“উপহার”
–:: সোমনাথ প্রামাণিক ::–
বেশ কয়েক বছর হলো রায় বাবু রিটায়ার্ড করেছেন, কাজ বলতে সকালে একটু বাজারে যাওয়া, বাড়ির বাগান আর নাতি-নাতনি নিয়ে সময় কাটানো। নাতি-নাতনি বলতে দুই ছেলের দুটি মেয়ে ও একটি ছেলে, বড়টির নাম বীনা, মধ্যম টি রীনা আর সবচেয়ে ছোট নাতি তিন বছরের সাহেব। এখন তো করোনার আবহ তাই ছেলেরা বিশেষ বেরোতে দেয় না ওনাকে। হঠাৎ ১৭ই আগস্ট সকালে বীনা এসে বলল -“দাদু আজ তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে”। রায়বাবু বললেন “তোমরাই তো আমার কাছে বিরাট সারপ্রাইজ, আবার নতুন কি?” বীনা একটু মুচকি হেসে ভিতরে চলে গেল। কিছুক্ষন বাদে সবে পেপারটা নিয়ে বসেছেন কি, দুই নাতনি এসে হাজির, হাতে একটা বাক্স আর দুটো বড় বড় সুন্দর গোলাপ। “বীনা ও রীনা একসাথে বলে উঠল – Happy Birthday দাদুভাই”। রায়বাবু বয়সের ভারে আজ নিজের জন্ম দিনের তারিখটা ভুলে গেলেও পরবর্তি প্রজন্মের আন্তরিকতা ও ভালোবাসা দেখে খুব খুশি হলেন। একে একে বাড়ির অন্য সদস্যরা এসে প্রনাম করে জন্ম দিনের শুভেচ্ছা জানালেন। শুধু ছোট্ট সদস্যটি সবার পেছনে গুটি গুটি পায়ে এসে, বাগানের একটা ছোট্ট শিউলি ফুল হাতে দিয়ে আধো আধো ভাবে বলল “happy birth day দাদুভাই”।সবাই তো অবাক! রায়বাবু ছোট্ট নাতিটিকে কোলে নিয়ে বললেন “আমি খুব খুশি হয়েছি দাদুভাই”।রায়বাবু লক্ষ্য করলেন রীনার মুখটি যেন একটু ফ্যাকাসে হয়ে গেল, তিনি বললেন “দিদি ভাই তোমার আবার কী হলো”। “দাদু আমরা যে অত্ত বড়ো বড়ো দুটো গোলাপ দিলাম তুমি খুশি হওনি? ভাই ঐটুকু একটা ছোট্ট শিউলি ফুল দিল আর তুমি ভাই কে কত্ত আদর করলে!” রায়বাবু রীনা কে কোলের কাছে ডেকে নিয়ে বললেন “হয়েছি তো, খুব খুশি হয়েছি”। এই বলে দুই নাতনি কে কাছে নিয়ে মাথায় হাতের স্নেহের স্পরশ দিয়ে বললেন, তোমাদের একটা কথা বলি দিদিভাই এটা সারাজীবন মনে রাখবে, “উপহার কে কখন ও মূল্য বা আয়তন দিয়ে দেখবে না, যে উপহার দিচ্ছে তার সামর্থ ও আন্তরিকতাটাই মনে রাখার চেষ্টা করবে”।এবার আস্তে আস্তে কেকটা কেটে নাতি, নাতনি বাড়ির সকল কে খাইয়ে দিলেন, নাতিনাতনিরাও তাদের প্রিয় দাদুভাই কে খাইয়ে দিল। একটু বাদে সবাই যে যার কাজে চলে গেলে রায় বাবু ঈশ্বর কে অনেক ধন্যবাদ দিতে লাগলেন তার এই সুখের মুহুর্তটার জন্য।
◇◆◇◆◇◆◇◆◇◆◇◆◇