✍️ দেবর্জিত সাহা (বয়স – ১৪ বছর)
লেখক পরিচিতি :-
জন্ম : ২রা ডিসেম্বর, ২০০৬, দম দম
স্কুল : বরানগর নরেন্দ্রনাথ বিদ্যামন্দির
শ্রেণী : অষ্টম
শখ : ছবি আঁকা, নাটক, লেখা, অভিনয়
“মায়ের ম্লান হাসি”
সমরেশ বসে পেপার পরছে। সমরেশের ছোট বেলার বন্ধু দিব্যেন্দু হঠাৎ দরজা দিয়ে ঢুকে সমরেশকে দেখে হকচকিয়ে গেল। দুজনে বন্ধু হলেও দিব্যেন্দু বয়সের দিক থেকে সমরেশের চাইতে বেশ ছোট
দিব্যেন্দু: কিগো দাদা, কি করো?
সমরেশ হেসে বলল: এইতো রে আজকের পেপার পড়ছি।
দিব্যেন্দু: আরে বাইরেতো মায়ের পুজো হচ্ছে তুমি যাবেনা? সেই এক বছর অপেক্ষার পর মা এলো। আরে চলো চলো। আরে চলো। সবাই একসাথে খুব মজা হবে।
সমরেশ: কি আর যাবো ভাই, জানিস তো এখন না মায়ের মুখে সেই আগের মত আবেগ ভরা সেই মিষ্টি হাসিটা দেখতে পাইনা।
দিব্যেন্দু: তুমি ঠিকই বলেছ সমরেশদা আগে যখন ছোট ছিলাম মহালয়ার দিনে সেই কাকভোরে, বলো আমরা সকাল থেকেই রেডিও নিয়ে বসে পড়তাম আর স্তোত্রপাঠ আহা। তারপর ষষ্ঠীর দিন। মায়ের মুখটা কি সুন্দরইনা লাগতো। মনে হত যেন মা আমাদের দিকে তাকিয়ে হাসছেন। কিন্তু এখন আর না সেই হাসিটা দেখতে পাই না। জানো, সত্যিই কেমন যেন বদলে গেছে সব। মায়ের মুখটা ম্লান। কি যেন কষ্ট একটা চেপে রেখেছে। চোখগুলো যেন তার ছল ছল।
এবার সমরেশ তার চেয়ারের সামনে উঠে দাঁড়িয়ে বলল
সমরেশ: সেই আগের মতো হাসি দেখবিই বা কোথা থেকে রে!
দিব্যেন্দু: কেন বলতো?
সমরেশ: দেখ চারিদিকে মানুষ এত টাকা খরচা করে ধুমধাম করে পূজো দিচ্ছে, চারিদিকে কত বড় বড় প্যান্ডেল, কত আলো। কিন্তু জানিস তো ভাই, দুগ্গামা এসব কিছু চায়না। সে যেন চায় সবাই যাতে তার নিজের মাকে ভালোবাসুক, আর বিশ্ব মাকে ভালোবসুক। কিন্তু – কিন্তু এখন চারিদিকে, এত বড় বড় ফ্ল্যাট এত বড় বড় বাড়ি তৈরি হচ্ছে। কিন্তু সেই বাড়িতে গর্ভদাত্রী মায়ের জায়গা হচ্ছে না। নিজের মাকে তাড়িয়ে দিচ্ছে। পাঠিয়ে দিচ্ছে দূরের কোন বৃদ্ধাশ্রমে, কোন পথে। কিছু ক্ষেত্রে অভাগীদের তো অনাহারেও দিন কাটাতে হয়। আমরা নিজেদের মা কে পথে বসিয়ে দুগ্গা মাকে সিংহাসনে বসাই।
দুগ্গা মা তো আসে বছরে কেবল সাত দিনের জন্য।
কিন্তু আমাদের গর্ভদাত্রী মা সে তো দশ মাস দশ দিন তার সন্তানকে পেটে ধরে রাখে। তাকে সারাজীবন আগলে রাখে। সেই মা আজ অভুক্ত। এবার বল দুগ্গা মায়ের মুখে হাসি ফুটবে কিভাবে…
কিভাবে ফুটবে…….
কিভাবে ফুটবে……………….
◆◇◆◇◆◇◆◇◆