“আব্বাস একটি মনের নাম”
○●○:: সলিল চক্রবর্ত্তী ::○●○
“আব্বাস, ৬ টা কোয়ার্টার রুটি আর ৬ টা লাড্ডু নিয়ে আয়” – আনোয়ার করাত চালাতে চালাতে বলল। আব্বাস কাঠের তক্তা গুলো রেখে “যাচ্ছি” বলে পয়সা নিয়ে কারখানা থেকে বেরিয়ে গেল।
ছোট কাঠের কারখানা ৬-৭ জন ছেলে কাজ করে, আব্বাসকে নিয়ে মুসলিম ৪ জন বাকিরা হিন্দু। তাতে অবশ্য কাজে কোন সমস্যা হয়না, মিলেমিশে কাজ হয়। ফাইফরমাশ আব্বাস ই খেটে দেয়।
একটু তোতলা, সরল, সাধাসিধে, বছর পনেরোর ছেলে পাঁচ-ছয় বছর হল এখানে কাজ করছে, মালিককে কাকা বলে ডাকে তার কাছেই খায়, রাতে কারখানাতেই ঘুমায়, বেতন পায় তবে নেয় না, মালিকের কাছেই জমা থাকে। নিয়েই বা কি করবে ! বাড়ি ঘর তো নেই, কোন ছোটবেলায় চলে এসেছে, কর্মচারীদের মধ্যে ঐ সবার ছোট কিন্তু মালিক ওকে সব থেকে বেশি বিশ্বাস করে। টাকা পয়সার লেনদেন মালিকের অনুপস্থিতিতে ঐ করে। সারাদিন হাড়ভাঙা খাটুনির পর স্নান করে তারাতারি রাতের খাবার খেয়ে নেয়, তারপর ঘুম আসার আগে পযর্ন্ত দিদির দেওয়া কিছু প্রাইমারি বই নাড়াচাড়া করে। না বুঝলে রবিবার বিকালে কারখানায় যেদিন বন্ধ থাকে তখন দিদির কাছে গিয়ে বুঝে আসে।
কারখানা লাগোয়া একটি বাড়ির এক অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের একটি ঘরে বিধবা মা আর পিতৃহীন মেয়েতে সামান্য ভাড়ায় থাকে। বছর বাইরের মেয়ে এবং মা অন্যের বাড়িতে কাজ করে কোন রকমে দিন গুজরান করে। ওরাই আব্বাসের পরিবার। সময় পেলেই ওদের বাড়িতে গিয়ে আব্বাস নিজের মনের চাহিদা মেটায়। দিদির ঘরে ভালো মন্দ কিছু রান্না হলে তারা আব্বাসকে না দিয়ে খায়না। আব্বাস অনেক সময় শুকনো পাউরুটিটা খেয়ে দিদির জন্য লাড্ডুটা নিয়ে আসে। দিদির হাতে লাড্ডু দিয়ে কাকিমাকে না দিতে পারার জন্য লজ্জা পেয়ে বলল “এবাল একদিন তুমাকে এনে খাওয়াবো”। দিদি স্নেহের শাষনের সুরে চোখ বড়বড় করে বলল “এই তুই শুধু রুটি খাস আনোয়ার ভাইরা কিছু বলেনা?” আব্বাস দিদিকে বোঝানোর চেষ্টা করল ” না না ওরা আমাকে খুব ভালোবাসে। ভাবে বোধহয় লাড্ডুটা আমি পরে খাবো” কাকিমা হাসতে হাসতে বলে “ভালোবাসবে না! অতো ফাইফরমাশ খাটলে সবাই ওরকম ভালবাসে।
এবার পুজোর দুইমাস আগে ঈদ পড়েছে। রসুল ভাই করিম ভাই ও আনোয়ার ভাই তিনজন মিলে আব্বাসকে একটা নতুন জামা প্যান্ট কিনে দিয়েছে। সেদিন ছিলো রবিবার। আব্বাস খুব খুশি। দুইতলায় মালিকের ঘরে গিয়ে নতুন জামা-প্যান্ট দেখিয়ে আসে পাশের মুদি, সেলুন, কাঁচের দোকান সবাইকেই একে একে দেখায়। মালিক একটু হালকা শাষনের সুরে বলেন কাজে মন দে – বিকালে ছুটি, তখন পাড়াসুদ্ধ লোককে দেখাস। সবার কাজ শুরু করে কিন্তু মনটা ছটফট করতে থাকে কখন নতুন জামাটা দিদি ও কাকিমাকে দেখাবে।
বিকালে দিদির বাড়িতে ঢোকার সময়েই আব্বাস শুনতে পেল দিদি ও কাকিমা বলাবলি করছে।
দিদি বলল “তোমাকে আমার এই উপকার করতে হবে না। কোথায় পাবে তুমি পঞ্চাশ হাজার টাকা? শুধু কি তাই! পঞ্চাশ হাজার টাকা তো নগদ নেবে, আর অন্য খরচ? এ তো গেল একদিক। তারপর তোমার কী হবে? অসুখ বিসুখ হলে কে দেখবে?” কাকিমা দিদির মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বললেন – “আমার কথা তোকে ভাবতে হবেনা। তোর বাবা ভাবলো না আর তুই কি ভাববি ! তিনি তো কারখানা লক আউট হতেই আমরা কি খাবো, কিভাবে বাঁচব! তাই ভাবতে ভাবতেই স্বর্গে চলে গেলেন। তাই বলে আমাদের কি চলেছেনা? ঠাকুর ঠিক দেখবেন। আর শোন, আমি মরলে শিয়াল কুকুরে তোকে ছিঁড়ে খাবে।” উচ্চস্বরে নিজেদের বাক বিতন্ডার মধ্যে কাকিমা হঠাৎ যেন নরম করে বললেন – “দেখ মা ভালো সম্পর্ক। ওরা আমাদের সব কথা শুনেছেন। শুনে রাজিও হয়েছেন। শুধু পঞ্চাশ হাজার টাকা চেয়েছেন বাড়িতে একটা মুদির দোকান করার জন্য। অন্যের দোকানে কাজ করে কি সংসার চলে! পরে সংসার তো আরো বড় হবে, এছাড়া ওদের তো আর কোন চাহিদা নেই। মেয়েও একটু নরম হয়ে বলল, “বুঝলাম, কিন্তু দু-চার জন লোক খাওয়ানো, অল্প সোনাদানা, কাপড় চোপড় এগুলো?” মা আরও নরম হয়ে বললেন, “হয়ে যাবে মা, হয়ে যাবে। ভগবান তোকে তো এত শাস্তি দেবেন না। একটা না একটা উপায় ঠিক হয়ে যাবে দেখিস, তুই শুধু অমত করিসনা মা, পছন্দ যখন হয়েছে —“আব্বাস হতভম্ব হয়ে দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে কথাগুলো শুনছিল, এটুকু বুঝলো দিদির বিয়ের ঠিক করেছেন কাকিমা কিন্তু নগদ টাকার জন্য বিয়েটা ভেঙে যেতে পারে। তখন ওর জামা প্যান্ট দেখানোর উৎসাহটাই মাটি হয়ে গেল। মা মেয়ের বাকবিতণ্ডার মধ্যে এতক্ষন ওরা কেউ আব্বাস কে খেয়াল করেনি। একসময় দিদি আব্বাসকে দরজার পাশে দাড়িয়ে থাকতে দেখে, ততক্ষণে আব্বাসও ধাতস্থ হয়। দিদি আব্বাসকে বলে, “কিরে ওখানে দাড়িয়ে কেন? ভিতরে আয়, তোর হাতে ওটা কি রে?”
আব্বাস দিদির কথার উত্তর না দিয়ে কাকিমাকে প্রশ্ন করে – “তাতিমা, দিদিল বিয়ে? ছোছুল বালি চলে যাবে?” কাকিমা একটা দীর্ঘ নিঃস্বাস ফেলে বলেন – “আর বিয়ে! আমরা যে গরীব, বিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা কই? তার উপর পঞ্চাশ হাজার টাকা নগদ? ওসব বাদ দে তোর হাতে ওটা কী বললি না তো!”
আব্বাস উদ্দীপনা ভঙ্গ মানসিকতায় আস্তে আস্তে বলল “রসুল ভাইরা ঈদে এই জামা প্যান্ট—-“প্যাকেট টা এগিয়ে দেয়। দিদি একগাল হেসে প্যাকেট টা ধরে বলে – “ও! তাই বল ! কই দেখি দেখি !” খুলে দেখে বড় বড় চোখে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে “দেখো মা, কি সুন্দর হয়েছে! আব্বাসের খুব সুন্দর লাগবে।”
ঘোলাটে পরিবেশটা যেন এক লহমায় পাল্টে গেল। আব্বাসও আগের উৎসাহে ফিরে এসে বলল – “তাতিমা কুতায় বিয়ের ঠিক হয়েছে?”
– “দূর্গানগর”।
– “তাই তাছেই তো! আমিতো ওতানে মালিকের কাজ নিয়ে যাই।”
তিনজন মিলে মুড়ি চানাচুর খেতে খেতে ছেলের নাম, বাড়ি, বাবার নাম, সবই আব্বাস গল্পের ছলে জেনে নিল।
বেশ কিছুদিন ধরে কারখানার সবাই লক্ষ্য করছে আব্বাস কারোর সাথে দরকার ছাড়া কথা বলছেনা, কি যেন ভেবে চলেছে। এমনকি ঈদের দিন রসুল, করিম, আনোয়ারদের বাড়ি প্রতি বছরের মতো গেল না। কারখানা খুললে সবাই মিলে আব্বাসকে ধরে। ওর এই আচরনের কারন জানতে চায়। আব্বাস কোন উত্তর না দিয়ে চুপ করে থাকে। সবাই যখন খুব চাপ দেয় তখন হঠাৎ আব্বাস ওদের কাছে জিঙ্গাসা করে – “আচ্ছা করিম ভাই, আমি যদি মালিকের কাছে আমার জমানো বেতন চাই তাহলে কত টাকা পাব?”
কেল্টু রতন অবাক হয়ে বলে ওঠে “কিরে ব্যাটা! তুইতো ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের চেলা, টাকা মাটি – মাটি টাকা করেই গেলি এতদিন! এখন হঠাৎ কি হল?”
আব্বাস গম্ভীরভাবে আবারও জিঙ্গাসা করে – “বলোনা কত পাব?”
করিম ভাই বলল – “সে তো অনেক পাবি। কিন্তু টাকা নিয়ে তুই কি করবি?”
আব্বাস সে কথার উত্তর না দিয়ে উল্টে প্রশ্ন করে “আচ্ছা, পঞ্চাশ হাজার টাকা হবে?” সবাই অসম্ভব বিস্ময়ে একসাথে বলে উঠল – “তাতো পাবি, কিন্তু হল কি তোর বলতো?” আব্বাস কোন উত্তর না দিয়ে নিজের কাজে মন দিল।
রাতে মালিকের বাড়িতে খাওয়ার সময় আব্বাস মনে বল এনে কথাটা একদমে বলে দেয় “কাকা, তোমার কাছে আমার যে টাকা আছে, ওখান থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা আমাকে দিতে হবে”। মালিকের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। অবাকও হয় রীতিমতো। বড় বড় চোখ করে বিস্ময়ের সাথে প্রশ্ন করেন “তুই কি করবি অত টাকা? “আব্বাস কোন উত্তর দেয় না। মাথা নীচু করে মুখে আস্তে আস্তে গ্রাস তোলে, মালিক বলেন “ঠিক আছে, এখন তো খেয়ে গিয়ে শো, পরে দেখা যাবে।” মালিক কারখানার অন্য ছেলেদের সাথে ব্যপারটা নিয়ে আলোচনা করেন। সবাই রিতিমতো অবাক। কেউই বুঝতে পারছেনা আব্বাস হঠাৎ টাকা চাইলো কেন! টাকা নিয়েই বা কি করবে! কোন চিটিংবাজের পাল্লায় পরল না তো? মালিক সবাইকে আব্বাসের গতিবিধির উপর নজর রাখতে বললেন।
এইভাবে মাসখানেক গড়িয়ে যায়। তারই মধ্যে রাতে মাঝে মাঝে খেতে বসে আব্বাস মালিককে টাকাটার কথা মনে করিয়ে দেয়। আগের মতো উদ্দোম নিয়ে কাজকর্মও করে না। সবসময় মনমরা হয়ে থাকে। কথা কম বলে, হাসে না। একদিন টাকার জন্য মালিকের কাছে একটু জোরাজরি করতেই মালিক রেগে গিয়ে বললেন “তুই যদি অতো টাকা টাকা করিস, তো তোর কাজ করতে হবে না। আব্বাস মাথানীচু করে মালিকের উদ্দেশ্য বলে – “ঠিক আছে আমাল পঞ্চাশ হাজার টাকা দিয়ে দাও আমি চলে যাবো। মালিক তো আরও বিপদে পড়ল। এমন বিশ্বস্ত কর্মী আজকের দিনে পাওয়া মুশকিল। কারন ওর পরিশ্রম ও সততায় মালিকের অনেক লাভ হয়।
সেদিন ছিল রবিবার দিদিদের ঘরে কারা যেন এসেছি। তাই আব্বাস আর ওদের ঘরে যাইনি। সন্ধ্যা নাগাদ দিদি ডাকল আব্বাসকে, ও তো যাওয়ার জন্যেই পা বাড়িয়ে ছিল, তাই ডাকতেই ছুটে চলে গেল। ঘরে ঢুকতেই একটা প্লেটে অল্প ঠাণ্ডা চাউমিন দিয়ে দিদি বলল – “নে এটা খেয়ে নে”। চাউমিন তৃপ্তি সহকারে খেতে খেতে আব্বাস কাকিমাকে জিঞ্জাসা করল – “কারা এসেছিল গো?” দিদি মুখ ব্যঙ্গক্তি করে বলে “কারা আবার! যাদের গায়ে রক্ত নেই, আমার মায়ের দুর্বল রক্ত নিয়ে বাচবে ভেবেছিল। আব্বাস বলল, ” তুমাল পেচানো কথা আমি কিছু বুঝিনা। ও তাতিমা কি হয়েছে গো?” কাকিমা হতাশার সুরে কিছুটা ভেঙে পড়ে বললেন – “ছেলের বাবা এসেছিলেন। বলে গেলেন পঞ্চাশ হাজার টাকা না দিতে পারলে এখানে আর কথা এগিয়ে লাভ নেই”। আব্বাস খাওয়া ছেড়ে দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বলল – “তাহলে দিদির বিয়ে এখানে হবে না?” দিদি অশ্রুসিক্ত চোখে আব্বাসের দিকে তাকিয়ে বলে, “না। তুই যা তো! ঠাকুর যা করেন তা মঙ্গলের জন্যেই করেন”।
সেদিন রাতে আব্বাস মালিকের কাছে গিয়ে বলল – “কাল আমার টাকা চাই ই চাই। এমন হঠাৎ করে টাকা চাওয়ায় মালিক রেগে গিয়ে বলল “আর না দিলে কি করবি?” আব্বাস মালিকের চোখে চোখ রেখে উত্তর দেয় “আমার হিসাব বুঝে নিয়ে আমি কাজ ছেড়ে দেব। চোখে চোখ রেখে কথা বলায় মালিক আরো রেগে গিয়ে বললেন – “বেইমান! রাস্তা থেকে তুলে এনে মানুষ করেছিতো”। আব্বাস আর তর্ক না করে বিড়বিড় করে বলতে থাকে আমল টাকা চাই ই চাই।
মালিক একটু চিন্তিত হয়ে পড়েন। যদি সত্যিই চলে যায়, পরের দিন কারখানার ছেলেদের সাথে ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা করেন। অনেক চিন্তাভাবনা করে ঠিক হয় আব্বাসকে মালিক পঞ্চাশ হাজার টাকা দেবে কিন্তু কারখানার ছেলেরা ওর উপর গোপনে নজর রাখবে। কারন অতোগুলো টাকা নিয়ে যদি আব্বাস কোন বাটপারের হাতে পড়ে। পরেরদিন আব্বাস রাতের খাওয়া সেরে শুতে যাওয়ার আগে মালিক পঁচিশখানা দু-হাজার টাকার নোট আব্বাসের হাতে দিয়ে বলেন “গুনে নে”। আব্বাস টাকাটা দেখে মুখের ভাব এমন করল যেন ও বিশ্ব ব্রহ্মান্ড দেখে ফেলেছে। টাকাটা হাতে নিয়ে না গুনে পকেটে রাখতে রাখতে বলল “ঠিক আছে ঠিক আছে, আমি কাজ ছালবোনা। আরো বেশি বেশি করে কাজ করে দেবো।
মালিক রাতে বিছানায় শুয়ে এপাশ-ওপাপ করতে লাগলো। দুশ্চিন্তায় ঘুম আসছে না। একটাই চিন্তা, আব্বাস না অতোগুলো টাকা নষ্ট করে ফেলে। কারখানার ছেলে গুলোকেও পুরোপুরি ভরসা করতে পারছেন না। ঠিক করলেন, নিজেই কাল থেকে নজরে রাখবেন। ভোরের দিকে ঘুমটা একটু গভীর হয়ে গিয়েছিল। হঠাৎ ঘুম ভাঙ্গতেই মালিক ধরফড় করে উঠে কারখানার দিকে ছুটলেন আব্বাসের গতিবিধি লক্ষ্য করতে। কিন্তু কারখানার সামনে গিয়েই উনি চমকে ওঠেন। দরজার বাইরে থেকে তালা দেওয়া, আব্বাস নেই। সঙ্গে সঙ্গে চেচামেচি। লোকজন জড়ো হওয়া, যা হয় আর কি! কারখানার ছেলেদের ফোন করে ডেকে পাঠালেন। সবাই এক জায়গায় জড়ো হলো কিন্তু আব্বাসের কোন খোজ পাওয়া গেলো না। রসুল বলল – “চলোতো, ঐ বিধবা মা-মেয়ের কাছে ও খুব যায়। ওদের কাছে খোজ নিয়ে দেখি।” সেখানে গিয়েও তার কোন হদিশ পাওয়া গেলনা। দিদি, কাকিমা সব শুনে কেদে ফেললেন। কারন কাকিমা যে সত্যিই তাকে নিজের সন্তানের মতো ভালবাসেন। নানা জনে নানা মত প্রকাশ করতে লাগল। কেউ বলল – “এমনিতে হাবা গোবা, পেটে পেটে এত বুদ্ধি”। কারখানার ছেলেরা সমস্বরে বলে ওঠে ও যে এত চালক তা আমরা কখনো বুঝতেই পারিনি। দিদি কাদতে কাদতে বলে, “তোমরা সব উল্টো পাল্টা ভাবছ। এটা ভাবছনা যে যদি ও খারাপ লোকের পাল্লায় পড়ে, আর সে ওকে মেরে ফেলে! অতো টাকার লোভ কেউ সামলাতে পারে!”
করিম মালিককে বলল, “কাকা তোমার কাছে তো ডুপ্লিকেট চাবি আছে কারখানা খুলে দেখোতো সব ঠিকঠাক আছে কিনা?”
এর পর কারখানা ঘর খোলা হল। আব্বসের জিনিসপত্র যেমন ছিল তেমনই আছে। শুধু আব্বাস নেই। জল্পনা আরও ঘনীভূত হল।
ভিড়-ভাট্টা, কোলাহলের মধ্যে ঐ স্থানে একটা রিক্সা এসে দাড়ালো। সকলে রিক্সার দিকে তাকিয়ে চরম বিস্ময়ে বলে উঠল, “ঐ তো আব্বাস!” রিক্সা থেকে নেমে আসেন দিদির হবু শ্বশুর ও আব্বাস। কাকিমার কাছে এসে ভদ্রলোক হাত জড়ো করে বলেন,
“আমাকে আপনারা ক্ষমা করবেন। এই পরিস্থিতির জন্য মনেহয় অজান্তে আমিই দায়ি। এই ছোট্ট ছেলেটি আমাকে আজ যা শিক্ষা দিল তা আমি আমৃত্যু মনে রাখব। এইটুকু ছেলে ওর সারাজীবনের কষ্টার্জিত পরিশ্রমের সর্বস্ব আমার হাতে তুলে দিতে গিয়েছিল যাতে বিয়েটা না ভেঙ্গে যায়। টাকার বান্ডিলটা কাকিমার কাছে নিয়ে গিয়ে বলেন, – “এই যে দিদি ওর দেওয়া পঞ্চাশ হাজার টাকা। আর আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি, এখানেই বিয়ে হবে তবে শুধু শাখা সিদুরে”। নিমিষের মধ্যে চেচামেচি নানা গুঞ্জন সব যেন স্তব্দ হয়ে গেল। একটা পিন পরলেও যেন আওয়াজ পাওয়া যাবে। আব্বাস এক পাশে মাথা নিচু করে পাথরের মতো দাড়িয়ে থাকলো। যেন এই পরিস্তিতির জন্য ও নিজে সবথেকে বেশি দায়ী।
◆◇◆◇◆◇◆