।। ফুলটুসি ।।
✍🏻 অনিমেষ
[ তৃতীয় পর্ব ]
( পূর্ব প্রকাশিতের পর ) ….. দুপুর গড়িয়ে যায়। দুপুরের খাওয়া সেরে মন্দিরের পাশে বট গাছের ঝুরি ধরে দোল খাচ্ছিল ফুলি। পিছনে হাম্বা আওয়াজ শুনে ঘুরে তাকায় সে। একটা বাছুর মায়ের বাঁট থেকে দুধ খাচ্ছে, আর গরুটা আদর করে তার গা চেটে দিচ্ছে। বুকের কাছে কেমন জমাট বাঁধা কষ্ট ঠেলে ওঠে ফুলির। মনে পড়ে যায় ওর মা নেই। বাপ মায়ের আদর কেমন তা সে কোনদিনই জানে না। তার বয়সী ছেলেমেয়েদের দেখে মায়েরা আদর করছে, বাবারা জামাকাপড় খেলনা কিনে দিচ্ছে, তার কষ্ট হয়। সে এসব পায়নি কখনো। লোকের দেওয়া পুরোনো জামা পরেই সে বড় হয়েছে। গোয়ালিনী মাসি অবশ্য তার গরুর দুধ রোজ একটু করে খাওয়ায় ফুলিকে আদর করে, কিন্তু সে তো মা নয়। তাই মা দুগ্গাকেই ছোটবেলা থেকে সে মা বলে ডাকে। হঠাৎ ফুলি চেয়ে দেখে সে মন্দিরের মধ্যে মা দুগ্গার পাশে দাঁড়িয়ে। ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে দাঁড়াতেই মা হেসে বললেন, ” কিরে, দেখ তোর জন্য কি এনেছি “। মায়ের হাতে রঙিন কাগজ মোড়া কি যেন রয়েছে। সেটা হাতে নিয়ে খুলতে খুলতেই কিসের যেন ধাক্কায় চোখ খুলে গেল। তাকিয়ে দেখে দোল খেতে খেতেই কখন ঘুম পেয়েছে বুঝতেই পারেনি মেয়ে আর তাই বেচারি বটতলার ধূলোতেই শুয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। কতক্ষণ ঘুমিয়েছে খেয়াল নেই, সন্ধ্যে প্রায় হয়ে এলো। মংলু তাকে খুঁজতে খুঁজতে এখানে দেখতে পেয়ে জাগিয়েছে। মুখের দিকে তাকাতেই বললো, ” শিগগির চ, জমিদার বাবুর বাড়ি কচিদের ডাক পড়েচে “।
ফুলি তো অবাক, সত্যি এমন তো কখনো হয়না যে ছোটদের ডাক পড়েছে !!! বছরে ঐ একবার গাজনের সময় বুড়োশিবতলার মাঠে মেলা হয় আর একবার এই দুগ্গাপূজার সময় গাঁয়ের দুগ্গাতলার মায়ের মন্দিরে পূজো হয়। তখন তো সারা গাঁয়ের সবাই যায় সেখানে। জমিদার বাবুরাও সবাই আসেন। অষ্টমীর দিন নিজেরা দাঁড়িয়ে সকলকে ভোগ খাওয়ান। কিন্তু কই, এভাবে গাঁয়ের সব ছোটদের তো ডাক পড়েনি কোনদিন !!! ….. ফুলি জিজ্ঞেস করে, ” কি হয়েচে রে মংলু দাদা, তুই জানিস কেন ডেকেচে ? ” মংলু বলে ” আমি জানি নে, তবে ঘরে শুনলুম হেই সকালে যকন নদীর পাড়ে খেলচিলুম, তকন নাকি গাঁয়ের ঘরে ঘরে বাবুদের দিনু চাকর আর দারবান বলে গেচে সবারে পেইটে দিতি। আমি চললুম, তুই ও চ ‘। ফুলি সাত পাচ ভাবতে ভাবতে পথ চলতে থাকে মংলুর সঙ্গে।
[এরপর… ক্রমশ..]