ ভাই,বোন নেই।
★ ঠিকানাঃ- (স্থায়ী),
গ্রাম- হারতা( মতুয়াপল্লী) ডাক- হারতা,থানা- উজিরপুর,জেলা- বরিশাল।
(অস্থায়ী), ২৬২, লালবাগ রোড(২য় তলা), লালবাগ, ঢাকা।
★ বর্তমান কর্মজীবন ও কর্মস্থল – এসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার, ডায়নামিক ইঞ্জিনিয়ারিং লিঃ, বাড়ী -১৪৫ (২য় তলা), রোড- ৪, মহাখালী ডিওএইচএস, ঢাকা।
★ জন্ম- ১৩৯০ বঙ্গাব্দের বৈশাখ মাসের শেষ শুক্রবার।
★ পত্রিকা সম্পাদনা-
১. ষাণ্মাসিক হরিধ্বনি পত্রিকা’র বর্তমানে সম্পাদক।
২. মাসিক মতুয়া দর্পন পত্রিকার বার্তা সম্পাদক ছিলেন।
৩. শ্রীহরিচাঁদ শিক্ষা সংস্কৃতি পরিষদ,(ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) প্রকাশিত স্মরণিকা ‘মুক্তিরবানী’ পত্রিকার সম্পাদনা পরিষদের উপদেষ্টা ছিলেন।
৪. বরিশাল সরকারী পলিটেকনিকের ছাত্রাবস্থায় কলেজে দেয়াল পত্রিকা ‘রশ্মি’র সম্পাদক ছিলেন।
৫. শ্রীশ্রীগুরুচাঁদ গ্রন্থাগার প্রকাশিত দেয়াল পত্রিকা ‘ঋদ্ধি’ র সম্পাদক ছিলেন।
★ প্রকাশিত গ্রন্থঃ-
১. রক্ত গোধূলিতে আর গোলাপ ছোঁবনা(উপন্যাস),(২০০৪)
২. শ্রীশ্রীহরি-গুরুচাঁদ ভক্তলীলা মাধুরী( লীলাকাব্য)(২০০৬)
৩. মনু গোঁসাইঃ বৈঠা বিহীন তরীর কান্ডারি,(২০০৯)
৪.এসো ডাকি তারে( মতুয়া শিশুদের ছড়া)
৫. এ মিনতি মহা- মতুয়াচার্য শ্রীহিমাংশুপতি ঠাকুরের চরণ পদ্মদলে( পত্র নিবন্ধ)(২০১৫)
★ ২ শতাধিক মতুয়া সংগীতের তিনি রচয়িতা।
★ লিখিত মঞ্চায়িত মঞ্চনাটকঃ- ১.রাম থাপ্পর, ভবের হাটের রঙ্গ লীলা, স্ত্রৈণ, শ্বশুর বাড়ীর জামাই( আঞ্চলিক কাব্য নাটক), গুরুচাঁদের দয়ার ফসল।
★অচিরেই প্রকাশিতব্য গ্রন্থাবলী- ১.শ্রীকৃষ্ণদাস ঠাকুরের জীবন কথা,(গদ্যে)
২.মতুয়া সংগীত লহরী(গান)
৩.চৈতী চতুর্থীর রোদেলা রাত্রী।(কবিতা)
৪.গার্হস্থ্য মতুয়া দর্শনে দাম্পত্য জীবন রহস্য।(গবেষণা)
★অন্যান্য চলমান মতুয়া সাহিত্য বিষয়ক গবেষণা-
তিনি ‘শ্রীশ্রীহরিচাঁদসহ পঞ্চভ্রাতাগণের পূর্বাপর সমস্ত বংশীয়গণের পরিচয়(গদ্যে), শ্রীমৎ প্রফুল্ল পাগলের জীবনী বিষয়ক গ্রন্থ(পদ্যে) রচনায় নিয়মিত কাজ করে চলেছেন।
★ রচিত নানা গল্প কবিতা প্রবন্ধ যেসব পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে- দৈনিক নয়া দিগন্ত, মাসিক মতুয়া দর্পণ, ষাণ্মাসিক হরিধ্বনি, ষাণ্মাসিক জাগরণ, মুক্তিরবানী প্রভৃতি।
★ সামাজিক ও ধর্মীয় পর্যায়ে সাংগঠনিক কর্মকান্ডঃ
১. বর্তমান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, কেন্দ্রীয় পূর্ণব্রহ্ম শ্রীশ্রীহরিচাঁদ মন্দির,সোহরাওয়ার্দী উদ্যান,শাহবাগ,ঢাকা।
২. প্রতিষ্ঠাতা, মতুয়া শিশু-কিশোর শিক্ষা সংস্কৃতি সংসদ, মতুয়াপল্লী,হারতা,উজিরপুর,বরিশাল।
৩. প্রতিষ্ঠাতা, শ্রীশ্রীগুরুচাঁদ গ্রন্থাগার, মতুয়াপল্লী, হারতা, উজিরপুর, বরিশাল।
৪. মতুয়া সাহিত্য সমাজ,বাংলাদেশ- সংগঠণটির অন্যতম উদ্যোক্তা।
৫. মতুয়া ইয়ূথ স্ট্যান্ডার্ড এলায়েন্স (মাইসা)’র প্রধান নীতি নির্ধারক।
৬. বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট- এর কেন্দ্রীয় কমিটির গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক ছিলেন।
৭.তিনি কলেজ জীবনে কলেজে ও আঞ্চলিক পর্যায়ে ছাত্র রাজনীতিতে প্রবলভাবে সক্রিয় ছিলেন। বরিশাল সরকারী পলিটেকনিকে ২০০৫ সালে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে এ জি এস পদে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন।
৮.শ্রীধাম ওড়াকান্দীতে শ্রীকৃষ্ণদাস ঠাকুর স্মৃতিমন্দির নির্মান কমিটির তিনি ‘সদস্য সচিব’ পদে মনোনীত।
সবুজ স্বপ্ন অনলাইন পত্রিকা গোষ্ঠীকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি।
আপনাকেও পত্রিকার পক্ষ থেকে অশেষ ধন্যবাদ। সুদূর বাংলাদেশ থেকে আপনার এত সুন্দর কবিতাটি প্রকাশ করতে পেরে আমরাও আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ রইলাম।